শনিবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬

উম্মু আব্দুল্লাহ আয়িশাহ বিনতে আবু বাকর সিদ্দীকাহ

<3 <3 <3 উম্মু আব্দুল্লাহ আয়িশাহ বিনতে আবু বাকর সিদ্দীকাহ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা <3 <3 <3
তাঁর নাম হচ্ছে আইয়িশাহ, পিতার নাম আবু বাকর, সিদ্দীকাহ হচ্ছে তাঁর পিতার সূত্রে প্রাপ্ত উপাধি। যদিও তাঁর কোন ছেলে-মেয়ে ছিলোনা, কিন্তু তিনি উম্মু আব্দুল্লাহ বা আব্দুল্লাহর মা, এই নামে নিজের কুনিয়া বা উপনাম গ্রহণ করেছিলেন।
আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মা আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে মাত্র ছয় বছর বয়সে বিয়ে করেন, যখন তিনি নাবালিকা ছিলেন। সাবালিকা হওয়ার পর, নয় বছর বয়সে সংসার করার জন্যে তিনি তাঁকে ঘরে তুলে নেন। তিনি ছিলেন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তৃতীয়া স্ত্রী এবং একমাত্র কুমারী স্ত্রী। মা আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহা অত্যন্ত সুন্দরী মহিলা, তীক্ষ্ম মেধাসম্পন্ন ও প্রখর মুখস্থ শক্তির অধিকারিণী এবং ফকীহা (বিদূষী নারী) ছিলেন। সাহাবীদের মাঝে তিনি চতুর্থ সর্বোচ্চ, মোট ২২১০টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মা আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে আদর করে সংক্ষেপে আইয়ুশ বলে ডাকতেন। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মা আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে তাঁর স্ত্রীদের মধ্যে, এমনকি সমস্ত মানুষের মধ্যে তাঁকেই সবচাইতে বেশি মুহাব্বত করতেন, একারণে অন্যান্য স্ত্রীরা তাঁর ব্যপারে ঈর্ষান্বিত হতেন। মা আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার বয়স কম হওয়ায় আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাথে খেলা-ধূলা করতেন। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মা আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে দুইবার দৌড় প্রতিযোগীতা করেছিলেন। প্রথমবার যখন তাঁর বয়স কম ও হালকা-পাতলা ছিলেন, ফলে দ্রুত দৌড়ে তিনি আল্লাহর রাসুলকে হারিয়ে দেন। দ্বিতীয়বার যখন তাঁর একটু বয়স বেশি হয় এবং স্বাস্থ্য কিছুটা ভারী হওয়ায় আল্লাহর রাসুল দৌড়ে প্রথম হয়ে যান। আল্লাহর রাসুল তখন মজা করে বলেন, আমার এইবারের জিত তোমার প্রথমবারের জন্যে প্রতিশোধ। মা আয়িশাহকে আল্লাহর রাসুল বেশী ভালোবাসেন, এটা সাহাবীরাও বুঝে গিয়েছিলেন, তাই সবাই যেইদিন আল্লাহর রাসুল মা আয়িশাহর ঘরে থাকতেন, সেইদিন হাদিয়া বেশী পাঠাতেন। এটা নিয়ে অন্য স্ত্রীরা কষ্ট বোধ করতেন। এটা নিয়ে কিছু ঘটনা ঘটলে, তখন আল্লাহর রাসুল বলেন, তোমরা আয়িশাহকে নিয়ে আমাকে কষ্ট দিয়োনা, এমনকি আয়িশাহর ঘরে অবস্থানকালীন সময়ে জিব্রাঈল ওহী নিয়ে বেশি আসেন। এ থেকে মা আয়িশাহর মর্যদা সবার কাছে আরো পরিষ্কার হয়ে যায়।
মা আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহাকে মাত্র নয় বছর সংসার করে ১৮ বছরে বিধবা হন। যেহেতু তিনি এবং রাসুলের স্ত্রীরা এই উম্মতের সবার জন্যে মায়ের মর্যাদার অধিকারী, তাই তাঁদের কাউকে বিয়ে করা জায়েজ ছিলোনা। নবীর স্ত্রীরা নবীর সংগিনী, দুনিয়া এবং আখিরাতে। এরপর দীর্ঘ প্রায় ৪৫ বছর দ্বীনের খেদমত করে একাকী দিন কাটান। এক বর্ণনা রয়েছে, শীর্ষস্থানীয় তাবেয়ী আলেমদের মধ্যে অন্তত ৮৮জন হিজাব-পর্দার মধ্যে মা আয়িশাহর কাছ থেকে হাদীস শিখেছিলেন। এছাড়া তিনি ফিকহের ব্যপারে দক্ষ ছিলেন।
তাঁর সম্পর্কে কত যে ঘটনা ও বর্ণনা রয়েছে! একবার অতি ধার্মিক, বিদআতী এক মহিলা আসে তাঁর সাথে দেখা করার জন্যে। তারা মাসিক অবস্থায় যেমন ছুটে যাওয়া ফরয রোযার কাজা আদায় করতো, ঠিক তেমনি ছুটে যাওয়া নামাযও কাজা করতো। অথচ, মা আয়িশাহ স্পষ্ট হাদীস বর্ণনা করেছেন, মহিলাদেরকে আল্লাহর রাসুল মাসিক অবস্থায় ছুটে যাওয়া ফরজ রোযা কাজা করতে আদেশ করেছেন, কিন্তু ছুটে যাওয়া নামায কাজা করতে আদেশ করেন নি। একথা জানতে পেরে মা আয়িশাহ সেই বিদআতী মহিলার সাথে দেখা করেন নি।
তাঁর সম্পর্কে আপনারা যত বেশি জানবেন, ততই তাঁকে ভালোবাসবেন। অনলাইনে আপনারা শায়খ মতিউর রহমান মাদানী হা'ফিজাহুল্লাহর একটা লেকচার পাবেন, মা আয়িশাহ রাদিয়াল্লাহু আনহার জীবনী, এটা আপনারা অবশ্যই শুনবেন।

আল্লাহ আমাদের নবীর প্রতি, তাঁর সমস্ত স্ত্রী ও বংশধরদের প্রতি শান্তি ও বরকত নাযিল করুন, আমিন।