মঙ্গলবার, ১২ জানুয়ারী, ২০১৬

আমাদের সকলের ভালোবাসার মানুষটি কেমন ছিলেন ﷺ


<3 <3 <3  আমাদের সকলের ভালোবাসার মানুষটি কেমন ছিলেন  <3 <3 <3
আলহামদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। আম্মা বাআদু।
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন,
(হে নবী!) নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী। [সুরা ক্বলমঃ ৪]
তিনি আরো বলেছেন,
যারা আল্লাহ এবং শেষ দিবসের প্রতি আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে, নিশ্চয়ই তাদের জন্যে রাসুলুল্লাহর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে। [সুরা আহজাবঃ ২১]
তিনি আরো বলেছেন,
নবী (আপনি) মুমিনদের কাছে তাদের নিজেদের চাইতে বেশি আপন। [সুরা আহজাবঃ ৬]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদীসের উপর ভিত্তি করে তিনি দেখতে কেমন ছিলেন, তার ব্যক্তিত্ব কেমন ছিলো এবং তাঁর জীবনীর ছোট-বড় যাবতীয় খুটিনাটি বিষয়ের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিয়ে ইমাম তিরমিযী রাহিমাহুল্লাহর সুন্দর একটি বই লিখেছিলেন। বইটির নাম হচ্ছে শামাইলুন নাবিয়্যি। বইটি শামায়েলে তিরমিযী নামেও পরিচিত। বইটি বাংলা ইংরেজীসহ বিভিন্ন ভাষাতে অনুদিত হয়েছে, আপনারা সংগ্রহ করতে পারেন। সেই বই থেকে কিছু বর্ণনাঃ
(১) আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব লম্বাও ছিলেন না, আবার খুব বেটেও ছিলেন না বরং, তিনি ছিলেন মাঝারি উচ্চতার। তাঁর দেহের গড়ন ছিলো সুঠাম আকৃতির, অর্থাৎ তিনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। তার উভয় বাহু এবং পা ছিলো মাংসল। তাঁর অংগ-প্রত্যংগের জোড়াগুলো ছিলো মজবুত।
(২) তাঁর গায়ের রঙ ছিলো অতিশয় সুন্দর গৌর বর্ণের, রক্তিমাভ। তিনি ধবধবে সাদাও ছিলেন না, আবার বেশি তামাটে বর্ণেরও ছিলেন না। সাহাবীরা বলেছেন, তাঁর চেহারা চাঁদের চাইতেও বেশি সুন্দর ছিল।
(৩) তাঁর চুল ছিলো ঈষৎ ঢেউ খেলানো ও সামান্য কোঁকড়ানো। চুলগুলো লম্বা হলে তার বাবড়ি দুই কানের লতি পর্যন্ত ঝুলানো থাকতো। তিনি কখনো চুলে সিথি করতেন এবং চুলে তেল দিতেন।
(৪) তার চোখের ভ্রুগুলো ছিলো স্পষ্ট ও কালো, কিছুটা বাঁকানো ও একটা থেকে আরেকটা পৃথক। তার দুই ভ্রুর মাঝখানে একটা রগ ছিলো, যা তিনি রেগে গেলে ফুলে যেতো এবং মুখ লাল হয়ে যেত, যা থেকে স্পষ্ট বোঝা যেত যে, তিনি রাগন্বিত হয়েছেন। তিনি চোখে সুরমা দিতেন।
(৫) তার দাঁতগুলো ছিলো চিকন ও উজ্জ্বল বর্ণের, এবং তাঁর সামনের দুটি দাতের মাঝে কিঞ্চিত ফাঁক ছিলো। তিনি কথা বলার সময় মনে হতো তার সামনের দাঁত থেকে যেন নূর বের হচ্ছে।
(৬) তাঁর চেহারা বা মুখমন্ডল ছিলো চাঁদের মতো উজ্জ্বল, কিছুটা প্রশস্ত। চোখের শুভ্রতার মধ্যে রক্তিম রেখাগুলো স্পষ্ট দেখা যেত। তাঁর নাক ছিলো চেহারার সাথে মানানসই রকমের তীক্ষ্ণ ও উন্নত। তাঁর দাঁড় ছিলো ঘন ও ভরপুর। ইব্রাহীম লাইহিস সালাম এর সাথে তাঁর চেহারার বিশেষ মিল ছিলো।
(৭) তিনি সামনের দিকে একটু ঝুঁকে হাটতেন, মনে হতো যেন উঁচু জায়গা থেকে নিচে অবতরণ করছেন। তিনি হাঁটার সময় মাটিতে পা ফেলতেন মৃদুভাবে, হাটতেন পাতলা পদক্ষেপে কিন্তু দ্রুত গতিতে।
(৮) তাঁর দুই কাঁধের মাঝামাঝি জায়গায় মোহরে নবুওত বা সর্বশেষ নবুওতের সীল ছিলো। যা কবুতরের ডিমের মতো বড় লাল গোশতের টুকরা যা পশম দ্বারা ঢাকা ছিলো এবং চারপাশে তিল ছিলো।
(৯) তিনি কুমারী পর্দানশীল নারীদের চাইতে বেশি লজ্জাশীল ছিলেন।   
(১০) তিনি যখন কারো দিকে তাকাতেন তখন সর্বশরীর ফিরিয়ে তাকাতেন। প্রায়ই দৃষ্টি নিচু করে রাখতেন। আসমানের চাইতে জমীনের দিকেই তাঁর দৃষ্টি বেশি নিবদ্ধ থাকতো। স্বভাবত লাজুকতার দরুণ তিনি কারো দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেন না। পথ চলার সময় সংগীদের আগে দিতেন (এবং নিজে পেছনে থাকতেন)। কারো সাথে সাক্ষাত হলে তিনিই আগে সালাম দিতেন।
(১১) তিনি ছিলেন খাতামুন নাবিয়্যিন, নবীগণের মোহর বা সর্বশেষ নবী। তিনি ছিলেন মানুষের মাঝে প্রশস্ত হৃদয়ের অধিকারী ও দানশীল, বাক্যালাপে সত্যবাদী, কোমন হৃদয়ের অধিকারী এবং সংগী-সাথী ও বন্ধুদের সাথে সম্মানের সাথে বসবাসকারী। যে কেউ তাঁকে প্রথমবারের মতো দেখেই প্রভাবান্বিত হয়ে পড়ত। যে ব্যক্তি তাঁর সাথে মিশত এবং তাঁর সম্পর্কে অবহিত হতে সে তাঁর প্রতি বন্ধুভাবাপন্ন হয়ে যেত। তাঁর প্রশংসাকারী বলতো, তাঁর আগে বা পরে তাঁর মতো আমি আর কাউকে দেখিনি। তাঁর উপর আল্লাহর করুণা ও শান্তি বর্ষিত হোক।
(১২) চাঁদের বছর অনুযায়ী দুনিয়ার জীবনে তিনি ৬৩ বছর হায়াত পেয়েছিলেন। তিনি ৪০ বছরে নবুওতপ্রাপ্ত হন। এরপর মক্কায় ১৩ বছর মানুষকে আল্লাহর দ্বীনের দিকে, কালিমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহার দিকে দাওয়াত দেন। মক্কার মুশরিকরা যখন তাঁকে হত্যা করার ষড়যযন্ত্র করছিলো, তখন তিনি মক্কা থেকে হিজরত করে মদীনাতে চলে যান। সেখান থেকে তিনি জীবনের বাকি ১০টি বছর আল্লাহর দ্বীনের জন্য উৎসর্গ করেন।
(১৩) জীবনের শেষের দিকে তাঁর কিছু (প্রায় ২০টির মতো) চুল পেকে সাদা হয়ে গিয়েছিলো। এটা দেখে আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু একদিন বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আপনিতো বার্ধক্যে পৌঁছে গেছেন। রাসুলু্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, সুরা হুদ, সুরা ওয়াকিয়া, সুরা মুরসালাত, সুরা নাবা, সুরা তাকবীর এ সুরাগুলো আমাকে বৃদ্ধ করে দিয়েছে।
অর্থাৎ, এই সুরাগুলোতে বর্ণিত কিয়ামতের ভয়াবহতা, আখেরাতের কঠিন হিসাব-নিকাশ, জাহান্নামের কঠোর শাস্তি ইত্যাদি বিষয়ের ভীতিকর ও মর্মস্পর্শী বর্ণনা রাসুলু্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে দ্রুত বৃদ্ধ করে দিয়েছিলো।
এই পৃথিবীতে বসবাসকারী এবং ভবিষ্যতে আগমনকারী সমস্ত মানুষের মাঝে শ্রেষ্ঠ, সমস্ত নবী এবং রাসূলদের সর্দার, রাহমাতুল্লিল আলামীন,  জগতবাসীদের জন্যে রহমত স্বরূপ মুহাম্মাদ, রাসুলু্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চরিত্র সৌন্দর্য বর্ণনা করা এবং তাঁর যথাযথ প্রশংসা লিখা আমাদের মতো মানুষের জন্যে সত্যিই কঠিন একটা ব্যপার। তাঁর ব্যপারে আমাদের কি করণীয়, সে ব্যপারে স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন,
নিশ্চয় আল্লাহ ও তাঁর ফিরেশতাগণ নবীর প্রতি সালাত-দরুদ পেশ করেন। হে মুমিনগণ! তোমরাও তাঁর প্রতি সালাত পেশ করো এবং তাঁকে যথাযথভাবে সালাম জানাও। [সুরা আহজাবঃ ৫৬]
আসুন আমরা সকলেই পড়িঃ

আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিও ওয়া-লা আলি মুহাম্মাদ, কামা সাল্লাইতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া-লা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদিওঁ ওয়া-লা আলি মুহাম্মাদ, কামা বারা-কতা আলা ইব্রাহীমা ওয়া-লা আলি ইব্রাহীম, ইন্নাকা হামীদুম মাজীদ।