রবিবার, ১ জানুয়ারী, ২০১৭

আধুনিক যুগের কতিপয় চরমপন্থী নেতৃবৃন্দের ভ্রান্ত আকীদাহঃ সাইয়েদ কুতুব

আধুনিক যুগের কতিপয় চরমপন্থী নেতৃবৃন্দের ভ্রান্ত আকীদাহঃ
সাইয়েদ কুতুব (মিসর, ১৯০৬-১৯৬৬)
জামাতে ইসলামী, ইখোয়ানুল মুসলিমিন (মুসলিম ব্রাদারহুড), আল-কায়েদাহ, আইসিস, বোকো হারাম হিযবুত তাওহীদ, আনোয়ার আওলাকি, জসীম উদ্দিন রাহমানী বা এমন অন্যান্য চরমপন্থী দল ও ব্যক্তিদের অনুসৃত আদর্শগুরুদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় একজন ব্যক্তিত্ব হচ্ছে সাইয়েদ কুতুব দ্বীন কায়েম, খিলাফত প্রতিষ্ঠা, ইসলামিক রাষ্ট্র গঠনের ভুল ব্যখ্যা দিয়ে কথিত ইসলামিক আন্দোলন এর মতাদর্শ প্রচারকারী সাইয়েদ কুতুব সম্পর্কে আরব বিশ্বের ৮ জন বড় আলেমদের ফতোয়ার ভাবানুবাদ তুলে ধরা হলো
(১) শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ আজ থেকে ৩৩ বছর পূর্বে বলেছিলেন, সাইয়েদ কুতুবের সকল কিতাব ধ্বংস করা জরুরী
(২) শায়খ মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, সাইয়েদ কুতুবের দ্বারা অনেকে ইসলামের দিকে উৎসাহিত হয়েছে, কিন্তু সে কোন আলেম ছিলোনা সে মানুষকে ইসলামের দিকে আহবান করতো; কিন্তু কুরআন, সুন্নাহ ও সালফে সালেহীনদেআদর্শ সম্পর্কে তার জ্ঞান ছিলোনা তাকে রদ্দ করা ওয়াজিব, তবে সেটা নম্রভাবে করতে হবে
(৩) শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, যদি আল্লাহর ভয় না থাকতো, তাহলে আমরা সাইয়েদ কুতুবকে কাফের বলে ফতোয়া দিতাম।
(৪) সাইয়েদ কুতুব বলেছিলো, মুয়াবিয়া এবং তাঁর দুষ্কর্মের সাথী আমর ইবনে আস মিথ্যা, প্রতারণা, মুনাফেকী, ঘুষের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল কিন্তু আলী তাদের মতো এতো নীচে নামতে পারেন নি বলে তিনি তাদের সাথে জয়ী হতে পারেন নি
মুয়াবিয়া এবং আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার মতো দুইজন সম্মানিত সাহাবীর প্রতি সাইয়েদ কুতুব কর্তৃক জঘন্য মিথ্যাচার ও অপবাদের ব্যপারে শায়খ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ আলে-শায়খ হাফিজাহুল্লাহকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, (সাইয়েদ কুতুব মুয়াবিয়া এবং আমর ইবনে আস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সম্পর্কে যা বলেছে), এটা কোন নিকৃষ্ট বাতিনি (শিয়া) অথবা কোন অভিশপ্ত ইয়াহুদীর কথা, এমন কথা কোন মুসলিম বলতে পারেনা
(৫) শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হাফিজাহুল্লাহ বলেছেন, সাইয়েদ কুতুব একজন জাহেল, তার জ্ঞান নেই, সে যা বলে তার কোন দলিল নেই অতীত থেকে এখন পর্যন্ত আলেমরা সাইয়েদ কুতুবকে রদ্দ করে আসছেন (ক)
শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হাফিজাহুল্লাহ আরো বলেছেন, সাইয়েদ কুতুব একজন জাহেল, এ কারণে (তার এমন কিছু যা কুফুরী, সেইগুলোর কারণে) তাকে তাকফির করা হবেনা (খ)
সাইয়েদ কুতুবকে রদ্দ করে লেখা শায়খ রাবী বিন হাদী আল-মাদখালী হাফিজাহুল্লা লিখিত বই আদওয়া ইসলামিয়া আলা আকিদাত সাইয়েদ কুতুব ওয়াল ফিকরিহ সম্পর্কে শায়খ ফাউজানকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এই বইটা লেখা (দাওয়াতের জন্যে) খুব ভালো একটা কাজ এবং এর লেখক (শায়খ রাবী) একজন মুহসিন ব্যক্তি। (গ)
(৬) শায়খ রাবী বিন হাদী আল-মাদখালী হাফিজাহুল্লাহ বলেছেন, আমরা আল্লাহকে ভয় করি এবং এই কারণে সাইয়েদ কুতুবকে তাকফীর করিনা, যদিও তার বইয়ে কিছু চরম কুফুরী কথা রয়েছে যে ব্যক্তি সাইয়েদ কুতুবের বই প্রকাশ করে, সেগুলোকে সমর্থন ও প্রচার করার নীতি অবলম্বন করে, আমরা তার সমালোচনা করি এমন ব্যক্তিরা অনেক বড় গোমরাহীকে আশ্রয় দিচ্ছে।
(৭) শায়খ উবায়েদ আল-জাবেরী হাফিজাহুল্লাহ বলেছেন, সাইয়েদ কুতুব হচ্ছে কুতুবীদের ইমাম, আর কুতুবীরা হচ্ছে ইখোয়ানুল মুসলিমিনের একটা শাখা সাইয়েদ কুতুবের লেখা কিতাব ফী যিলালিল কুরআন আসলে হচ্ছে ফী যিলালিল শায়তান, কুরআনের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই বর্তমান যুগে (মুসলমান) সমাজ যে আত্মঘাতী বোমা হামলা, গুপ্ত হত্যা ও তাকফীরের মতো বিপর্যয়ের মোকাবেলা করছে, এর উৎস হচ্ছে সাইয়েদ কুতুব
(৮) শায়খ রামাযান আল-হাজিরী হাফিজাহুল্লাহ বলেছেন, খারেজীদের কথা বললে মানুষ মনে করে যেন অতীর যুগের ইতিহাস শুনছে আসলে এখন তা ইতিহাস নয়, বরং খারেজী ফেতনাহ বাস্তবতা। এই খারেজী আকীদাকে জিন্দা করেছে এ যুগের ইখোয়ানুল মুসলিমীন (মুসলিম ব্রাদারহুড), যাদের শিরোমনি ছিল হাসান আল-বান্না ও সাইয়েদ কুতুব আর বর্তমানে তাদের মূল হোতা হচ্ছে ইউসুফ আল-কারজাবী (ক)
শায়খ রামাযান আল-হাজিরী হাফিজাহুল্লাহ আরো বলেছেন, সাইয়েদ কুতুব বলেছে, বর্তমান যুগে কোন ইসলাম নেই, ইসলামের পতাকাবাহী কোন দল বা ব্যানার নেই এবং কোন ইসলামী ব্যবস্থা নেই সাইয়েদ কুতুব হচ্ছে বর্তমান যুগের তাকফিরীদের শায়খ (ধর্মগুরু বা আদর্শ নেতা) বরং সে হচ্ছে তাদের জন্য মূল দলিল বা উৎস আপনি কি জানেন, সাইয়েদ কুতুব উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত সম্পর্কে কি মন্তব্য করেছে? সে বলেছে, উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুর খিলাফত ইসলামী ইতিহাসে একটা শূণ্যস্থান (অর্থাৎ তা মোটেও ইসলামিক নয়) আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, রাফেজীরা সাইয়েদ কুতুবের প্রশংসা করে এবং তার নামে ইরানে একটা রাস্তা নির্মান করেছে এমনকি তাকে ইসলামী ইতিহাসে একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মর্যাদা দিয়ে তার ছবিহ পোস্টাল স্ট্যাম্প প্রকাশ করেছে আমি শুনেছি খোমাইনির পুত্র সাইয়েদ কুতুবের প্রশংসা করে এমনকি আমি এটাও শুনেছি যে, ওমানের খারেজীদের বড় একজন নেতা ও মুফতি, যার নাম হচ্ছে আল-খালিলি, সে সাইয়েদ কুতুবের প্রশংসা করে সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, রাফেজী এবং খারেজীরা সাইয়েদ কুতুবকে ভালোবাসে কিন্তু আমরা আল্লাহর জন্যে সাইয়েদ কুতুবকে ঘৃণা করি সাইয়েদ কুতুব নবী ও রাসুলদের সম্পর্কে কটু মন্তব্য করেছে (নাউযুবিল্লাহ)! আর এটাই হচ্ছে ইখোয়ানুল মুসলিমিনের মাদ্রাসা (খ)
____________________________________
সাইয়েদ কুতুবের ভ্রান্ত আকীদাহ সংক্ষেপে তুলে ধরা হলোঃ
মাওলানা মওদুদীর লেখনীর দ্বারা উদ্বুদ্ধ হয়ে সাইয়েদ কুতুব একই ভাবধারায় তার লেখনী পরিচালনা করেছেন সাথে সাথে তার অনুসারী দল ইখওয়ানুল মুসলেমীনকেও সেইভাবেই পরিচালিত করেছেন সাইয়েদ কুতুব খারেজীদের ন্যায় মুসলিম উম্মাহকে হয় কাফের নয় মুমিন, এভাবে দুই ভাগ করে বলেছেন, লোকেরা আসলে মুসলমান নয়, যেমনটা তারা দাবী করে থাকে তারা জাহেলিয়াতের জীবন যাপন করছে তারা ধারণা করে যে, ইসলাম এই জাহেলিয়াতকে নিয়ে চলতে পারে কিন্তু তাদের এই ধোঁকা খাওয়া ও অন্যকে ধোঁকা দেওয়ায় প্রকৃত অবস্থার কোনই পরিবর্তন হবেনা না এটি ইসলাম, এবং না তারা মুসলমান মাআলিম ফিত-তারীক্ব পৃঃ ১৫৮
সাইয়েদ কুতুব আরো বলেছিলেন, কালচক্রে দ্বীন এখন লা ইলাহা ইল্লাল্লাহতে এসে দাঁড়িয়েছে পূর্বে ও পশ্চিমের মানুষ সর্বত্র মসজিদের মিনার সমূহে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর ধ্বনি বারবার উচ্চারণ করে কোনরূপ বুঝ ও বাস্তবতা ছাড়াই এরাই হলো সবচেয়ে বড় পাপী ও কিয়ামতের দিন সবচেয়ে কঠিন শাস্তির অধিকারী কেননা তাদের কাছে হেদায়াত স্পষ্ট হওয়ার পরেও এবং তারা আল্লাহর দ্বীনের মধ্যে থাকার পরেও তারা মানুষ পুঁজার দিকে ফিরে গেছে সাইয়িদ কুতুবের লেখা তাফসীর ফী যিলালিল কুরআন, সুরা আনআমঃ আয়াত ১৯-এর ব্যাখ্যা, ২/১০৫৭ পৃঃ
সাইয়েদ কুতুব আরো বলেন, বর্তমান বিশ্বে কোন মুসলিম রাষ্ট্র নেই বা কোন মুসলিম সমাজ নেই ফী যিলালিল কুরআন, সুরা হিজরের ভূমিকা, ৪/২১২২ পৃঃ
বর্তমান যুগে মুসলমানদের দ্বারা পরিচালিত মসজিদগুলিকে কুতুব জাহেলিয়াতের ইবাদতখানা বলে আখ্যায়িত করেছেন (নাউযুবিল্লাহি মিং যালিক!) ফী যিলালিল কুরআন, সুরা ইউনুস, ৮৭ আয়াতের ব্যাখ্যা ৩/১৮১৬
সাইয়েদ কুতুব মাওলানা মওদুদীর ন্যায় আল্লাহর ইবাদতসরকারের আনুগত্যকে সমান মনে করেছেন এবং অনৈসলামিক সরকারের আনুগত্য করাকে ঈমানহীনতা বলে গণ্য করেছেন ফী যিলালিল কুরআন, সুরা নিসা ৬০ আয়াতের ব্যাখ্যা, ২/ ৬৯৩ পৃঃ
সাইয়েদ কুতুব একটি মাত্র বিষয়েও অন্যের অনুসরণ করলে সে ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীন থেকে বেরিয়ে (কাফের হয়ে) যাবে বলে ধারণা করেছেন ফী যিলালিল কুরআন, ২/৯৭২ পৃঃ
সাইয়েদ কুতুব বলেন, ইসলামে জিহাদের উদ্দেশ্য হলো, ইসলাম বিরোধী শাসনের বুনিয়াদ ধ্বংস করে দেয়া এবং তার স্থলে ইসলামের ভিত্তিতে রাষ্ট্র কায়েম করা ফী যিলালিল কুরআন, ৩/১৪৫১ পৃঃ
মনিভাবে আলেমগণ সাইয়েদ কুতুবের অন্যান্য বই ছাড়াও শুধুমাত্র তাফসীর ফী যিলালিল কুরআন এ আক্বীদাগত ও অন্যান্য বিষয়ে ১৮১-টি ভুল চিহ্নিত করেছেন মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ আল-হুসাইন, ফিৎনাতুত তাকফীর ওয়াল হাকেমিয়াহ, পৃঃ ৯৮
মাওলানা মওদুদী ও সাইয়িদ কুতুবের চিন্তাধারার মাঝে কোন পার্থক্য নেই কবীরা গোনাহগার মুসলমানদের তারা মুসলমান হিসেবে মেনে নিতে চাননি বরং তাদেরকে মুসলিম উম্মাহ থেকে খারিজ বলে ধারণা করেছেন এর ফলে তারা সম্মানিত সাহাম ও সালাফে সালেহীনের পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছেন সাথে সাথে পদচ্যুত করেছেন তাদের অনুসারী অসংখ্য মুসলিমকে অথচ এমন কোন পথভ্রষ্ট চিন্তা-ফিকিরের কোন বাস্তবতা এমনকি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগেও ছিল না তখনও মুসলমানদের মধ্যে ভাল-মন্দ, ফাসিক-মুনাফিক সব-ই ছিল। কিন্তু কবীরাহ গুনাহর কারণে কাউকে তারা কাফির এবং মুসলিম উম্মাহ থেকে খারিজ বলতেন না সেকারণ আধুনিক যুগের আলেমগণ এসব দল ও তাদের অনুসারী দলসমূহকে এক কথা জামাতুত তাকফীর অর্থাৎ অন্যকে কাফের ধারণাকারী চরমপন্থী দল বলে অভিহিত করে থাকেন অথচ এইসব চরমপন্থী আক্বীদার ফলে যিনি মারছেন ও যিনি মরছেন, উভয়ে মুসলমান আর এটাই তো শয়তানের পাতানো ফাঁদ, যেখানে তারা পা দিয়েছেন অতএব, সকলের কর্তব্য হবে সর্বাবস্থায় আমর বিল মারুফ ও নাহি আনিল মুনকার (সৎ কাজের আদেশ দেওয়া ও অসৎ কাজে বাধা দেওয়ার) মৌলিক দায়িত্ব পালন করা এবং মুসলিম-অমুসলিম সকলের নিকট ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরা
উৎসঃ জিহাদ ও ক্বিতাল ৫৩-৫৫ পৃষ্ঠা।  সংকলনঃ ড. মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব
____________________________________
ফতোয়া সমূহের উৎসঃ
(১) শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ
ক - https://www.youtube.com/watch?v=JNKG9AiDnFU
খ - https://www.youtube.com/watch?v=JZHD4XqxtRo
(২) শায়খ মুহাম্মাদ নাসির উদ্দিন আলবানী রাহিমাহুল্লাহ
https://www.youtube.com/watch?v=aRHt4hE7zDY
(৩) শায়খ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহ
https://www.youtube.com/watch?v=1TyYqRPLrC8
(৪) শায়খ আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ আলে-শায়খ হাফিজাহুল্লাহ
https://www.youtube.com/watch?v=JZHD4XqxtRo
(৫) শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হাফিজাহুল্লাহ
ক - https://www.youtube.com/watch?v=GwZpQVhzhYM
খ - https://www.youtube.com/watch?v=JGD0rOeWY7I
গ - https://www.youtube.com/watch?v=qIQvcnAoAH4
(৬) শায়খ রাবী বিন হাদী আল-মাদখালী হাফিজাহুল্লাহ
https://www.youtube.com/watch?v=lle7wwCJ1LE
(৭) শায়খ উবায়েদ আল-জাবেরী হাফিজাহুল্লাহ
https://www.youtube.com/watch?v=1TyYqRPLrC8
(৮) শায়খ রামযান আল-হাজিরী হাফিজাহুল্লাহ
ক - https://www.youtube.com/watch?v=Tt12fN92G5c
খ - https://www.youtube.com/watch?v=ym0v20Yeot8&feature=youtu.be
____________________________________