সোমবার, ১৭ আগস্ট, ২০১৫

প্রসংগঃ মৃত্যু এক কঠিন বাস্তবতা (পর্ব-২)

প্রসংগঃ মৃত্যু এক কঠিন বাস্তবতা (পর্ব-২)
- আনসারুস সুন্নাহ
_______________________
আল্লাহ তাআলা বলেন,
নিশ্চয়ই প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে। আর কিয়ামতের দিন তোমরা তোমাদের কাজের পূর্ণ প্রতিদান পাবে। অতঃপর, যাকে জাহান্নামে থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, প্রকৃতপক্ষে সেই সফলকাম। আর দুনিয়ার জীবন প্রতারণাপূর্ণ ক্ষণস্থায়ী ভোগের সম্পদ ছাড়া আর কিছুই না।
[সুরা আলে ইমরানঃ ৮৫]
_______________________
কার মৃত্যু কখন চলে আসে কিছুই বলা যায়না। মাস দুয়েক পূর্বে আমি কুমিল্লার একজনকে ঢাকার একটি হাসপাতালে এক ব্যগ রক্ত দেই। রোগী অল্প বয়সী গ্রাম্য এক নারী, স্বামী ছোট্ট দুইটি মেয়ে, বড় বোন এবং বোনের দুইটি ছেলে নিয়ে ঢাকায় চিকিৎসা নিতে এসেছেন। এপেন্ডিসাইটিস এর ব্যাথার জন্যে কুমিল্লাতে স্থানীয় ডাক্তার অপারেশান করতে বললে বাসে করে সদর হাসপাতালে নিয়ে আসার সময় বাসের জার্নিতে এপেন্ডিসাইটিস ফেটে যায়। সেই থেকে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন, অবস্থা জটিল হওয়ায় ঢাকায় নিয়ে আসা হয় তাকে। রক্ত দেওয়ার মাঝে রোগীনি এবং তার বড় বোনের সাথে পরিচিত হলাম এবং কিছু কথা বললাম। তাদেরকে ধৈর্য ধরার জন্য এবং হতাশ না হওয়ার জন্যে উপদেশ দিলাম। আরো বললাম, আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন তাকে বিপদ দিয়ে পরীক্ষা করেন। সুতরাং, নিজেকে পাপী মনে করে হীনমন্যতায় যেন না ভুগেন এবং আল্লাহর কাছে রহমতের জন্য আন্তরিকভাবে দুয়া করেন। আর রোগীর দুয়া আল্লাহ বেশি কবুল করেন, সুতরাং তিনি যেন তার এবং তার পরিবারের জন্য বেশি বেশি করে দুয়া করেন। এ কথা বলা মাত্রই রোগীর বড় বোন আমার জন্যে আন্তরিকভাবে দুয়া করলেন। আর চলে আসার সময় কয়েকবার করে অনুরোধ করলেন, তার বোন সুস্থ হলে অবশ্যই যেনো কুমিল্লাতে তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাই। সামান্য সময়ের মাঝে গ্রাম্য এই পরিবারের আন্তরিক ব্যবহার হৃদয়টাকে সত্যিই স্পর্শ করে গেলো। যাহহোক, গত বৃহস্পতিবার তার এক আত্মীয় ফোন করে বললো, অপারশানের পর কিছুটা সুস্থ হওয়ার পরে বাড়িতে থাকা অবস্থায় হঠাৎ করে শরীর খারাপ করে সেই রোগী মারা যান। স্বাভাবিকভাবেই তারা ছোট বাচ্চাগুলোর ভবিষ্যত নিয়ে তারা চিন্তিত, একটা একেবারে দুধের বাচ্চা! আমাকে বিশেষভাবে অনুরোধ করলো, আমি যেন তার এবং তার বাচ্চাগুলোর জন্যে একটু দুয়া করি। ইতিঃপূর্বে, ২০১১ সালের দিকে এক মহিলাকে রক্ত দিয়েছিলাম, সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে যিনি জটিলতার শিকার হয়েছিলেন। প্রথমে তার পেটের সন্তান মারা যায়, মাকে বাঁচাতে গিয়ে তার জরায়ুও কেটে ফেলা হয়েছিলো। শেষ পর্যন্ত সেই মহিলা চিকিৎসাধীন অবস্থায় রক্ত দেওয়ার তিনদিন পর হাসপাতালে মারা যায়, সেই মহিলারও ছোট একটা ছেলে ছিলো, ৩ বছর বয়স। সাধারণত আমি যাদেরকে রক্ত দেই এমন রোগীদের প্রতি একটা আলাদা একটা মায়া জন্ম নেয়। যখন শুনি তাদের কেউ মৃত্যু বরণ করেছেন, খবরটা শোনার থেকে বেশি খারাপ লাগে।   
_______________________
যাহ হোক, এই পেইজের অনেক ভাই ও বোন হয়তো দ্বীনের ব্যপারে আমাদের এই পেইজটার উপর নির্ভর করেন, এমন ভাই ও বোনদের উদ্দেশ্য কিছু কথাঃ
আল্লাহ আপনাদের উপর রহম করুন এবং আপনাদেরকে সফলতা দান করুন। যদি কখনো শুনেন আমি মৃত্যু বরণ করেছি, তাহলে আমি যেই সমস্ত আলেমদের কাছ থেকে দ্বীন শিখেছি, তাদের দাওয়াত ও শিক্ষার দ্বারা উপকৃত হওয়ার চেষ্টা করবেন। আধুনিক যুগের যেই সমস্ত বড় আলেমদের কাছ থেকে আমি সবচেয়ে বেশি উপকৃত হয়েছি এমন কয়েকজন বড় আলেম এর নাম, যারা বিগত ১৫-২০ বছরের মাঝে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেনঃ
১. ইমাম আব্দুল আজিজ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ এক কথায় বলা যেতে পারে আকীদাহ এবং ফিকহ এর ব্যপারে আমার no. 1 mentor.
২. ইমাম মুহাম্মাদ নাসির উদ্দিন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ যার লেখা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামায বই পড়ে আহলে সুন্নাহর মানহাজ সম্পর্কে জানতে পেরেছিলাম। সহীহ হাদীস থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামায পড়া শিখেছিলাম। 
৩. শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহ যিনি শায়খ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহর ছাত্র ছিলেন এবং নিজেকে তাঁর উস্তাদের একজন প্রতিচ্ছবি বলে মনে করতেন। শায়খ মুহাম্মাদ নাসির উদ্দিন আলবানী রাহিমাহুল্লাহর মতে তাঁর যুগে এমন দুইজন আলিম, যাদের শরিয়ার যেকোন বিষয়ে নিজস্ব ইজতিহাদ করার মতো জ্ঞান রয়েছে, তাদের একজন শায়খ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ এবং আরেকজন হচ্ছেন, শায়খ ইবনে উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহ। তাঁর ফতোয়ার কিতাব ফতোয়া আরকানুল ইসলাম এমন একটা কিতাব, যা দ্বীন শিক্ষার্থী যেকারো জন্য প্রথম রেফারেন্স বই হিসেবে গ্রহণযোগ্য এবং উপকারী।  
৪. আল্লামাহ শফিউর রহমনা মুবারকপুরী রহিমাহুল্লাহ ভারতবাসীর জন্য গর্ব এই আলেম। ইউটিউবে আপনারা তাঁর অনেক লেকচার পাবেন উর্দুতে।
আর জীবিত এমন সিনিয়র আলেমদের মাঝে রয়েছেনঃ
১. আল্লামাহ, শায়খ সালিহ আল-ফাওজান (হাফিজাহুল্লাহ)
জন্মস্থানঃ সৌদি আরব।
২. মুহাদ্দিস, শায়খ আব্দুল মুহসিন বিন আল-আব্বাদ (হাফিজাহুল্লাহ)
জন্মস্থানঃ সৌদি আরব।
৩. আল্লামাহ শায়খ উয়াসী উল্লাহ আব্বাস (হাফিজাহুল্লাহ)
তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আপনারা এই লেখাটা পড়তে পারেন।
জন্মস্থানঃ ইন্ডিয়া।
৪. আল্লামাহ সালেহ আস-শুহাইমি (হাফিজাহুল্লাহ)
জন্মস্থানঃ সৌদি আরব।
৫. আল্লামাহ সাঈদ রাসলান (হাফিজাহুল্লাহ)
জন্মস্থানঃ মিশর।
এছাড়াও আরো বেশ কিছু আলেম রয়েছেন, এখানে শুধুমাত্র কয়েকজনের নামই উল্লেখ করা হলো।
_______________________

একটা কথা মনে রাখবেন, ফার্মেসিতে যারা ঔষধ বিক্রি করে তাদের সম্পর্কে যদি আপনার ধারণা থাকে তাহলে নিশ্চয়ই জানেন, কোন রোগের কোন ঔষধ এসম্পর্কে তারা অনেক জানে। তবুও কারো বাবার হার্টের সমস্যা হলে সে কোনদিন ফার্মেসির কোন লোকের কাছে যাবেনা ঔষুধের জন্য, যদিও সে ফ্রী ঔষধের কথা বলে দিবে। তেমনি, যে ব্যক্তি আলেম নয় তার কাছ থেকে কোনদিন ফতোয়া নিবেন না, বা তাকে আলেম মনে করে নিজের রাহবার বানাবেন না। যদিও সে ক্ব্বুরান ও হাদীস নিয়ে লম্বা লম্বা ওয়াজ করুকনা কেনো, যদিও সে হৃদয়গলানো লেখা লিখে মানুষের মাঝে অনেক জনপ্রিয় হোক না কেনো।