শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০১৫

আক্বিদাহ যদি সঠিক না হয়, তাহলে সমস্ত কথা ও কাজ বাতিল

শায়খ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
আক্বিদাহ যদি সঠিক না হয়, তাহলে সমস্ত কথা ও কাজ বাতিল।
[ফতোয়া ইবনে বাজঃ ১/১৩, আল-ইফতা]  
অনেক ভাইয়েরা এই কথাটার দলিল বা উৎস জানতে চেয়েছেন। নিচে আমি আক্বীদাহ শব্দের অর্থ এবং আকীদাহ সঠিক না হলে আমল বাতিল এই কথার দলিল উল্লেখ করছি।
===================
আরবী আক্বদ শব্দ থেকে আক্বীদাহ, যার শাব্দিক অর্থ হচ্ছে বন্ধন বা গিঁট, Knot.
ইসলামী পরিভাষায় একজন মুসলিম ব্যক্তির মৌলিক ধর্মীয় বিশাস (ইংরেজীতে Creed) এর এক একটি বিষয়, যেমন- আল্লাহ এক, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একজন রাসূল বা আল্লাহর প্রেরিত দূত, জিব্রাঈল আঃ আল্লাহর ওহী নিয়ে আসতেন, তাক্বদীর বা মানুষের ভাগ্য আল্লাহ নিয়ন্ত্রন করেন এবং তিনি তা লিখেও রেখেছেন, ইত্যাদি বিষয়গুলোকে আক্বীদাহ বলা হয়। কারণ মানুষের ধর্মীয় বিশ্বাসগুলো গিঁটের মতোই মানুষের অন্তরের সাথে জোড়া লেগে থাকে, যা সহজে ভেঙ্গে বা নষ্ট হয়ে যায়না।
উল্লেখ্য, নোমান আলী খান নামক একজন এমেরিকান ইউটিউব বক্তা দাবী করেছেন, আক্বীদাহ কথাটি ক্বুরানে নেই, সুতরাং আক্বিদাহ শিক্ষা করাকে এতো গুরুত্ব দেওয়া ঠিকনা। এটা আসলে ইসলামী শিক্ষা নিয়ে তার মূর্খতাপূর্ণ বক্তব্য ছাড়া আর কিছুইনা। ক্বুরানে তারাবীহ শব্দ নাই, দাজ্জাল শব্দ নাই, তাই বলে আমরা কি এইগুলো শিক্ষা করা বাদ দিয়ে দেবো নাকি? এটা আসলে মূর্খতা, আপনারা এমন মূর্খতাপূর্ণ কথা-বার্তা থেকে সাবধান থাকবেন। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা ক্বুরানুল কারীমে যেই জিনিসটাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন সেটা হচ্ছেঃ শিরকমুক্ত একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা। সেইজন্য আল্লাহ তাআলা ক্বুরানুল কারীমের পাতায় পাতায় আল্লাহ সম্পর্কে সঠিক বিশ্বাস কেমন হওয়া উচিৎ এবং কাফের মুশরেকদের ভ্রান্ত বিশ্বাসের প্রত্যাখ্যান করে আলোচনা করেছেন। আর এই একজন মুসলিমের এই বিশ্বাসলোকে সমস্ত ইসলামী পন্ডিতগণ আকিদাহ নামে উল্লেখ করেছেন এবং এনিয়ে বই লিখেছেন। এটা না বুঝেই একবিংশ শতাব্দীর মুফাসসির আর শায়খরা দাবী তুলেছেন, ক্বুরানে আকিদাহ শব্দ নাই সুতরাং আকিদাহ কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় না! এটা জাহালাত (মূর্খতা), এটা দ্বোয়ালালাহ (পথভ্রষ্টতা)। 
===================
ক্বুরানুল কারীম থেকে আকীদাহ সঠিক না হলে আমল বাতিল এই কথার দলিলঃ
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, (হে নবী!) আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তী সকল (নবী-রাসূলদের) প্রতি এই ওয়াহী করা হয়েছিলো যে, আপনি যদি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করেন, তাহলে আপনার সমস্ত আমল বাতিল হয়ে যাবে, এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে একজন হবেন। [সুরা আল-জুমারঃ ৬৫]
সুতরাং, এই আয়াতে কারীমায় আল্লাহ স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, শিরক করলে কারণে মানুষের সমস্ত আমল বর্বাদ হয়ে যাবে। যেটা তিনি অন্যান্য আয়াতেও উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ তাআআলা আরো বলেছেনঃ
আর (শেষ বিচারের দিন) আমি তাদের আমলগুলোর প্রতি লক্ষ্য করবো, অতঃপর সেগুলোকে বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করে দেব। [সুরা আল ফুরক্বানঃ ২৩]
ধূলিকণায় পরিণত করে দেবেন কারণ তাদের ইবাদত বা আমলগুলো ছিলো শিরক মিশ্রিত অথবা বিদআত। আর শিরক মিশ্রিত কোন আমল বা বিদআত আল্লাহ কবুল করেন না। সেই জন্যে আমল করার পূর্বে আক্বিদাহ বা ধর্মীয় বিশ্বাস (Creed)  সঠিক করতে হবে এবং সেই অনুযায়ী আমল করতে হবে। আকীদাহ সংশোধন না করেই বেশি বেশি আমল করলে সম্ভাবনা আছে সেই আমলের মাঝে শিরক ও বিদাত ঢুকে নষ্ট ও ব্যর্থ হয়ে যাবে।
===================
সুন্নাহ বা সহীহ হাদিস থেকে দলিলঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
যে ব্যক্তি কোন গণকের কাছে গিয়ে কোন কিছু জিজ্ঞেস করবে, তার ৪০ দিনের সালাত কবুল হবে না। [সহীহ মুসলিম]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন,
যে ব্যক্তি কোন গণক বা জ্যোতিষের কাছে যায় এবং তার কথা সত্যি বলে বিশ্বাস করে, তাহলে সে মুহাম্মাদ এর উপর নাযিলকৃত বিষয় (ক্বুরানুল কারীমের) সাথে কুফুরী করবে। [সুনানে আবু দাঊদ]
এই দুইটি হাদীস থেকে প্রথমটিতে দেখা যাচ্ছে, কেউ যদি শুধুমাত্র গণকের কাছে তার ভাগ্য নিয়ে তার ভবিষ্যতবাণী জিজ্ঞাস করে তাহলে তার ৪০ দিনের নামায কবুল হবেনা। এর কারণ হচ্ছে, সে গণক বা জ্যোতিষীর কথা বিশ্বাস করুক বা না করুক, গণক যে গায়েব বা অদৃশ্যের জ্ঞান জানার দাবী করা (বড় শিরক), সে তার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে দূরে থাকেনি। এতোটুকু ঈমানের ঘাটতির কারণে ৪০ দিন পর্যন্ত তার নামায কবুল করা হবেনা। আর যদি গণকের কথা বিশ্বাস করে তাহলে সে যেনো সম্পূর্ণ ক্বুরানকেই অস্বীকার করে কাফের হয়ে গেলো। 
===================
সাহাবীদের বক্তব্যঃ
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যুর পরে সাহাবীদের যুগে ইরাকের বসরা নামক অঞ্চলে কিছু লোক বের হয়েছিলো, যারা মনে করতোঃ তাক্বদীর বলতে কিছু নেই, সবকিছু তাৎক্ষনিকভাবে ঘটে থাকে। তাক্বদীর অস্বীকার করেছিলো বলে এই পথভ্রষ্ট লোকদেরকে ক্বাদরিয়া বলা হতো। যাই হোক সেখান থেকে কিছু তাবেয়ী মুসলমান মক্কায় হজ্জ  বা উমরা করতে আসেন এবং এমন সময় তারা সৌভাগ্যক্রমে আবদুল্লাহ ইবন উমর ইবন খাত্তাব (রাঃ) এর সাথে মসজিদে দেখা পেয়ে যান। তারা তাঁর কাছে গিয়ে একজন তাঁর ডানপাশে এবং আর একজন বামপাশে বসেন, এবং তাক্বদীর অস্বীকারকারী ক্বাদরিয়াদের ব্যপারে তাকে প্রশ্ন করেন। আবদুল্লাহ ইবন উমর (রাঃ) তাদেরকে বলন, তাদের সাথে তোমাদের দেখা হলে বলে দিও যে, তাদের সাথে আমার কোন সস্পর্ক নেই এবং আমার সঙ্গে তাদেরও কোন সম্পর্ক নেই । আল্লাহর কসম! তাদের মধ্য থেকে কেউ যদি ওহুদ পাহাড় পরিমাণ সোনার মালিক হয় এবং তা আল্লাহর রাস্তায় দান করে, তাক্বদীরের প্রতি ঈমান না আনা পর্যন্ত আল্লাহ তা কবুল করবেন না।
[সহীহ মুসলিমঃ হাদীস নং-১]

===================

আজ সুরা কাহাফ পড়ার তোওফিক কি হয়েছে?

আজ সুরা কাহাফ পড়ার তোওফিক কি হয়েছে?
============================
ফেইসবুকে বোকা লোকদের লেখা পড়ে বা ছবি দেখে, টিভিতে হারাম ও অশ্লীল অনুষ্ঠান দেখে, বয়ফ্রেন্ড ও গার্লফ্রেন্ডের শয়তানী ধোঁকায় পড়ে বা বেহুদা আড্ডা ও খেলাধূলার পেছনে সময় নষ্ট না করে জুমুয়াহর দিনে যদি অন্তত সুরা কাহাফের ১০টা/২০টা আয়াতও পড়তে পারেন, তাহলে সেটা আপনার দুনিয়া ও আখেরাতের জন্য অনেক বেশি কল্যানকর হবে। আল্লাহ আমাদেরকে বুঝার ও মানার তোওফিক দান করুন, আমিন।
==========================
সহীহ হাদীস অনুযায়ী সুরা কাহফের মর্যাদাঃ
১. সুরা কাহাফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্ত করলে দাজ্জালের ফিতনা থেকে বাঁচা যায়। [সহীহ মুসলিম]
২. জুমুয়ার দিনে সুরা কাহাফ পড়লে পরবর্তী জুমুয়াহ পর্যন্ত ঐ ব্যাক্তির জন্য একটি বিশেষ জ্যোতি আলোকিত হয়ে থাকবে। [মুস্তাদরাক হাকেম, সহিহুল জামে]

৩. সুরা কাহাফের তিলওয়াত করলে বাড়িতে শান্তি ও বরকত নাযিল হয়। [সহীহ বুখারি ও সহীহ মুসলিম]

বৃহস্পতিবার, ৩০ জুলাই, ২০১৫

অনলাইন মুজাহিদ দের কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর

(১) হাদীসে বলা হয়েছে যে, খোরাসান থেকে কালো পতাকা নিয়ে একটি দল বের হবে। সেই দল কোনটি?
উত্তরঃ আল কায়েদাহ, আইসিস, জেএমবির মতো এমন পথভ্রষ্ট দলের অনুসারী কিছু লোকেরা কালো পতাকা সম্পর্কিত কিছু হাদীস প্রচার করে থাকে। অথচ, কালো পতাকা নিয়ে কোন একটি সহীহ হাদীস নেই, এ সম্পর্কিত সবগুলো হাদীস জাল নয়তো জয়ীফ। বর্তমানে আইসিস নামক একটি দল এইরকম জাল ও জয়ীফ হাদিসের উপর ভিত্তি করে নিজেদেরকে সেই কালো পতাকাবাহী দল বলে দাবী করছে। অথচ আকিদাহগত দিক থেকে তারা খারেজীদের চাইতে নিকৃষ্ট। 

(২) সৌদি সরকার ইসরাইলকে কিছু বলে না কেনো?
উত্তরঃ এটা ইখোয়ানী, তাকফিরীদের বাজে ধারণা মাত্র, যা নিয়ে আসলে অতীত থেকে অনেক ইতিহাস জানার আছে। ১৯৯৯-২০০০ এর দিকে সৌদি আরব যখন ফিলিস্থিন ইস্যু নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্যোগী হয়েছিলো আর আমেরিকা কিছু অন্তঃসারশূণ্য মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আরব দেশগুলোকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছিলো। পরবর্তীতে ২০০১ এ ৯/১১ এর পরে পুরো বিশ্ব রাজনৈতিক ব্যবস্থারই পরিবর্তন হয়ে গেছে, যার রেশ ধরে শুধু সৌদি আরবই নয়, অনেক কাফের ও মুসলমান দেশই অনেক ব্যপারে আত্মরক্ষামূলক অবস্থানে চলে গেছে। আর এইজন্যেই বিভিন্ন মোটিফ দেখে ধারণা করা হয় যে, ৯/১১ আসলে আমেরিকারই করা। হয় তারা সরাসরি নিজেরা করেছে, অথবা আইসিসের মতো এমন বিভ্রান্ত বিদাতী অথবা মুসলমান পোশাকে আমেরিকান স্পাই দিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে, যাতে করে একক আধিপত্য বিস্তার ও ইসলাম এর প্রচার বন্ধ করার জন্যে তাদের সাম্রাজ্যবাদী মিশন শুরু করতে পারে। এই ডকুমেন্টারিটা দেখুন, এনিয়ে ভালো কিছু তথ্য পাবেন।
https://www.youtube.com/watch?v=7GwFs7mPh0Q
(৩) সৌদি সরকার শিয়াদের বিরুদ্ধে জিহাদ করে, তাহলে ইহুদির সাথে জিহাদ করাকে কেনো হারাম বলে?
এটা ভুল ব্যখ্যা বা অপপ্রচার। জিহাদের জন্যে একটা শর্ত হচ্ছে, সামর্থ্য থাকা। আমেরিকা, ইংল্যান্ড সহ অনেক কাফের দেশ প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্যভাবে ইসরায়েলকে আর্থিক ও সামরিক সাহয্য দিয়ে থাকে। এমনকি যেকোন পরিস্থিতিতে অন্য দেশের (মুসলমানদের) বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে জরুরী সামরিক সাহয্য দিতেও তারা অঙ্গীকারাবদ্ধ। অন্যদিকে আরব ও মুসলমান দেশগুলো নিজেরাই বিভক্ত। এমন পরিস্থিতিতে সৌদি আরব বা কোন মুসলমান দেশই সামরিক শক্তি দিয়ে ইসরায়েলকে দমন করার জন্য শক্তিশালী নয়। সেজন্যে তারা ইসরায়েল এবং পাশ্চাত্যের সাথে সরাসরি সংঘর্ষে যায়না। এজন্যে আমাদের উচিৎ আল্লাহর কাছে দুয়া করা এবং সমস্ত মুসলমান দেশগুলো যেনো একত্রিত হয়ে রাজনৈতিকভাবে আমেরিকান আগ্রাসন রোধ করতে সচেষ্ট হয় সেইজন্য কাজ করা। আর সৌদি আরবের ইয়েমেনে হুছী শিয়া দমনের জন্যে যুদ্ধে কারণ হচ্ছে, শিয়ারা ইতিমধ্যেই ইরান, লেবানন, ইরাক, সিরিয়াতে ক্ষমতা দখল করে সেখানকার সুন্নীদের রক্ত গংগা বইয়ে দিয়েছে। এইভাবে তাদের টার্গেট হচ্ছে মক্কা মদীনাহ দখল করে সুন্নী মুসলমানদেরকে ধ্বংস করা। ইহুদীরা ফিলিস্থিন দখল করে সেখানকার মুসলমানদেরকে হত্যা ও নির্যাতন করছে কিন্তু তারা মক্কা মদীনা আক্রমন করার জন্যে আপাত কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেনা। কিন্তু শিয়ারা ইতিমধ্যে কয়েকটি সুন্নী দেশ দখল করে আস্তে আস্তে মক্কার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। শিয়াদের এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার জন্য সৌদি আরব ও তুরস্কের নেতৃত্বে প্রায় ২০টির মতো সুন্নী দেশ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। আমরা আশা করি ও দুয়া করি এইভাবে মুসলমান দেশগুলো আল্লাহর জন্য এক হলে ভবিষ্যতে তারা অন্যান্য নির্যাতিত মুসলমানদেরকে সাহায্য করতে পারবে। 

(৪) সালাফি আলেমরা বিদাতীর বিরুদ্ধে এতো কঠোর কেন?
উত্তরঃ সালাফি আলেমরা প্রতিটি ব্যপারে ক্বুরান, সুন্নাহ এবং সালাফ (সাহাবাদের) আদর্শ অনুসরণ করার চেষ্টা করেন। আর আমাদের সালাফরা অবস্থা অনুযায়ী বিদআতীদের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করেছেন। সালাফদের সম্পর্কে আসারগুলোতে এনিয়ে অনেক রেওয়ায়েত আছে। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সবচাইতে ঘৃণিত বিষয় হচ্ছে বিদআত। [ইমাম বায়হাকী, সুনান আল-কুবরাঃ ৪/৩১৬]

(৫) সালাফিরা কি অমুসলিমের চাইতে বিদআতিদেরকে বেশি ঘৃণা করে?

উত্তরঃ নাহ, সালাফিরা অমুসলিমের চাইতে বিদাতিদেরকে বেশি ঘৃণা করেনা। তবে অমুসলিমদের ক্ষতি ও খারাপ দিক সম্পর্কে সকলেই জানে, কিন্তু বিদআতীরা ক্বুরান ও হাদীসের অপব্যখ্যা করে অনেক ধার্মিক মুসলমানদেরকে পথভ্রষ্ট ও বিভ্রান্ত করে। এইজন্যে অনেক সময় অমুসলিমদের ক্ষতি থেকে বিদআতীদের দ্বারা ইসলাম এর ক্ষতি বেশি হয়ে থাকে। কাফেররা আক্রমন ও নির্যাতন করে মুসলমানদেরকে শুধুমাত্র দুনিয়াবী ক্ষয়-ক্ষতি করতে পারে, কিন্তু বিদাতীরা সরলমনা সাধারণ মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করে তাদের দ্বীন এবং পরকালের ক্ষতি করে। একারণে মুসলমানদেরকে বিদাতীদের ব্যপারে এতো বেশি সতর্ক করতে হয়। হয়তোবা একারণেই বিদাতীদের ক্ষতি সম্পর্কে যারা ওয়াকিবহাল না, তারা এই ভুল ধারণা করতে পারে যেঃ সালাফিরা অমুসলিমের চাইতে বিদাতিদেরকে বেশি ঘৃণা করে। এটা ভুল ধারণা, বিদআতি যদি ইসলাম ভংগকারী শিরক বা কুফুরী না করে, তাহলে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআতের আকিদাহ অনুযায়ী তারা মুসলিম, এবং তাদের বিষয়টা আল্লাহর ইচ্ছার অধীন। আল্লাহ তাদের গুনাহ মাফ করে সরাসরি জান্নাতে দিতে পারেন, অথবা জাহান্নামে পাপের শাস্তি দেওয়ার পরে জান্নাতে দিতে পারেন। [আক্বিদাহ তাহাবীয়া]

আমি একটা উদাহরণ দিচ্ছিঃ ৯/১১ এর পর থেকে জর্জ ডব্লিও বুশ ও এমেরিকা ইসলাম থেকে জিহাদ এবং আল-ওয়ালা ওয়াল বারা বাদ দিয়ে কাফের বান্ধব ইসলাম প্রচার ও প্রসারের জন্যে অনেক টাকা ব্যয় করছে। দ্বীনের ব্যপারে আন্তরিক যেকেউ তাদের এই নীল নকশা বুঝতে পারছে, এবং একমাত্র দুনিয়াপূজারী, ফাসেক এবং মুনাফেক ছাড়া কোন মুসলমান এই ব্যপারে তাদেরকে জীবন থাকতে সাহায্য-সহযোগিতা বা সমর্থন করবেনা। হয়তোবা, এটা নিয়ে আমেরিকা কোন মুসলমানকে জেলে দিতে পারে, হত্যা করতে পারে কিন্তু তার দ্বীনকে সে পরিবর্তন বা ক্ষতি করতে পারবেনা। অন্যদিকে, তাকফিরী কুতুবী মানহাজের উপর প্রতিষ্ঠিত জংগী সংগঠন আল-কায়েদাহর অনুসারী আনোয়ার আওলাকি ২০১০ সালে একটা ভিডিওতে সহীহ কিন্তু মানসুখ হাদীসের অপব্যখ্যা করে ৯/১১ এর মতো সন্ত্রাসী বোমা হামলা করে নিরীহ মানুষ মারা হত্যা করা বৈধতা দিয়ে একটা ফতোয়া দিয়েছিলো। অনেক আওলাকি ভক্তরা সত্যিকারের ওলামাদের কথা না শুনে, যখনই কোথাও মুসলমান নাম নিয়ে এমন সন্ত্রাসী আক্রমন করছে, জিহাদী চেতনা নিয়ে তোতা পাখির মতো সেই ফতোয়া আওড়ে সেইগুলোকে ইসলামি জিহাদ প্রমান করা তারা নিজেদের জন্য ফরয করে নিয়েছে। এইভাবে বিভ্রান্ত বক্তারা জিহাদ নাম দিয়ে মানবতাবিরোধী সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে ইসলামের মহান সেবা বলে মনে করছে এবং তরুণ যুবকদেরকেও অনুরূপ ভ্রষ্টতার গর্তে ফেলছে। আল্লাহু মুস্তায়ান।

বর্তমান যুগে কেনো সর্বপ্রথম সঠিক ‪আক্বীদার দিকে দাওয়াত দিতে হবে?

বর্তমান যুগে কেনো সর্বপ্রথম সঠিক #আক্বীদার দিকে দাওয়াত দিতে হবে?
- শায়খ আব্দুর রাক্বীব মাদানী।
দ্বাইয়ী, খাফজী দাওয়াহ সেন্টার, সউদী আরব।
____________________________
১. কারণ ইসলাম ঈমান (আক্বীদা) ও আমলের নাম। ইসলামের পন্ডিতগণ আক্বীদাকে বলেন উসূল (মূল) আর আমলকে (ফিকহকে) বলেন ফুরূ (গৌণ)। তাই মূল বিষয়ের দাওয়াত ছেড়ে গৌণ বিষয়ের দিকে দাওয়াত দেওয়া অজ্ঞতা এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দাওয়াতের বিপরীত।
২. কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে মক্কার মুশরিকরা আল্লাহকে বিশ্বাসী করতো, কিন্তু তা সত্ত্বেও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরকে মুসলিম বলে স্বীকার করেন নি। কিন্তু আজ বিশ্বের বহু লোক এই কারণে নিজেকে মুসলিম দাবী করছে বা লোকেরা তাকে মুসলিম ভাবছে, কারণ তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে বলে দাবী করে।
৩. কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে যখন কুরআন অবতীর্ণ হচ্ছিল এবং তাতে যখন আল্লাহর বিভিন্ন গুণাবলী উল্লেখ করা হচ্ছিল (যেমনঃ আল্লাহ আরশে সমুন্নত, আল্লাহ দুই হাতে আদম আঃ কে সৃষ্টি করেছে) তখন তাঁর সমুন্নত হওয়া ও তাঁর দুই হাত থাকা এই ভাবে অন্যান্য গুণাবলী তারা অস্বীকার করতেন না, আর না অপব্যাখ্যা দিতেন। কিন্তু আজকের সমাজের অনেক মুসলিমরা আল্লাহর আসমা ও সিফাতকে (নাম এবং গুণাবলীকে) অস্বীকার করে আর অনেকে সেইগুলোর অপব্যাখ্যা দেয়।
৪. কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগের লোকেরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে একজন মানুষ মনে করতেন ও আল্লাহর বান্দা মনে করতেন। কিন্তু বর্তমান যুগের নামধারী মুসলিমরা নবী ও আল্লাহর মধ্যে পার্থক্য করতে চায় না। আর অনেকে বলেঃ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর নূরের তৈরি (নাযুবিল্লাহি মিন যালিক)।
৫. কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীগণ মনে করতেন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মারা গেছেন কিন্তু বর্তমান নামধারী অনেক মুসলিমরা বলেঃ তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কবরে দুনিয়ার মতই জীবিত, তাকে মরা বলা হারাম এবং বেয়াদবী!
৬. কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাহাবীগণ নবীজীর মৃত্যুর পর তাঁর কবরের কাছে এসে কেউ তাঁর কাছে সাহায্য চাইতেন না, আর না নযরানা দিয়ে তার কাছে কিছু চাইতেন। কারণ তারা মনে করতেন মৃত্যুর পর তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছু দিতে পারেন না। কিন্তু আজকাল অনেক মুসলিম মৃত নবীর কাছেও চায়, এমনকি বর্তমান যুগের অলী নামক মৃতদের কাছেও তারা সাহায্য চায়, দুয়া প্রার্থনা করে।
৭. কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর মৃত্যুর পর তাঁর চার খলীফা সহ তার পরের যুগেও মানুষেরা নবী-রাসূল বা ওলি-আওলিয়াদের কবরের উপর মাযার নির্মাণ করে তা থেকে বরকত, কল্যাণ ও নাজাত পাওয়ার অসীলা মনে করতেন না। কিন্তু এখন পৃথিবীর বহু মুসলিমরা ইসলাম নাম দিয়ে এমন মারাত্মক শিরক ও বিদাতে লিপ্ত।
৮. কারণ সেই যুগের মুসলিমরা একমাত্র মহান আল্লাহকেই পৃথিবীর পরিচালক, নিয়ন্ত্রক, ব্যবস্থাপক এবং এর সার্বভৌম রাজত্বের মালিক মনে করতেন। কিন্তু বর্তমান যুগের অনেকে নামধারী মুসলমানেরা (সূফী, শিয়া এবং অন্যান্য পথভ্রষ্ট দলের লোকেরা) গাউস, কুতুব, আবদাল ও আখিয়ার নামক মানুষকদেরও উপরোক্ত ক্ষমতার মালিক মনে করে।
৯. কারণ সেই যুগের মানুষেরা হাদীস অস্বীকার করে এই মত পোষণ করতোন না যে, আমাদেরকে শুধুমাত্র ক্বুরআন মানতে হবে, হাদীস নয়। কিন্তু বর্তমান যুগে এমন অনেক হচ্ছে, বিভ্রান্ত বক্তারা হাদীস বা সুন্নাহকে কে মানতে অস্বীকার করছে, কেউ সরাসরি আবার কেউবা একটু ঘুরিয়ে।
১০. কারণ সেই যুগে বিদআতী দলের আবির্ভাব ঘটেনি, যারা দ্বীনের নামে পরিপূর্ণ ইসলামে কিছু সংযোজন করেছিল। কিন্তু বরররতমানে যুগে সুন্নাহর অনুসারী মুসলমানদের চাইতে বিদআতির সংখ্যাই যেন বেশী।
১১. কারণ সেই যুগের মুসলিমরা ইসলাম মানে ইসলামের বিধান মেনে চলতে হবে বুঝেছিল। কিন্তু বর্তমানে যুগে মুসলিম মানে আমল বাদ দিয়ে শুধুমাত্র মুখে ঈমানের দাবী করা এটাই যেন বুঝেছে। সাহাবারা ঈমান মানে মুখে তা বলা অন্তরে, তা স্বীকার করা ও কাজে তা বাস্তবায়ন করা বুঝেছিল। কিন্তু আজকের যুগের বেশিরভাগ মানুষ অন্তরে আল্লাহকে বিশ্বাস করাই ঈমান মনে করে; অথচ নাস্তিক ছাড়া বিশ্বের সকলেই আল্লাহকে বিশ্বাস করে।
১২. কারণ সেই যুগের মুসলিমরা জানতো, আমরা কি কারণে সৃষ্টি হয়েছি এবং নবী ও রাসূলগণ পৃথিবীতে কেন এসেছিলেন।
 >>> মানুষ একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করার জন্যে সৃষ্ট হয়েছে, এবং সমস্ত নবী ও রাসূলগণ এসেছিলেন মূলতঃ এই আহব্বান করার উদ্দেশ্যে যে, হে মানুষেরা! তোমরা একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর, কারণ তিনি ছাড়া সত্য আর কোনো মাবূদ বা উপাস্য নাই। [সুরা আল-আরাফঃ ৫৯]
কিন্তু আজ ইসলামের অনেক বড় বড় দ্বাইয়ী প্রকাশ পেয়েছে, ইসলামের নামে অনেক বড় বড় সংগঠন তৈরি হয়েছে, কিন্তু তারা নবী ও রাসূলগণের সেই দাওয়াতী মিশনকে বেমালুম ভুলে গেছে। তাদের অনেকের দাওয়াতের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এইভাবে নিরূপণ করেছেঃ
. জাল-জয়ীফ হাদীস দিয়ে শুধু ফযীলতের দাওয়াত।  
. দলীয় নেতাদের নবআবিষ্কৃত মতবাদ দিয়ে ইসলামী রাষ্ট্র গঠনের দাওয়াত।
. সূফীবাদীদের পীর-মুরিদীর দাওয়াত।
. কোন একটা মাযহাবকে অন্ধ অনুসরণ করার দাওয়াত।
. আমি ছাড়া সমস্ত মুসলমানরাই কাফের এই ফতোয়া দিয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে জিহাদের(!) জন্যে দাওয়াত।
. সারা দুনিয়াতে একই সাথে ঈদ করার দাওয়াত...ইত্যাদি।
=> যেই দ্বাইয়ীর দাওয়াতের মূলে আক্বীদাহ ও তাওহীদ নেই, যেই সংগঠনের মূল দাওয়াতে তাওহীদ ও সঠিক আক্বীদার দাওয়াত নেই, তা
- নববী দাওয়াতী নীতি বহির্ভুত,
- মেরূদন্ডহীন পঙ্গু দাওয়াত,
- তা বৃক্ষের শিকড়ে পানি না দিয়ে লাতা-পাতায় পানি ঢালার মত দাওয়াত,
- তা পচা ঘা অপারেশন না করে তার উপরে প্রলেপ লাগিয়ে চকচক করার দাওয়াত।
(সমাপ্ত)
____________________________
আল-ইমাম, আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
আক্বিদাহ যদি সঠিক না হয়, তাহলে সমস্ত কথা ও কাজ বাতিল।
ফতোয়া ইবনে বাজঃ ১/১৩, আল-ইফতা।  
____________________________
ফযীলাতুশ-শায়খ সালেহ আল-ফাউজান হাফিজাহুল্লাহ বলেন,
কোন ব্যক্তি যদি বলে আমাদের জন্য ঈমানই যথেষ্ঠ, আক্বিদাহর উপর জোর দেওয়ার প্রয়োজন নেই, এটা পরস্পর বিরোধী একটা কথা। কোন ব্যক্তির ঈমান ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমান হবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত না তার আক্বিদাহ সঠিক হচ্ছে। যার আক্বিদাহ সঠিক নয় তার ঈমান নেই এবং তার দ্বীনও সঠিক নয়।
শায়খ আরো বলেছেনঃ ইসলামী দাওয়াত ও তাবলীগে তাওহীদ একটা স্থায়ী বিষয়। একমাত্র মুনাফেক ও কাফেররাই তাওহীদের দাওয়াতকে অপ্রয়োজনীয় বা বোঝার মতো মনে করে, আল্লাহু মুস্তাআন।
সালাফী মানহাজের উপর অত্যাবশ্যকীয় প্রশ্ন এবং উত্তরঃ ৩৪-৩৫ পৃষ্ঠা।

____________________________

‘পরনারীর প্রতি লোভ’ এবং ‘অবৈধ প্রেম-ভালবাসা’

পরনারীর প্রতি লোভ এবং অবৈধ প্রেম-ভালবাসা সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়াহ (রহ.) বলেনঃ
নারী কিংবা ছোট বাচ্চাদের প্রতি আসক্তি কোন ব্যক্তিকে এমন বিপর্যয়ে নিপতিত করতে পারে, যার থেকে উদ্ধার করার ক্ষমতা কারো নেই। এর পরিণতি খুবই ভয়াবহ, তার পূন্যের ভাণ্ডার একেবারে শূন্য হয়ে যায়। প্রথম পর্যায়ে কারো অন্তরে কারো চেহারার প্রতি আসক্তি সৃষ্টি হয়, দ্বিতীয় পর্যায়ে সে তার ভালবাসায় মগ্ন হয়ে যায়। যার ফলশ্রুতিতে সে আস্তে আস্তে নানা অপকর্ম ও অপরাধে জড়িত হয়ে পড়ে, যা একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। তবে সব চেয়ে বড় মসিবত হচ্ছে, আল্লাহর রহমত থেকে দূরে নিক্ষিপ্ত হওয়া। কারণ, বান্দা যখন আল্লাহর ইবাদত ও তার প্রতি নিবিষ্ট চিত্ত থাকে, তখন তার কাছে আল্লাহর মহব্বতের চেয়ে মধুর ও সুখকর কোন জিনিস হতে পারে না। (পরনারীর প্রতি লোভ এবং অবৈধ ভালোবাসার কারণে যে কামনা বাসনার সৃষ্টি হয় তার কারণে বান্দা তার রব্বের প্রতি ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়)
[মাজমুউল ফাতওয়াঃ খন্ড- ১০, পৃষ্ঠা- ১৮৭]
____________________________
১. ফেইসবুক বা মোবাইলে নারী ও পুরুষের মাঝে ফ্রেন্ডশিপ করা যাবে?
উত্তরঃ না, অফলাইন, অনলাইন গায়ের মাহরাম নারী ও পুরুষের বন্ধুত্ব নিষিদ্ধ ও হারাম। নারী ও পুরুষের মাঝে বন্ধুত্ব হচ্ছে যিনার প্রথম দরজা।
২. গায়েব মাহরাম পুরুষ বা নারীর সাথে প্রাইভেট চ্যাটে কথা বলা যাবে?
উত্তরঃ না, প্রাইভেট চ্যাটে কথা বলা এক প্রকার #খালওয়া বা নির্জনতা। এইভাবে কথা বলা নিষেধ কারণ এতে এক পর্যায়ে ব্যক্তিগত বলা শুরু হবে যা কালক্রমে যৌনতা পর্যন্ত যাবে।
৩. অনেকে দ্বীনি ভাই-বোন (নতুন ফেতনা) নাম দিয়ে পাবলিকলি/প্রাইভেটলি হাই-হ্যালো, ব্যক্তিগত কথাবার্তা, ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য খেজুইড়া আলাপ জুড়ে দেয়। এইগুলো জায়েজ?

উত্তরঃ দাওয়াহর নাম দিয়ে নারীদের সাথে ঘনিষ্ঠতা, ধর্মের ভাই-বোন এইগুলো হারাম। অনেক জ্ঞানপাপী বোকা লোকেরা এইগুলোর পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি-তর্ক দেখায়, অথচ ইসলাম এইসবগুলোকে হারাম করেছে।

বুধবার, ২৯ জুলাই, ২০১৫

সুদ আর ব্যবসার মাঝে কি পার্থক্য?

সুদ আর ব্যবসার মাঝে কি পার্থক্য?
ধরুন আপনার ব্যবসার প্রয়োজনে টাকার দরকার, কিন্তু কোন ভাবেই টাকা জোগাড় করতে পারলেন না। এমন সময় কোন সম্পদশালী ব্যক্তি বললো, আমি তোমাকে ১০ টাকা দিচ্ছি, তুমি ১ মাস পর আমাকে ১২ টাকা দিও। এইভাবে ঋণ দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ দাবী করা - এটা হচ্ছে সুদ। এটা ইসলাম হারাম করেছে, কারণ এর দ্বারা দিন দিন সম্পদশালীদের সম্পদ বাড়তে থাকে আর গরীবেরা দিন দিন গরীব হয়। যার টাকা বেশি সে সবসময়েই লাভ করে, যার টাকা কম শুধুমাত্র সে লস শেয়ার করে। উল্লেখ্য সুদী ব্যংকগুলো এইভাবেই টাকা ঋণ দেয় এবং সেই টাকার বিপরীতে অতিরিক্ত টাকা দাবী করে। একারণে সুদী ব্যংকগুলো যেই ইন্টারেস্ট দেয় বা নেয় - এটা নির্ভেজাল সুদ।
অন্যদিকে ব্যবসা হচ্ছে, ধরুন একইভাবে আপনার ব্যবসার জন্য টাকার দরকার। এমন সময় কারো সাথে আপনার একোটা চুক্তি হলো, সে আপনাকে ১০ টাকা ধার দেবে। এই ১০ টাকা ব্যবসা করে আপনি যদি ১২ টাকা করতে পারেন, তাহলে যে ২ টাকা লাভ হবে সেখান থেকে আপনি ১ টাকা পাবেন আর তাকে ১ টাকা দেবেন। আর আপনার ব্যবসার যদি লস হয়, তাহলে অনুরূপভাবে লসও সমান সমান ভাবে শেয়ার করবেন। এইভাবে লাভ-লসের মাধ্যমে লেন-দেন হলে সেটা ব্যবসা হবে।

শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে টাকা দাবী করা এবং, লাভ-লস যেকোন পরিস্থিতিতেই সেই অতিরিক্ত অর্থ দাবী করা হচ্ছে সুদী, অন্যদিকে যেখানে ব্যবসা সেখানে অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া হয় পণ্যের মূল্য থেকে, সরাসরি টাকার পরিবর্তে টাকা না। আরেকটা ব্যপার হচ্ছে সুদের ক্ষেত্রে যে টাকা ধার দেয়, ব্যবসা যাই হোক সে সবসময়েই লাভ পাবে, কিন্তু ব্যবসার ক্ষেত্রে ব্যবসা লাভ করলে লাভ পাবে, ব্যবসা লস হলে লস শেয়ার করবে। 

জামাত শিবিরের আসল পরিচয় (পর্বঃ ১)

জামাত শিবিরের আসল পরিচয় (পর্বঃ ১)
_______________________
জামাত শিবিরের লোকেরা আমাকে বলে,
১. আমি ইসলাম বুঝিনা, ক্বুরান হাদীস বুঝিনা, ইসলাম শুধুমাত্র তারাই বুঝেন।
২. আমি সুবিধাবাদী, আমি ইসলাম কায়েম করছিনা, শুধুমাত্র তারাই ইসলাম কায়েমের জন্যে যুদ্ধ করছেন।
৩. আমি আওয়ামী লীগের দালাল, মুনাফেক...আর তারা হচ্ছেন সাচ্চা মুসলমান।
_______________________
=> জামাত শিবিরের লোকেরা রাষ্ট্রে ইসলাম কায়েম করার জন্যে জীবন দিতে রাজি, কিন্ত তাদের বেশির ভাগ ভক্তরাই নিজেদের জীবনে ইসলাম মানতে রাজিনা। এদের বেশির ভাগই দলিল-প্রমান ছাড়াই অশ্লীল আজেবাজে গালি দেয়, তাদের বিরোধীতা করলে অন্যদেরকে উঠতে বসতে কাফের বা মুনাফেক বলে ফতোয়া দেয়।
=> অথচ যে কোন মুসলমানকে গালি দেয় সে একজন ফাসেক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মুসলমানদেরকে গালমন্দ করা ফাসেকী, আর তাদের বিপক্ষে যুদ্ধ করা কুফরী। [বুখারী ও মুসলিম]
=> যে কোন মুসলমানকে কাফের অথবা মুনাফেক বলে, সে নিজেই একজন কাফের বা মুনাফেক। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি তার অপর কোন ভাইকে কাফের বলে, তাহলে তা দুইজনের যেকোন একজনের দিকে ফিরবে। যদি সে যা (কাফের) বলেছে বাস্তবে তাই হয়, তাহলেতো ঠিক আছে। আর সে যদি কাফের না হয় তাহলে উক্ত বিষয়টি (কুফুরী) যে বলেছে, তার দিকেই ফিরে আসবে। [সহীহ মুসলিমঃ ২২৫]
=> বেশিরভাগ জামাত শিবির ভক্তরাই নিজেদের প্রোফাইল পিকচার দিয়ে রেখেছে একেবারে মেয়েদের মতো চকচকে গাল নিয়ে। অথচ চার মাযহাবের ফুকাহারা সহ, সমস্ত আলেমরাই এব্যপারে একমত হয়েছেন যেঃ দাড়ি রাখা ওয়াজিব, যে ব্যক্তি দাড়ি রাখেনা সে একজন ফাসেক।
_______________________
একবার এমনই এক জামাতীর একটা লেখা আমি ফেইসবুকে দেখলাম। কিছুদিন পূর্বে সৌদি আরবের প্রধান মুফতি, আল্লামাহ শায়খ আব্দুল আজিজ আলে-শায়খ এর নামে একটা মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালানো হয়েছিলো, শায়খ নাকি ফিলিস্থিনের বিপক্ষে আর ইসরায়েলের পক্ষে ফতোয়া দিয়েছেন। নাউযুবিল্লাহ, মিথ্যুকদের উপরে আল্লাহর লানত, কত বড় মিথ্যা কথা ছড়ানো হয়েছিলো একজন বড় আলেম এর নামে। জামাতের রাজনীতির পক্ষে লেখালিখি করে জনপ্রিয় এমন একজন ফেইসবুক লিখক এই মিথ্যা খবর বিশ্বাস করে সৌদি প্রধান মুফতিকে কাফের ও বলে শয়তান বলে গালি দিলো, নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক। কত বড় বোকা একটা লোক, আর আমি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম তার ভক্ত প্রায় ৪০০-৫০০ মানুষ সেই জঘন্য মিথ্যাচারের পোস্টে লাইক দিয়ে রেখেছে। আমি লেখক সম্পর্কে জানার জন্যে তার টাইম লাইন একটু ঘেটে দেখি সে দুই দিন আগেই তার একটা ছবি পোস্ট করেছে, একেবারে মেয়েদের মতো গাল, ছিটাফোঁটা দাড়ি নাই, হয় এখনো দাঁড়ি উঠার মতও বয়স হয়নি, অথব দাড়ি রাখার মতো ঈমান অর্জন করতে পারেনি। এমন লোকেরাই ক্বুরান হাদীস না বুঝে আলেম-ওলামাদের গালি গালাজ করে, জাহেল বক্তাদের কথা শুনে নিজেরা গোমরাহ হয় তারাও অন্যদেরকে গোমরাহ বানায়।
_______________________

একেতো দাঁড়ি রাখেনা, আবার বুক ফুলিয়ে সেই ছবি ইন্টারনেটে প্রচার করে সবাইকে দেখাচ্ছে! সুবহানাল্লাহ!! লজ্জা-শরম ঈমানের অংগ। কোথায় গেলো লজ্জা-শরম? দাঁড়ি না রাখার ফাসেকীতে লিপ্ত, অন্তত সেই চেহারা মানুষকে দেখানো থেকে বিরত থাকো। আর দাঁড়ি ছাড়া এমন চেহারা নিয়ে (যেই চেহারার দিকে তাকাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘৃণা বোধ করে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন), এমন লোকদের নিজেদের অল্প বুঝ আর বিভ্রান্ত বক্তা ও লেখকদের (মওদুদী, সাঈদী, নিজামী গং) ক্বুরান হাদীসের অপব্যখ্যা নিয়ে ইসলাম কায়েমের বড় বড় কথা বলা কতটা মানানসই, সেটা আমি বিজ্ঞ পাঠকদের বিবেচনার উপরেই ছেড়ে দিলাম। আল্লাহ আমাদেরকে হেদায়েত করুন, আমিন।

মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০১৫

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কা বিজয়


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কা বিজয় (আল্লাহ এ নগরকে সম্মানিত করুন)
সংকলনঃ আল্লামাহ মুহাম্মদ বিন সালেহ আল-উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ
উৎস গ্রন্থঃ রমযান মাসের ৩০ আসর।
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি সবকিছু সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তা পরিমিত করেছেন। প্রতিটি সৃষ্টির অবতরণস্থল ও বের হওয়ার স্থান জেনেছেন, তিনি যা চেয়েছেন তা লাওহে মাহফুজে সন্নিবেশিত করেছেন এবং লিখে রেখেছেন। সুতরাং, তিনি যা সামনে নিতে চাইবেন তা কেউ পেছাতে সক্ষম হবে না, আর তিনি যা পিছনে ফেলবেন তা কেউ এগিয়ে দিতে পারবে না। তিনি যাকে অপমান করবেন তার কোনো সাহায্যকারী নেই, আর তিনি যার সাহায্য করবেন তার কোনো অপমানকারী নেই। রাজত্ব, স্থায়ী অস্তিত্ব, সম্মান ও প্রতিপত্তিতে তিনি একক, সুতরাং যে কেউ এগুলোতে তার সাথে দ্বন্দ্বে লিপ্ত হবে তাকে তিনি তুচ্ছ বানিয়ে ছাড়বেন। সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত সুতরাং তাঁর কাছে বান্দা যা গোপন বা লুকিয়ে রাখবে তা কোনোভাবেই গোপন থাকবে না। আমি তাঁর প্রশংসা করছি, তাঁর সকল নেয়ামতের উপর যা তিনি আমাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রদান করেছেন এবং সহজলভ্য করে দিয়েছেন।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কোনো হক ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, অপরাধীর তাওবা কবুল করেছেন, তাকে তার গুনাহ থেকে মুক্ত করেছেন এবং তাকে ক্ষমা করেছেন। আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ তাঁর বান্দা ও রাসুল; যার মাধ্যমে তিনি হেদায়াতের পথ স্পষ্ট করে দিয়েছেন এবং আলোকিত করেছেন। আর তার মাধ্যমে শির্কের অন্ধকার ও তমাসা দূর করেছেন। আর তিনি তাঁর হাতে মক্কা বিজয়ের গৌরব তুলে দিয়েছেন, ফলে আল্লাহর ঘর থেকে মূর্তি দূর করেছেন এবং ঘরকে পবিত্র করেছেন।
আল্লাহ তাআলা তার উপর সালাত পেশ করুন, তাঁর পরিবার-পরিজনের উপর, অনুরূপ তাঁর সৎকর্মশীল সম্মানিত সাহাবীগণের উপর, আর নিষ্ঠার সাথে তাঁদের অনুসরণকারীদের উপর, যতদিন চাঁদের পূর্ণতা ও সূক্ষ্মতা চলবে ততদিন পর্যন্ত। আর আল্লাহ তাদের উপর যথাযথ সালামও প্রদান করুন। 
প্রিয় ভাইয়েরা! যেমনিভাবে ১৭-ই রমযান বদর প্রান্তে যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছে; যাতে ইসলামকে বিজয়ী করা হয়েছে এবং তার মিনার বুলন্দ হয়েছে, তেমনিভাবে অষ্টম হিজরীর সেই রমযান মাসের ২০ তারিখে নিরাপদ নগরী মক্কা বিজয়ের যুদ্ধও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বিজয়ের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা মক্কা নগরীকে শির্কমুক্ত ইসলামী শহরে পরিণত করেন। যেখানে শির্কের পরিবর্তে তাওহদী বা একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। কুফরীর পরিবর্তে ঈমান, অহংকারের পরিবর্তে ইসলাম তথা আত্মসমর্পন প্রতিষ্ঠিত হয়। এক মহাপ্রতাপশীল আল্লাহর ইবাদত ঘোষিত হলো, শির্কী মুর্তিগুলো এমনভাবে ভেঙে ফেলা হলো যে, সেগুলো আর কোনোদিন জোড়া লাগেনি।
এ মহান বিজয়ের কারণ সম্পর্কে বলা হয়, যখন ৬ষ্ঠ হিজরীতে হুদায়বিয়া প্রান্তরে কুরাইশ ও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাঝে সন্ধি হয়, তখন কেউ স্বেচ্ছায় রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দলভুক্ত হল, আবার কেউ মুশরিক কুরাইশদের দলভুক্ত হল। খুযাআ গোত্র রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দলে যোগ দিল এবং বনু বকর কুরাইশদের দলে যোগ দিল। 
এ গোত্র দুইটির মাঝে ইসলামপূর্ব জাহেলিয়্যাতের যুগে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ ছিল। বনু বকর এ সন্ধির সুযোগকে কাজে লাগাল এবং খুযাআর উপর নিরাপদ অবস্থায় হামলা করে বসল। কুরাইশরা গোপনে তাদের দলভুক্ত বনু বকরকে জনশক্তি ও অস্ত্র দিয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দলভুক্ত খুযাআ গোত্রের বিরুদ্ধে আক্রমণে সাহায্য বনু বকর গোত্রকে করল। অতঃপর খুযাআ গোত্রের একটি প্রতিনিধি দল রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বনু বকরের কার্যক্রম ও কুরাইশদের সাহায্য সম্পর্কে তাঁকে অবহিত করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি অবশ্যই তোমাদের পক্ষ হয়ে তোমাদের থেকে প্রতিরোধ করব যেভাবে আমি নিজের ব্যাপারে প্রতিরোধ করে থাকি।
কিন্তু কুরাইশ; তারা বিপদ আঁচ করতে পারল ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হলো, তারা বুঝতে পারল যে, তারা তাদের এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে হুদায়বিয়ার সন্ধি ভঙ্গ করে ফেলেছে। তাই তারা তাদের আবু সুফিয়ানকে সন্ধি পুনর্বহাল ও মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে পাঠালো। আবু সুফিয়ান রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলল। কিন্তু রাসুল তার কথার কোনো উত্তর দিলেন না। এরপর সে আবু বকর ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সাথে কথা বলল; যাতে তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে সুপারিশ করে, কিন্তু তাতেও সে সফল হতে পারলো না, তারপর সে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুর সুপারিশ চেয়েও কাজ হল না। তখন আবু সুফিয়ান আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলল, হে হাসানের পিতা! তোমার কী অভিমত? তখন তিনি বললেন, আমি এমন কিছু দেখি না যা তোমার কাজে আসবে। কিন্তু তুমি বনী কেনানার সর্দার। তুমি যাও আর লোকদেরকে নিরাপত্তা ও আশ্রয় দাও। আবু সুফিয়ান বলল, আপনি কি মনে করেন এটা আমার কোনো কাজে আসবে? উত্তরে আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ না, আল্লাহর শপথ! কিন্তু এ-ছাড়া অন্য কিছু তোমার জন্য আমি পাচ্ছি না। অতঃপর আবু সুফিয়ান তা-ই করল এবং কুরাইশদের কাছে ফিরে গেল। তখন কুরাইশের লোকেরা বলল, তোমার অভিযানের সংবাদ কী? আবু সুফিয়ান বলল, আমি মুহাম্মাদের কাছে গিয়েছি এবং কথাবার্তা বলেছি। আল্লাহর কসম! তিনি কোনো উত্তর দেন নি। অতঃপর আমি ইবন আবি কুহাফা (আবু বকর) ও ইবনুল খাত্তাব (উমারের) কাছে গিয়েছি, তার থেকেও কোনো ভালো কিছু পাইনি। অতঃপর আমি আলীর কাছে গিয়েছি, তিনি আমাকে একটি বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন; যা আমি করেছি। আমি মানুষদেরকে পরস্পরের থেকে নিরাপত্তা ও আশ্রয় দিয়েছি। তখন তারা বলল, মুহাম্মদ কী এ ব্যাপারে অনুমতি দিয়েছেন? সে বলল, না। তখন তারা বলল, তুমি ধ্বংস হও, তুমি কোনো কাজ করতে পারো নি। বরং সে (আলী) তোমার সঙ্গে তামাশা করেছে।
এদিকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবীগণকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার হুকুম দিলেন। তাদেরকে তাঁর ইচ্ছা সম্পর্কে অবহিত করলেন। আর তিনি তাঁর চারপাশের গোত্রসমূহকেও যুদ্ধের জন্য বের হওয়ার আহ্বান জানালেন। এরপর এই বলে দুয়া করলেন, হে আল্লাহ! কুরাইশ গুপ্তচরদের কাছে আমাদের এ সংবাদ পৌঁছা বন্ধ কর, যাতে আমরা হঠাৎ করে তাদের দেশে পৌঁছুতে পারি। 
তারপর তিনি মদীনা থেকে প্রায় দশ হাজার যোদ্ধা সাহাবী নিয়ে বের হলেন। আর আব্দুল্লাহ ইবন উম্মে মাকতূমকে মদীনার দায়িত্ব প্রদান করেন।
পথিমধ্যে তিনি যখন জুহফায় ছিলেন, তখন তাঁর চাচা আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুর সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ হল, তিনি সপরিবারে ইসলাম গ্রহণ করে হিজরত করে মদীনা আসছিলেন। অতঃপর যখন তিনি আবওয়া নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন রাসুলের চাচা আবু সুফিয়ান ইবনুল হারেস ইবনে আবদিল মুত্তালিব ও তাঁর ফুফাতো ভাই আবদুল্লাহ ইবন আবি উমাইয়্যা তার সাথে সাক্ষাৎ করলেন। তারা উভয়েই ছিল তাঁর ঘোর শত্রু; কিন্তু তারা উভয়ে ইসলাম গ্রহণ করল। রাসুল তাদের ইসলাম গ্রহণ মেনে নিলেন। তিনি আবু সুফিয়ান ইবনুল হারেস সম্পর্কে বললেন, আমি আশা করি তিনি হামযার স্থলাভিষিক্ত হবেন। 
তারপর যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কার নিকটবর্তী মাররুয যাহরান নামক স্থানে পৌঁছলেন, তখন তিনি সৈন্য বাহিনীকে আগুন জ্বালাতে নির্দেশ দিলেন, তারা ১০,০০০ আগুনের চুলা জ্বালালেন। আর মুসলিম সেনাবাহিনীর প্রহরায় উমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নিযুক্ত করলেন। আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খচ্চরে আরোহণ করে এমন এক ব্যক্তিকে তালাশ করতে লাগলেন যে কুরাইশদের কাছে এ সংবাদ নিয়ে যাবে যে, তারা যেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মুখে এসে যুদ্ধ পরিহার করে নিরাপত্তা চায়। যাতে মক্কায় যুদ্ধ-বিগ্রহ ও রক্তপাত না ঘটে। আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু চলতে চলতে হঠাৎ আবু সুফিয়ান (ইবনে হারব) এর কথার আওয়াজ শুনলেন, সে বুদাইল ইবন ওয়ারাকাকে বলছে, গত রাতের মতো এত আগুন প্রজ্জ্বলিত হতে আমি আর কখনো দেখিনি। তখন বুদাইল বলল, এ তো খোযাআ গোত্র। আবু সুফিয়ান বলল, খোযাআরা তো এরচেয়ে অনেক কম ও হীন লোক। আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু আবু সুফিয়ানদের আওয়াজ বুঝতে পেরে ডাকলেন, আবু সুফিয়ান বলল, হে আবুল ফযল! তোমার কী হয়েছে? আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এই তো আল্লাহর রাসুল সকলের মাঝে উপস্থিত। আবু সুফিয়ান বলল, এখন আমি কী করব? আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমার সঙ্গে চল, আমি তোমাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়ে যাব এবং তোমার জন্য নিরাপত্তা চাইব। এরপর আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তাকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিয়ে এলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে আবু সুফিয়ান তোমার জন্য ধ্বংস, এখনো কি তোমার বুঝে আসেনি যে, আল্লাহ তাআলা ছাড়া সত্যিকারের কোনো মাবুদ নেই? উত্তরে আবু সুফিয়ান বলল, আপনার প্রতি আমার পিতামাতা উৎসর্গ হোক! আপনি কতই না সহিষ্ণু, সম্মানিত ও আত্মীয়পরায়ণ। আমি ভালোভাবে জানি যে, যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ থাকত, তাহলে এখন সে আমার কাজে লাগত।
অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কি এখনো বুঝতে পারোনি যে আমি আল্লাহর রাসুল? এ কথা শুনে আবু সুফিয়ান ইতস্তত করতে লাগলেন। তাকে উদ্দেশ করে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, তোমার জন্য ধ্বংস; ইসলাম গ্রহণ কর। এরপর আবু সুফিয়ান কালেমায়ে শাহাদাৎ পাঠ করে ইসলাম গ্রহণ করলেন।
পরক্ষণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নির্দেশ দিলেন, তিনি যেন আবু সুফিয়ানকে নিয়ে পাহাড়ের সংকীর্ণ উপত্যকায় অবস্থান করেন এবং মানুষ যেন তার পাশ দিয়ে যাতায়াত করে। এরপর তার পাশ দিয়ে বিভিন্ন গোত্রের লোকজন তাদের ঝান্ডাসহ অতিক্রম করতে লাগল। যে গোত্রই অতিক্রম করত আবু সুফিয়ান রাদিয়াল্লাহু আনহু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুকে গোত্রের পরিচিতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন, তখন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু উভয়ের মাঝে পরিচয় করিয়ে দিতেন। আর আবু সুফিয়ান বলতেন, আমাদের মাঝে ও তাদের কী হলো? ইতোমধ্যে একটি কাফেলা তার মুখোমুখি হলে আবু সুফিয়ান জিজ্ঞাসা করলেন এরা কারা?
আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, এরা হলো মদীনার আনসার, তাদের নেতা হলেন সাদ ইবন উবাদা রাদিয়াল্লাহু আনহু তার সঙ্গেই ঝান্ডা ছিল, যখন সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু তার পাশাপাশি আসলেন, তখন তিনি বললেন, হে আবু সুফিয়ান! আজকের দিন ধ্বংসযজ্ঞের দিন, আজ কাবায় রক্তপাত হালাল করা হয়েছে।
অতঃপর ছোট অথচ সম্মানিত একটি কাফেলা এলো যাদের মধ্যে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবায়ে কিরামও ছিলেন। তাদের ঝান্ডা ছিল যুবায়ের ইবন আওয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাতে। যখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আবু সুফিয়ানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন, আবু সুফিয়ান তখন তাকে সাদ ইবন উবাদা রাদিয়াল্লাহু যা বলেছিলেন সে সম্পর্কে রাসুলকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ
সাদ ভুল বলেছে। বরং, আজ এমন এক দিন যাতে আল্লাহ তাআলা কাবাকে সম্মানিত করেছেন। আজ কাবাকে গিলাফাচ্ছাদিত করা হবে।
অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর হাত থেকে ঝান্ডা নিয়ে তার ছেলে কায়েসের হাতে দেয়ার নির্দেশ দিলেন। তিনি লক্ষ্য রাখছিলেন যে, যখন ঝান্ডাটা তার ছেলের হাতে দেয়া হচ্ছিল তখন তা সম্পূর্ণরূপে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহুর হস্তচ্যুত হয় নি।
তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সামনে অগ্রসর হলেন, তিনি তাঁর ঝাণ্ডাটি হাজুন নামক স্থানে স্থাপন করতে বললেন। এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দৃঢ়পদে বিজয়ী বেশে মক্কায় প্রবেশ করছিলেন। তিনি সেখানে আল্লাহ তাআলার প্রতি বিনীত হয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে প্রবেশ করছিলেন। এমনকি তাঁর মাথা বাহনের সঙ্গে মিশে যাচ্ছিল এবং তিনি উঁচু আওয়াজে বার বার পড়ছিলেন:
নিশ্চয় আমি তোমাকে সুস্পষ্ট বিজয় দিয়েছি। সূরা আল-ফাতহঃ ১।
তিনি মক্কা নগরীর এক প্রান্তে খালিদ ইবন ওয়ালিদ রাদিয়াল্লাহু আনহু এবং অন্য প্রান্তে যোবায়ের ইবন আওয়াম রাদিয়াল্লাহু আনহুকে প্রেরণ করে এ ঘোষণা দিতে বললেন, যে ব্যক্তি মাসজিদে হারাম তথা বায়তুল্লাহতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপদ। যে আবু সুফিয়ানের ঘরে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ। আর যে ব্যক্তি নিজের ঘরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করবে সেও নিরাপদ। 
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সামনে অগ্রসর হয়ে মসজিদে হারামে প্রবেশ করে তিনি তার বাহন উটের উপর থেকেই তাওয়াফ করলেন। তখন বাইতুল্লাহর পাশে ৩৬০টি মূর্তি ছিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সঙ্গে থাকা ধনুকের অগ্রভাগ দিয়ে মূর্তিগুলোর গায়ে আঘাত করে তিরস্কার করে বলছিলেনঃ হক এসেছে এবং বাতিল বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় বাতিল বিলুপ্ত হওয়ারই ছিল। সুরা বানী ইসরাঈলঃ ৮১।  
সত্য এসেছে এবং বাতিল কিছু সৃষ্টি করতে পারে না, আর কিছু পুনরাবৃত্তিও করতে পারে না। সুরা সাবাঃ ৪৯।
আর তখন মূর্তিগুলো আপনা আপনি মুখ থুবড়ে পড়ে যাচ্ছিল। 
এরপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাবার ভিতরে প্রবেশ করলেন। তিনি সেখানে কিছু ছবি দেখতে পেলেন। তিনি সেগুলোকে মিটিয়ে দেবার নির্দেশ দিলে তা নিশ্চিহ্ন করা হলো। তারপর তিনি সেখানে সালাত আদায় করলেন; সালাত শেষ করার পর তিনি কাবার বিভিন্ন দিকে ঘুরে ফিরে দেখলেন এবং সবদিকে তাওহিদের বাণী উচ্চারণ করলেন। তারপর তিনি বায়তুল্লাহর দরজার উপর আসলেন, আর কুরাইশরা ছিল তাঁর নীচে; তারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি করেন তা প্রত্যক্ষ করার অপেক্ষায় ছিল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাবার দরজার দুপাল্লা ধরে বললেনঃ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্যিকারের মাবুদ নেই। তাঁর কোনো শরীক নেই। সকল রাজত্ব তাঁরই, তাঁর জন্যই সকল প্রশংসা, তিনি সকল বিষয়ে ক্ষমতাবান। তিনি স্বীয় ওয়াদা সত্য করে দেখিয়েছেন। স্বীয় বান্দার সাহায্য করেছেন। একাকী সমস্ত শত্রু বাহিনীকে পরাজিত করেছেন। হে কুরাইশ সম্প্রদায়! আল্লাহ তাআলা তোমাদের থেকে জাহিলিয়্যাতের অহমিকা ও পূর্বপুরুষদের নিয়ে অহংকার দূর করে দিয়েছেন। সকল মানুষ আদম আলাইহিস সালাম থেকে জন্ম নিয়েছে। আর আদম আলাইহিস সালাম মাটির তৈরি।
হে মানুষ, আমি তোমাদেরকে এক নারী ও এক পুরুষ থেকে সৃষ্টি করেছি আর তোমাদেরকে বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে বিভক্ত করেছি; যাতে তোমরা পরস্পর পরিচিত হতে পার। তোমাদের মধ্যে আল্লাহর কাছে সেই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক তাকওয়াসম্পন্ন। নিশ্চয় আল্লাহ তো সর্বজ্ঞ, সম্যক অবহিত। সুরা আল-হুজুরাত, আয়াত ১৩।
তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, হে কুরাইশ সম্প্রদায়! আমার সম্পর্কে তোমাদের কী ধারণা? আমি তোমাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করব? তারা বলল, আমরা শুধু উত্তমই আশা করি, সম্মানিত ভাই এবং সম্মানিত ভ্রাতুষ্পুত্র। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমি তোমাদের তেমনি বলব, যেমন ইউসূফ আলাইহিস সালাম তাঁর ভাইদের উদ্দেশে বলেছিলেনঃ আজ তোমাদের প্রতি কোনো ভর্ৎসনা নেই, আল্লাহ তোমাদের ক্ষমা করুন। সুরা ইউসুফঃ ৯২। তোমরা যাও, তোমরা মুক্ত। তোমাদের থেকে কোনো প্রতিশোধ নেওয়া হবে না।
মক্কা বিজয়ের দ্বিতীয় দিন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভাষণ দেওয়ার জন্য দাঁড়ালেন। প্রথমে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও স্তুতি পেশ করলেন এরপর বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা মক্কা নগরীকে সম্মানিত করেছেন। কোনো মানুষ তা সম্মানিত ঘোষণা করে নি। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমান রাখে, তার জন্য এখানে রক্তপাত এবং গাছ কর্তন করা বৈধ নয়। সুতরাং তোমাদের কেউ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুদ্ধের কারণে এখানে যুদ্ধের অবকাশ চাইলে তাকে বলবে, আল্লাহ তাআলা স্বীয় রাসুলকে অনুমতি দিয়েছিলেন, তোমাদের অনুমতি দেন নি। তিনি বললেন, আমাকে দিনের কিছু অংশ অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। আজ মক্কার হুরমত ও সম্মান পুনরায় বহাল হলো, যেমনটি গতকাল ছিল। তোমাদের উপস্থিতরা যেন আমার বাণী অনুপস্থিতদের কাছে পৌঁছে দেয়। 
আর যে সময়টুকু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য মক্কায় যুদ্ধ হালাল করা হয়েছিল, তা হলো বিজয়ের দিন সূর্যোদয় থেকে নিয়ে ওই দিন আসর পর্যন্ত। এরপর তিনি মক্কায় ১৯ দিন অবস্থান করেছিলেন এবং তখন সালাত কসর করেছিলেন।  আর মাসের অবশিষ্ট দিনগুলোতে তিনি সিয়ামও পালন করেন নি। কেননা তখনও তিনি সফর শেষ করার নিয়ত করেন নি। তিনি সেখানে অবস্থান করেছিলেন তাওহীদ তথা আল্লাহর একত্ববাদের শিক্ষাকে সুদৃঢ় করা, ইসলামের ভিত্তি অন্তরে বদ্ধমূল করে দেয়া, ঈমান দৃঢ় করা এবং মানুষের কাছ থেকে বাইআত গ্রহণ করার জন্য।
সহীহ বুখারীতে মুজাশে রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় উল্লেখিত হয়েছে, তিনি বলেন, আমি আমার ভাইকে নিয়ে মক্কা বিজয়ের পর হিজরতের জন্য বাইআত গ্রহণের জন্য রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলে তিনি বললেন, হিজরতকারীরা হিজরতের সকল কল্যাণ নিয়ে অগ্রগামী হয়ে গেছে। তাই এখন আমি তাকে ইসলাম, ঈমান ও জিহাদের ওপর বাইয়াত গ্রহণ করছি। 
আর এ প্রকাশ্য বিজয়ের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য পূর্ণাঙ্গ রূপ ফেলো, লোকেরা দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করতে লাগল। আর আল্লাহর নগরী মক্কা পুনরায় ইসলামী রুপান্তরিত হলো; যেখানে আল্লাহ তাআলার একত্ববাদ, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সত্যতা এবং আল্লাহর কিতাবের দৃঢ়তার ঘোষণা প্রদত্ত হলো। আর এর ক্ষমতা মুসলিমদের হাতে চলে এলো। শির্ক দূরীভূত হলো এবং তার আঁধার বিলুপ্ত হলো। আল্লাহই সবচে বড়, আল্লাহর জন্যই সকল প্রশংসা; আর এটি কিয়ামতাবধি তাঁর বান্দাদের ওপর তাঁর রহমতের বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
হে আল্লাহ! আমাদের এ মহান নিয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের তাওফীক দিন। সব জায়গায় সব সময় মুসলিম উম্মাহর বিজয় নিশ্চিত করুন। আমাদের ও আমাদের পিতামাতা এবং সকল মুসলিমকে আপনার দয়ায় ক্ষমা করুন, হে পরম করুণাময়।

আর আল্লাহ সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সাহাবীগণের ওপর।