বুধবার, ২১ মে, ২০১৪

জাহান্নামের কিছু চিত্রঃ পর্ব - ১



জাহান্নামের কিছু চিত্রঃ পর্ব - ১
আজকে তোওবা না করলে আর কোনদিন কি তোওবা করার সুযোগ হবে?
_____________________________

চলুন একটু দেখে নেই - বেনামাযী, ব্যভিচারী, গীবতকারী, অহংকারী, মিথ্যাবাদী, বেপর্দা নারীদের কি শাস্তি...

বেনামাযী ও নামাযে অলসতাকারীর অবস্থাঃ

ইচ্ছাকৃতভাবে যে ব্যক্তি একেবারেই নামায ছেড়ে দিবে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে কাফের হয়ে যাবে। কেননা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

“আমাদের মাঝে ও তাদের (কাফেরদের) মাঝে অঙ্গিকার হলো নামায। সুতরাং যে ব্যক্তি নামায ছেড়ে দিবে সে কাফের হয়ে যাবে। 

রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেনঃ

“আল্লাহর বান্দা এবং কাফের-মুশরেকের মধ্যে পার্থক্য হলো নামায ছেড়ে দেয়া। 

তবে যে ব্যক্তি নামাযের ব্যাপারে অলসতা করবে চাই সে অলসতা যথাসময়ে আদায় না করার মাধ্যমে হোক বা ঘুমের মাধ্যমে হোক কিংবা শরীয়ত সম্মত পদ্ধতিতে নামায আদায়ে ত্রুটির মাধ্যমে হোক, সে কাফের না হলেও তার ব্যাপারে কঠিন শাস্তির হুমকি রয়েছে।

সহীহ বুখারীতে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর দীর্ঘ হাদীছে এসেছে,

“আমরা এক শায়িত ব্যক্তির কাছে আসলাম। তার মাথার কাছে পাথর হাতে নিয়ে অন্য একজন লোক দাড়িয়ে ছিল। দাড়ানো ব্যক্তি শায়িত ব্যক্তির মাথায় সেই পাথর নিক্ষেপ করছে। পাথরের আঘাতে তার মাথা চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাচ্ছে এবং পাথরটি বলের মত গড়িয়ে অনেক দূরে চলে যাচ্ছ্ে‌। লোকটি পাথর কুড়িয়ে আনতে আনতে আবার তার মাথা ভাল হয়ে যাচ্ছে। দাড়ানো ব্যক্তি প্রথমবারের মত আবার আঘাত করছে এবং তার মাথাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিচ্ছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর সফরসঙ্গী ফেরেশতাদ্বয়কে জিজ্ঞেস করলেনঃ কি অপরাধের কারণে তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হচ্ছে? উত্তরে তারা বললেনঃ এব্যক্তি কুরআন শিক্ষা করেছিল। কিন্তু কুরআন অনুযায়ী আমল করেনি এবং সে ফরজ নামাযের সময় ঘুমিয়ে থাকত। কিয়ামত পর্যন্ত তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন,

“ধ্বংস ঐ সমস্ত নামাযীদের জন্যে যারা নামাযের ব্যাপারে উদাসীন। (সূরা মাঊনঃ ৪-৫)

হাফেজ ইবনে কাছির (রঃ) এই আয়াতদ্বয়ের ব্যাখ্যায় বলেনঃ

“তারা হয়ত প্রথম ওয়াক্তে নামায আদায় না করে সব সময় বা অধিকাংশ সময় দেরী করে নামায আদায় করে থাকে। অথবা নামাযের রুকন ও শর্তসমূহ যথাযথভাবে আদায়ের ব্যাপারে গাফিলতি করে থাকে অথবা তারা নামাযে মনোযোগ দেয়না এবং নামাযে কুরআন তিলাওয়াতের সময় তারা এর অর্থের মাঝে গবেষণা করেনা।  রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

“যে ব্যক্তি নামাযের হেফাযত করবে কিয়ামতের দিন নামায তাঁর জন্য আলো, তার ঈমানের দলীল এবং নাজাতের উপায় হয়ে যাবে। আর যে ব্যক্তি নামাযের হেফাযত করবেনা কিয়ামতের দিন তার জন্যে কোন আলো থাকবেনা, তার ঈমানের পক্ষে কোন প্রমাণ এবং তার নাজাতের কোন উপায় থাকবেনা। কিয়ামতের দিন সে ফেরাউন, কারূন, হামান, এবং উবাই বিন খাল্‌ফের সাথে হাশরের মাঠে উপস্থিত হবে। 

কোন কোন বিদ্বান বলেছেনঃ বেনামাযীকে উক্ত চার শ্রেণীর নিকৃষ্ট মানুষের সাথে হাশরের মাঠে উঠানোর কারণ হলো মানুষ সাধারণতঃ ধন-সম্পদ, রাজত্ব, মন্ত্রিত্ব ও ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত থেকেই নামায থেকে বিরত থাকে। ধন-সম্পদ নিয়ে ব্যস্ত থেকে নামায পরিত্যাগ করলে কুখ্যাত ধনী কারূনের সাথে হাশর হবে। রাষ্ট্র পরিচালনা নিয়ে ব্যস্ত থেকে নামায পরিত্যাগ করলে ফেরাঊনের সাথে হাশর হবে। মন্ত্রিত্ব নিয়ে ব্যস্ত থেকে নামায নষ্ট করলে ফেরাঊনের মনী্ত্র হামানের সাথে হাশর হবে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত থেকে নামায ছেড়ে দিলে মক্কার কাফের ব্যবসায়ী উবাই বিন খাল্‌ফের সাথে হাশর হবে। এধরণের অপমানকর অবস্থা থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
_________________________________

ব্যভিচারী নারী-পুরুষের করুণ অবস্থাঃ

আল্লাহ তাআলা এবং তদীয় রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ব্যভিচার হারাম করেছেন। ইহা হারাম হওয়া অতি সুস্পষ্ট বিষয়। এমন কোন মুসলিম নারী-পুরুষ পাওয়া যাবেনা যে এর হারাম হওয়া সম্পর্কে অবগত নয়। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

“আর তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়োনা। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং খুবই মন্দ পথ।
সূরা বানী ইসরাঈলঃ ৩২

ব্যভিচারের ইহকালীন শাস্তি হলো বিবাহিত হলে রজম করা তথা পাথর মেরে হত্যা করা। আর অবিবাহিত হলে একশত বেত্রাঘাত করা।

সহীহ বুখারীতে সামুরা বিন জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর দীর্ঘ হাদীছে কবরে ব্যভিচারীর ভয়াবহ শাস্তির বর্ণনা এসেছে। তিনি বলেনঃ

“আমরা একটি তন্দুর চুলার নিকট আসলাম। যার উপরিভাগ ছিল সংকীর্ণ এবং ভিতরের অংশ ছিল প্রশস্ত। তার ভিতরে আমরা কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। দেখতে পেলাম তাতে রয়েছে কতগুলো উলঙ্গ নারী-পুরুষ। তাদের নিচের দিক থেকে আগুনের শিখা প্রজ্বলিত করা হচ্ছে। অগ্নিশিখা প্রজ্ব্বলিত হওয়ার সাথে সাথে তারা চিৎকার করছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কারণ জানতে চাইলে ফেরেশতাদ্বয় বললেনঃ এরা হলো আপনার উম্মতের ব্যভিচারী নারী-পুরুষ।  তাদেরকে উলঙ্গ করে এভাবে শাস্তি দেয়ার কারণ এই যে, তারা উলঙ্গ অবস্থায় নির্জনে একত্রিত হয়ে এই জঘণ্য ঘৃণীত কাজে লিপ্ত হয়েছিল। আর নীচের দিক থেকে আগুন দিয়ে তাদেরকে শাস্তি দেয়ার কারণ হলো ব্যভিচার শরীরের নীচের অঙ্গ দিয়েই হয়ে থাকে। 

ব্যভিচারীর শাস্তির অন্য একটি চিত্রঃ
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মি’রাজের রাত্রিতে একদল লোকের কাছে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন তাদের সামনে একটি পাত্রে গোশত রান্না করে রাখা হয়েছে। অদূরেই অন্য একটি পাত্রে রয়েছে পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত কাঁচা গোশত। লোকদেরকে রান্না করে রাখা গোশত থেকে বিরত রেখে পঁচা এবং দুর্গন্ধযুক্ত, কাঁচা গোশত খেতে বাধ্য করা হচ্ছে। তারা চিৎকার করছে এবং একান্ত অনিচ্ছা সত্বেও তা থেকে ভক্ষণ করছে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিবরীল ফেরেশতাক জিজ্ঞেস করলেনঃ এরা কোন শ্রেণীর লোক? জিবরীল বললেনঃ এরা আপনার উম্মতের ঐ সমস্ত পুরুষ লোক যারা নিজেদের ঘরে পবিত্র এবং হালাল স্ত্রী থাকা সত্বেও অপবিত্র এবং খারাপ মহিলাদের সাথে রাত্রি যাপন করত। 

মুসলিম ভাই-বোনদের উচিৎ এই ধরণের জঘণ্য পাপের কাজ থেকে বিরত থাকা এবং যেসমস্ত জিনিষ উহার প্রতি আকৃষ্ট করে তা থেকেও সতর্ক থাকা। যেমন নারী-পুরুষের নির্জনে সাক্ষাৎ, বেপর্দা হওয়া, মহিলাদের সৌন্দর্যের স্থান প্রকাশ করা ইত্যাদি। এসমস্ত কাজ মানুষকে ব্যভিচারের প্রতি উৎসাহ যোগায়। তাই এগুলো থেকেও সাবধান থাকতে হবে।
_________________________________

গীবতকারী ও চুগলখোরের কঠিন অবস্থাঃ

গীবতকারী ও চুগলখোরেরা মানুষের মধ্যে বিচ্ছেদ ও ঝগড়া সৃষ্টির উদ্দেশ্যে একজনের কথা অন্যজনের কাছে বর্ণনা করে থাকে। মানুষের পারস্পরিক ভালবাসাকে শত্রুতায় পরিণত করে। তারা মানুষের মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোক এবং বিশৃংখলা সৃষ্টিকারী। তাদেরকে আপনি দেখতে পাবেন একজনের কাছে একরকম এবং অন্যজনের কাছে অন্যরকম চেহারা নিয়ে উপস্থিত হচ্ছে। তারা নিজেদের ইচ্ছা মত যখন যা খুশী তাই বলে থাকে। আল্লাহ তায়া’লা তাদেরকে ধমকি দিয়ে বলেনঃ

“প্রত্যেক পশ্চাতে ও সম্মুখে পরনিন্দাকারীর জন্য দুর্ভোগ।
সূরা হুমাজাহঃ ১

তারা নিজেদের কথা এবং কাজের মাধ্যমে মানুষের দোষ বর্ণনা করে থাকে। তারা ক্রোধ ও ঘৃণার হকদার। কারণ তারা মিথ্যা, গীবত, চুগলখোরী, খিয়ানত, হিংসা এবং ধোকা থেকে বিরত হয়না। এজন্যই কবরের আজাবের অন্যতম কারণ হলো চুগলখোরী করা। ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিতঃ

“একদা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মদীনা বা মক্কার কোন একটি বাগানের পাশদিয়ে অতিক্রম করছিলেন। তথায় তিনি দু’জন এমন মানুষের আওয়াজ শুনতে পেলেন যাদেরকে কবরে শাস্তি দেয়া হচ্ছিল। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তাদেরকে আযাব দেয়া হচ্ছে অথচ বড় কোন অপরাধের কারণে আযাব দেয়া হচ্ছে না। অতঃপর তিনি বললেনঃ তাদের একজন পেশাব করার সময় আড়াল করতোনা। আর দ্বিতীয় ব্যক্তি একজনের কথা অন্যজনের কাছে লাগাত। এরপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একটি কাঁচা খেজুরের শাখা আনতে বললেন। অতঃপর উক্ত খেজুরের শাখাটিকে দু’ভাগে বিভক্ত করে প্রত্যেক কবরের উপর একটি করে রেখে দিলেন। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে জিজ্ঞেস করা হলো আপনি কেন এরকম করলেন? উত্তরে তিনি বললেনঃ হয়ত খেজুরের শাখা দু’টি জীবিত থাকা পর্যন্ত তাদের কবরের আযাব হালকা করা হবে। 

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

“যখন আমাকে মিরাজে নিয়ে যাওয়া হলো, তখন আমি তামার নখ বিশিষ্ট একদল লোকের কাছ দিয়ে অতিক্রম করলাম। তারা নখগুলো দিয়ে তাদের মুখমন্ডল ও বক্ষদেশে আঘাত করে ক্ষত-বিক্ষত করছিল। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ হে জিবরীল! এসমস্ত লোক কারা? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ এরা দুনিয়াতে মানুষের গোশ্‌ত ভক্ষণ করত এবং তাদের মান-সম্মান নষ্ট করত। অর্থাৎ তারা মানুষের গীবত ও চুগলখোরী করত।

কাতাদা (রঃ) বলেনঃ আমাদেরকে বলা হয়েছে কবরের আযাবের এক তৃতীয়াংশ হবে গীবতের কারণে, এক তৃতীয়াংশ পেশাব থেকে সাবধান না থাকার কারণে এবং এক তৃতীয়াংশ চুগলখোরীর কারণে। যেহেতু গীবতকারী এবং চুগলখোর মিথ্যা কথাও বলে থাকে তাই সে মিথ্যাবাদীর শাস্তিও ভোগ করবে। সামুরা বিন জুন্দুব (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর দীর্ঘ হাদীছে এসেছে,

“অতঃপর আমরা এমন এক লোকের কাছে উপস্থিত হলাম যাকে চিৎকরে শায়িত অবস্থায় রাখা হয়েছে। একজন লোক লোহার কেঁচী হাতে নিয়ে তার মাথার পাশে দাড়িয়ে আছে। দাড়ানো ব্যক্তি শায়িত ব্যক্তির মুখের একদিকে সেই কেঁচী প্রবেশ করিয়ে পিছনের দিকে ঘাড় পর্যন্ত চিরে ফেলছে। নাকের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করিয়ে অনুরূপ করা হচ্ছে এবং চোখের ভিতর প্রবেশ করিয়েও অনুরূপ করা হচ্ছে। একদিকে চিরে শেষ করে অন্যদিকেও অনুরূপ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় দিকে চিরে শেষ করার সাথে সাথে প্রথম দিক আগের মত হয়ে যাচ্ছে। আবার প্রথম দিকে নতুন করে চিরা হচ্ছে। হাদীছের শেষাংশে এসেছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিবরীলকে জিজ্ঞেস করলেনঃ কি অপরাধের কারণে তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হচ্ছে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ এই ব্যক্তি হলো এমন লোক যে সকাল বেলা ঘর থেকে বের হয়েই মিথ্যা কথা বলত এবং সে মিথ্যা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়তো।

হাদীছে চোগলখোরের কঠিন শাস্তির কথা এসেছে। হুযায়ফা (রাঃ) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন,

“চুগলখোর জান্নাতে প্রবেশ করবেনা।  আম্মার বিন ইয়াসির (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন,

“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে দু’জনের নিকট দু’রকম কথা বলবে কিয়ামতের দিন তার আগুনের দু’টি জিহ্‌বা হবে।  ইবনে উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত,

“আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যার সুপারিশ আল্লাহর নির্ধারিত কোন দন্ডবিধি বাস্তবায়ন করার প্রতিরোধ হয়ে দাড়াল সে আল্লাহর সাথে সংগ্রামে লিপ্ত হল। যে ব্যক্তি জেনে-বুঝে অন্যায়ভাবে কারো সাথে ঝগড়ায় লিপ্ত হল সে তা থেকে বিরত থাকার পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর ক্রোধের ভিতরে থাকবে। আর যে ব্যক্তি কোন মুমিন সম্পর্কে এমন কথা বলবে যা তার ভিতরে নেই সে যদি তা বর্জন করতঃ তাওবা না করে মৃত্যু বরণ করে আল্লাহ তাকে রাদাগাতুল খাবালে  প্রবেশ করাবেন। তার উক্ত কথার প্রায়ঃশিচত্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করবে।

আয়েশা (রাঃ) নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বর্ণনা করেন যে,

“যে ব্যক্তি দুনিয়াতে তার ভাইয়ের গোশত ভক্ষণ করবে (গীবত করবে) কিয়ামতের দিন গীবতকারীর সামনে গীবতকৃত ব্যক্তিকে মৃত অবস্থায় উপস্থিত করা হবে এবং বলা হবে তুমি এখন মৃত অবস্থায় তার গোশত ভক্ষণ কর। যেমনভাবে জীবিতাবস্থায় তার গোশত ভক্ষণ করতে। অতঃপর সে অতি অনিচ্ছা সত্বেও চিৎকার করতে করতে তা ভক্ষণ করবে।
_________________________________

অহংকারীদের অবস্থাঃ
আমর বিন শুয়াইব (রাঃ) তার পিতা, তাঁর পিতা তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

“কিয়ামতের দিন অহংকারীদেরকে মানুষের আকৃতিতে ছোট ছোট পিপীলিকার ন্যায় হাশরের ময়দানে উপস্থিত করা হবে। অপমান ও লাঞ্ছনা তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে ফেলবে। তাদেরকে জাহান্নামের একটি জেলখানায় একত্রিত করা হবে যার নাম হবে “বুলাস। আগুন তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঢেকে ফেলবে। জাহান্নামীদের শরীরের ঘাম তাদেরকে পান করতে বাধ্য করা হবে।  নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

“যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবেনা। 

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
“এক ব্যক্তি দম্ভ ও অহংকারের সাথে তার পায়জামা বা লুঙ্গি যমীনের উপর ঝুলিয়ে টেনে টেনে পথ চলছিল। এমন সময় সে যমীনে ধ্বসিয়ে দেয়া হল। কিয়ামত পর্যন্ত সে এভাবে যমীনে ধ্বসতে (নীচের দিকে) যেতে থাকবে।
______________________________________
মিথ্যাবাদীদের পরিণামঃ
সামুরা বিন জুন্দুব (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর দীর্ঘ হাদীছে এসেছে,

“অতঃপর আমরা এমন এক লোকের কাছে উপস্থিত হলাম যাকে চিৎকরে শায়িত অবস্থায় রাখা হয়েছে। আর একজন লোক লোহার বড়শী হাতে নিয়ে তার মাথার পাশে দাড়িয়ে আছে। দাড়ানো ব্যক্তি শায়িত ব্যক্তির মুখের একদিকে লৌহাস্ত্র (চাকু) প্রবেশ করিয়ে পিছনের দিকে ঘাড় পর্যন্ত চিরে ফেলছে। নাকের ছিদ্র দিয়ে প্রবেশ করিয়ে এরূপ করা হচ্ছে। চোখের ভিতর প্রবেশ করিয়েও অনুরূপ করা হচ্ছে। একদিকে চিরে শেষ করে অন্যদিকেও অনুরূপ করা হচ্ছে। দ্বিতীয় দিকে চিরে শেষ করার সাথে সাথে প্রথম দিক আগের মত হয়ে যাচ্ছে। আবার প্রথম দিকে নতুন করে চিরা হচ্ছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জিবরীলকে জিজ্ঞেস করলেনঃ কি অপরাধের কারণে তাকে এভাবে শাস্তি দেয়া হচ্ছে? জিবরীল (আঃ) বললেনঃ এ হলো এমন লোক যে সকাল বেলা ঘর থেকে বের হয়েই মিথ্যা কথা বলতে শুরু করতো এবং সে মিথ্যা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ত।  আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বলেনঃ

“আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেনঃ যে ব্যক্তি কোন মুমিনের এমন দোষ বর্ণনা করলো যা তার মাঝে নেই সে যদি তা থেকে তাওবা না করে মৃত্যু বরণ করে আল্লাহ তাকে জাহান্নামের ভিতরে জাহান্নামীদের শরীরের ঘাম ও কাঁদা মিশ্রিত স্থানে বসবাস করাবেন।
____________________________________

বেপর্দা মহিলার অবস্থাঃ
যে সমস্ত মহিলা দুনিয়াতে বেপর্দা হয়ে চলা-ফেরা করবে তাদের সম্পর্কে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

“দুই প্রকারের লোক জাহান্নামে প্রবেশ করবে। কিন্তু আমি তাদেরকে দেখিনি। তাদের এক প্রকার হলো এমন লোক যাদের হাতে গরুর লেজের মত লাঠি থাকবে। তা দিয়ে মানুষকে প্রহার করবে। আর দ্বিতীয় প্রকার হল এমন সব মহিলা যারা দুনিয়াতে পোষাক পরিধান করবে কিন্তু পোষাক সংকীর্ণ হওয়ার কারণে অথবা পোষাক দিয়ে সমস্ত শরীর আবৃত না করার কারণে তাদেরকে উলঙ্গের মত দেখা যাবে। তারা বেহায়াপনা ও অশ্লীল আচরণের মাধ্যমে পুরুষদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করবে। তাদের মাথার চুলগুলো উটের কুঁজের মত সামনের দিকে ঝুলে থাকবে। তারা জান্নাতে প্রবেশ করা তো দূরের কথা জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবেনা। অথচ জান্নাতের সুঘ্রাণ বহুদূর থেকে পাওয়া যাবে।

মুসলিম রমণীর জন্য বেপর্দায় ঘর থেকে বের হওয়া কবীরা গুনাহর অন্তর্ভূক্ত। এ ব্যাপারে কঠোর সতর্কবাণী এসেছে। পর্দাহীনা মহিলা পর্দা না করার কারণে জাহান্নামের অধিবাসী হওয়ার ভয় রয়েছে। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

“দুনিয়াতে পোষাক পরিধানকারী অনেক মহিলা কিয়ামতের দিন বিবস্ত্র অবস্থায় থাকবে।
  
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর উপরোক্ত কথাটির কয়েক ধরণের ব্যাখ্যা হতে পারে।
১) অনেক মহিলা ধন-সম্পদ ও প্রাচুর্যের মাঝে থেকে দুনিয়াতে সুন্দর পোষাক পরিধান করে শরীর ঢেকে রাখবে। কিন্তু দুনিয়াতে ভাল আমল না করার কারণে আখেরাতে ছাওয়াব থেকে খালী থাকবে।
২) মহিলা দুনিয়াতে কাপড় পরিধান করতো, কিন্তু এমন সংকীর্ণ ও পাতলা পোষাক পরিধান করত যা দ্বারা সতর আবৃত হতনা। তাই প্রতিদান কিয়ামতের দিন উলঙ্গ করার মাধ্যমে তাকে শাস্তি দেয়া হবে।
৩) মহিলা দুনিয়াতে পোষাক পরিধান করতো, কিন্তু পিছনের দিকে ওড়না ঝুলিয়ে দিত যাতে বক্ষ ও শরীরের অধিকাংশ প্রকাশ হয়ে যেত। যার ফলে তাকে উলঙ্গের মত দেখা যেত। পরিণামে তাকে কিয়ামতের দিন বিবস্ত্র করে শাস্তি দেয়া হবে।
  

তাই বুদ্ধিমতী মহিলাদের উচিৎ এ ভয়াবহ অবস্থা ও পরিণতির কথা চিন্তা করা যার একমাত্র কারণ বেপর্দা ও বেহায়াপনা। মুসলিম রমণী যেন ঐ সমস্ত পোষাক ও ওড়নার প্রতি দৃষ্টি না দেয় যা পর্দার মাধ্যম না হয়ে ফিতনার কারণে পরিণত হয়েছে। ভেবে দেখা উচিৎ ঐ রমণীর! যে নিজেকে মুমিন পুরুষদের জন্যে ফিতনার কারণে পরিণত হয়ে তাদেরকে জান্নাতের পথে চলা থেকে পদস্খলন করছে।