মঙ্গলবার, ৫ জানুয়ারী, ২০১৬

অসুস্থ ব্যক্তির পবিত্রতা অর্জন করার পদ্ধতি

অসুস্থ ব্যক্তির পবিত্রতা অর্জন করার পদ্ধতি

সম্মানিত শাইখ ইবনু ঊছাইমীন (রহঃ) বলেনঃ অসুস্থ ব্যক্তি কিভাবে পবিত্রতা অর্জন করবে ও ছালাত আদায় করবে সে ব্যাপারে এটি একটি সংক্ষিপ্ত পত্র। অসুস্থ ব্যক্তির অবস্থার বিচার করে তার জন্য ইসলামী শরীয়তে কিছু বিধান নির্দিষ্ট করা হয়েছে। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা নবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে ক্ষমাশীল সর্বোত্তম সঠিক ধর্ম দিয়ে প্রেরণ করেন, যা হচ্ছে সহজ ও সরলতার বৈশিষ্টে অনন্য। আল্লাহ্‌ এরশাদ করেনঃ

]وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ[

তিনি তোমাদের জন্য ধর্মে কোন অসুবিধা রাখেননি। (সূরা হাজ্জ- ৭৮) তিনি আরো বলেনঃ

]يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمْ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمْ الْعُسْرَ[

আল্লাহ্‌ তোমাদের জন্য সহজতা চান, তোমরা অসুবিধায় পড় তিনি তা চান না। (সূরা বাক্বারা- ১৮৫) আল্লাহ্‌ আরো বলেনঃ

]فَاتَّقُوا اللَّهَ مَا اسْتَطَعْتُمْ وَاسْمَعُوا وَأَطِيعُوا[

তোমরা সাধ্যানুযায়ী আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর কথা শোন ও আনুগত্য কর। (সূরা তাগাবুন্ত ১৬)

নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন,إِنَّ الدِّينَ يُسْرٌ  নিশ্চয় এই ধর্ম অতি সহজ।

তিনি আরো বলেনঃ

وَإِذَا أَمَرْتُكُمْ بِأَمْرٍ فَأْتُوا مِنْهُ مَا اسْتَطَعْتُمْ

আমি যখন কোন বিষয়ে তোমাদেরকে আদেশ করি, তখন সাধ্যানুযায়ী তা বাস্তবায়ন কর।

উল্লেখিত মূলনীতির ভিত্তিতে ওযর বিশিষ্ট লোকদের জন্য আল্লাহ তাআলা ইবাদতকে সহজ ও হালকা করে দিয়েছেন। যাতে করে তারা কোন অসুবিধা ও কষ্ট ছাড়াই তাঁর ইবাদত সম্পাদন করতে পারে। (আল্‌ হামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামীন)

১) অসুস্থ ব্যাক্তির উপর আবশ্যক হল ছোট নাপাকী থেকে প্রবিত্রতা অর্জনের জন্য পানি দ্বারা ওজু করা এবং বড় নাপাকী থেকে পবিত্রতা হাসিলের জন্য পানি দ্বারা গোসল করা।

২) পানি দ্বারা যদি পবিত্রতা অর্জন করতে না পারে- অপারগতার কারনে বা রোগ বেড়ে যাবে এই আশঙ্কার কারনে বা ভয় করে সুস্থ হতে দেরী হয়ে যাবে, তবে এহেন পরিস্থিতিতে সে তায়াম্মুম করবে।

৩) তায়াম্মুমের পদ্ধতি হল হাত দুটিকে পবিত্র মাটিতে একবার মারবে তারপর তা দিয়ে সমস্ত মুখমণ্ডল মাসেহ করবে, অতঃপর উভয় হাতকে কব্জি পর্যন্ত মাসেহ করবে। আগে ডান হাত পরে বাম হাত।

৪) রুগী নিজে যদি পবিত্রতা অর্জন করতে অক্ষম হয়, তবে অন্য ব্যাক্তি তাকে ওজু বা তায়াম্মুম করিয়ে দিবে।

৫) ওজু বা গোসলের কোন অঙ্গে যদি জখম থাকে আর পানি দিয়ে ধৌত করলে তাতে ক্ষতি হওয়ার আশংকা হয়, তবে তাঁর জন্য তায়াম্মুম করে নিবে।

৬) ভাঙ্গা-মচকা ইত্যাদি কারনে যদি শরীরের কোন অঙ্গে পট্টি বা ব্যান্ডেজ থাকে তবে সে স্থান ধৌত করার পরিবর্তে পানির মাধ্যমে তাঁর উপর মাসেহ করে নিবে। এক্ষেত্রে তায়াম্মুম করবে না। কেননা মাসেহ ধোয়ার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে।

৭) কোন বস্তু দিয়ে তায়াম্মুম করবে? দেয়াল বা অন্য কোন বস্তু যেখানে ধুলা লেগে আছে তা দিয়ে তায়াম্মুম করা যাবে। দেয়াল যদি মাটি জাতীয় বস্তু ছাড়া অন্য কোন বস্তু দ্বারা লেপন কয়া থাকে যেমন রঙ বা পেইন্ট, তবে সেখানে তায়াম্মুম জায়েজ হবে না। কিন্তু যদি উক্ত দেয়ালে ধুলা লেগে থাকে তবে তাতে তায়াম্মুম করতে অসুবিধা নেই।

8) যমিনের উপর হাত রেখে বা দেয়াল থেকে বা যে বস্তুতে ধুলা আছে তা থেকে তায়াম্মুম করা সম্ভব না হয় তবে কোন পাত্র বা রুমালের মধ্যে কিছু মাটি রেখে দিতে পারে। তারপর তা দিয়ে তায়াম্মুম করবে।

৯) এক ওয়াক্তের সালাত আদায়ের উদ্দেশ্যে তায়াম্মুম করার পর যদি তায়াম্মুম অবশিষ্ট থাকে তবে তা দিয়ে আরেক ওয়াক্তের সালাত আদায় করতে পারবে। এক্ষেত্রে পরবর্তী ছালাতের জন্য আবার তায়াম্মুম করার দরকার নেই। কেননা সে তো পবিত্রই আছে। আর পবিত্রতা ভংকারী কোন কারনও ঘটেনি। এমনিভাবে বড় নাপাকী থেকে যদি তায়াম্মুম করে তবে পরবর্তী বড় নাপাকীতে লিপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত আর তায়াম্মুম করতে হবে না। কিন্তু এর মাঝে ছোট নাপাকীতে লিপ্ত হলে তাঁর জন্য তায়াম্মুম করতে হবে।

১০) অসুস্থ ব্যাক্তির উপর ওয়াজিব হল সকল পরকার নাপাকী থেকে স্বীয় শরীরকে পাক-পবিত্র করা। যদি পাক-পবিত্র হতে সক্ষম না হয়, তবে সংশ্লিষ্ট নাপাকী নিয়েই সালাত আদায় করবে। তাঁর উক্ত সালাত বিশুদ্ধ হবে এবং পুনরায় উক্ত সালাত আদায় করতে হবে না।

১১) পবিত্র কাপড় নিয়ে সালাত আদায় করাও অসুস্থ ব্যাক্তির উপর ওয়াজিব। কাপড় নাপাক হয়ে গেলে তা ধৌত করা অথবা তা বদলিয়ে অন্য কাপড় পরিধান করা ওয়াজিব।  কিন্তু এরুপ করাও যদি সাধ্যাতীত হয় তবে সংশ্লিষ্ট নাপাকী নিয়েই সালাত আদায় করবে। উক্ত সালাত বিশুদ্ধ হবে এবং তা আর ফিরিয়ে পড়তে হবে না।

১২) পবিত্র স্থান ও পবিত্র বস্তুর উপর সালাত আদায় করাও রোগীর জন্য ওয়াজিব। যদি সালাতের স্থান নাপাক হয়ে যায় তবে তা ধৌত করা বা কোন পবিত্র বস্তু দ্বারা পরিবর্তন করা বা সেখানে কোন পবিত্র বস্তু বিছিয়ে দেয়া ওয়াজিব। যদি এর কোনটাই সম্ভব না হয় তবুও ঐ অবস্থায় সালাত আদায় করবে এবং তাঁর সালাত শুদ্ধ হবে। অন্য সময় তা ফিরিয়ে পড়ারও দরকার হবে না।

১৩) পবিত্রতা হাদিস করতে অপারগতার কারনে কোন রোগীর জন্য সালাত পরিত্যাগ করা বা কাজা করা কোন ক্রমেই বৈধ নয়। সাধ্যনুযায়ী সে পবিত্রতা অর্জন করবে। তারপর সময়ের মধ্যেই সালাত আদায় করে নিবে- যদিও তখন তাঁর শরীরে বা কাপড়ে বা সালাতের স্থানে নাপাকী লেগেই থাকে যা দূরীভূত করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হয়নি। কেননা আল্লাহ্‌ তাআলা বলেনঃ فاَتَّقُوا اللهَ ماَ اسْتَطَعْتُمْ  AbÑ: তোমরা সাধ্যনুযায়ী আল্লাহকে ভয় কর। (সুরা তাগাবুন-১৬)


১৪। কোন মানুষ যদি বহুমুত্র রোগে আক্রান্ত থাকে, তবে সে সালাতের ওয়াক্ত আসার আগে যেন ওজু না করে। যখন সালাতের ওয়াক্ত আসবে তখন তাঁর লজ্জাস্থান ধৌত করবে, তারপর উক্ত স্থানে পবিত্র কোন বস্তু বেঁধে দিবে যাতে পেশাব কাপড় বা শরীরে ছড়িয়ে না যায়। তারপর ওজু করে সালাত আদায় করবে। এরুপ সে প্রত্যেক ফরজ সালাতের সময় করবে। এরুপ করা যদি তাঁর উপর অধিক কষ্টকর হয় তবে দুসালাতকে একত্রে পড়া তাঁর জন্য জায়েজ আছে। যোহর এবং আসর একত্রে এবং মাগরিব ও ইশা একত্রে আদায় করে নিবে। আর ফরজ সালাতের সাথে সংশ্লিষ্ট সুন্নাতের জন্য আলাদা ওজুর দরকার নেই। তবে অন্য কোন নফল সালাত আদায় করতে চাইলে তাকে ফরজের নিয়মে পবিত্রতা অর্জন করতে হবে।