“একটা
হাদীস মানলে জান্নাত, একটা হাদীস অমান্য করলে জাহান্নাম”
_______________________________
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমার উম্মতের সকলেই জান্নাতে যাবে, শুধুমাত্র
যারা জান্নাতে যেতে অস্বীকার করবে তারা ছাড়া। সাহাবীগণ আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
হে আল্লাহর রাসূল! এমন কে আছে যে জান্নাতে যেতে অস্বীকার করবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, যে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে যাবে, আর যে আমার
নাফরমানী করবে ও অবাধ্য হবে, সে ব্যক্তি জান্নাতে যেতে অস্বীকার করে।” [সহীহুল বুখারী]
একই
বক্তব্য আল্লাহর তাআ’লার
পক্ষ থেকে ক্বুরানুল কারীমেও উল্লেখিত হয়েছে। মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন “আর আমি শুধুমাত্র এজন্যেই রাসুল পাঠিয়েছি, যাতে
করে আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী রাসুলদের আনুগত্য করা হয়।” [সুরা আন-নিসাঃ ৬৪]
_______________________________
আসুন
এবার আমরা দেখি, বর্তমান যুগের অধিকাংশ মুসলমান নারী ও পুরুষেরা কিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদেশ অমান্য করে জেনে-বুঝেই
জাহান্নামের
রাস্তা ধরেছে।
_______________________________
।।
নারী এবং পুরুষের উভয়ের মাঝে কমন ।।
_______________________________
১.
দ্বীন শিক্ষা না করা, দ্বীনকে যথাযথ মূল্যায়ন না করা এবং দ্বীন থেকে বিমুখ হয়ে থাকা।
এটা
আশ্চর্য এক ব্যপার যে, আজকাল মুসলমান দাবী করা নারী-পুরুষেরা হাজার হাজার পাতা পড়ছে,
রবীন্দ্রনাথ, হুমায়ুন আহমেদসহ নানারকম কাফের-মুশরেক ও বেদ্বীন লোকদের নষ্ট গল্পের বইগুলো
মুখস্থ করছে, বলিউড নামক বেশ্যাখানার শত শত অশ্লীল গান সপরিবারে শুনছে, গাইছে. . .কিন্তু
তাদের অধিকাংশ লোকেরাই ছোট ১০টা সুরার অর্থ ও শানে নূযুল জানেনা, ১০টা সহীহ হাদীস বলতে
পারবেনা, ৩ জন আলেমের নাম বলতে পারবেনা। দ্বীন শিক্ষা করা বান্দার জীবনে সবচাইতে বড়
ফরয দায়িত্ব। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি ক্বুরানের প্রথম আদেশই
ছিলো “ইক্বরা” – তুমি পড়! আর বর্তমান যুগের নামধারী মুসমানেরা
ক্বুরানের দুশমনদের বানানো সবকিছুই দেখছে, পড়ছে এবং শুনছে, শুধু ক্বুরান ছাড়া।
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “দ্বীন শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমান নারী ও পুরুষের
জন্য ফরয।” [ইবনে মাজাহ]
দ্বীন
শিক্ষা করার ফরয ত্যাগ করে দুর্ভাগ্যজনকভাবে বেশিরভাগ মুসলমানেরাই হারাম-হালাল কি জানেনা,
শিরক-বেদাত কি চিনতে পারেনা, অজ্ঞ থেকে নিজের প্রবৃত্তির গোলামি করে ও বাপ-দাদাদের
তরীকা অনুসরণ করে ইতিমধ্যেই কোটি কোটি মুসলমান জাহান্নামের রাস্তায় পোঁছে গেছে, আল্লাহু
মুস্তায়ান।
_______________________________
২.
নামায না পড়ার শিরক ও কুফর।
ইসলামিক
ফাউন্ডেশানের একজন অধ্যাপক কর্তৃক কয়েক বছর পূর্বে এক জরিপে দেখা যায় যে, বাংলাদেশের
মাত্র ২% মানুষ নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়ে, অথচ কাগজে-কলমে বলা হয়ে থাকে শতকরা ৮০%
মুসলমানের এই দেশ বাংলাদেশ!
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ
“আমাদের
মাঝে ও তাদের (কাফেরদের) মাঝে প্রথম চুক্তি হলো নামাযের। সুতরাং, যে ব্যক্তি নামায
ছেড়ে দিবে সে কাফের হয়ে যাবে।”
[আবু
দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ]
নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেনঃ
“আল্লাহর
বান্দা এবং কাফের-মুশরেকের মধ্যে পার্থক্য হলো নামায ছেড়ে দেয়া।” [সহীহ মুসলিমঃ ঈমান অধ্যায়]
নামায
না পড়ার অপরাধ কোন মানুষ হত্যা করা, চুরি করা, জিনা করার চাইতেও মারাত্মক। আমাদের দেশের
বেশিরভাগ মানুষ নামাযের বিষয়টাকে হালকা করে দেখে। ছেলে/মেয়ে পরীক্ষায় ফেইল করলে তারা
কষ্ট পায়, সামান্য অসুস্থ হলে তারা কষ্ট পায় - কিন্তু বছরের পর বছর ধরে ছেলে-মেয়ে বেনামাযী
হয়ে থাকেঃ কারো কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। এরা দ্বীনকে ধ্বংস করেছে...অথচ কবরে প্রথম প্রশ্নই
করা হবে দ্বীনের ব্যপারে।
_______________________________
৩.
বিদআ’তী ও মনপূজারী ফেরকা বা দল ও ‘উলামায়ে সু’-দের অনুসরণ করা।
রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “আমি আমার উম্মাতের জন্য একটি বিষয়কে দাজ্জাল
এর থেকেও বেশী ভয় করি।”
(একজন
সাহাবী বললেন), আমি ভয় পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম, “হে আল্লাহর রাসুল, সেটি কি?”
তিনি
বললেন, “বিপথগামী এবং পথভ্রষ্ট আলেম।”
[মুসনাদে
আহমাদঃ ২১৬২১, তাবরানীঃ ৭৬৫৩, হাদীসটি সহীহ]
রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ
“(ফিতনার
যুগে) কিছু লোক এমন হবে, যারা জাহান্নামের দরজার দিকে মানুষকে দাওয়াত দিবে (অর্থাৎ
তাদের দাওয়াত এমন ভ্রষ্টতাপূর্ণ হবে, যা জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে); যারা তাদের ডাকে
সাড়া দিবে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে”। [সহীহ বুখারীঃ হাদীস নং-৩৩৩৬]
_______________________________
এমন
ভ্রষ্ট আলেমদের ডাকে সাড়া দিয়ে বিভ্রান্ত হয়েছে, এমন কয়েকটি দলের নাম ও তাদের শীর্ষস্থানীয়
কিছু নেতাদের নাম।
সূফীদের
জামাতঃ
=>
রিজভী বা বেরেলুবী জামাতঃ আহমাদ রেজা খান বেরেলুভি, তাহির-উল-ক্বাদরী, শেখ নাজিম।
=>
দেওবন্দী জামাতঃ ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মাক্কি, কাসিম নানুতুভি, আশরাফ আলী থানভি।
=>
তাবলিগ জামাতঃ মাওলানা ইলিয়াস, জাকারিয়া কান্ধলভি, তারিক জামিল।
খিলাফত
ও জিহাদ নিয়ে বিভ্রান্ত দল যারা জেনে হোক বা না জেনে খারেজীদের চরমপন্থা অবলম্বন করেছে
=>
জামাতে ইসলামীঃ আবুল আলা মওদুদী, গোলাম আযম, মতিউর রহমান নিযামী, দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী।
=>
ইখোয়ানুল মুসলিমিনঃ সাইয়েদ কুতুব, হাসান-আল-বান্না, ইউসুফ কারযাভী।
=>
হিযবুত তাহরীরঃ তাকিউদ্দিন নাবাহানি।
=>
আল-কায়েদাহঃ আয়ামান আল-জাওয়াহিরি, আনোয়ার আল-আওলাকি।
=>
হিযবুত তাওহীদঃ বায়েজীদ খান পন্নী
এমন
বিদাতী দল ভ্রষ্ট আলেমদের যারা অনুসরণ করে দ্বীনকে চেঞ্জ করবে, তাদেরকে হাউজে কাউসারের
সামনে থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়া দেওয়া হবে।
_______________________________
_______________________________
৪.
প্রেম-ভালোবাসা, অবৈধ সম্পর্কে জিনা-ব্যভিচার।
[এই
বিষয়ে ইতিঃপূর্বে অনেক লিখা হয়েছে]
_______________________________
_______________________________
৫.
কাফের মুশরেক ও বিজাতীদের ‘তাকলীদ’ অন্ধ অনুকরণ করা।
সতের
ও আঠারো শতকে ইংরেজরা অনেক মুসলমান দেশ দখল করে। মুসলমানরা যাতে আর কোনদিন মাথা তুলে
দাড়াতে না পারে সেইজন্য ইংরেজরা সুকৌশলে পাশ্চাত্য শিক্ষা সংস্কৃতির মাধ্যমে ইয়াহুদী-খ্রীস্টানদের
বস্তাপচা কালচার মুসমানদের মাঝে রেখে যায়। দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ ও কাফেরদের ষড়যন্ত্র
সম্পর্কে গাফেল, এমন লোকেরা সহজেই তাদের উন্মুক্ত সমাজ ব্যবস্থার দিকে আকৃষ্ট হয়ে তাদেরকে
অনুকরণ করতে পারাকে গর্বের বিষয় বলে মনে করা শুরু করা। আজ মুসলমান কোন নারী বা পুরুষ,
কথায় ও কাজে, চাল-চলন, পোষাক আশাকে কাফেরদের অন্ধ অনুকরণ লক্ষ্যণীয়। কাফেরদের অনুকরণ
করতে করতে এতো নীচে নেমে গেছে নামধারী কিছু মুসলমানেরা যারা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ মোতাকেব দাঁড়ি রাখাকে ঘৃণা করে কিন্তু যিনাকারী নায়কদের স্টাইলে
দাঁড়ি রাখাকে ফ্যাশান হিসেবে দেখেন। ক্বুরান হাদীস মেনে পূর্ণাংগ হিজাব-পর্দা করাকে
ঘৃণা করে, কিন্তু পতিতা শ্রেণীর নায়িকাদের উলঙ্গপনা ড্রেস পড়ে ঘুরে বেড়াতে লজ্জা বোধ
করেনা।
রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেরদের অনুকরণ করা ও তাদেরকে ভালোবাসার ভয়াবহতা
সম্পর্কে বলেনঃ “যে
ব্যক্তি যাকে ভালোবাসবে, কেয়ামতের দিন সে তার সঙ্গেই (জান্নাতে বা জাহান্নামে) থাকবে।” [তিরমিযী, ২৩৮৮]
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আর বলেছেন,
“মান
তাশাব্বাহা বি ক্বাওমিন ফা হুয়া মিনহুম” অর্থাৎ, কোন ব্যক্তি যেই জাতির অনুকরণ করবে,
সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বলেই গণ্য হবে।
_______________________________
[চলবে
ইন শা আল্লাহ আগামী পর্বে সমাপ্য]