বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০১৫

“তাকফিরী” কারা?

প্রশ্নঃ তাকফিরী কারা?
তাকফিরীদের বক্তা ও লিখকদের ব্যপারে সাবধান!
উত্তরঃ আরবী কাফির থেকে তাকফির শব্দটি এসেছে। আর কাফের শব্দটি এসেছে কুফর থেকে।
কুফর - কুফর শব্দের অর্থ হচ্ছে অস্বীকার করা, অবিশ্বাস করা অথবা গোপন করা।
কাফের - বাংলাতে কাফের শব্দের অর্থ করা হয় অবিশ্বাসী বা বেঈমান, যে ব্যক্তির কোন ঈমান নেই। যে ব্যক্তি আল্লাহর নাযিলকৃত দ্বীন ইসলাম বা ইসলাম ধর্মের কোন অংশকে, ক্বুরানুল কারীম বা এর কোন আয়াতকে, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অথবা কোন একজন নবী অথবা রাসুলকে অস্বীকার করে, ইসলামি আকিদাহ বা এর মৌলিক কোন ধর্মীয় বিশ্বাস বা অকাট্য দলিল দিয়ে প্রমানিত ইসলামের কোন বিধি-বিধানকে অস্বীকার করে, অবিশ্বাস করে বা প্রত্যাখ্যান করে, অথবা এইগুলো নিয়ে হাসি-ঠাট্টা বা অবজ্ঞা করে, নিঃসন্দেহে সে ব্যক্তি একজন কাফের। কাফের ব্যক্তি চির জাহান্নামী, সে কোনদিন জাহান্নাম থেকে বের হতে পারবেনা। অনন্তকাল সে জাহান্নামে কঠিন শাস্তি পেতে থাকবে। আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।
উদাহরণঃ ইয়াহুদী ও খ্রীস্টানরা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে রাসুল বা আল্লাহর দূত হিসেবে বিশ্বাস করেনা, ক্বুরানুল কারীম আল্লাহর কালাম এই কথা মেনে নেয়না, একারণে তারা কাফের, তারাও চির জাহান্নামী যদিওবা তারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করে। অনুরূপভাবে, নাস্তিক যারা আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করেনা তারাও কাফের। হিন্দুরাও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে রাসুল হিসেবে বিশ্বাস করেনা, সুতরাং একদিক থেকে যেমন তারা যেমন মূর্তি পূজা করে মুশরেক, অন্যদিক থেকে তারা কাফেরও বটে।
তাকফির কোন মুসলিম ব্যক্তিকে কাফের বলে ঘোষণা করাকে তাকফির বলা হয়। অর্থাৎ, যে ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম দাবী করে, তাকে স্পষ্ট কোন শিরক বা কুফুরী করার কারণে তাকে কাফের বলে ঘোষণা করাকে তাকফির বলা হয়।
কোন ব্যক্তি যদি নিজেকে মুসলিম দাবী করে, কিন্তু সে দুর্গা পূজাতে শরীক হয়ে মূর্তিকে ফুল দেয়, কার্তিক, গণেশের কাছে কল্যাণ প্রার্থনা করা, অথবা কোন নবী-রাসূল বা অলি-আওলিয়ার কাছে দুয়া করে, এই সবগুলো কাজ শিরক, যে কারণে ঐ ব্যক্তি নিজেকে মুসলিম দাবী করলেও তার ঈমান নষ্ট হয়ে সে কাফের হয়ে যাবে। অনুরূপভাবে, কেউ যদি ক্বুরানের কোন আয়াতকে অস্বীকার করে, বা আল্লাহর কোন বিধানকে অস্বীকার করে তাহলেও সে কাফের হয়ে যাবে। এমন অনেক কাজ আছে, যেইগুলো সুস্পষ্ট বড় শিরক বা কুফর, যেইগুলোতে লিপ্ত হলে একজন মুসলিমের ঈমান নষ্ট হয়ে সে কাফের হয়ে যাবে।
তাকফিরী কোন মুসলিম যদি শিরক অথবা কুফুরী করে, তাকে তোওবা করে দ্বীনে ফিরে আসতে বলার পরেও সে তোওবা না করে কুফুরীতে স্থির থাকে তাহলে ঐ ব্যক্তি কাফের, এবং কোন আলেম তাকে কাফের বলতে পারেন। তবে সাধারণ মানুষ যারা এই ব্যপারে যথেষ্ঠ জ্ঞানের অধিকারী নন, তারা নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কাফের বলা থেকে বিরত থাকবেন, কারণ হতে পারে তিনি ভুল বুঝে কোন মুসলিম ব্যক্তিকেই কাফের বলে ফেলেছেন।
কোন মুসলিম ব্যক্তি যদি কোন বড় রকমের অন্যায়, হারাম কিংবা কবীরাহ গুনাহতে লিপ্ত হয়, কিন্তু তা যদি এমন কোন বড় শিরক বা কুফুরী না হয় যে, যার কারণে সে ইসলাম থেকে বের হয়ে সে কাফের হয়না, তাহলে এমন পাপী মুসলিমদেরকে কাফের বলা মারাত্মক অপরাধ।
কোন মুসলিম ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে কাফির আখ্যাদান সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সতর্কবাণীঃ
১. উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন কেউ তার মুসলিম ভাইকে কাফির বলে, তখন তাদের দুইজনের মধ্যে একজনের উপর তা (কুফুরী) বর্তায়। যা বলেছে, তা যদি সঠিক হয়, তাহলে তো ভালো। নচেৎ (যে কাফের বলেছে), তার উপর ঐ কথা ফিরে যায় (অর্থাৎ সে ব্যক্তি নিজেই কাফির হয়ে যায়)।’’
সহীহ বুখারীঃ ৬১০৪; সহীহ মুসলিমঃ ৬১।
২. আবু যার (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কোন ব্যক্তিকে হে কাফির বলে অথবা হে আল্লাহর দুশমন বলে ডাকে, অথচ বাস্তবিক ক্ষেত্রে যদি সে তা না হয়, তাহলে তার (বক্তার) উপর তা বর্তায়।’’
রিয়াদুস সালিহীনঃ ১৭৪২।
৩. সাবিত ইবন যাহহাক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ঈমানদারকে লানাত (অভিশাপ দেওয়া) করা তাকে হত্যা করার সমান। আর কেউ কোন ঈমানদার ব্যক্তিকে কুফুরির অপবাদ দিলে, সেটাও তাকে হত্যা করার সমান হবে।’’
সহীহ বুখারীঃ ৬১০৫।
যারা কোন মুসলিম ব্যক্তিকে তার কৃত পাপের কারণে কাফের বলে ফতোয়া দেয়, তারাই হচ্ছে তাকফিরী।
উদাহরণঃ ধরুন কোন রাজা মুসলিম, কিন্তু সে তার অধীনস্থদের উপর অনেক জুলুম অত্যাচার করে। সেই রাজা কোন কারণে কিছু মুসলিমকে হত্যা করলো। ধরুন সে ১০০ জন মুসলিমকে হত্যা করলো। সে যদি অন্যায়ভাবে মুসলিমদেরকে হত্যা করে, তাহলে সে অনেক বড় অন্যায় করলো। যেখানে একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করা গোটা মানবজাতিকে হত্যা করে ফেলার সমান অপরাধ!
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, যে কেউ কিসাস (প্রাণের বিনিময়ে প্রাণের আইনের জন্য) অথবা জমীনে ফাসাদ (অনর্থ সৃষ্টি করা) ছাড়া কাউকে হত্যা করে, সে যেন সমস্ত মানব জাতিকেই হত্যা করে ফেলে এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সমস্ত মানবজাতির জীবন রক্ষা করে।
[সুরা আল-মায়িদাহঃ ৩২]
নিরপরাধ মানুষ হত্যা করার কারণে সেই রাজা অনেক বড় ফাসেক এবং জালেম হবে, কিন্তু মানুষ হত্যা করার কারণে কেউ কাফের হয়না। কেউ যদি নিরপরাধ মানুষ হত্যা করাকে হালাল, জায়েজ বা বৈধ মনে করে, তাহলে সবচাইতে বড় হারাম বা কবীরাহ গুনাহকে হালাল মনে করার কারণে সে কাফের হবে। কিন্তু, সে যদি মানুষ হত্যা করা হারাম বলে স্বীকার করে কিন্তু, ব্যক্তিগত শত্রুতা, ক্রোধ বা হিংসার কারণে মানুষ হত্যা করে তাহলে সে অনেক বড় জালেম বা পাপী, কিন্তু একারণে তাকে কাফের বলা যাবেনা। এখন কেউ যদি আবেগের বশবর্তী হয়ে সেই জালেম রাজাকে কাফের বলে, তাহলে সে নিজেও একটা মহা অন্যায় করে বসলো, একজন মুসলিমকে কাফের বলার কারণে।

আর এমন যারা, জুলুম-অত্যাচার বা পাপের কারণে পাপী মুসলিমদেরকে কাফের বলে ফতোয়া দেওয়ার বদ-অভ্যাস রয়েছে, তাদের ব্যপারে মানুষদেরকে সতর্ক করার জন্যে তাদেরকে তাকফিরী বলা হয়।