রবিবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১৬

ক্বুরান শিক্ষা করার গুরুত্ব

আলহামদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। আস সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা ইরশাদ করেছেন, আর আমি ক্বুরআনে এমন বিষয় নাযিল করেছি যা রোগের জন্যে শিফা (সুচিকিৎসা), এবং মুমিনদের জন্য রহমত স্বরূপ। [সুরা বনী ইসরাঈলঃ ৮২]
প্রিয় দ্বীনি ভাই ও বোনেরা! আপনারা সবাই কেমন আছেন? আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি, আর দুয়া করি আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের সকলকেই ভালো রাখুন। দুনিয়াবী ব্যস্ততা ও শয়তানের ধোঁকা আমাদেরকে আমাদের রব্বের যিকির থেকে, তাঁর দ্বীন থেকে ফিরিয়ে রাখে। আমাদের জীবনের প্রতিটা মুহূর্তই আসলে পরীক্ষা, আমরা কি আমাদের সময়গুলোকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যে ব্যয় করলাম, নাকি শয়তানকে খুশি করার জন্যে, নিজের কুপ্রবৃত্তি পূরণের জন্যে নষ্ট করলাম। ক্বিয়ামতের দিন প্রত্যেকটা জিনিসের হিসাব দিতে হবে। একারণে আমরা নারী হই কিংবা পুরুষ, আমাদের ব্যস্ততা ও প্রতিকূলতা যতই থাকুকনা কেনো, অবশ্যই আমাদেরকে নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে, সত্যিকারের আলেমদের কাছ থেকে সঠিক দ্বীন শিক্ষা করতে হবে। চলুন শত ব্যস্ততার মাঝেও আজকে আমরা জেনে নেই, শুদ্ধ উচ্চারণে আরবী শিখা আমাদের জন্যে কতটুকু জরুরী। আল্লাহ আমাদের সকলকে সেই তোওফিক দান করুন, আমিন।
প্রিয় নবী মুহাম্মাদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সর্বোত্তম যিকির হচ্ছে لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ  (লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহ)।
সুনানে তিরমিজি, সুনানে ইবনু মাজাহ, সুনানে নাসাঈ, সহীহ ইবনে হিব্বান।
لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ
বাংলায় উচ্চারণঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
আরবী অক্ষরগুলোর বানান হচ্ছেঃ লাম যবর লা, তার সাথে যুক্ত খালি আলিফ। আরবী কোন অক্ষরের বাম দিকে যদি খালি আলিফ থাকে, তবে পূর্বের হরফকে এক আলিফ লম্বা করে পড়তে হয়, এই নিয়মকে মদ্দে তবায়ী বলা হয়। সুতরাং কালিমার প্রথমে লা বলে এক আলিফ টান হবে।
এখন এই টান দিয়ে লা- বললে অর্থ হচ্ছেঃ না বা নেই, কক্ষণো না। আর লা-কে টান দিয়ে না পড়ে, ইলাহার সাথে মিলিয়ে দ্রুত পড়লে অর্থ হচ্ছেঃ হ্যা আছে, অবশ্যই আছে। এক আলিফ লম্বা করে পড়া ও না পড়া, দুইটার অর্থ সম্পূর্ণ বিপরীত, আকাশ ও পাতাল পার্থক্য। এবার পরবর্তী শব্দগুলোর অর্থ দেখুনঃ
ইলাহা = মাবূদ বা উপাস্য
ইল্লা+আল্লাহ = ইল্লাল্লাহ = অর্থ হচ্ছে আল্লাহ ছাড়া
সুতরাং, লাম এর পরে এক আলিফ লম্বা করে লা- পড়লে অর্থ হবেঃ
লা- নেই, কক্ষণো না, ইলাহা = মাবূদ বা উপাস্য, ইল্লাল্লাহ = আল্লাহ ছাড়া
পুরো অর্থ হচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবূদ নেই
আর লাম-এর পরে এক আলিফ লম্বা না করে তাড়াতাড়ি লা ইলাহা একসাথে পড়লে অর্থ হবেঃ
লা = অবশ্যই আছে, ইলাহা = মাবূদ বা উপাস্য, ইল্লাল্লাহ = আল্লাহ ছাড়া
পুরো অর্থ দাঁড়ায়, আল্লাহ ছাড়া অবশ্যই আরো মাবূদ আছে
নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক! লাম যবর লা-কে ভুল উচ্চারণ করে পড়লে কালিমায়ে তাওহীদ এর পরিবর্তে কালিমায়ে শিরক হয়ে যাবে।
এবার চিন্তা করুন, ক্বুরানের ভেতরে এমন কত শত অক্ষর আছে, প্রতিটি আয়াতে আয়াতে, আর সেইগুলোর সঠিক উচ্চারণ না করলে, না জেনেই আমরা কত কুফুরী ও শিরক করে ফেলবো, আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। যদিও আল্লাহকে ভালোবেসে, ক্বুরানের প্রতি মহব্বত রেখে আমরা অত্যন্ত ভক্তি ও মনোযোগ সহকারে ক্বুরআন পড়বো, কিন্তু ভুল উচ্চারণে ক্বুরআন পড়ে তার অর্থ নষ্ট করে কত বড় অভিশাপ আমরা উপার্জন করবো?
প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ক্বুরআন তোমার পক্ষে দলিল কিংবা তোমার বিপক্ষে দলীল হবে। [সহীহ মুসলিমঃ ৩২৮]
ভুল উচ্চারণ করে ক্বুরআনের অর্থকে ধ্বংস করলে নিশ্চয় কিয়ামতের দিন ক্বুরআন আমাদের বিপক্ষে সাক্ষী দেবে। একারণে শুদ্ধ উচ্চারণে ক্বুরান তেলাওয়াত শিক্ষা করা আমাদের জন্যে ফরজ। বিশেষ করে, আমরা সালাতে যতটুকু অংশ আরবী পড়ি, সেইগুলোর শুদ্ধ উচ্চারণে না পড়লেতো আমাদের সালাতই কবুল হবেনা। আসুন আমরা ক্বুরান শিখি, ক্বুরান পড়ি, দেখবেন আমাদের জীবনটা পরিবর্তন হয়ে যাবে ইং শাআল্লাহ।
বিঃদ্রঃ আমার এই পোস্ট পড়ে কেউ হতাশ হবেন না, আপনাদেরকে হতাশ করা আমার লিখার উদ্দেশ্য না। হ্যা এটা ঠিক, ক্বুরান শুদ্ধ করে না পড়লে আল্লাহর রাজি-খুশি নয়, বরং আল্লাহর অভিশাপ আমাদের উপরে আসবে। তবে আল্লাহ অসীম দয়ার মালিক, আমরা চাওয়ার আগেই ক্বুরানুল কারীমকে তিনি অত্যন্ত সহজ করে দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,
আর আমি এই ক্বুরআনকে বুঝা ও স্বরণ রাখার জন্যে সহজ করে দিয়েছি। অতএব, তোমাদের মধ্যে কোন উপদেশ গ্রহণকারী আছে কি? [সুরা ক্বামারঃ ১৭]
আল্লাহ ক্বুরানকে সহজ করে দিয়েছেন, কিন্তু তার জন্যে আমদের চেষ্টা ও মেহনত করতে হবে। আমাদের বয়স যতই হোক না কেনো, আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত সময় রয়েছে শিক্ষার জন্যে। আমাদের সময়গুলকে কাজে লাগাতে পারলে, আল্লাহকে ডাকার মতো ডাকতে পারলে, নিশ্চয়ই তিনি আমাদেরকে বিফল করবেন না। সর্বশেষ আল্লাহ তাআলার একটি আয়াত দ্বারা আজকের মতো এখানেই শেশ করছি,

আর যারা আমার পথে সাধনায় আত্মনিয়োগ করবে, আমি অবশ্যই তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করব। নিশ্চয় আল্লাহ সৎ কর্মপরায়ণদের সাথেই আছেন। [সুরা আনকাবুতঃ ৬৯]