শনিবার, ২১ জানুয়ারী, ২০১৭

ডা. জাকির নায়েক (পর্ব-১)

ডা. জাকির নায়েক (পর্ব-১)
Zobayer Hosain ভাই আমাদের ইনবক্সে লিখেছেনঃ
As salamu alaikum vai. Apni kmn Achen?? Apni, Zakir Naiek er shob gulo vule nia ekta post diben plz. Allah apnake valo rakhun.
ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি বারাকাতুহু। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ ভালো রেখেছেন। আপনি কেমন আছেন? আল্লাহ আপনাকেও অনেক ভালো রাখুন, আমিন। আমি কিছু লিখবো ইনশা আল্লাহ।
__________________________
বর্তমান সময়ে কিছু অল্প বয়ষ্ক লোক রয়েছে যারা দাবী করছেঃ
(১) আমি শুধু ক্বুরআন ও হাদীস মানি, কোন আলেমের তাকলীদ করিনা।
(২) আলেমদেরকে মানা হারাম।
(৩) আমার জন্য শুধু ক্বুরআন ও হাদীসই যথেষ্ঠ, কোন আলেম লাগবে না।
- যদিও তারা দাবী করছে তারা শুধু ক্বুরআন ও হাদীস মানে, কিন্তু সত্যি কথা হচ্ছে তারা নিজেরা ক্বুরআন ও হাদীস পড়েনা বা জানে না। আলেম ওলামাদের সাহায্য ব্যতীত, শুধুমাত্র নিজের যোগ্যতার ক্বুরআন ও হাদীস বুঝা ও ব্যখ্যা করার মতো যোগ্যতায় তারা এখনো পৌঁছাতে পারে নি। কিছু বক্তা ও লেখকদের দুই-চারটা লেকচার শুনে আর কিছু ছোট ছোট কিছু বই পড়ে সামান্য ইলমের স্বাদ পেয়ে তারা মনে করছে, আলেম ওলামাদের সাহায্য ছাড়াই সরাসরি ক্বুরআন ও হাদীস ব্যখ্যা করার ও ফতোয়া দেওয়ার মতো যোগ্যতায় পৌঁছে গেছে। তাদের অনেকে আলেমদের মর্যাদা ও প্রয়োজনীয়তা এবং উসুলে ফিকহকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করে নিজেই ফতোয়াবাজি করে লোকদেরকে বিভ্রান্ত করছে।
- জোরে আমিন বলা, রুকুর পূর্বে ও পরে রাফউল ইয়াদাইন করা এমন দুই-চারটা আমল দেখে অনেকে তাদেরকে আহলে হাদীস বা সালাফী বলে মনে করে, অথচ আহলে হাদীস বা সালাফী দাওয়াতের সাথে এমন অজ্ঞতা-মূর্খতার কোন সম্পর্ক নেই।
- এই সমস্ত লোকেরা যদিও বলে, তারা শুধু ক্বুরআন ও হাদীস মানে, কোন আলেমের তাকলীদ করেনা। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে, তারা ডা. জাকির নায়েকের অন্ধ অনুসরণ করে, এবং তাকে একমাত্র, অদ্বিতীয় আলেম, তার মতো আলেম দুনিয়াতে আর কেউ নেই বলে মনে করে।
__________________________
আজ আমি ডা. জাকির নায়েকের কয়েকটা ভুল তুলে ধরবো, এবং তার কিছু অনুসারী জেনেই হোক কিংবা না জেনে অন্ধভাবে তার অনুসরণ করছে, তার প্রমান আমি দিবো ইন শাল্লাহ।
__________________________
বিগত ৯-ই জানুসায়ী, ২০১৭-তে আমাদের পেইজে এটা লেখা পোস্ট করেছিলাম, যা নিন্মরূপঃ
(১) আল্লাহ কি সবকিছু করতে পারেন?
উত্তরঃ হ্যা, আল্লাহ সবকিছু করতে পারেন। দলীলঃ
وَكَانُوا أَشَدَّ مِنْهُمْ قُوَّةً ۚ وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعْجِزَهُ مِنْ شَيْءٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ ۚ إِنَّهُ كَانَ عَلِيمًا قَدِيرًا
বাংলা অনুবাদঃ আল্লাহ এমন নন যে, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীর কোন কিছু তাঁকে ব্যর্থ করতে পারে। নিশ্চয় তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান। সুরা ফাতিরঃ ৪৪।
English Translation : Allah is not such that anything in the heavens or in the earth escapes Him. Verily, He is All Knowing, All Omnipotent. Sura Fatir: 44.
ডা. মুহসিন খান قَدِيرًا এর অর্থ করেছেন,
Omnipotent- having unlimited power, able to anything.
.
وَهُوَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
বাংলা অনুবাদঃ আর তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। সুরা আল-মুলকঃ ১।
English Translation : and He is Able to do all things. Sura al-Mulk: 1.
.
(২) আল্লাহ কি সন্তান জন্ম দিতে পারেন?
উত্তরঃ সন্তান জন্ম দেওয়া আল্লাহর কাজ নয়। অথবা বলতে হবে, সন্তান জন্ম দেওয়া আল্লাহর জন্য শোভনীয় নয়। দলীলঃ
مَا كَانَ لِلَّهِ أَنْ يَتَّخِذَ مِنْ وَلَدٍ
বাংলা অনুবাদঃ সন্তান গ্রহণ করা আল্লাহর কাজ নয়। সুরা মারইয়ামঃ ৩৫।
English Translation : It befits not (the Majesty of) Allah that He should beget a son." Sura Maryam: 35.
.
(৩) কিন্তু কখনো এই কথা বলা যাবে না যে, আল্লাহ সন্তান জন্ম দিতে পারেন না, অথবা, আল্লাহ অমুক কাজ করতে পারেন না। এইভাবে বললে আল্লাহর প্রতি অক্ষমতা আরোপ করা হয়, অথচ আল্লাহ স্বয়ং নিজে বলছেন, তিনি সব কিছু করতে সক্ষম। আল্লাহ সবকিছু করতে পারেন না, আল্লাহ অমুক কাজ করতে পারেন না বললে আল্লাহর সব কিছু করার ক্ষমতাকে অস্বীকার করে তাঁর প্রতি অক্ষমতার মিথ্যা আরোপ করা হয়।
সন্তান জন্ম দেওয়া, নিজেকে ধ্বংস করা, আল্লাহর মতো দ্বিতীয় আল্লাহ সৃষ্টি করা (নাউযুবিল্লাহি মিং যালিক) - এই ধরণের কাজগুলো ঘোড়ার ডিমের মতোই অসম্ভব ও অস্তিত্বহীন কাজ। এই ধরণের কথা ও কাজ আল্লাহর সুমহান নাম, গুণাবলী ও মর্যাদার সাথে শোভনীয় নয়। কোন কাফের, মুশরেক, নাস্তিক বা মূর্খ ব্যক্তি যদি এই ধরণের প্রশ্ন করে উত্তর বলতে বলতে হবে, এই কাজ আল্লাহর সুমহান গুণাবলী ও মর্যাদার সাথে শোভনীয় নয়
.
(৪) শায়খুল ইসলাম ইবনে তায়মিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, আহলে সুন্নাহর মত অনুযায়ী সবকিছুর পরেই আল্লাহ তালার ক্ষমতা রয়েছে, এবং যা বাস্তব তার সবকিছুই এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। আর এমন সব জিনিস যা সহজাতরূপেই অসম্ভব, যেমন এমন কিছু যা একই সাথে অস্তিত্ববান আবার অস্তিত্বহীন, যার মধ্যে কোন বাস্তবতা নেই এবং যার অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায়না, পূর্ববর্তী আলেমদের ইজমা (ঐক্যমত) অনুযায়ী এমন কিছুকে কোন জিনিস হিসেবে অবিহিত করা যায়না। এর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে (আল্লাহ কি) তাঁর অনুরূপ দ্বিতীয় কাউকে সৃষ্টি করতে পারেন ইত্যাদি এমন ধরণে কথা। মিনহাজ আ-সুন্নাহঃ ২/২৯৪
ইমাম ইবনুল কায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, যেই জিনিসটা অবাস্তব তা কোন জিনিস হতে পারেনা, কাজেই তাঁর (আল্লাহ) ক্ষমতার সাথে এর কোন সম্পর্কই নেই। সবকিছুর ওপরেই আল্লাহর ক্ষমতা আছে এবং কোন বাস্তব জিনিস আল্লাহর ক্ষমতার উর্ধে নয় শিফা আল-আলীলঃ ৩৭৪
(৫) আল্লামাহ সালিহ আল-ফাউজান হাফিজাহুল্লাহকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো,
প্রশ্নকর্তাঃ বর্তমান বিশ্বে একজন বিখ্যাত বক্তা দাবী করেছে, আল্লাহ সবকিছু করতে পারেন না। আমি ১০০০ জিনিসের নাম জানি যেইগুলো আল্লাহ করতে পারেন না। সে কি পথভ্রষ্ট বক্তা? আমরা কি তার ব্যপারে লোকদেরকে সতর্ক করবো?  
শায়খ ফাউজান হাফিজাহুল্লাহ উত্তরে বলেছেন, যে ব্যক্তি বলে যে, আল্লাহ সবকিছু করতে পারেন না, সে একজন মুলহিদ, সে আল্লাহর আসমা ও সিফাতের ব্যপারে ইলহাদ করেছে। এই বক্তা সত্যের উপরে প্রতিষ্ঠিত নয়।
*মুলহিদ বলা হয় এমন ব্যক্তিকে, যে আল্লাহর আসমা ও সিফাতের ব্যপারে ইলহাদ করেছে, হয় আল্লাহর আসমা ও সিফাতকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে অথবা, আল্লাহর আসমা ও সিফাতের অর্থ এমনভাবে বিকৃত করা যা আল্লাহর জন্য শোভনীয় নয়।
আমি ফতোয়াটা সংক্ষেপে উল্লেখ করেছি, যারা শায়খের নিজের ভয়েস থেকে সম্পূর্ণ ফতোয়া শুনতে চান তারা এই লিংক দেখুন
https://www.youtube.com/watch?v=JpCraS7tlBY
__________________________
উপরে ক্বুরআনে আয়াত এবং শায়খ ফাউজানের প্রশ্নের উত্তর থেকে আসলে পরিষ্কার, আল্লাহ সব কিছুই করতে পারেন, এটা আল্লাহর একটা সিফাত। ক্বুরআন, হাদীস, আজ পর্যন্ত মুসলিম আলেমদের ফতোয়া - আপনারা কোথাও খুঁজে পাবেন না যে, আল্লাহ কোন কাজ করতে পারেন না। একারণে যে ব্যক্তি বলে যে, আল্লাহ ১০০০টা কাজ করতে পারেনা, সে আসলে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ দিলো। আর আল্লাহ সম্পর্কে যে মিথ্যা অপবাদ রচনা করে, তার সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ কি বলেছেন দেখুন, তার চাইতে বড় জালেম আর কে আছে, যে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা কথা রচনা করে? সুরা কাহফঃ ১৫।
আল্লাহর কোন আসমা বা সিফাতকে অস্বীকার করাকে ইলহাদ বলা হয়। একারণে যে ব্যক্তি দাবী করে যে, আল্লাহ সব কিছু করতে পারেন না, শায়খ ফাউজানকে তার ব্যপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি তাকে মুলহিদ বলে ফতোয়া দিয়েছেন। ইলহাদ কি এবং ইলহাদ করার হুকুম কি, এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন রহিমাহুল্লাহর ফতোয়া আরকানুল ইসলামের এই ফতোয়াটা দেখুন -
https://www.facebook.com/dawati.kaj/posts/1846373775634779?pnref=story
.
যাই হোক, আল্লাহ কি সবকিছু করতে পারেন? - আমার এই পোস্ট লিখার প্রধান উদ্দেশ্য ছিলো, এক ভিডিওতে ডা. জাকির নায়েক বলেছেন, আল্লাহ সব কিছু করতে পারেন না। এমনকি কথা বাড়াতে বাড়াতে তিনি অন্য এ জায়গায় দাবী করেছেন, তিনি এক হাজারটা কাজের নাম বলতে পারবেন যা আল্লাহ করতে পারেন না। ডা. জাকির নায়েকের বক্তব্যের লিংক

(১)
আল্লাহ সব কিছু করতে পারেন? - ডা. জাকির নায়েক। (১:৪৮ সেকেন্ড)
https://www.youtube.com/watch?v=X6Ycq73ddvM
.
(২) আমি ১০০০টা জিনিসের নাম জানি, যেইগুলো আল্লাহ করতে পারেন না (৫:১৮ সেকেন্ড)
https://www.youtube.com/watch?v=2p9acLJEka0
.
(৩) আল্লাহ সব কিছু করতে পারেন বলা অযৌক্তিক (৪:১৯ সেকেন্ড)
https://www.youtube.com/watch?v=Yf5lm3aDhgY
.
নাউযুবিল্লাহি মিং যালিক। মূলত তার এই কথা থেকে লোকদেরকে সতর্ক করার জন্য আমি তার নাম উল্লেখ না করে শুধুমাত্র ভুলটা তুলে ধরেছি। স্পষ্ট কুরআনের আয়াত এবং একজন বিজ্ঞ আলেমের ফতোয়া উল্লেখ করার পরেও, তার কিছু ভক্ত কোনরূপ চিন্তা-ভাবনা ছাড়াই ডা. জাকির নায়েকের এই কুফুরী কথাকে অন্ধভাবে সমর্থন করে আমাদের পোস্টে মন্তব্য করেছেন,
MD Saiful Islam : জাকির নায়েক তো ঠিক-ই বলেছে। আপনি কি অস্বীকার করতে পারবেন, আসমান, যমিন, আকাশ, পাতাল, সবখানেই আল্লাহর রাজত্ব নেই? যদি সবখানেই আল্লহর রাজত্ব থেকে থাকে, তাহলে একজন ব্যাক্তিকে আল্লাহ যেদিকেই নিয়ে যাকনা কেন, আল্লাহর রাজত্বের ভিতরেই তো সে ব্যাক্তি টি থাকবে। তা নয় কি? যদি না বুঝেন বলেন, উদাহরন দিয়ে বুঝিয়ে দিব ইনশাআল্লাহ।
দেখুন আমাদের এই ভাই ক্বুরানের কথা গ্রহণ না করে, আলেমদের বক্তব্য গ্রহণ না করে কিভাবে নিজের পছন্দের ব্যক্তির কুফুরী কথাকে ভ্রান্ত যুক্তি দিয়ে অন্ধভাবে সমর্থন করছেন। এটা যদি তাকলীদ না হয়, তাহলে তাকলীদ কাকে বলে।
Mizanur Rahman নামক অন্য একজন এক ডিগ্রী বেশি মন্তব্য করেছেন, জাকির নায়েকের কথা ঠিক আছে। তার কথা অনেক উচ্চাঙের, তাই অনেকে ভুলও বুঝে ফেলে
আমরা যখন চরমোনাই পীরের শিরক ও বিদাতের সমালোচনা করি তখন তাঁর মুরিদেরাও ঠিক এইভাবে দাবী করে যে, তাদের পীরের কথা অনেক উঁচু পর্যায়ের, আমরা নাকি বুঝতে পারছিনা!
তাহলে এই সমস্ত পীর-মুরিদের সাথে আমি শুধু ক্বুরআন ও হাদীস মানি এই যিকিরকারী অন্ধভক্তদের পার্থক্য থাকলো কোথায়?
26 June 2016 এই তারিখে Shahidul Islam Naik নামক এক লোক ডা. জাকির নায়েকের আল্লাহ সবকিছু করতে পারেন না এই কথার পক্ষে কলম ধরতে গিয়ে সে প্রশ্ন করেছে, আপনি কি বিশ্বাষ করেন আল্লাহ সবকিছু করতে পারেন? আমরা মুসলিমরা কখনোই বলিনা আল্লাহ সব কিছু করতে পারেন
এটা আশ্চর্যের কোন বিষয় নয় যে, Shahidul Islam Naik এর এমন অজ্ঞতাপূর্ণ কুফুরী কথাতেও ৩৬০ জন অবিবেচক মানুষ লাইক দিয়ে রেখেছে, আর ৫০-৬০ জন কমেন্টে লেখাটিতে বাহবা দিচ্ছে। আপনারা ভুলে যাবেন না, বর্তমানে আমরা কিয়ামতের পূর্বের সে জামানায় আছি, যেই জামানা সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে পূর্বেই সতর্ক করেছিলেন, কেয়ামতের পূর্বে অজ্ঞতা ব্যপকতা লাভ করবে অন্য হাদীসে আছে, অজ্ঞতা (এতো বেশি হবে যেন) বৃষ্টির মতো বর্ষিত হবে