সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০১৪

জামাতে নামায কিভাবে পড়তে হয়?



প্রশ্নঃ জামাতে নামায কিভাবে পড়তে হয়?

উত্তরঃ জামাতে নামায পড়া সম্পর্কে নারী ও পুরুষের সকলের জন্য যা জানা জরুরীঃ

১. জামাতে নামায পড়া পুরুষদের জন্য ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক), উপযুক্ত কারণ ছাড়া জামাত ত্যাগ করলে গুনাহ হবে যার জন্য তোওবা করতে হবে।

পুরুষদের জন্য জামাতে নামায পড়া ওয়াজিবঃ


যে কারণে জামাত ত্যাগ করা জায়েজঃ-
ক. এমন অসুস্থতা যার কারণে মসজিদে যাওয়া সম্ভব না বা জামাতে শরীক হওয়া সম্ভব না
খ. জামাতে শরীক হওয়ার জন্য রাস্তায় জীবন হানির আশংকা
গ. বৃষ্টি
ঘ. খাবার দেওয়া হলে আর খাওয়ার ইচ্ছা বা ক্ষুদা থাকে

আর নারীদের জন্য যদি উপযুক্ত পরিবেশ থাকে ও ফেতনা না থাকে, তাহলে মসজিদে গিয়ে অথবা বাসায় নারীরা সবাই একসাথে জামাত করে নামায পড়া জায়েজ আছে।

২. নারীদের জন্য উত্তম হচ্ছে ঘরেই নামায পড়া, কিন্তু মসজিদে নামায পড়া তাদের জন্য জায়েজ। তবে মসজিদে যদি সুন্দর নিরাপদ ব্যবস্থা থাকে আর নামাযের পরে দারস (ইসলামী ওয়াজ, নসীহতের) অনুষ্ঠান থাকে অথবা শুক্রবারে খুতবা ও জুমুয়াহ এইগুলোতে সব দিক ম্যানেজ করে অংশগ্রহণ করতে পারলে ভালো – এতে তারা দ্বীন শিখতে পারবে, তাদের ঈমান মজবুত হবে। আর মসজিদে যাওয়ার সুযোগ যদি না থাকে তাহলে বাসায় নারীরা জামাত করে পড়তে পারেন। এটা তাদের জন্য জরুরী না, তবে এর সুবিধা হচ্ছে একত্রে নির্দিষ্ট সময় করে সবাই একসাথে পড়লে সবার সময়মত নামায পড়ার অভ্যাস হবে। আর কম বয়ষ্ক বা যারা অলস নামায পড়তে চায়না, অন্যরা তাদেরকে শিখাতে পারবে বা তাদের নামাযের দিকে লক্ষ্য রাখতে পারবে।

৩. সর্বনিম্ন ২ জনেই জামাত করা যায়। ২ জন পুরষ অথবা ২ জন নারী জামাত করতে হলে দুইজন পাশাপাশি দাঁড়াবেন। আমাদের দেশে পুরুষদের একজন এক পা আগে দাঁড়ায়, এর পক্ষে কোন সহীহ হাদীস নেই। সহীহ হাদীসে আছে, মুক্তাদী (যিনি অনুসরণ করবেন) তিনি ইমামের (যিনি নামায পড়াবেন) ডান পাশে দাড়াবে। আর একজন নারী ও কোন মাহরাম পুরুষ যদি ওজর বশত মসজিদে নামায না পড়ে থাকে আর তারা জামাত করতে চায় তাহলে পুরুষ এক কাতার সামনে দাঁড়াবে আর নারী মুক্তাদী হিসেবে তাকে অনুসরণ করবেন। আর ২জনে জামাত পড়ছে এমন অবস্থায় যদি ৩য় একজন আসে তাহলে ২টা কাজের যেকোন একটা করতে হবে। যদি পেছানোর জায়গা থাকে তাহলে তিনি মুক্তাদীকে আস্তে করে টেনে এক কাতার পেছনে নিয়ে আসবে। অথবা সে যদি তাদের সাথেই দাঁড়িয়ে পড়ে অথবা পেছানোর জায়গা না থাকে তাহলে ইমাম এক কাতার সামনে চলে যাবে। এতে নামায ভাংবেনা। সামনে পেছনে কোন জায়গা নেই তাহলে এমন নিরুপায় হলে সবাই এক কাতারে নামায পড়তে পারবে।
উল্লেখ্য, নারীরা যদি ৩ বা আরো বেশি মিলে জামাত করে তবুও যিনি ইমাম হবেন তিনি প্রথম কাতারে মুক্তাদীদের সাথেই দাঁড়াবেন। পুরুষ ইমামের মতো এক কাতার সামনে দাঁড়াবেনা। আর কোন অবস্থাতেই কোন নারী কোন পুরুষের নামাযের ইমামতি করতে পারবেনা।

৪. যদি বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ হয়, তাহলে সবার আগে ইমাম দাঁড়াবে, এর পরের কাতারে পুরুষরা, আর পুরুষদের কাতারের পরে নারীরা দাঁড়াবে। এমনকি ছেলেও যদি হয় তবু মা ছেলের পেছনের কাতার দাঁড়াবে। নারী পুরুষ পাশাপাশি দাঁড়াবেনা, বা পুরুষের কাতারের আগে নারীরা দাঁড়াবেনা। এটা আপত্তিকর কিছুনা বা কারো জন্য সম্মান কম-বেশি এমন কিছুনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মসজিদে নারী পুরুষ সবাই এসে নামায পড়তো, এইভাবে নামায পড়লে নারী পুরুষের মিশ্রণের কোন সুযোগ থাকেনা। আর নামায শেষ হলে আগে নারীরা পেছন থেকে উঠে চলে যাবে, তারা চলে যাওয়ার পরে পুরুষেরা যাবে। এতে করে কোনভাবেই নারী পুরুষের দেখাদেখি, কথা বলা এইগুলোর সুযোগ থাকছেনা। 

৫. আযান ও ইকামতঃ আযান দেওয়া হচ্ছে ফরযে কিফায়া। এলাকার একটা মসজিদে আযান দিলে বাকী সবাই যদি না দেয় তবুও নামায হয়ে যাবে। তবে আযান দিলে সবাই সওয়াব পাবে। তাই একাকী নামায পড়লে বা যখন মসজিদের বাইরে (অথবা মসজিদে পরে দ্বিতীয় জামাত করলে) নারী বা পুরুষেরা জামাত করে তাহলে আযান না দিলেও চলবে। আর একাকী নামায পড়লে নারী বা পুরুষের সবার জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে ইকামত দেওয়া, তবে একাকী ইকামত না দিয়ে নামায পড়লে নামায হয়ে যাবে। তবে কেউ যদি ইকামত দেয় সে সওয়াব পাবে। আর গায়ের মাহরাম পুরুষরা শুনতে না পারলে নারীরাও ইকামত জোরে বলবে, গায়ের মাহরাম পুরুষ থাকলে চুপে চুপে বা নিচু স্বরে না শুনিয়ে ইকামত দিবে।
ইকামত কি?
জামাত শুরু করার আগে আরেকবার আযান দিয়ে ডাকা হয়, একে ইকামত বলা হয়। ইকামত আযানের মতোই, তবে আযানে যেমন কালিমাগুলো ২ বার করে বলতে হয় সেখানে ইকামতে একবার করে বলা সুন্নত। আর অতিরিক্ত একটা কালিমা “ক্বাদ কামাতিস-সালাহ” এটা ২ বার বলতে হয়। দলীল -
“বিলাল (রাঃ) কে আযানের বাক্য দু’বার করে ও ইকামতের বাক্য বেজোড় করে বলার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আনাস (রাঃ) থকে বর্ণিত। তিনি বলেন, “বিলাল (রাঃ)কে আযানের বাক্যগুলো দু’ দু’বার এবং ইকামতের শব্দগুলো বেজোড় বলার নির্দেশ দেওয়া হলো। ইসমায়ীল (রঃ) বলেন, আমি এ হাদীস আইয়্যূবের নিকট বর্ণনা করলে তিনি বলেন, তবে “কাদ্ কামাতিস্-সালাহ’ ব্যতীত।”।
সহীহ আল বুখারীঃ ৫৭৯, ৫৮১, তিরমিযীঃ ১৯৩।

সুতরাং, উত্তম হচ্ছে সহীহ হাদীসের উপর আমল করে ইকামতে কালিমাগুলো একবার করে বলা। সহীহ হাদীস অনুযায়ী শক্তিশালী মত হচ্ছে, ইকামত হবে এইরকমঃ
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার
আশ-হাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
আশ-হাদু আন্না মুহা’ম্মাদার রাসুলুল্লাহ
হা’ইয়্যা আ’লাস-সালাহ
হা’ইয়্যা আ’লাল ফালাহ
কাদ্ কামাতিস্-সালাহ, কাদ্ কামাতিস্-সালাহ
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।

৬. জামাতের মধ্য থেকে একজন ইকামত দিবে। ইকামত দেওয়ার পরে ইমাম “আল্লাহু আকবার” জোরে বলে নামায শুরু করবে। ইমাম শুরু করার পরে মুক্তাদীরা চুপে চুপে আল্লাহু আকবার বলে নামায শুরু করবে। খেয়াল রাখতে হবে যিনি ইমাম তার, যে তিনি তাকবীরগুলো অবশ্যই জোরে বলেন। নয়তো মুক্তাদীরা সিজদাতেই থেকে যাবে।

৭. কেউ আগে থেকে নামায পড়ছে, তার সাথে পরে কেউ এসে জামাত করতে পারবে। আমাদের দেশের মসজিদগুলোতে জামাত হয়ে গেলে এর পরে যারা আসে তারা একা একা নামায পড়ে। এটা মারাত্মক ভুল, এতে করে তারা ২ জন বা যারা একা পড়বেন তারা সবাই জামাতে ২৭গুণ সওয়াব থেকে বঞ্চিত হল। এমন করবেন না, হিংসা বিদ্বেষ বা সংকোচ করবেন না। একটু অপেক্ষা করবেন কারো আসার জন্য, তাকে জামাতে পড়ার আহবান জানিয়ে যে বয়সে বড় সে ইমাম হয়ে বা যে ভালো পারে সে ইমাম হয়ে জামাতে নামায পড়ে ২জনেই ২৭গুণ সওয়াব পাবেন। আর যারা বলে মসজিদে ইমাম জামাত পড়ে ফেললে দ্বিতীয় জামাত করতে পারবেনা – এর কোনো ভিত্তি নেই – বরং এটা সুন্নত বিরোধী, সাহাবা ও তাবেয়ীদের বিরোধী কথা। 

৮. ফরয নামায পড়ছে কেউ ইচ্ছা করলে তার ইমামতিতে সুন্নত/নফল পড়তে পারবে, সুন্নত/নফল নামাযীর ইমামতিতে কারো ফরয নামায হবে, কেউ আসর পড়ছে তার ইমামতিতে কারো যোহর কাযা নামায হবে।
(৭+৮) পয়েন্টের দলীল - 
আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু আনহ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, একবার রাসূল (সাঃ) এর সালাত আদায়ের পর জনৈক ব্যক্তি মসজিদে নবীতে এল। রাসূল (সাঃ) বললেন তোমাদের মধ্যে কে এই ব্যক্তির সাথে সাওয়াব লাভের ব্যবসা করতে চাও? তখন এক ব্যক্তি উঠে দাঁড়াল এবং তার সাথে সালাত আদায় করল।
আত্ তিরমিজি, হাদীসটি সহীহ, শায়খ আলবানীর তাহকীক, হাদীস ১২০।

৯. ইমাম মুক্তাদী সবাই চুপে চুপে সানা, আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ পড়বে।

১০. যোহর ও আসর নামাযের কেরাত হচ্ছে “সিররী” বা গোপনে। অর্থাৎ ইমাম নামাযে শুধুমাত্র তাকবীরগুলো জোরে বলবে যাতে করে সবাই তাকে অনুসরণ করতে পারে। আর মাগরিব, এশা, ফযর এই ৩ ওয়াক্তের কেরাত হচ্ছে “যেহরী” অর্থাৎ প্রকাশ্য বা জোরে। যিনি ইমাম হবেন তিনি এই ৩ ওয়াক্তের শুধু ফরয নামাযের প্রথম ২ রাকাতে সুরা ফাতেহা ও অন্য সুরা বা কেরাত জোরে পড়বেন। আর বাকী সব রাকাতে ও সিররী নামাযের সব রাকাতেই ইমাম ও মুক্তাদীরা সুরা ফাতেহা ও কেরাত চুপে চুপে পড়বেন।

১১. সুরা ফাতেহা সবার জন্য পড়া ওয়াজিব, যেহরী, সিররী সব নামাযে। তাই ইমাম সুরা ফাতেহা আস্তে বা জোরে যাই পড়ুক, মুক্তাদীরা চুপে চুপে সুরা ফাতেহা পড়ে নেবে।

১২. ইমাম “গাইরিল মাগদ্বুবি আ’লাইহিম ওয়ালাদ্বোয়াল্লিন” বললে মুক্তাদী ও ইমাম সবার জন্য সুন্নত হচ্ছে আমীন জোরে বলা।
জামাতে আমীন জোরে বলার হাদীসঃ
ওয়াইল ইবনে হুজর (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) “ওয়ালাদ্দল্লীন” পাঠ করার পর জোরে “আমীন” বলতেন।
সুনান আবু দাউদ, কিতাবুস স্বলাত অধ্যায় ২, হাঃ ৯৩২, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ। হাদীসটি সহীহ। 

মুক্তাদীর সুরা ফাতেহা পড়া শেষ না হলেও তিনি ইমামের সাথে আমিন বলে এর পরে বাকী অংশ শেষ করবে।

সুরা ফাতেহা পড়তে হবেঃ

http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/04/blog-post_3255.html

১৩. এর পরে ইমাম অন্য সুরা কেরাত পড়বে। যেহরী নামাযের প্রথম ২ রাকাতে জোরে পড়বে, মুক্তাদীরা অন্য সুরা পড়বেনা – ইমামের তেলাওয়াত শুনবে। আর সিররী নামাযের প্রথম ২ রাকাতে ইমাম, মুক্তাদী সবাই নিজেদের মতো চুপে চুপে কেরাত পড়বে। উল্লেখ্য ফরয নামাযের ৩,৪ রাকাতে ফাতেহার পরে অতিরিক্ত কেরাত পড়া ফরয নয়। তাই না পড়লেও হবে, তবে মুক্তাদীর যদি ফাতেহা পড়া ইমামের আগেই শেষ হয়ে যায়, সে বাকী সময় চুপ করে না থেকে আয়াত পড়তে পারে, সওয়াব পাবে।

১৪. কেরাত পড়া হলে ইমাম আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যাবে। ইমাম আগে তাকবীর বলবে, রুকুতে যাবে – এর পরে মুক্তাদী তাকবীর বলে রুকুতে যাবে। আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ ইমাম যা করে সাথে সাথেই সেই কাজ করে এটা ঠিকনা, এটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদেশের বিপরীত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন ইমাম তাকবীর দিবে, রুকু/সিজদা করবে এরপরে মুক্তাদী ইমামের অনুসরণ করবে, ইমামের সাথে সাথে করে মুক্তাদী ইমামের সাথে প্রতিযোগিতা করবেনা। আর রুকু/সিজদা কোন কাজ ইমামের আগে মুক্তাদীর জন্য করা মারাত্মক হারাম। হাদীসে বলা হয়েছে কেউ যদি করে তাকে গাধার মতো বানিয়ে দেওয়া হতে পারে। আর ইমামের পরে আবার খুব বেশি দেরীও করবেনা।

১৫. ইমাম মুক্তাদী সবাই রুকু, সিজদার তাসবীহ/দুয়া চুপে চুপে পড়বে।

১৬. রুকুর তাসবীহ পড়ে ইমাম জোরে “সামি‘আল্লা-হুলিমান হা’মিদাহ” বলে দাঁড়াবে। মুক্তাদীরা ইমামের পরে দাঁড়াবে এবং দাঁড়িয়ে ইমাম ও মুক্তাদী সবাই বলবে “রব্বানা ওয়া লাকাল হা’মদ”…।

১৭. ইমাম তাকবীর দিয়ে সিজদাতে যাবে। অনুরূপভাবে, আগে ইমাম তাকবীর দিবে, সিজদাতে যাবে। ইমাম মাটিতে মাথা স্পর্শ করে সিজদাতে গেলে এরপরে মুক্তাদীরা সিজদা করবে, ইমামের সাথে সাথেই করবেনা। এরপরে ইমাম মুক্তাদী সবাই দুয়া, তাসবীহ পড়বে, তাশাহুদ, দুরুদ, চুপে চুপে। শুধুমাত্র ইমাম তাকবীরগুলো জোরে বলবে, মুক্তাদীরাও তাকবীর বলবে কিন্তু চুপে চুপে।

১৮. ৩য় ও ৪র্থ রাকাতে সব সময়ে সুরা ফাতেহা চুপে চুপে পড়বেন ইমাম ও মুক্তাদী সবাই।

১৯. এইভাবে বাকী নামায শেষ করে সালাম ফেরাবে এবং নামায শেষ করবে।

২০. ইমাম কেরাত ভুল পড়লে মুক্তাদী সঠিক তেলাওয়াত জোরে বলে দেবে, ইমাম শুনে ঠিক করে নেবে। একাধিক বার ঠিক করে দেওয়া যাবে, এর জন্য সিজদা সাহু দিতে হবেনা।

২১. রুকু সিজদা বা বৈঠকে কোন ভুল করলে পুরুষ মুক্তাদী সুবহা’নাল্লাহ এক বা একাধিকবার বলে ইমামকে সতর্ক করে দিবে। আর নারীরা এক হাতের পিঠে অন্য হাতে তালি দিয়ে সতর্ক করবেন। অবস্থা যদি এমন হয় যে ঠিক করতে হবে তাহলে ইমাম সাথে সাথে ঠিক করে নেবে, আর যদি এমন হয় যে এখন আর ঠিক করা যাবেনা (যেমন ৩ বার সিজদা করে ফেললো) কিন্তু এর ফলে ইমাম বুঝতে পারবে যে সে ভুল করেছে, শেষ বৈঠকে ইমাম সিজদা সাহু দিবে। মুক্তাদীর যদি সতর্ক করতে না পারে, বা সালাম ফেরানোর পরে মনে পড়ে বা বুঝতে পারে তাহলে তখনই ইমামকে বলবে আর ইমাম মুক্তাদী সবাই তখনই সিজদা সাহু দিবে।  

২২. আগে থেকে জামাত হচ্ছে – পরে কেউ আসলে সে যদি রুকু পায় তাহলে জামাত পেয়ে গেলো। তবে সে রুকু পাওয়ার জন্য দৌড়ে যাবেনা, এটা হারাম। আস্তে ধীরে যাওয়ার পরে যদি আল্লাহু আকবার বলে আগে তাকবীরে তাহরীমা বলে নামায শুরু করে এর পরে রুকুতে যায় এবং অন্তত একবার তাসবীহ বলার মতো সময় পায় ইমাম রুকু থেকে দাঁড়ানোর আগে, তাহলে সে ঐ রাকাত পেলো। আর যদি রুকু নাও পায় তবুও সে তাকবীরে তাহরীমা বলে সিজদা বা বৈঠকে যাবে। আমাদের দেশে অনেক লোক দাঁড়িয়ে থাকে ইমাম পরের রাকাত শুরু করার জন্য। এটা ভুল, এইলোকগুলো নিজেরা কুরান হাদীস চর্চা করেনা, তাদের ইমাম সাহেবরা তাদেরকে শিক্ষা দেয়না – এইজন্য এই সাধারণ নিয়মগুলো তারা জানেনা। বেশিরভাগ ইমাম সাহেবরা কোনোদিন জামাতে নামায কিভাবে পড়তে হয়, এই কথাগুলোই তার মুক্তাদীদের বলেনা, এইগুলো বলা নিজেদের দায়িত্ব মনে করেনা। তারা মনে করে নামায পড়ানো একটা চাকরী, শুধু নামায পড়াবো এতেই হবে, মুক্তাদীদেরকে যে ইসলাম শেখাতে হবে, খুব কম ইমামই এটা নিজের দায়িত্ব মনে করে। আর অজ্ঞ, ফাসেক, গুন্ডা প্রকৃতির কিছু লোক নিজেদের ক্ষমতা দেখানোর জন্য মুতাওয়াল্লি হয়ে বসে থাকে – এই শ্রেণীর মানুষগুলোর কারণে মসজিদ চলে ব্যক্তিগত খেয়াল খুশি মোতাবেক, কুরান সুন্নাহ অনুযায়ী না। এদের পরিবর্তন করে যোগ্য ও প্রকৃত শিক্ষিত ইমাম ও মুতাওয়াল্লি বসালেই মসজিদগুলোর দ্বারা দ্বীন কায়েম সম্ভব।

২৩. “মাসবুক” কিভাবে নামায পুরা করবেন?


২৩. সর্বশেষঃ মসজিদে যদি গিয়ে দেখেন ইমাম শেষ বৈঠকে আছেন অথবা শেষ রাকাতের রুকু শেষ করে ফেলেছেন, তাহলে ঐটাতে শরীক হলে আপনি জামাত পেলেন না, ২৭ গুণ সওয়াবও পাবেন না। কারণ সালাত পাওয়ার শর্ত হচ্ছে, অন্তত এক রাকাত (রুকু) পেতে হবে। যদি এমন সম্ভবনা থাকে যে, ইমামের সালাত শেষ হলে আলাদা অন্তত ২ জনে জামাত করতে পারবেন, তাহলে জামাতে শরীক না হয়ে অপেক্ষা করবেন। ইমামের সালাম ফেরানো শেষ হলে এর পরে নতুন কেউ আসলে তার সাথে জামাত করবেন। আর ২য় জামাত করতে না পারলে বাসায় ফিরে না গিয়ে সেটাতেই শরীক হবেন। উল্লেখ্য জুমুয়ার নামাযে অন্তত ২য় রাকাতের রুকু পেলে জুমুয়ার সওয়াব পাবেন, ইমাম সালাম ফেরালে দাঁড়িয়ে বাকি ১ রাকাত পূর্ণ করে নেবেন। আর অন্তত ২য় রাকাতের রুকুর পর পেলে আপনি জুমুয়াহ মিস করলেন আর জুমুয়াহ একা পড়া যায়না, আপনি ঐ জামাতে শরীক হলে ইমাম সালাম ফেরালে আপনি দাঁড়িয়ে যোহরের ৪ রাকাত ফরয পড়বেন। তবে যদি অন্য কোথাও একটু দেরীতে জামাত হয় পাশের মসজিদে তাহলে দ্রুত সেটাতে ট্রাই করে দেখতে পারেন, জুমুয়াহ পান কিনা। যোহরের তুলনায় জুমুয়াহ অনেক বেশি সওয়াব এতে কোনো সন্দেহ নাই।