রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৪

নামায কিভাবে পড়তে হবে? (পর্ব – ২, শেষ পর্ব)



নামায কিভাবে পড়তে হবে? (পর্ব – ২, আজকে এই সিরিজের শেষ পর্ব)

প্রথম পর্বের লিংক –

http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/04/blog-post_9712.html

আগের পোস্টে নামাযের যেই জিনিসগুলো বলা বাকী ছিলোঃ

১. নামাযে সানা পড়া সুন্নত। কিন্তু তাই বলে সানা না পড়ে নামায পড়ার চিন্তা করবেন না, সুন্নতগুলো হচ্ছে নামাযের সৌন্দর্য। তাই অন্তত ছোট-বড় যেকোন সানা পড়েই নামায শুরু করবেন ইন শা’ আল্লাহ।

২. নামাযে ভুল আমলঃ
আমাদের দেশে নামায শিক্ষা দেওয়ার সময় বলা হয় – নামাযে “কিয়াম” বা দাঁড়ানো অবস্থায় পুরুষেরা দুই পায়ের মাঝে ৪ আঙ্গুল ফাকা রাখবে আর নারীরা দুই পা মিশিয়ে রাখবে। এইটা সম্পূর্ণ বানোয়াট একটা কথা, কুরআন অথবা সহীহ হাদীসের কোথাও এই কথা লিখা নাই। সঠিক হচ্ছে নারী অথবা পুরুষ নিজের শরীরের গঠন অনুযায়ী আরাম ও স্বস্তিদায়ক হয় এমন পরিমান জায়গা দুই পায়ের মাঝে ফাঁকা রাখবে। এতে সে মধ্যমপন্থা অবলম্বন করবে, খুব বেশি ফাঁকা রাখবেনা আবার দুই পা এমনভাবে মিশিয়েও রাখবেনা যাতে করে দাড়াতেই কষ্ট হয়

৩. নামাযে সুরা ফাতেহা কিভাবে পড়তে হবে?

http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/04/blog-post_3255.html
 ____________________________________

রুকুঃ
সুরা ফাতিহা ও কিরাত পড়া শেষ করে একটু থামবেন (অন্তত এক শ্বাস নেওয়ার সমপরিমান সময়) যাতে করে কিরাত ও রুকুর মাঝে একটু বিচ্ছিন্নতা আসে। এর পরে তাকবীর বলে রুকুতে যাবেন। রুকুতে যাওয়ার আগে ও রুকু থেকে উঠার পরে “তাকবীরের তাহরীমার” মতো দুই হাত কাধ/কান পর্যন্ত তুলে ইশারা করা বা “রাউফুল ইয়াদাইন” করা সুন্নত। রুকুতে যাওয়ার আগে ও রুকু থেকে উঠার পরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুর আগে পর্যন্ত রাউফুল ইয়াদাইন করতেন, এই কথা অসংখ্য সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত। যারা বলে এই বিধান রহিত হয়ে গেছে, তাদের পক্ষে সহীহ কোন হাদীসের দলীল নেই। আবু দাউদের ২-১টা হাদীসে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসুদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত যেই হাদীসে বলে রাউফুল ইয়াদাইন করতে হবেনা, ইমাম আবু দাউদ নিজেই সেই হাদীসের ব্যপারে মন্তব্য করেছেন যে হাদীসটা সহীনা, যয়ীফ। আর এই জয়ীফ হাদীসের বিপরীতে রাউফুল ইয়াদাইন যে করতে হবে এর পক্ষে একেবারে সহীহ হাদীস আছে অসংখ্য, বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, তিরমিযী – এমন কোন হাদীসের কিতাব নাই যে নাই। তাই জয়ীফ হাদীসের উপর ভিত্তি করে অসংখ্য সহীহ হাদীসকে বাদ দেওয়া অত্যন্ত অনুচিত।

আর যারা বলে সাহাবীরা প্রথম যুগে হাতের নিচে মূর্তি রাখতো এইজন্য রাসুলুল্লাহ (সাঃ) রাউফুল ইয়াদাইন করতেন, কিন্তু পরে করতেন না – এই লোকটা ডাহা মিথ্যুক, দাজ্জাল। সাহাবীরা মূর্তি নিয়ে নামায পড়তো – এইরকম কথা সহীহতো দূরের কথা, এমনকি কোন জাল হাদীসেও নাই! শুধুমাত্র রাউফুল ইয়াদাইনের সুন্নতকে ক্যানসেল করার জন্য কোন হিংসুক লোক সম্মানিত সাহাবীদের নামে এইরকম জঘন্য মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে, আল্লাহ তাদের বিচার করুন।

তবে রুকুর আগে ও পরে রাউফুল ইয়াদাইন করা হচ্ছে “সুন্নত” – কেউ যদি না করে তবুও তার নামায হয়ে যাবে, শুধু এর সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবে। তাই রাউফুল ইয়াদাইন এর পক্ষে বিপক্ষে কারোরই বিষয়টা নিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিকনা।

রাউফুল ইয়াদাইন কোন কোন সময় করতে হবে এনিয়ে ফাতওয়াঃ

http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/04/blog-post_3050.html

রুকুতে যাওয়ার নিয়ম হচ্ছে “আল্লাহু আকবার” বলার আগে বা পরে দুই হাত কাধ/কান পর্যন্ত তুলে রাউফুল ইয়াদাইন করে রুকুতে যাবে, রাউফুল ইয়াদাইন করার জন্য আলাদা আল্লাহু আকবার বলতে হয়না, রুকুর তাকবীর একবারই যথেষ্ঠ। এরুকুর সময় হাত দিয়ে হাটুতে আকড়ে ধরবেন, আর যথাসম্ভব মাথা ও পিঠ সমান্তরাল রাখার চেষ্টা করবেন। আঙ্গুলগুলো ফাক রাখবেন আর চোখ থাকবে সোজা নিচে সিজদার স্থানের দিকে, দুই পায়ের মাঝখানে না।

রুকুতে গিয়ে রুকুর তাসবীহ “সুবহা-না রব্বিয়াল ‘আযীম” পড়বেন অন্তত ৩ বার, সম্ভব হলে আরো বেশি বার পড়া ভালো।

এছাড়া আরো অন্য দুয়া আছে রুকু ও সেজদাতে সেইগুলো হিসনুল মুসলিম থেকে আপনারা মুখস্থ করবেন বিশেষ করে এই দুয়াটা – “সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা রাব্বানা ওয়াবিহা’মদিকা, আল্লা-হুম্মাগফিরলী”।
এই রুকু সিজদার তাসবীহ নিয়ে দেখুন এই পোস্টে –

http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/04/blog-post_26.html

রুকুর তাসবীহ পড়ে “সামি‘আল্লা-হুলিমান হা’মিদাহ” বলে দাঁড়াবেন। দাঁড়ানোর সময় অথবা দাঁড়ানোর পরে রাউফুল ইয়াদাইন করবেন। এরপরে বলবেন “রব্বানা ওয়া লাকাল হা’মদ”।
শুধু এতটুকু বললেই ফরয আদায় হয়ে যাবে। কিন্তু এই দুয়ার পরে আরো অন্য দুয়া আছে। বিশেষ করে অনেক ফযীলতের এই দুয়াটা পড়ার চেষ্টা করবেনঃ
“হা’মদান কাসীরান ত্বায়্যিবান মুবা-রাকান ফীহ”

দুয়াটার ফযীলতঃ
“(এক সাহাবী বলেন) একবার আমরা নবী (সাঃ) এর পিছনে সালাত আদায় করলাম। তিনি যখন রুকূ’ থেকে মাথা উঠিয়ে ‘সামিআল্লা হুলিমান হামিদা’ বললেন, তখন পিছন থেকে এক সাহাবী ‘আল্লাহুম্মা রাব্বানা ওয়ালাকাল হামদ হামদান কাসিরান তায়্যেবান মোবারাকান ফিহি’ বললেন। সালাত শেষ করে তিনি জিজ্ঞাসা জিজ্ঞাসা করলেন, কে এরূপ বলেছিল? সে সাহাবী বললেন, আমি। তখন তিনি বললেনঃ আমি দেখলাম ত্রিশ জনের বেশী ফিরিশতা এর সাওয়াব কে আগে লিখবেন তা নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতা করছেন।”
সহীহ বুখারীঃ ৭৬৫।

উল্লেখ্যঃ আল্লাহুম্মা রাব্বানা অথবা রাব্বানা ওয়া লাকাল হা’মদ ২ ভাবেই বলা যায়, দুইভাবেই সহীহ হাদীস আছে।

রুকু থেকে উঠে দাঁড়ানোর পরে অনেক আলেম যেমন শায়খ বিন বাজ, শায়খ ইবনে উসাইমিনের মতে, দাঁড়ানো অবস্থার মতোই আবার বুকে হাত বাধা সুন্নত। অনেক আলেম যেমন শায়খ আলবানী এটাকে অস্বীকার করে বলেন, রুকু থেকে দাঁড়ানোর পরে সিজদার আগে বুকে হাত বাধা সুন্নত নয়, বরং হাতকে ছেড়ে রাখতে হবে। বিষয়টা দুইদল আলেমদেরই ইজতেহাদ। এই ব্যপারে ইমাম আহমাদের বক্তব্য হলো – “নামাযীর ইচ্ছা হলে বুকে হাত বাধবে নয়তো ছেড়ে দেবে।”
সুতরাং, রুকু থেকে দাঁড়ানোর পরে ইচ্ছা হলে বুকে হাত বাধবেন, নয়তো ছেড়ে রাখবেন।

সিজদাঃ
রুকু থেকে দাঁড়িয়ে দুয়া পাঠের পরে “আল্লাহু আকবার” বলে সিজদাতে যাবেন। সিজদাতে আগে হাত দিতে হবে নাকি হাটু দিতে হবে এ বিষয়টা নিয়ে উলামাদের মাঝে বড় ইখতিলাফ (মতবিরোধ) হয়েছে। শায়খ বিন বাজ এর মতে, যদি কষ্ট না হয় তাহলে আগে হাটু দিতে হবে এর পরে হাত, কিন্তু কারো কষ্ট হলে সে আগে হাত দিয়ে সিজদা করতে পারবে। শায়খ উসাইমিনও এই ফতোয়ার পক্ষে। এই মতের পক্ষে দলীল বিস্তারিত জানার জন্য আপনারা আল্লামাহ ইবনে কাইয়্যিমের সালাত সম্পর্কে বইয়ে বিস্তারিত আলোচনা পাবেন। অন্যদিকে, শায়খ আলবানী সহ অন্য ওলামাদের মতে হাটু আগে দেওয়ার হাদীসগুলো জয়ীফ, আর হাত আগে দেওয়ার হাদীসগুলোই বেশি সহীহ। আল্লাহ এই ব্যাপারে ভালো জানেন। তাই, ইমাম ইবনে তাইমিয়ার মতে, হাত বা হাটু নামাযীর সুবিধা অনুযায়ী দুটোই বৈধ। সুতরাং, এইসমস্ত ছোটখাট বিষয় নিয়ে বাড়াবড়ি না করে, যার কাছে যেটা সুবিধা সেটা করবেন – কারণ এখানে ওলামারা দুই ব্যপারেই হাদীসকে সহীহ বলে দাবী করেছেন।

নারী ও পুরুষের নামাযের নিয়ম, রুকু ও সিজদা একই রকম। যেই হাদীসগুলোতে আলাদা বলা হয়েছে মুহাদ্দিসিন একরাম সেইগুলোকে হয় জাল নয়তো জয়ীফ বলেছেন, তাই সেইগুলোর উপর আমল করা নাজায়েজ। নারী ও পুরুষের নামাযের নিয়ম একই, আলাদা যেই হাদীসে এসেছে এইরকম জাল ও জয়ীফ হাদীসগুলোর তাহকীকসহ বিস্তারিত জানতে যারা আগ্রহী তারা এই পোস্ট দেখতে পারেনঃ

http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/04/blog-post_1056.html

সিজদাতে দুই বাহুকে শরীরের সাথে মিশিয়ে রাখবেন না, শরীর থেকে কিছুটা দূরে ও মাটি থেকে উপরে রাখবেন। কনুই মাটির সাথে মিশিয়ে রাখবেন না। হাত বিছিয়ে এইভাবে হিংস্র প্রাণীর মতো বসতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিষেধ করেছেন, নারী ও পুরুষ একই কাজ করবে। সিজদার সময় অবশ্যই দুই পা, দুই হাটু, দুই হাতের কবজি ও মুখমন্ডল (কপাল ও নাকসহ) মাটিতে স্পর্শ করে রাখতে হবে। তবে হঠাত করে পা উঠে গেলে নামায বাতিল হবেনা, তবে সিজদার পুরো সময় পায়ের গোড়ালি মাটি থেকে তুলে রাখলে নামায বাতিল হয়ে যেতে পারে। পায়ের পাতা সোজা করে রাখতে হবে, পায়ের অগ্রভাগ কিবলামুখী করে রাখতে হবে।

সিজদা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু মাস’আলাঃ

১. আমরা সিজদা করার সময় অনেক সময় খেয়াল করিনা, তাই নাক মাটিতে না রেখেই সিজদা করি।
সিজদার সময় নাক মাটিতে লাগিয়ে রাখতে হবে।
“রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নাক ও কপাল মাটিতে মজবুতভাবে ঠেকিয়ে রাখতেন।”
আবু দাউদ, তিরমিযী, হাদীস সহীহ।
“ঐ বান্দার নামায সহীহভাবে আদায় হয়না যে কপালের মতো করে নাক মাটিতে ঠেকায় না।”
দারা কুতনী, তাবারানী ৩/১৪০/১।

২. অনেকে বিশেষ করে নারীরা সিজদার সময় মাটিতে দুই হাত বিছিয়ে দেয়। এই কাজটা হারাম।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তুমি যখন সিজদা করবে তখন তোমার হাতে তালুদ্বয় (যমীনে) রাখবে আর দুই কনুই উঁচু করে রাখবে।”
সহীহ মুসলিম।
অন্য হাদীসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যেন দুই হাতকে কুকুরের মতো বিছিয়ে না দেয়।”
বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ, তিরমিযী।

৩. সিজদার সময় দুই পা এক সাথে করে রাখতে হবে।
আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সিজদাতে দুই পায়ের গোড়ালি জোড়া লাগানো অবস্থায় দেখেছি।
ইবনে খুজাইমা, সহীহ।
এই সময় পায়ের আংগুলগুলো একটু ভাজ করে কিবলার দিকে রাখতে হবে।
বায়হাকী।
বিঃদ্রঃ এইসবগুলো নিয়ম নারী ও পুরষের জন্য। এর বিপরীতে কিছু জাল হাদীস আছে। সহীহ হাদীস বাদ দিয়ে জাল হাদীসের উপরে আমল করা বেদাত।

সিজদার তাসবীহ পড়বেন “সুবহা-না রব্বিয়াল আ‘লা” অন্তত ৩ বার, বা আরো বেশি পড়া ভালো। এছাড়া আরো দুয়াও পড়তে পারেন “সুবহা-নাকাল্লা-হুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগফিরলী”

এছাড়া সিজদাতে মুনাজাতের মতো দুনিয়া আখেরাতের জন্য দুয়া করতে পারেন, ফরয নফল যেকোন নামাযে।

সিজদাতে দুয়া করা নিয়ে বিস্তারিত জানতে আমাদের এই পোস্ট দেখুনঃ

http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/04/blog-post_5589.html

সিজদায় তাসবীহ, দুয়া পড়া শেষ হলে “আল্লাহু আকবার” বলে সিজদা থেকে উঠে বসবেন। এইসময় পিঠ সোজা করতে হবে, পিঠ বাকা রেখে দ্রুত দ্বিতীয় সিজদায় চলে যাওয়া কঠোরভাবে নিষিদ্ধ, এইরকম করলে নামায কবুল হবেনা। দুই সিজদার মাঝখানে এই সময় দুয়া আছে এইগুলো করবেন। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষতো দূরের কথা, এমনকি বেশিরভাগ ইমামই দুই সিজদার মাঝখানে দুয়া না করে দ্বিতীয় সিজদায় চলে যায় – এটা স্পষ্ট সুন্নতবিরোধী একটা কাজ। জানা থাকা ভালো, রুকু ও সিজদাতে তাসবীহ পড়তে হবে এমন হাদীস থেকে দুই সেজদার মাঝখানে দুয়া করতে হবে এই মর্মে হাদীস আরো বেশি আছে। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে বেশিরভাগ মানুষ এই সুন্নতকে বাদ দিয়েছে। এমন সহীহ হাদীস আছেযে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) দুই সেজদার মাঝখানে এতো বেশি সমইয় ধরে দুয়া করতেন যে সাহাবীরা সন্দেহে পড়ে যেতেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ২য় সিজদা করতে ভুলে গেলেন কিনা?

দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থায়ঃ
এখানে নিজের পছন্দমতো যেকোনো দুয়া করা যায়না, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই দুয়াগুলো করেছেন শুধুমাত্র সেই দুয়াগুলোই করা যাবে। আর এইখানে দুয়া আরবীতেই করতে হবে। দুই সিজদার মাঝখানে এই দুয়াগুলো করার সময় তাশাহুদের মতো আংগুন দিয়ে ইশারা করা সুন্নত। যেই দুয়া করতে হবেঃ ছোট্ট এই দুয়াটা কি মুখস্থ করা যায়না?

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরয, সুন্নত, নফল যে কোনো সালাতের দুই সিজদার মাঝখানে বসা অবস্থায় এই দুআটি করতেনঃ

رَبِّ اغْفِرْ لِي، رَبِّ اغْفِرْ لِي

উচ্চারণঃ রাব্বিগ ফিরলি, রাব্বিগ ফিরলি।
অর্থঃ হে আমার রব আমাকে ক্ষমা করা, হে আমার রব আমাকে ক্ষমা কর।
আবু দাউদ ১/৩১, ইবনে মাজাহ, দুয়াটা সহীহ।

এই ছোট্ট দুয়াটা পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ মিস করা ঠিকনা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দিনে ৭০ থেকে ১০০ বার তোওবা করতেন। আপনি যদি সালাতের দুই সিজদার মাঝখানে এই দুয়াটা পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলেন তাহলে দিনে যত রাকাত করে সালাত পড়বেন, তত বারই আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া হবে। আল্লাহর ভালোবাসা পাওয়ার একটা উপায় হচ্ছে বেশি বেশি করে নিয়মিত তোওবা ও ইস্তিগফার করা (ক্ষমা করা)।

এছাড়া দুই সিজদার মাঝখানে আরেকটা ছোট্ট সুন্দর দুয়াঃ

اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي، وَارْحَمْنِي، وَاهْدِنِي، وَاجْبُرْنِي، وَعَافِنِي، وَارْزُقْنِي، وَارْفَعْنِي

উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মাগফিরলী, ওয়ারহা’মনী, ওয়াহদিনী, ওয়াজবুরনী, ওয়াআ’ফিনি, ওয়ারযুক্বনী, ওয়ারফা‘নী।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন, আমার প্রতি দয়া করুন, আমাকে সঠিক পথে পরিচালিত করুন, আমার সমস্ত ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করে দিন, আমাকে নিরাপত্তা দান করুন, আমাকে রিযিক দান করুন এবং আমার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন”।
হাদীসটি ইমাম নাসাঈ ব্যতীত সুনান গ্রন্থগারগণ সবাই সংকলন করেছেন। আবূ দাউদঃ ৮৫০, তিরমিযীঃ ২৮৪, ২৮৫, ইবন মাজাহঃ ৮৯৮। শায়খ আলবানির মতে হাদীস সহীহ।

বিঃদ্রঃ এই দুয়াটা কম-বেশি বিভিন্ন ভাবে বর্ণনা আছে, সবগুলো সহীহ – তবে এখানে যেটা দেওয়া আছে এটা সবচাইতে বড় যেখানে সবগুলো দুয়া একসাথে আছে। এটা করলে সবগুলো দুয়াই করা হলো। 

এবার আল্লাহু আকবার বলে ২য় সিজদা করবেন, আগের মতো তাসবীহ পড়বেন। ইচ্ছা হলে নিজস্ব দুয়া করতে পারবেন। আপনার ইচ্ছা হলে যেকোন এক বা একাধিক সিজদাতে, বা সবগুলো সিজদাতেই যত ইচ্ছা দুয়া করতে পারবেন, কোন সমস্যা নেই।

২য় রাকাতের জন্য সিজদা থেকে উঠাঃ
১ম ও ৩য় রাকাতে দুইটা সিজদা থেকে ২য় ও ৪র্থ রাকাতের জন্য উঠার আগে সরাসরি না দাঁড়িয়ে, আগে বসে এর পরে দুই হাতের উপর ভর করে দাঁড়ানো সুন্নত। একে প্রশান্তির বৈঠক বলা হয়। এসময় কোন দুয়া পড়তে হয়না। আর উঠার জন্য আলাদা তাকবীর বলতে হয়না। হয় আপনি সিজদা থেকে উঠার সময় তাকবীর বলে বসবেন এর পরে দাঁড়াবেণ, নয়তো তাকবীর না বলে উঠে বসবেন এর পরে তাকবীর বলে দাঁড়াবেন।

প্রশান্তির বৈঠকের দলীল –
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“যখন দ্বিতীয় সেজদা থেকে মাথা উঠাবে, তখন বসবে ও যমীনের উপর ভর দিয়ে দাঁড়াবে”।
সহীহ বুখারিঃ ৮২৪।

২য় রাকাতঃ
২য় রাকাতের শুরুতে সানা, আউযুবিল্লাহ পড়তে হবেনা। বিসমিল্লাহ-হির রাহমানির পড়ে সুরা ফাতেহা পড়বেন। এর পরে কিরাত পড়বেন, সুরার প্রথম থেকে পড়লে বিসমিল্লাহ…পড়বেন মাঝখান থেকে পড়লে পড়তে হবেনা। সুরা ফাতেহা ও কেরাত শেষ করে ১ম রাকাতের মতো রুকু ও সিজদা করবেন।

১ম বৈঠকঃ
যদি ৩ অথবা ৪ রাকাত নামায হয় তাহলে ১ম বৈঠকে শুধু তাশাহুদ (আত্তাহিয়্যাতু…) পড়লেই হবে। কেউ যদি ইচ্ছা করে তাহলে ১ম তাশাহুদে দুরুদ পড়া জায়েজ আছে, এটা সহীহ হাদীস দিয়ে প্রমানিত কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর বেশিরভাগ সময় আমল ছিলো ১ম বৈঠকে শুধু তাশাহুদ পড়া। কিন্তু যারা বলে ১ম তাশাহুদে ইচ্ছা করে দুরুদ পড়লে নামায নষ্ট হয়ে যাবে, বা অনিচ্ছাকৃতভাবে পড়লে সাহু সিজদা দিতে হবে এটা একেবারেই ভুল কথা।

বৈঠকের সময় তর্জনী দিয়ে আকাশের দিকে ইশারা করা বা নাড়াচাড়া করা সুন্নত। অনেকে মনে করে আশ-হাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার সময় শুধু একবার তুলতে হবে, এটা ভুল। আর যারা বলে অন্য সময় তুললে শিরিক হয়ে এটা আরো বড় রকমের ভুল, এইসমস্ত কথার কোনো ভিত্তি নেই। সুন্নত হচ্ছে, তাশাহুদ, দুরুদ ও দুয়া মাসুরার সময় যখন দুয়া করা হবে তখন একবার করে ইশারা করতে হবে, সালাম ফিরানোও একটা দুয়া, সুতরাং ডানে বামে সালাম ফেরানোর সময় আরো দুইবার করতে হবে।

আঙ্গুল নাড়ানোর বিস্তারিত নিয়ম দেখুন এই পোস্টে –

http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/04/blog-post_4651.html

৩/৪ রাকাত হলে তাশাহুদ পড়ে “আল্লাহু আকবার” বলে ২হাতের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে যাবেন। ২ রাকাত পড়ে দাঁড়িয়ে ৩য় রাকাত শুরু করার আগে আরো একবার “রাউফুল ইয়াদাইন” করা সুন্নত, “রাউফুল ইয়াদাইন” এর জন্য আবার আল্লাহু আকবার বলার দরকার নেই। তারপর বিসমিল্লাহ…সুরা ফাতেহা…পড়বেন। ফরয নামায হলে ৩ ও ৪ রাকাতে কোনো সুরা না পড়লেও হবে শুধু সুরা ফাতেহা। তবে আপনি যদি চান তাহলে সুরা/কেরাত পড়তে পারেন – অতিরিক্ত সওয়াব পাবেন। সুন্নত, নফল নামাযে ৩ ও ৪ রাকাতে সুরা ফাতেহা পড়ে কেরাত পড়বেন।

শেষ বৈঠক এর নিয়মঃ
শেষ বৈঠকে অর্থাৎ ২ রাকাত নামাযের ১ম বৈঠক ও ৩/৪ রাকাত নামাযের ২য় বৈঠকে প্রথমে তাশাহুদ, এর পরে দুরুদ পড়বেন। এর পরে “দুয়া মাসুরা” অর্থাৎ হাদীসে বর্ণিত বিভিন্ন দুয়া আছে সেইগুলো পড়বেন। তাশাহুদ ও দুরুদ পড়া ওয়াজিব এবং দুয়া মাসুরা ও অন্য দুয়া পড়া সুন্নত। যত ইচ্ছা দুয়া পড়তে পারবেন, নিজের বা অন্য মুসলিমের জন্য প্রয়োজ়নীয় যেকোন দুয়া করতে পারবেন, দুনিয়া বা আখেরাতের যেকোন কল্যানের। কুরানের দুয়াগুলোও পড়তে পারবেন। দুয়া পড়ে “আস-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ” বলে ডানে ও বামে সালাম ফেরাবেন। সালাম ফেরানোর বিশেষ কোনো নিয়ম নাই, চেষ্টা করবেন যথাসম্ভব ডানে ও বামে মুখে ফেরাতে। একবার ডানে মুখ নিয়ে পরে মাঝখানে এনে পর বাম দিকে ফেরানো, মাথা উপর নিচ করা এইগুলোর কোনো সহীহ হাদীস নেই।

উল্লেখ্য, ১ম বৈঠকে আমাদের দেশে পুরুষেরা যেইভাবে বসে সেইভাবে বসা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য সুন্নত। আর ৩/৪ রাকাত নামাযে ২য় বৈঠকে আমাদের দেশের নারীরা যেইভাবে বসে এইভাবে বসা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য সুন্নত – বসার এই স্টাইলকে “তাওয়্যারুক” করা বলা হয়। নারী ও পুরুষের আলাদা বসার নিয়ম সহীহ হাদীস দিয়ে প্রমানিত না। তাওয়্যারুক নিয়ে বিস্তারিত দেখুন –

http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/04/blog-post_24.html

আলহা’মদুলিল্লাহ! তাসলীম বা সালাম ফেরানোর মাধ্যমেই শেষ হলো নামায পড়ার পদ্ধতি নিয়ে আমাদের এই সিরিজ। ইন শা’ আল্লাহ পরবর্তীতে জামাতে নামায পড়া ও আপনাদের প্রশ্নের উত্তরগুলো দেওয়ার চেষ্টা করা হবে। বারাকাল্লাহ ফীকুম। এই লেখাগুলোতে যদি ভালো ও উপকারী কিছু থাকে সেটা আল্লাহর পক্ষ থেক দয়া। আর যদি খারাপ কিছু থেকে থাকে শুধুই শয়তানের পক্ষ থেকে বা আমাদের নিজেদের পক্ষ থেকে।

ওয়া সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামা আ’লা নাবিয়্যিনা মুহা’ম্মাদ।
সুবহা’নাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহা’মদিকা আশ-হাদু আল্লা ইলাহা ইল্লা আনতা, আস্তাগফিরুকা ওয়া আতুবু ইলাইকা।

__________________________