আপনার
‘ক্বালব’ বা অন্তর কোন দিকে ঝুঁকে আছে?
- আনসারুস সুন্নাহ।
________________________
আমাদের
সবার অন্তরটা কোন না কোন দিকে এক ঝুঁকে আছে। যেমন সহীহে হাদীসে বলা হয়েছে, কেয়ামতের
পূর্বে কিছু নারী আসবে, যারা কাপড় পড়বে ঠিকই কিন্তু কাপড় পড়েও তারাও উলংগ থাকবে। বিবাহিতা
হোক কিংবা অবিবাহিতা, বেপর্দা বেহায়ার মতো চাল-চলনের কারণে তাদের অন্তরটা সর্বদা পর
পুরুষদের দিকে ঝুঁকে থাকবে, বহু পুরুষের অন্তরও তাদের দিকে ঝুঁকে থাকবে। আবার ক্বুরানুল
কারীমে পুরুষদেরকে সতর্ক করা হয়েছে, যারা একাধিক বিয়ে করবে তারা যেন কোনভাবেই এক স্ত্রীর
দিকে ঝুঁকে পড়ে অন্য স্ত্রীর হক্ক নষ্ট না করে। এমনিভাবে অনেক মানুষ আছে যাদের অন্তর
আল্লাহর দিকে নয়, বিভিন্ন দুনিয়াবী এবং হারাম কাজের দিকে ঝুঁকে থাকে।
=>
বর্তমান যুগের বেশিরভাগ মানুষ পরকালকে ভুলে দুনিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়েছে। হালাল হারাম
বিবেচনা করছেনা, আল্লাহ কোনটা ভালোবাসেন, কোনটাকে ঘৃণা করেন, তাতে তাদের খুব একটা যায়
আসেনা।
=>
বহু নারী ও পুরুষ আছে যাদের অন্তর টিভি বা মিডিয়া কেন্দ্রিক। টিভি পর্দায় খেলা-ধূলা,
নাচ-গান, নাটক সিনেমা, নায়ক-নায়িকা বা খেলোয়াড়...এমন হাজারো অশ্লীল ও পাপাচারের মাধ্যম
হচ্ছে এই টিভি। যা কোটি কোটি মানুষকে বোকা বানিয়েছে।
=>
যুবক যুবতীদের মাঝে প্রধান একটা সমস্যা হচ্ছে বিয়ে করে মনের মানুষ না পাওয়ায় তাদের
অন্তর পরনারী বা পর পুরুষের দিকে ঝুঁকে আছে। তাদের চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণা একদিকেই
নিবদ্ধ, নির্দিষ্ট কোন নারী/পুরুষকে পাওয়া, বাস্তব জীবনে, ফেইসবুক বা মোবাইলে তাদের
সংগ লাভ করা, তাদেরকে জিনা-ব্যভিচারের জালে আবদ্ধ করা ইত্যাদি। এই পরনারীর বা পযপুরুষের
প্রতি অবৈধ ভালোবাসার কারণে মুসলমানদের মাঝেই যে কত হারাম, পাপাচার ও ফাসাদ সৃষ্টি
হচ্ছে, এক আল্লাহ ভালো জানেন।
=>
অনেকের অন্তর আবার ফেইসবুকের দিকে ঝুঁকে আছে। এরা দ্বীনি বা দুনিয়াবী যাই হোকনা কেনো,
আমল করে শুধু সমাজের লোকদেরকে দেখানোর জন্যে। এমনকি অনেক প্র্যাকটিসিং মুসলিম ভাই ও
বোনদেরকেও শয়তান এই ধোঁকায় ফেলেছে। এদেরকে চেনার কিছু লক্ষণ হচ্ছে, এরা সর্বদাই নিজেকে
প্রকাশ করতে ভালোবাসে। আমি হিজাব-পর্দা করি, আজকে আমার ৬ রোযা কমপ্লিট হলো, আমার বউ
ছেলে মেয়...ইত্যদি। আবার দুয়া র ক্ষেত্রেও মূর্খতা, দুয়া করতে হয় আল্লাহর কাছে, যিনি
সব শুনেন। কিন্তু অনেকের দুয়া - হে আল্লাহ আমাকে শাহাদাত দান করো, আমাকে নেককার স্ত্রী
দাও, এই দুয়াগুলোও তাদেকে করতে হবে ফেইসবুকে, তাহাজ্জুদ পড়তে হবে ফেইসবুকে ঘোষণা করে...এমনি
অনেক কথাই তারা বলে যা আসলে আল্লাহকে বলা উচিৎ, যার জন্যে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করা
উচিৎ, রিয়ার ভয়ে গোপন করা উচিৎ। কিন্তু তারা না বুঝেছে দ্বীন, না বুঝেছে ঈমান...এদেরকে
শয়তান ধোঁকা দিয়ে ফেইসবুকসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমগুলোর মাধ্যমে অন্তরে সূক্ষ শিরক
রিয়া এবং জনপ্রিয়তার প্রতি মোহ ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের আমলগুলো নষ্ট করছে।
________________________
যাই
হোক, মানুষের জন্যে হাশরের ময়দান আসলে খুব ভয়ংকর হবে। এনিয়ে ক্বুরানের অনেক আয়াতে এবং
সহীহ অনেক হাদীসেই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে, যাতে করে মানুষ আল্লাহর সামনে বিচারের
দিনকে ভয় করে এবং সেই ভয়ে পাপ কাজ থেকে দূরে থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর ইবাদতে সচেষ্ট
থাকে। শয়তানের ধোঁকায় পড়ে ভুলেও যাতে জাহান্নামের রাস্তায় পা না বাড়ায়, যদিও সেটা তার
জন্যে অনেক আকর্ষণীয় হোক না কেনো।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “কিয়ামতের দিন সূর্য মানুষের মাথার উপরে চলে আসবে,
সূর্য মানুষের মাত্র এক মাইলের দূরত্বের ব্যবধানে থাকবে। মানুষেরা তাদের নিজ নিজ আমল
অনুযায়ী ঘামের মধ্যে হাবুডুবু খাবে। মানুষের শরীরের পঁচা ঘাম কারো টাখনু পর্যন্ত পৌঁছে
যাবে। কারো হাঁটু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত এবং কারো নাকের ডগা পর্যন্ত পৌঁছে যাবে।
একথা বলার পর নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম তাঁর মুখের দিকে ইশারা করে দেখালেন।”
[সহীহ
মুসলিমঃ কিতাবুল জান্নাত অধ্যায়]
________________________
বিচার
দিনের সেই কঠিন দিনে আল্লাহ তাআ’লা
৭ শ্রেনীর মানুষকে আরশের নিচে ছায়া দেবেন, আর সেই দিন আল্লাহর সম্মানিত আরশ ছাড়া আর
কোন ছায়া থাকবেনা। সেই ৭ শ্রেণীর মানুষের মাঝে একজন হচ্ছে যার অন্তরটা মসজিদের দিকে
ঝুঁকে থাকবে।
________________________
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তাআ’লা সাত শ্রেণীর মানুষকে সেদিন (অর্থাৎ হাশরের
দিন) তাঁর আরশের নিচে ছায়া দান করবেন, যেদিন তাঁর ছায়া ব্যতীত আর কোনো ছায়া থাকবে না।
আল্লাহ তাআ’লার আরশের নিচে স্থান পাবেন এমন ব্যক্তিরা হচ্ছেঃ
১.
ন্যায়পরায়ণ বাদশা বা রাষ্ট্রনেতা।
২.
ঐ যুবক, যে তার যৌবনকাল আল্লাহর ইবাদতে ব্যয় করেছে।
৩.
ঐ ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে ঝুলানো থাকে (অর্থাৎ মসজিদের প্রতি তাঁর মন সদা
আকৃষ্ট থাকে)।
৪.
ঐ দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা স্থাপন করে; এই ভালোবাসার
কারণে তারা মিলিত হয় এবং এই ভালোবাসা নিয়েই তারা বিচ্ছিন্ন হয়।
৫.
ঐ ব্যক্তি যাকে কোনো উচ্চবংশীয় সুন্দরী নারী (অবৈধ যৌন মিলনের জন্যে) আহবান করে, কিন্তু
সে বলে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’।
৬.
ঐ ব্যক্তি যে গোপনে দান করে, এমনকি তার ডান হাত যা দান করে তার বাম হাত পর্যন্ত সেটা
জানতে পারে না। (অর্থাৎ সে ইখলাসের সাথে শুধুমাত্র আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্যে গোপনে
দান-সাদাকা করে থাকে)।
৭.
ঐ ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে; ফলে তার দুই চোখে পানি বয়ে যায়।
[সহীহ
বুখারীঃ ৬২৯, সহীহ মুসলিমঃ ১০৩১]
________________________
হাদীসের
উপরে কিছু কথাঃ
১.
এই হাদীসে হাশরের দিনে আল্লাহ তাআ’লার
আরশের নিচে ছায়া প্রাপ্ত ব্যক্তি ৭ প্রকার বলে উল্লেখ করা হলেও, অন্যান্য হাদীসে এমন
আরো অন্যান্য কয়েক প্রকার মানুষের কথা বলা হয়েছে, তারাও আরশের ছায়ায় জায়গা পাবে। অর্থাৎ
আরশের ছায়ায় স্থানপ্রাপ্ত মানুষের প্রকার ৭ এর চাইতে বেশি।
২.
তিন নাম্বার পয়েন্টে ‘তাদের
অন্তর মসজিদের সাথে ঝুলানো’ বলতে
তাদের অন্তরে সর্বদা এই খেয়াল থাকে, কখন আযান দেবে আর তারা ওযু করে নামাযের জন্যে মসজিদে
যাবে (পুরষদের ক্ষেত্রে, আর নারীদের ক্ষেত্রে কখন ওয়াক্ত হবে, আযান দেবে এবং তারা নামায
আদায় করবে)।
৩.
পাঁচ নাম্বারে শুধুমাত্র পুরুষের কথা বলা হলেও, শায়খ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহর ফতোয়ার
ভাষ্য হচ্ছেঃ উসূল অনুযায়ী, অনুরূপভাবে কোন উচ্চবংশীয় সুদর্শন পুরুষ যদি কোন নারীকে
কুকর্মের প্রস্তাব দেয় আর সে আল্লাহকে ভয় করে প্রত্যখ্যান করে, তাহলে সেই নারীও কেয়ামতের
দিন আল্লাহর আরশের নিচে স্থান পাবে।
আল্লাহ
আমাদের সবাইকেকে ক্বুরান ও হাদীস পড়ার এবং সে অনুযায়ী আমল করার তোওফিক দান করুন, আমিন।
________________________