শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০১৪

কিছু আলেমদের নাম ও পরিচয়


আমাকে একজন জিজ্ঞাস করলো আচ্ছা অমুক ইসলামি সেলেব্রিটি (সে একজন টিভি/ইউটিউব বক্তা!) অথচ সে নিজেই নিকাব পড়েনা। চেহারা ঢেকে রাখা যদি ওয়াজিব হয়ে থাকে তাহলে সে কি করে উস্তাদা হতে পারে?

আরেকজন মেসেজ করে কমপ্লেইন করলো, ইলমের ব্যপারে এতীম এক ভাই একজন আধা-হিজাবী নারীর ভিডিও দিয়ে বলছে, আমাদের পরিবারের লোকেরা যদি এইরকম হিজাব করতো! অথচ গায়ের মাহরাম নারীদের ছবি প্রচার করাই জায়েজ না, সেখানে মাথায় শুধু একটা স্কার্ফ দিয়ে রংগিন পোষাকে চেহারা দেখিয়ে এসে লেকচার দিবে?
·      লেকচারের বিষয়বস্তু বলতে পারছিনা, কারণ অরুচিকর এই ভিডিও দেখা জায়েজ না, যদিওবা সেটা হিজাবের উপরে লেকচার দিক না কেনো!

যাইহোক আপনারা এইরকম আধা-ইসলামিক বক্তা ও লেখক থেকে সাবধান থাকবেন। কেয়ামতের একটা লক্ষণ হচ্ছে মূর্খ বক্তা বেশি হবে আর আলেম কম হবে। আর বিশেষ করে অজ্ঞ নারী সেলেব্রিটি/বক্তা/লেখকদের থেকেও সাবধান থাকবেনআমার ফ্রেন্ডলিস্টের অনেকেই নারী সেলেব্রিটিদের লেখা শেয়ার করে, আমি যতটুকু দেখলাম, এদের অনেকেই ভালো কলম চালাতে পারে, কিন্তু ইসলাম আন্ডারস্ট্যান্ডিং এ অনেকের বড়রকমের ত্রুটি আছে। অনেক সময় এরা আবেগবশত হক্কের বিরুদ্ধে, আলেমদের বিরুদ্ধে লেখা শুরু করে - তাই সাবধান!

আমি একথা বলছিনা, নারী কেউ আলেম হতে পারবেনা। মা আয়িশাহ (রাঃ) অনেকে তাবেয়ীর শিক্ষিকা ছিলেন, পূর্ণ হিজাব পর্দা করে পর্দার আড়াল থেকে তিনি তাদেরকে হাদীস ও দ্বীন শেখাতেন। এছাড়া সমকালীন বড় বড় পুরুষ সাহাবারাও তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ নিতেন। কিন্তু এইগুলো ইতিহাসে কম, আপনি এখনো যদি খোঁজ নিয়ে দেখেন - অনেক নারীই আসলে দ্বীন শেখার ব্যপারে অনেক পেছনে। এর বড় একটা কারণ অবশ্য শিক্ষা ব্যবস্থার অভাব, সমাজ ও অভিভাবকদের মারাত্মক অবহেলা, সঠিক পরিবেশের অভাবসহ আরো অনেক কারণ আছে। তবে নারীদের প্রকৃতিগত যেই কারণ সেটা এই হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছেঃ

আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতরের সালাত আদায়ের জন্য রাসূলুল্লাহ্ (সা) ঈদগাহের দিকে যাচ্ছিলেন। তিনি মহিলাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় বললেনঃ হে মহিলা সমাজ! তোমরা সাদকা করতে থাক। কারন আমি দেখেছি জাহান্নামের অধিবাসীদের মধ্যে তোমরাই অধিক। তাঁরা আরয করলেনঃ কী কারনে, ইয়া রাসূলুল্লাহ্? তিনি বললেনঃ তোমরা অধিক পরিমাণে অভিশাপ দিয়ে থাক আর স্বামীর না-শোকরী করে থাক। বুদ্ধি ও দীনের ব্যাপারে ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও একজন সদাসতর্ক ব্যক্তির বুদ্ধি হরণে তোমাদের চাইতে পারদর্শী আমি আর কাউকে দেখিনি। তাঁরা বললেনঃ আমাদের দীন ও বুদ্ধির ত্রুটি কোথায়, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! একজন মহিলার সাক্ষ্য কি একজন পুরুষের সাক্ষের অর্ধেক নয়? তাঁরা উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ. তখন তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তাদের বুদ্ধির ত্রুটি। আর হায়য অবস্থায় তারা কি সালাত ও সিয়াম থেকে বিরত থাকে না? তাঁরা বললেন, ‘হাঁ. তিনি বললেনঃ এ হচ্ছে তাদের দীনের ত্রুটি।
এখানে একটা কথা বলা জরুরী মনে করছি – এই হাদীসের আলোকে এটা প্রমানিত হয়না যে, নারীদের তুলনায় পুরুষেরা শ্রেষ্ঠ। এখানে নারীদের দুটি প্রকৃতি উল্লেখ করা হয়েছে। আর কে শ্রেষ্ঠ এর ক্রাইটেরিয়া ভিন্ন।
কে নারী বা কে পুরুষ, এতে কোনো মর্যাদা বা শ্রেষ্ঠত্ব নেই। শ্রেষ্ঠত্ব হচ্ছে কে আল্লাহকে বেশি ভয় করে, কে বেশি দ্বীনদার
"হে মানব জাতি! আমি তোমাদেরকে একজন পুরুষ ও একজন নারী থেকে সৃষ্টি করেছি এবং তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করে দিয়েছি, যাতে করে তোমরা একে অপরকে চিনতে পারে। নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সেই ব্যক্তি সর্বাধিক সম্মান্তি যে সবচেয়ে বেশি মুত্তাকী (আল্লাহু ভীরু)।"
সুরা আল-হুজুরাতঃ ১২।
_______________________

তবে এই কথাগুলো যে শুধু নারী সেলেব্রিটিদের বেলায় প্রযোজ্য সেটা না। মোটামুটি কিছুটা জনপ্রিয়তা পেয়েছে এমন সেলেব্রিটি, ওয়াল্লাহি! বেশিরভাগই হচ্ছে স্পষ্ট বিদাতী, এদের আকীদাহ ও মানহাজগত মারাত্মক ত্রুটি, আলেম বিদ্বেষী (কারণ তারা নিজে নিজে ফাতওয়া দিতে ভালোবাসে বা প্রবৃত্তির গোলাম), লাইক পূজারী, ২-১ টাতো অসুস্থ (মানসিকভাবে)...

তাই এইসমস্ত ফেবু শায়খ আর এফ এম মুফতিদের বাদ দিয়ে সত্যিকারের আলেমদের কাছ থেকে দ্বীন শেখার চেষ্টা করুন। সমসাময়িক কিছু আলেমের নাম দেওয়া হলো।

আপনারা এই নামগুলো মুখস্থ করে নিন, আর সম্ভব হলে তাদের অনুবাদ করা বই পুস্তক সংগ্রহ করে পড়ার চেষ্টা করবনে। আলেমদের লেখা বই পুস্তক পড়লে ইসলাম মানা অনেক সহজ হবে।

বিগত শতাব্দীর ৩ জন শ্রেষ্ঠ আলেমের নামঃ

১. ইমাম আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ, যিনি শায়খ বিন বাজ নামে বেশি পরিচিত
সৌদি আরবের বিগত প্রধান মুফতি।
জন্মস্থানঃ সৌদি আরব। মৃত্যু ১৯৯৯।

২. যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস, ইমাম নাসির উদ্দিন আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ
জন্মস্থানঃ আলবেনিয়া। মৃত্যু ১৯৯৯।
সালাতের উপরে তার লেখা নবী (সাঃ) এর নামাযআপনারা অবশ্যই কিনবেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর নামায শেখার জন্য।
***নবী (সঃ) যেউভাবে নামায পড়তেনঃ শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ)
অনুবাদক এম এন সিরাজুল ইসলাম।

http://islamhousebd.wordpress.com/2011/08/30/নবী-সাল্লাল্লাহু-আলাইহি/

৩. আল্লামাহ, ফকীহ, শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন।
তার ফতোয়ার কিতাব আপনারা অবশ্যই কিনবেন...

***ফতোয়া আরকানুল ইসলামঃ
শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমিন (রহঃ)
তাওহীদ পাবলিকেশান।

http://www.quraneralo.com/fatawa-arkanul-islam/

ঈমান, নামায, যাকাত, হাজ্জ ও রোযা সম্পর্কে জরুরী মাসলা মাসায়েল ও ফতোয়ার উপরে বইটা সবার কাছে থাকা উচিত ও পড়ে আমল করা উচিত।
জন্মস্থানঃ সৌদি আরব। মৃত্যু ২০০১।

বর্তমানে জীবিত আছেন এমন ৩ জন শ্রেষ্ঠ আলেমের নামঃ

১. আল্লামাহ, শায়খ সালিহ আল-ফাওজান (হাফিজাহুল্লাহ)
বর্তমান দুনিয়াতে সবচাইতে বড় আলেমদের মধ্যে একজন। তাঁর আকীদাহ ও ফিকহের উপরে বহু কিতাব রয়েছে। কিতাবুত তাওহীদের ব্যখ্যা, বুলুগুল মারামের শরাহ (ব্যখ্যা গ্রন্থ), ফতোয়ায়ে ইসলামিয়া...
এছাড়া তিনি একজন কাজী ও সৌদি ফতোয়া বোর্ডের সদস্য। 
জন্মস্থানঃ সৌদি আরব।

২. মুহাদ্দিস, শায়খ আব্দুল মুহসিন বিন আল-আব্বাদ (হাফিজাহুল্লাহ)
হাদীসের উপরে আলেম, অত্যন্ত প্রবীন এই শায়খ নিয়মিত মদীনাহ ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে ও মদীনার হারামে দারস দেন। তার অনেক ছাত্র রয়েছে।
জন্মস্থানঃ সৌদি আরব।

৩. আল্লামাহ শায়খ উয়াসী উল্লাহ আব্বাস (হাফিজাহুল্লাহ)
তাঁর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আপনারা এই লেখাটা পড়তে পারেন।
জন্মস্থানঃ ইন্ডিয়া।

https://www.facebook.com/photo.php?v=697893493576734&set=vb.125167817515974&type=3&video_source=pages_video_set