সোমবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৪

রোযা সম্পর্কে জরুরী কিছু মাসয়া’লাঃ পর্ব- ২



রোযা সম্পর্কে জরুরী কিছু মাসয়া’লাঃ পর্ব- ২

নিচের প্রশ্নের উত্তরগুলো যারা জানেন না তারা সতর্ক হন – আপনি হয়তো ইসলাম সম্পর্কে এর চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ অনেক জিনিসই আসলে জানেন না। মনে রাখবেন, অজ্ঞতা মানুষের বড় দুশমন। আজকে হিন্দুরা মূর্তি পূজার করে, নামধারী ভেজাল মুসলিমরা পহেলা বৈশাখে মূর্তিপূজারীদের জাহেলিয়াতের অনুকরণ করে – এর বড় কারণ হচ্ছে অজ্ঞতা। এইভাবে আপনি হয়তো জানেনই না অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিস, না জেনে হারাম, শিরক, বেদাতে ডুবে আছেন, নাউযুবিল্লাহ।

ফেইসবুকের ফেতনার মাঝে ডুবে না থেকে, মুনাফেকীর গান না শুনে, টিভিতে জেনা-ব্যভিচার না দেখে, বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ডের নষ্টামিতে না জড়িয়ে, অশ্লীলতা ও পাপাচারে লিপ্ত না হয়ে দ্বীন শেখার পেছনে সময়টাকে কাজে লাগান – আল্লাহু আ’লাম, এর উসীলায় আপনার ভাগ্যের (জান্নাত-জাহান্নাম) ফয়সালা পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।

   রমযানে ফরয রোজা অথবা রমযানের বাইরে রমযানের কাজা রোজা রাখতে হলে আগের দিন রাতের বেলাতেই নিয়ত করে রাখতে হবে, নয়তো রোজা হবেনাঃ

*রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি ফজরের আগে রোযা রাখার নিয়্যাত না করবে তার রোযা (সিদ্ধ) নয়।
আবূ দাঊদ, তিরমিযী, আহমাদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ; তিরমিযী ও নাসাঈ। ইবনু খু্যাইমাহ্ ও ইবনু হিব্বান একে সহীহ বলেছেন। বুলুগূল মারাম ৬৫৬।

**দারাকুনীতে আছে, যে রাত্রিতে রোযা রাখার নিয়্যাত না করবে তার রোযা হবে না। (এটা ফরয রোযার জন্য)।

   কিন্তু নফল/সুন্নত রোজা রাতের বেলা নিয়ত না করে ঘুমালেও অন্তত দুপুর হওয়ার আগে কেউ যদি রোযার নিয়ত করে তাহলে রোজা রাখতে পারবে এবং সেই রোজা শুদ্ধ হবে। 

আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত; তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একদা আমাদের কাছে এসে বললেনঃ তেমাদের কাছে কি কোন খাবার আছে? আমরা বললাম, না। তখন তিনি বললেন, তবে আমি এখন রোযাদার। তারপর আর একদিন তিনি আমাদের কাছে আসলেন, আমরা বললাম, আমাদের জন্য মালিদা উপহার দেয়া হয়েছে। তিনি বললেনঃ তা আমাকে দেখাও আমি কিন্তু রোযাদার রূপে সকাল করেছি, তারপর তিনি খাবার খেলেন।
সহীহ মুসলিম, বুলুগূল মারাম ৬৫৭।
[নফল রোযার নিয়্যাত দুপুরের আগ পর্যন্ত করা যায় আর দুপুরের আগে তা ভাঙ্গাও চলে।]

   রোযার কাফফারা কি?
বেশিরভাগ মানুষ মনে করে একটা রোজা ভাংলে ৬০টা রোজা রাখতে হয়। এটা ঠিকনা। কেউ যদি রমজানের ফরয রোজা (অথবা রমজানের ফরয রোজা অন্য সময় কাযা রাখা অবস্থায়) স্ত্রী সহবাস করে তাহলেই শুধু মাত্র তার উপর রোযার কাজা ও কাফফারা দেওয়া ওয়াজিব হয়। এছাড়া অন্যভাবে কেউ যদি ইচ্ছাকৃত/অনিচ্ছাকৃত রোজা ভাঙ্গে তাহলে কোনো কাফফারা দিতে হয়না, তোওবা করবে আর এর পরিবর্তে শুধুমাত্র পরে একটা রোজা কাযা রাখবে।
স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে রোজা ভাংলে রোযার কাফফারা হচ্ছেঃ
১. একজন দাস মুক্ত করা।
এটা সম্ভব না হলেঃ
২. একটানা দুইমাস (৬০দিন) রোজা রাখা। এটা একাধারে রাখতে হবে, মাঝখানে বিরতি দিলে আবার নতুন করে শুরু করতে হবে। অবশ্য নারীরা ঋতুর কারণে বিরতি দিতে পারবে।
এটা সম্ভব না হলেঃ
৩. ৬০ জন দরিদ্র মিসকীনকে খাওয়াতে হবে।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট কোন একটি লোক এসে বললোঃ হে আল্লাহর রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমি ধ্বংস হয়ে গেছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ কোন্ বস্তু তেমাকে ধ্বংস করেছে? সে বললো রামাযানের রোযা রেখে স্ত্রীর উপর পতিত হয়েছি(অর্থা স্ত্রী সঙ্গম করে ফেলেছি)।. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ তুমি কি কোন দাস-দাসীকে মুক্তি দেওয়ার ক্ষমতা রাখ? সে বললোঃ না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ দু-মাস কি একনাগাড়ে রোযা রাখতে পারবে? সে বললোঃ না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ ৬০ জন দরিদ্রকে খাওয়াতে পারবে? সে বললোঃ না। তারপর সে বসে রইল। তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট একটি খেজুরের ঝুড়ি বা থলে এলো, যাতে কিছু খেজুর ছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বলেনঃ এইগুলি তুমি সাদকা করে দিবে। সে বললোঃ আমার থেকে বেশি দরিদ্রকে কি দান করতে হবে? মাদীনার দুটি পাহাড়ের মধ্যবর্তী একালায় আমার থেকে বেশি অভাবী পরিবার আর নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার এরূপ কথা শুনে হেসে ফেললেন যাতে তাঁর চোয়ালের ভিতরের দাঁতগুলো পর্যন্ত প্রকাশ হয়ে পড়লো। তারপর তিনি বললেনঃ যাও এটা তোমার পরিবারকে খাওয়াও।
বুলুগুল মারামঃ হাদীস নং- ৬৭৬।
বুখারী, মুসলিম, আবূ দাঊদ, তিরমিযী, আহমাদ, নাসাঈ, ইবনু মাজাহ্; শব্দগুলো মুসলিমের।

   কেউ যদি অতীতে মুসলিম থাকা অবস্থায় রোজা ভেঙ্গে থাকে, সেটা ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় হোক – তাকে হিসাব করে সেই রোযাগুলো রমাজানের বাইরে কাজা আদায় করে নিতে হবে, একটার পরিবর্তে একটা রোজা কাজা। আর এটা পরবর্তী রমজান আসার আগেই করতে হবে।

   কেউ যদি কাজা রোজা রেখে মারা যায় তাহলে তার আত্মীয়-স্বজনরা সেগুলো তারপক্ষ থেকে আদায় করে নিবে।

আয়িশা (রাঃ) হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে মৃত্যুমুখে পতিত হবে আর তার উপর রোযা কাযা থাকবে তার ঐ কাযা রোযা রাখবে তার উত্তরাধিকারী।
বুখারী, মুসলিম, বুলুগূল মারাম ৬৭৯

   নফল রোজা কেউ ইচ্ছা করলে যেকোন সময় ভেঙ্গে ফেলতে পারে, আর এরজন্য কাজা বা কাফফারা কিছুই দিতে হবেনা। তবে ইচ্ছা করলে একদিন ভেঙ্গে অন্যদিন রাখতে পারে, যেমন মাসের ৩দিন রোজা পূর্ণ করার জন্য।

   কারো উপর যদি গোসল ফরয হয় আর সাহরীর সময় উঠতে না পারে ফযর হয়ে যায়, তবুও কোনো সমস্যা নেই। উঠে রোযার নিয়ত করে বা রাতে যদি নিয়ত করা থাকে, গোসল করে ফযর পড়ে রোজা রাখতে পারবে।

আয়িশা ও উম্মু সালামা (রাঃ) হতে বর্ণিত; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্ত্রী সঙ্গমজনিত জুনুবী(নাপাক) অবস্থায় সকাল করতেন, তারপর (ফজরের নামাযের আগে) গোসল করতেন ও রোযা রাখতেন। বুখারী, মুসলিম।
মুসলিমে কেবল উম্মু সালামার বর্ণনায় আছে তিনি ঐরূপ রোযার কাযাও করতেন না।
বুলুগূল মারাম ৬৭৮

   নারীরা যদি ফযর ওয়াক্ত হওয়ার আগেই ঋতু থেকে পবিত্র হয়ে যায় তাহলে তারা ঐদিন রোজা রাখতে পারবে। রমযান মাস হলে ঐদিন রোজা রাখা ফরয হবে।

   নারীরা যদি ঋতুর কারণে বা কেউ যদি অন্য জায়েজ কারণে (সফর, অসুস্থতা) রোজা ভংগ করে তাহলে রমযান মাসে দিনের বেলাতেও খাওয়া দাওয়া করতে পারবে – কোন বাঁধা নেই।


   স্বপ্নদোষ হলে, চুল-দাড়ি কাটলে, রক্ত বের হলে রোজা ভাঙ্গেনা।