প্রশ্নঃ ‘‘ফিরকাতুন
নাজিয়াহ’’ বা ‘নাজাতপ্রাপ্ত দলটির’ নাম কি?
উত্তরঃ “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত” (সংক্ষেপেঃ আহলে সুন্নাহ,
বা সুন্নী)।
______________________
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “জেন
রাখ! নিশ্চয়ই তোমাদের পূর্বে ছিল যারা ছিলো (ইয়াহুদী এবং খ্রীস্টানরা) তারা ৭২টি
দলে বিভক্ত হয়েছিল,
এবং নিশ্চয়ই আমার এই উম্মত (মুসলমানেরা) ৭৩টি দলে বিভক্ত হবে। এদের
মাঝে প্রত্যেকটি দল জাহান্নামে যাবে, শুধুমাত্র একট দল ছাড়া।”
সাহাবারা (রাঃ) জিজ্ঞেসা করলেন,
“ইয়া রাসূলুল্লাহ, (মুক্তিপ্রাপ্ত) সেই দল
কোনটি”
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম বললেন,
“আজকে আমি এবং আমার সাহাবীরা যার উপরে আছি, সেই পথের উপর যারা থাকবে
(তারাই মুক্তি পাবে)।”
[তিরমিজী ও আবু দাউদ,
মিশকাত হাদীস নং- ১৬৩]
______________________
সাহাবা (রাঃ) এর যুগের শেষের দিকে এবং তাবেয়ীদের যুগের শুরুর দিকেই যখন
মুসলমানদের মাঝে মতবিরোধ বৃদ্ধি পেলো এবং [ক্বাদরিয়া, জাহমিয়া, খারেজী, শিয়াদের] মতো নিত্য নতুন দল সৃষ্টি হওয়া
শুরু হলো, তখন থেকেই [ক্বুরান, সুন্নাহ
এবং সাহাবাদের অনুসারী] নাজাতপ্রাপ্ত দলটি নিজেদেরকে “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত” (সংক্ষেপে আহলে সুন্নাহ বা
কখনো সুন্নী) নামে পরিচয় দিয়ে আসছে। যেমন সহীহ মুসলিমের ভূমিকাতে ইমাম মুসলিম রহঃ
(মৃত্যু ২৬১ হিজরী) প্রখ্যাত তাবেয়ী, ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে
সিরীন রহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ১১১ হিজরী) এর কথা উল্লেখ করেছেনঃ “মানুষেরা আগে হাদীসের সনদের ব্যাপারে
জিজ্ঞেস করতোনা। কিন্তু যখন ফিতনাহ এসে পড়ল, তখন তারা বলা শুরু করলেন,
তোমাদের হাদীসের রাবী বা বর্ণনাকারীর নাম বল। এরপর কেবল ‘আহলুস সুন্নাহ’ ব্যক্তিদের হাদীস গ্রহণ করা
হত। আর ‘আহলুল বিদআহ’ হলে তার কাছ থেকে হাদীস
গ্রহণ করা হতনা।”
[সহীহ মুসলিম,
মুক্বাদ্দিমাহ অধ্যায়]
______________________
“আহলে
সুন্নত” – কথাটির অর্থ হচ্ছে
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর “সুন্নত বা আদর্শের” অনুসারী। নাজাতপ্রাপ্ত দলের
লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেই তাদের “একমাত্র এবং চূড়ান্ত আদর্শ” বলে মনে করে, তার কথার বিপরীতে কোন ইমাম, দল, তরীকা, বুজুর্গ, মতবাদ কোন
কিছুকেই গ্রহণ করেনা।
“ওয়াল
জামাত” – কথাটি দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে
সাহাবাদের জামাত ও তারা যেই আদর্শের উপর ছিলেন তার অনুসারী। নাজাতপ্রাপ্ত দলের
লোকেরা ইসলামকে সেইভাবে গ্রহণ করে, কুরান ও সুন্নাহকে
সেইভাবে ব্যাখ্যা করে, বুঝে ও আমল করে, যেইভাবে সাহাবারা করেছিলেন। কারণ - এই উম্মতের মাঝে দ্বীনের ব্যপারে
সবচাইতে জ্ঞানী লোকেরা হচ্ছেন সাহাবারা। আর কুরানুল কারীমে আমাদেরকে আদেশ করা
হয়েছে – সাহাবারা যেইভাবে ঈমান এনেছে
সেইভাবে ঈমান আনার জন্য, সাহাবারা যেই তরিকার উপরে ছিলো
সেইভাবেই ইসলাম পালন করার জন্য।
______________________
যারা কোন প্রকার পরিবর্তন ও পরিবর্ধন ছাড়াই নিষ্ঠার সাথে ক্বুরান, সুন্নাহ ও সাহাবাদের
আদর্শের অনুসরণ করেন, তারাই হচ্ছেন প্রকৃত মুসলমান, তারাই হচ্ছেন আহলে সুন্নাহ। এই অনুসারী মুসলমানদেরকে কোন দল পার্টিতে যোগ
দিতে হবেনা বা নাম লিখাতে হবেনা। বরং যারা নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী ইখলাসের সাথে
ক্বুরান, সুন্নাহ এবং সাহাবীদের আদর্শ মেনে চলেন - তিনিই
হচ্ছে আহলে সুন্নাহ, তিনি পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুন না
কেনো। আহলে সুন্নাহর অনুসারী সমস্ত মুসলমানেরা মিলে একটি মাত্র দল, এর বাইরে নতুন কোন দল সৃষ্টি করা সম্পূর্ণ হারাম।
এ ব্যপারে প্রখ্যাত ইমাম,
আবু জাফর আত-ত্বাহাবী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “আমরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআ’তের অনুসরণ করব। আমরা জামাআ’ত হতে বিচ্ছিন্ন হওয়া এবং জামাআ’তের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা হতে বিরত থাকব।”
তিনি রাহিমাহুল্লাহ আরো বলেছেন,
“যারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের আক্বীদাহর
বিরোধিতা করে, তাদের
সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই।”
[আল-আক্বীদাহ আত-তাহাবীয়া,
৭৩ ও ১০৫ নং পয়েন্ট]
সুতরাং মুসলমান হিসেবে আমাদের জন্য ওয়াজিব হচ্ছে আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের
অনুসরণ করা এবং এর বাইরে নতুন সৃষ্ট সমস্ত বিদাতী দল ও মতবাদ থেকে নিজেদেরকে দূরে
রাখা। আল্লাহ আমাদেরকে নাজাতপ্রাপ্ত দলের অন্তর্ভুক্ত করুন, আমিন।
______________________
এক ভাই আমাদেরকে প্রশ্ন করেছেনঃ এখন বর্তমানে আহলে সুন্নাত কারা?
উত্তরঃ বর্তমানে আহলে সুন্নাত এর মাঝে আছে সবার প্রথম হচ্ছেন, জীবিত বড় আলেম যারা তারা।
তাদের মাঝে রয়েছেনঃ
- সৌদি আরবের আল্লামাহ শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হাফিজাহুল্লাহ,
- মদীনার সবচাইতে বড় আলেমদের মাঝে আল্লামাহ আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ হাফিজাহুল্লাহ,
- ভারত থেকে শায়খ ওয়াসী উল্লাহ আব্বাস হাফিজাহুল্লাহ (যিনি বর্তমানে কাবা
শরীফের সম্মানিত মুদাররিস ও ডেপুটি মুফতি),
- মিশরের শায়খ সাঈদ রাসলান হাফিজাহুল্লাহ,
- আরব আমিরাতের শায়খ ফালাহ ইসমাঈল মান্দেকার হাফিজাহুল্লাহ,
এমন অন্যান্য বড় আলেমরা হচ্ছেন বর্তমানে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের
প্রতিনিধি। আর সাধারণ মানুষের মাঝে যারা ক্বুরান, সুন্নাহ, সাহাবাদের আদর্শ এবং সেই নীতির আলোকে জীবিতি আলেমদের অনুসরণ করেন, তারাই হচ্ছেন প্রকৃত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এর অনুসারী।