শনিবার, ৭ জুন, ২০১৪

তাবলীগ জামাত এর উপরে শায়খ মুজাম্মেল আল-হক্ক এর গবেষণাধর্মী বিশ্লেষণ



তাবলীগ জামাত এর উপরে শায়খ মুজাম্মেল আল-হক্ক এর গবেষণাধর্মী বিশ্লেষণঃ

আলহামদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু লা রাসুলিল্লাহ। আম্মা বাআদু

মুহতারাম, শায়খ মুজাম্মেল আল-হক্ক হা’ফিজাহুল্লাহ ঢাকার একটি মাদ্রাসা থেকে পাশ করেন। পরবর্তীতে তিনি আরব বিশ্বের দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে উচ্চতর ডিগ্রী ও জ্ঞান অর্জন করেন। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে তিনি জ্ঞান অর্জন করেছেন তার মধ্যে রয়েছেঃ

- সারা বিশ্বের মাঝে শ্রেষ্ঠ দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মদীনা ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, মদীনা, সৌদী আরব।
- কিং সউদ ইউনিভার্সিটি, রিয়াদ, সৌদি আরব। 
- কুয়েত ইউনিভার্সিটি, কুয়েত।

এই মোট ৩টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামের উপরে দীর্ঘদিন আলেম-ওলামাদের কাছ থেকে তিনি উচ্চতর শিক্ষাগত যোগ্যতা ও ডিগ্রী অর্জন করেন, কুরান ও সহীহ হাদীসের কষ্টিপাথর দিয়ে হক্ক ও বাতিলের পার্থক্য নির্ণয় করার যোগ্যতা অর্জন করেন। তাবলীগ জামাত, জামাতে ইসলামী এইরকম প্রচলিত কোন দলে যোগ না দিয়ে কুরান, সহীহ হাদীস ও সাহাবীদের আদর্শ অনুযায়ী দ্বীন প্রচারে তিনি আত্মনিয়োগ করেন, যার কারণে কোন দলই তার প্রতি সন্তুষ্ট না, কারণ তিনি সবার মাঝে যেই ভুল-ত্রুটিগুলো আছে সেইগুলো চিহ্নিত করে দেন, তাদেরকে সংশোধন হওয়ার জন্য দাওয়াত দিয়ে থাকেন। আর স্বাভাবিক ভাবেই যারা মানুষকে উপদেশ দেয় মানুষ তাদেরকেই শত্রু বলে মনে করে।

যাইহোক, দীর্ঘদিন ধরে তাবলীগ জামাত, জামাতে ইসলামী ও ইখওয়ানুল মুসলিমিন এইরকম বিভিন্ন দলকে খুব কাছ থেকে দেখে, তাদের আলেম-ওলামাদের সাথে কথা বলে, তাদের বই-পুস্তক পড়ে তাদের কি ভুলগুলো এবং সংশোধনের উপরে লিখালিখি করে থাকেন। কারণ, এই ভুলগুলোর কারণে মুসলিমদের একটি দল আরেকটি দল থেকে দূরে আছে। এইরকম ভুলগুলো সংশোধন করে বিভিন্ন দলগুলো যখন “সুন্নাহ” এর কাছে আসবে তখনই সম্ভব হবে মুসলিমদের ঐক্য। আজকে তাবলীগ জামাত এর উপরে শায়খ মুজাম্মেল আল-হক্ক এর গবেষণাধর্মী বিশ্লেষণ শেয়ার করা হলো।
বারাক-আল্লাহ ফীকুম
admin :
আনসারুস সুন্নাহ
________________________________
তাবলীগ জামাত...
অহমিকা আর আত্ম-প্রবঞ্চনা দ্বীন, ইমান ও আমল ধ্বংসের প্রধান হাতিয়ার যা শয়তান ব্যবহার করে থাকে। এই প্রবঞ্চনার শিকার যারা তাদের বৈশিষ্ট হলঃ

يقولون ما لا يفعلون ويفعلون ما لا يؤمرون-( مسلم/صحيح)

“যা করে না তাই বলে, আর যা করতে বলা হয় নাই তাই তারা করে” (সহীহ মুসলিম)।

يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ ۖ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا- (النساء/120)

“শয়তান কল্যাণের অঙ্গীকার করে, আশা প্রদান করে, অথচ সে শুধুই ধোঁকা দেয়। (শয়তান মানুষের জন্য যা ক্ষতিকর সেটাকেই সে উপকারী বলে মনে করায়)’’।
সুরা আন-নিসাঃ ১২০।

قال ابن وضاح : وكم من متحبب إلى الله بما يبغضه الله عليه ومتقرب إلى الله بما يبعده منه

ইবনে ওদবাহ বলেনঃ
“কত লোক আছে যারা আল্লাহর মুহব্বাত কামনা করে অথচ তাদের কাজ আল্লাহকে তাদের উপর রাগান্বিত করে তোলে। আবার অনেক আছে আল্লাহর নৈকট্যকামী অথচ, তাদের কাজ আল্লাহ থেকে তাদেরকে দূরেই সরিয়ে রাখে”।

কোরআন-হাদীসকে এক পাশে রেখে অনেক শ্রেণীর ধার্মিক লোক, ধর্মীয় গ্রুপ ও ধর্ম-ব্যবসায়ীরা তাদের নিজ নিজ ধ্যান-ধারনা, দলীয় চিন্তাবিদ, তরীকার মুরুব্বী ও সিলসিলার পীরকে ইসলামের রাহবার ও সনদ বলে ধরে নিয়েছেন। যার ফলে ইসলাম এক হওয়া সত্ত্বেও তার নানান রূপ বর্তমানে দেখা যাচ্ছে। এবং এর উপর ভিত্তি করে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ নানান দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে।

যে কোরআন আসলো সকলকে এক সারিতে দাঁড় করাতে, সেই কিতাবের অনুসারীগণ কেন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লো তা আশা করি সহজেই অনুমান করা যায়। শুধু নিজের পক্ষকে জিতানোর উদ্দেশ্যে তর্ক করতে থাকলে কোনই লাভ হবেনা। আসল নকল বুঝে সেমতে নিজেকে মুসলিম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। খামাখাই আন্দাজ নির্ভর হলে কোন লাভ হবেনা।

১. জ্ঞানীগণ বলেছেনঃ যদি বলি, কিভাবে কর? উত্তর দাও কেন কর? এরূপ করলে তো প্রশ্নের উত্তর হয়না। অনুরূপ আপনাকে যদি বলিঃ কিভাবে তাবলীগ করেন? আর আপনি উত্তরে বলেনঃ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ “বাল্লেগু আন্নি” (আমার কাছ থেকে প্রচার করো) - তাহলে বলবো, আমাদেরকে তাবলীগ করতে বলা হয়েছে তাতেতো আমাদের কোনই প্রশ্ন নেই। কিন্তু, আমাদের প্রশ্ন হলো, আপনি কিভাবে তাবলীগ করেন সেটা নিয়ে?

এটি বড়ই দুঃখজনক যে, তাবলীগ জামাতের বিশেষ কোন ভুলের কথা বললে যে সব গুণ তাদের আছে, সে সবেরই কীর্তন শুরু করবে; যা শয়তানের ধোঁকা ও শাক দিয়ে মাছ ঢাকার অপচেষ্টা মাত্র।

২. তারা বললেনঃ আল্লাহ্‌ মারুফ (ভালো কাজ) এর আদেশ আর মুনকার (খারাপ কাজ) থেকে মানুষকে নিষেধ করতে বলেছেন। এতে তো কোনই দ্বিমত নেই। কিন্তু মারুফ আর মুনকার কিভাবে বুঝলেন? সঠিক বুঝলেন, না ভুল? অথবা মারুফকে মুনকার বা মুনকারকেই মারুফ মনে করলেন কিনা?

৩. কিসসা-কাহিনী কিন্তু কোরআনেও আছে। কিন্তু সেসব কিসসা আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে জিবরাঈল
আলাইহিস সালাম এর মাধ্যমে আল্লাহ্‌র নবীকে বলা হয়েছে। উদ্দ্যেশ্য আয়াতের ভাবার্থ পরিষ্কার করা। কিন্তু তাবলীগ জামাতের কিতাবগুলির কিসসার উদ্দেশ্য, উৎস, প্রকার ও ধরন ভিন্ন। সব হাওয়া থেকে পাওয়া কল্প-কাহিনী। যার কোন নির্ভরযোগ্য উৎস নেই। অথচ ওসব কিসসা কাহিনীই হচ্ছে তাদের দ্বীন শিক্ষার মুল উপাদান!! ঐসব মিথ্যা, বানোয়াট শিরকি আর কুফুরী কাহিনীর উপরেই ভীত গেড়েছে তাদের ঈমান ও আমল!! ঐগুলোই তারা শিখে এবং অন্যদেরকে শিক্ষা দেয়। এভাবেই ইসলামের মূল উতস কুরআন ও সুন্নাহ থেকে শয়তান তাদেরকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে। যদিও তারা নিজেদেরকে সফলকাম বলেই মনে করছে!

৪. তাবলীগ জামাতের লোকেরা ঈমান ও আমলের কথা বলেন। অথচ ইমানের যে ধারনা তাবলিগীরা পোষণ করেন, তা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ইমান নয়। আমল সম্পর্কে তাদের ধারনাও কল্পিত ও বানোয়াট।

এসবই প্রায় বেশীর ভাগ দল ও গ্রুপের অবস্থা। এর কারণ তারাও ব্যক্তি বিশেষের অনুকরণ করেন, দল বিশেষের মডেল অনুসরণ করেন যা ইসলাম অনুমোদন করেনা। এ ক্ষেত্রে হজরত আলী রাদিয়াল্লাহু আ’নহু যথার্থই বলেছিলেনঃ

“তোমরা ব্যক্তি বিশেষ থেকে দীন গ্রহণ করবে না, কারণ ব্যক্তিরা হয় বিভিন্ন”।

আমরা জানি যে মানুষের চিন্তা-ভাবনা, শিক্ষা-সংস্কৃতি, বিদ্যা-বুদ্ধি, অনুধাবন শক্তি, বুঝার ক্ষমতা ও যোগ্যতা এক নয়। সব মানুষের আকীদা-বিশ্বাসও এক নয়। তদুপরি, দলীয় আদর্শে মগজ ধোলাই হয়ে থাকলে তো কথাই নেই! তাই নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, “ব্যক্তি পূজা” (কোন একজন ব্যক্তির মতবাদকে অন্ধভাবে মেনে চলা) ইসলামে এতো বিভক্তি এনে দিয়েছে।

নিম্নে তাবলীগ জামাতের কতগুলো বিশেষ বিশেষ ত্রুটি সংক্ষেপে উল্লেখ করা হল। আশাকরি তারা গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন এবং সংশোধনের পদক্ষেপ নেবেনঃ

- তারা কুরআন-হাদিস ব্যতীত ব্যাক্তি বিশেষের মতামত (হাওয়া বা প্রবৃত্তির) অনুসরণ করেন।

- কুরআন-হাদীস শিক্ষা করেন না, অন্যদেরকেও শিক্ষা দেন ও না।

- কিসসা কাহিনী, স্বপ্ন, রুহানী ফয়েজ, বুজুর্গী, ফানাফিল্লাহ ইত্যাদি কল্পিত মতবাদের বিশ্বাস করেন, যার মাঝে অনেক স্পষ্ট শীরকি চিন্তা-ভাবনা বিদ্যমান।

- ইসলামের মূল ভিত্তি হচ্ছে “তাওহীদ” ও “আকীদা” ভিত্তিক। অথচ তাবলিগ জামাতের লোকেরা তাওহীদ ভিত্তিক আকীদা শিক্ষা করাকে নিরুৎসাহিত করেন। অনেকে “তাওহীদ শিখলে, আকীদাহ শিখলে নাকি উম্মতের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি হয়” এইকরম শয়তানী ওয়াসওয়াসাইয় আক্রান্ত। অথচ সমস্ত নবী-রাসূলদের দাওয়াতের প্রথম বিষয় ছিলো “তাওহীদ”, আকীদার সংশোধন।

- তাবলীগ জামাতের লোকেরা সত্যিকারের আলেম ওলামাদেরকে ঘৃণার চোখে দেখেন আর তাদের তরীকার অথবা তাদের তরীকা সমর্থনকারী চরম মূর্খ, বেদাতী, শিরকি-কুফুরী মতবাদ প্রচারকারী উলামায়ে সুকে বড় আলেম বলে মনে করেন, তাদেরকে অনুসরণ করে তারা বিভ্রান্ত হন। অথচ প্রকৃত আলেমগণই হচ্ছেন অন্ধকারের আলো।

- ফাজায়েল (অতিরিক্ত) আমলের উপর বেশী গুরুত্ব দেন অথচ ফারায়েজ (অতি গুরুত্ব পূর্ণ বিষয় সমূহ) কে অবহেলা করেন।

- তাবলিগ জামাতে লোকেরা আমলে সর্বাধিক গুরুত্ব দেন শিক্ষাতে নয়। আমল করার আগেই বড় ফরজ হচ্ছে ইলম শিক্ষা করা, আমল কিভাবে করতে হবে সেটা জানা। অথচ তারা ছোট্ট একটি আমলকে প্রাধান্য দেন। না জেনে ইমান ও আমলে কোনই ফায়দা নেই তা আল্লাহ্‌র রাসুল সঃ বলেছেন। কারণ, এর ফলে তারা অন্ধভাবে আমল করতে গিয়ে শিরক বেদাতে লিপ্ত হবে, কারণ তারা জানেনা কোন আমল ভালো আর কোনটা শিরক-বেদাত।

- পাকিস্থান, বাংলাদেশ, ভারত এমন দেশগুলোতে প্রচলিত অনেক শিরক ও বিদআতের জন্মদাতা ও পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে এই তাবলিগ জামাতের অজ্ঞ লোকেরাই, যারা ২-১ চিল্লা দিয়ে বা সাল (বছর) ঘোরাঘুরি করে নিজদেরকে বড় আলেম মনে করে। আর সাধারণ তাবলিগীরা তাদের মুরুব্বী মনে করে তাদেরকে ফলো করে।

- তাবলীগ জামাতের লোকেরা তাদের মুরুব্বিদের অন্ধ অনুকরণ করে থাকে। তারা তাদের মুরুব্বীদের কথাকে মনে হবে যেন “ওয়াহীর” মত মনে করেন। তাদেরকে কোন ব্যপারে প্রশ্ন করা হলে, প্রায়ই দলীল দিতে পারেনা আর বলে, আমাদের মুরুব্বীরা এইরকম বলেছেন বা এইটা করতে বলছেন। এইভাবে, কুরান হাদীসের দলীল থেকে সরিয়ে সাধারণ তাবলীগ জামাতের অনুসারীদেরকে “অজ্ঞ মুরুব্বীদের” অন্ধ আনুগত্য করার শিক্ষা দিয়ে তাদেরকে গোমরাহ করা হচ্ছে।

- খেয়ালি ও অলৌকিক বিষয়ে অধিক বিশ্বাস করা। শয়তান আড়ালে থেকে অনেক কারসাজি দেখাতে পারে তা কখনো তারা বুঝতে চাননা।

- তারা শুধু আমলের দিকে মানুষকে দাওয়াত দেয় (ভুল আর শুদ্ধ), গুনাহ ও হারাম কাজ থেকে নিষেধ করে না। এইজন্যই তাদের দাওয়াত খুব জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাদের দাওয়াতের মেইন টার্গেট হলো, ফযীলত বর্ণনা করা, প্রচলিত শিরক বেদাত থেকে মানুষকে সতর্ক করা, হারাম ও পাপাচার থেকে নিষেধ তারা করেন না। এতে করে নাকি লোকেরা দাওয়াতের কথা শুনবেন না! এইরকম খারাপ কাজের বিরোধীতা, সমালোচনা না করায় মুসলিম উম্মতের মাঝে এই জামাত নিরীহ, শান্তিপ্রিয় হিসেবে পরিচিত যার কারণে তাদেরকে কেউ বাধা দেয়না। আওয়ামীলীগ

- তাদের মুরুব্বিরা এমনও বলেছেনঃ নবীগন যে সাগরের তীরে দাঁড়িয়ে হা করে তাকিয়ে থেকেছেন আমরা সেখানে সাঁতার কাটছি - নাউজুবিল্লাহ মিনহুম।

- তাদের কিতাবে লিখা আছে, যে বেহেশতে নামাজ নাই, সে বেহেশত দিয়ে কি হবে?

- আল্লাহ্‌ বলেনঃ হে নবী যা তোমার উপর নাজেল হয়েছে তাই প্রচার কর (সুরা আল-মায়েদাহঃ ৬৭)।

- “তোমার উপর যা নাযিল করা হয়েছে সেটাই হক্ক (সুরা আর-রাআদঃ ১)।
- “এই হকের বাইরে যা সবই হচ্ছে গোমরাহী (সুরা ইউনুসঃ ৩২)।

- অথচ, তাবলীগ জামাতের লোকেরা এই হক্কের (ক্বুরান ও সহীহ হাদীসের) বাইরে থেকেই দ্বীন শেখে এবং মানুষদের মাঝে প্রচার করে!
Collected & Edited from Shaikh Muzammel Al-hoque
___________________________

শায়খ আব্দুর রাক্বীব আল-বুখারীর তাবলীগ জামাত ও জামাতে ইসলামীর “মানহাজ” এর দিক থেকে ত্রুটির সংক্ষিপ্ত আলোকপাতঃ

http://ansarus-sunnah.blogspot.com/2014/05/blog-post_15.html

_____________________________