রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৫

নাজাত প্রাপ্ত দলের আকীদাহ (পর্বঃ ১)

নাজাত প্রাপ্ত দলের আকীদাহ (পর্বঃ ১)
_________________________
বিসমিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। আম্মা বাআদ। শায়খ হাফিয বিন আহমাদ আল-হাকামী (রহঃ) প্রণীত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আকীদাহ এর উপরে লিখিত অসাধারণ একটি কিতাব নাজাত প্রাপ্ত দলের আকীদাহ, যেখানে তিনি আকীদাহ সংক্রান্ত ২০০টি প্রশ্নের উত্তরে লিপবদ্ধ করেছেন। ইন শা আল্লাহ, আজ থেকে এই বই থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫টা বা ১০টা করে প্রশ্নের উত্তর ধারাবাহিকভাবে পোস্ট করা হবে।
_________________________
(১) বান্দার উপর সর্বপ্রথম ওয়াজিব কোন কাজটি?
উত্তরঃ বান্দার উপর সর্বপ্রথম ওয়াজিব হচ্ছে, তাদেরকে আল্লাহ তাআলা যে উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন, তাদের থেকে যে বিষয়ের অঙ্গীকার নিয়েছেন, যে বিষয় দিয়ে রাসূল প্রেরণ করেছেন এবং কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা। এ বিষয়টির জন্যই আল্লাহ্ তাআলা দুনিয়া-আখেরাত, জান্নাত-জাহান্নাম সৃষ্টি করেছেন। এ বিষয়ের জন্যেই কিয়ামত প্রতিষ্ঠিত হবে, দাড়িপাল্লা স্থাপন করা হবে, আমলনামা প্রদান করা হবে। এ বিষয়টির কারণেই কেউ সৌভাগ্যবান হবে আবার কেউ হবে হতভাগা। এ অনুযায়ী কিয়ামতের দিন নূর বন্টিত হবে। সে দিন আল্লাহ যাকে নূর দান করবেন না, তার কোন নূর থাকবে না। 
_________________________
(২) সুতরাং ঐ বিষয়টি কি, যার জন্য আল্লাহ্ তাআলা মানুষ সৃষ্টি করেছেন?
উত্তরঃ আল্লাহ তাআলা মানুষ ও জিন জাতিকে পৃথিবীতে তাঁর একত্ববাদ ও এবাদত প্রতিষ্ঠা করার জন্যে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ 

وَمَا خَلَقْنَا السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا لاَعِبِينَ * مَا خَلَقْنَاهُمَا إِلاَّ بِالْحَقِّ وَلَكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ

‘‘আমি নভোমন্ডল, ভূমন্ডল ও এতদুভয়ের মধ্যবতী সবকিছু ক্রীড়াচ্ছলে সৃষ্টি করিনি। আমি আকাশ ও পৃথিবী যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছি। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা বুঝে না’’। (সূরা আদ্ দুখানঃ ৩৮-৩৯) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَمَا خَلَقْنَا السَّمَاءَ وَالأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا بَاطِلاً ذَلِكَ ظَنُّ الَّذِينَ كَفَرُوا

‘‘আমি আকাশ ও পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যে যা আছে তা অযথা সৃষ্টি করি নি। এটা কাফেরদের ধারণা মাত্র’’।  (সূরা সোয়াদাঃ ২৭) আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَخَلَقَ اللَّهُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضَ بِالْحَقِّ وَلِتُجْزَى كُلُّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ وَهُمْ لاَ يُظْلَمُونَ

‘‘আল্লাহ আকাশ ও পৃথিবী যথাযথভাবে সৃষ্টি করেছেন এবং যাতে প্রত্যেক ব্যক্তি তার উপার্জনের ফল পায়। তাদের প্রতি যুলুম করা হবে না’’। (সূরা জাসিয়াঃ ২২) আল্লাহ্ তাআলা আরো বলেনঃ

وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالإِنسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ

‘‘আর আমি জিন এবং মানবকে কেবল আমার এবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছি’’। (সূরা যারিয়াতঃ ৫৬)
_________________________
(৩) আবদ অর্থ কি?
উত্তরঃ আবদ দ্বারা যদি অধীনস্ত উদ্দেশ্য হয়, তাহলে আসমান-যমীনের সকল জ্ঞানবান ও জ্ঞানহীন, তাজা-শুকনা, চলমান-স্থির, প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কাফের-মুমিন, সৎ-অসৎ সব কিছুই উদ্দেশ্য। সবই আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহ কর্তৃক প্রতিপালিত, তাঁর অধিনস্ত, তাঁর পরিচালনাধীন। প্রত্যেক সৃষ্টির জন্য নির্দিষ্ট একটি গন্তব্যস্থল রয়েছে। সেখানে গিয়ে তার যাত্রা শেষ হবে। প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট একটি সময়ের উদ্দেশ্যে চলমান। তার জন্যে নির্ধারিত সীমা ছেড়ে একটি সরিষার দানা পরিমাণ স্থানও অতিক্রম করতে পারবে না। আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

ذَلِكَ تَقْدِيرُ الْعَزِيزِ الْعَلِيمِ

‘‘আর এটি হল মহা পরাক্রমশালী ও মহাজ্ঞানী আল্লাহর নির্ধারণ’’। (সূরা ইয়াসীনঃ ৩৮)

আর আব্দ দ্বারা যদি এবাদতকারী, অনুগত ও প্রিয় উদ্দেশ্য হয় তাহলে আব্দ অর্থ হবে আল্লাহর সম্মানিত মুমিন ব্যক্তিগণ। তারা হবেন আল্লাহর পরহেজগার বন্ধু। তাদের কোন ভয় নেই। আর তারা চিন্তিতও হবে না।
_________________________
(৪) ইবাদত কাকে বলে?
উত্তরঃ আল্লাহ তাআলা বান্দার যে সমস্ত প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য কথা ও কাজকে ভালবাসেন ও পছন্দ করেন এবং যে সমস্ত বিষয় আল্লাহর ভালবাসা ও পছন্দের বিপরীত ও পরিপন্থী, তা থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করার নামই এবাদত।
_________________________
(৫) বান্দার আমল কখন ইবাদতে পরিণত হয়?
আমলের মধ্যে যখন দুইটি বস্তু পরিপূর্ণ অবস্থায় পাওয়া যাবে, তখন তা ইবাদতে পরিণত হবে।
(ক) আল্লাহকে পরিপূর্ণরূপে ভালবাসা এবং
(খ) আল্লাহর সামনে পরিপূর্ণভাবে বিনয় ও আনুগত্য প্রকাশ করা।
আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

وَالَّذِينَ آمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ

‘‘আর যারা ঈমানদার, তারা আল্লাহ্কে সবচেয়ে বেশী ভালবাসে’’। (সূরা বাকারাঃ ১৬৫) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

إِنَّ الَّذِينَ هُمْ مِنْ خَشْيَةِ رَبِّهِمْ مُشْفِقُونَ

‘‘নিশ্চয়ই মুমিনগণ তাদের পালনকর্তার ভয়ে সদা সন্ত্রস্ত থাকে’’। (সূরা মুমিনূনঃ ৫৭) আল্লাহ তাআলা আরো বলেনঃ

إِنَّهُمْ كَانُوا يُسَارِعُونَ فِي الْخَيْرَاتِ وَيَدْعُونَنَا رَغَبًا وَرَهَبًا وَكَانُوا لَنَا خَاشِعِينَ

‘‘তারা সৎকর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ত, আশা ও ভীতি সহকারে আমাকে ডাকত এবং তারা ছিল আমার কাছে বিনীত’’। (সূরা আম্বীয়াঃ ৯০)

_________________________