শুক্রবার, ২৩ মে, ২০১৪

হায়াতুন্নবী বলা কুরআন বিরোধী আকীদা



আজকাল দেওবন্দী বেরেলবী তরীকার লোকেরা রাসুলুল্লাহ সাঃ কে জিন্দা নবী, হায়াতুন নবী বলে প্রচার করে, আর এইগুলোর বিরোধীতা করলে ওহাবী বলে গালি দেয়, নবী সাঃ কে অপমান করা হচ্ছে বলে চিল্লাচিল্লি করে...

অথচ দেখেন - আবু বকর রাঃ কি বলেছিলেন, যারা বিশ্বাস করতে চাইছিলোনা যে, নবী সাঃ মৃত্যুবরণ করেছেন। আবু বকর রাঃ ঐ ভাষণের পরে সমস্ত সাহাবী কিন্তু - এই কথা মেনে নেন যে, নবী সাঃ ইন্তেকাল করেছেন।

হায় আফসোস! চরমপন্থী লোকেরা নিজেরা ভ্রান্ত আকীদা রাখে, আর য্রারা সাহাবাদের সহীহ আকীদার কথা বলে - তাদেরকে গালি-গালাজ করে।

যাইহোক একটি প্রশ্ন ও উত্তরের দিকে দেখুনঃ

আমাদের পেইজে একজন মন্তব্য করেছেনঃ

বর্তমানে অনেক দল আছে যারা প্রিয় নবীকে মৃত বলে, তারা গোমরাহি হয়েগেছে, হায়াতুন্নবীর অর্থই হলো জিন্দা নবী|একজন মুফতি থেকে জেনেনিন, ঈমান বাঁচান|

আমাদের উত্তরঃ

আপনি বলছেন নবী সাঃ কে মৃত বললে গোমড়া হয়ে গেছে, অথচ আবু বকর রাঃ বলেছেন - যে নবীকে জিন্দা মনে করে সে যেনো নবী সাঃ কে পূজা করে!

আমরা কার কথা বিশ্বাস করবো? আপনার, এই উম্মতের ১ নাম্বার ঈমানদার শ্রেষ্ঠ অলী, আবু বকর রাঃ এর, নাকি আপনার অজ্ঞাত (দেওবন্দী/বেরেলবী) মুফতি সাহেবের?
___________________________

কুরআন দ্বারা এটাই প্রমানিত হয় যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) একজন মানুষ ছিলেন এবং তিনিও মৃত্যু বরণ করবেন। আল্লাহ বলেন -

“ইন্নাকা মায়্যিতুন ওয়া ইন্নাহুম-মায়্যিতুন” – (হে নবী) আপনিও মৃত্যু বরণ করবেন আর তারাও মৃত্যু বরণ করবেন।
সুরা আল-যুমার, আয়াত ৩০।

এই আয়াতে আল্লাহ স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) ও একদিন মৃত্যুবরণ করবেন। সুতরাং যার রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে জীবিত মনে করে তাদের আকীদা বা বিশ্বাস হলো ইসলাম বিরোধী, কুরআন বিরোধী।

এছাড়া, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর মৃত্যুর পরে সাহাবীরা আশ্চর্য হয়ে পড়েন একজন নবী কি করে মারা যেতে পারেন? উমার (রাঃ) খোলা তলোয়ার নিয়ে ঘোষণা করেন, যেই ব্যক্তি বলবে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মৃত্যুবরণ করেছেন আমি তার ঘাড় থেকে মাথা আলাদা করে ফেলবো।
তখন এই উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তি, আবু বকর (রাঃ) এই ভুল ধারণা দূর করে দেন সমস্ত সাহাবীদের অন্তর থেকে এই বলে,

“যেই ব্যক্তি মুহাম্মাদের পূজা করতো সে জানুক মুহাম্মাদ মারা গেছেন। আর যেই ব্যক্তি আল্লাহর উপাসনা করে সে জানুক আল্লাহ চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী।”

তখন তিনি দলীল হিসেবে কুরআনের এই আয়াত পেশ করেন –

“মুহাম্মাদ, তিনিতো আল্লাহর রাসুল ছাড়া আর কিছু নন, তার পূর্বে অনেক রাসুল মৃত্যু বরণ করেছেন। এখন তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন বা নিহত হন তোমরা কি তোমাদের পূর্ব অবস্থায় (কুফুরীতে) ফিরে যাবে? প্রকৃতপক্ষে যেই ব্যক্তি তার পূর্বের অবস্থায় ফিরে যাবে সে আল্লাহর কোন ক্ষতি করতে পারবেনা। আল্লাহ অচিরেই কৃতজ্ঞদেরকে প্রতিদান দিবেন।”
সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৪৪।

বিঃদ্রঃ মানুষের জীবন দুই প্রকার, একটা মৃত্যুর আগে আরেকটা পরে যাকে পরকাল বলে। আর কবর থেকে নিয়ে কিয়ামতে হাশর হওয়া পর্যন্ত জীবনকে “বরযখের জীবন” বা পর্দার জীবন বলা হয়। মানুষ মারা গেলে তার দুনিয়ার জীবন শেষ হয়ে যায় আর বরযখের জীবন শুরু হয় যা দুনিয়ার জীবন থেকে আলাদা। আর ঐ কবরের জীবন কেমন, কিরকম এটা বুঝা আমাদের পক্ষে সম্ভব না। সে সম্পর্কে কুরআন হাদীসে আমাদের যতটুকু জানানো হয়েছে আমরা ততটুকু কোনোরকম প্রশ্ন ছাড়াই ইমান আনবো। কিন্তু কোনো প্রকার ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ বা অতিরিক্ত প্রশ্ন করবোনা। এটাই হলো ইমান বিল গায়েব – অদৃশ্যে বিশ্বাস।

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে আমাদের দুরুদগুলো ফেরশতারা পোঁছে দেন, আমাদের দুনিয়ার জীবনের কিছু কথা আমাদের মৃত আত্মীয় স্বজনদের কাছে বলা হয়, পরিচিত মৃত ব্যাক্তিদের আত্মাদের মাঝে দেখা সাক্ষাত হয়, অনেক মৃত ব্যাক্তিকে কবরে শাস্তি দেওয়া হয়, - এইসবগুলো সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমানিত। আমরা এইগুলো বিশ্বাস করবো কিন্তু ব্যাখ্যা করা বা দুনিয়ার জীবনের সাথে তুলনা করার চেষ্টা করবোনা।

হায়াতুন-নবী – অর্থ হলো যে নবী জীবিত। এই কথা না কুরআনে আছে না কোনো সহীহ হাদীসে আছে। বরং উপরের আলোচনা থেকে এই কথা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হায়াতুন্নবী বলা কুরআন বিরোধী আকীদা।