বুধবার, ১৪ অক্টোবর, ২০১৫

দ্বীনি জ্ঞান

বিসমিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। আম্মা বাআদ।
আর তোমরা তোমাদের রব্বেরর ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও, যেই জান্নাতের প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের মধ্যবর্তী দূরত্বের সমান, যা তৈরী করা হয়েছে মুত্তাকী (আল্লাহ ভীরুদের) জন্য।
সুরা আলে ইমরানঃ ১৩৩। 
___________________________
১/ আযান দিলে নারীদেরকে মাথায় কাপড় দিতে হবে এমন কোন নিয়ম ক্বুরান ও হাদীসে নেই। তবে স্মরণ রাখা প্রয়োজন, গায়ের মাহরাম (এমন পুরুষ, যাদের সাথে বিয়ে জায়েজ), তাদের সামনে সর্বদাই পর্দা করতে হবে, ঘরে বা বাইরে। গায়ের মাহরামদেরকে শরীরের কোন অংশ প্রদর্শন করলে গুনাহগার হতে হবে। যেই সমস্ত নারীরা হিজাব-পর্দা করবেনা বা চেহারা উন্মুক্ত রাখবে, শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) এর ফতোয়া হচ্ছে, উপদেশ দেওয়ার পরেও কথা শুনবেনা, তাদের গার্জিয়ানদের উচিৎ তাদেরকে শাস্তি দেওয়া, যাতে করে তারা এই কাজ থেকে বিরত থাকে।
২/ বিয়ের পূর্বে দেখে নিন কাকে বিয়ে করছেন, বেনামাযী, ফাসিক্ব, দুনিয়ালোভী কোন নারী বা পুরুষকে বিয়ে করবেন না। বিশেষ করে নারীরা একবার বাজে লোকের পাল্লায় পড়লে ডিভোর্স দিয়েও সারা জীবনেও হয়তোবা সেই দুর্দশা শেষ হবেনা। অন্তত নামাযী, হালাল উপার্জন করে, সুন্নতের অনুসারী এমন সৎ ও দ্বীনদার কাউকে বিয়ে করুন, যদিওবা সে হাই স্ট্যাটাসধারী বা সম্পদশালী না হোক। আশা করা যায় ভালো ব্যবহার পাবেন।
৩/ জামাতে ইমামের অনুসরণ করার নিয়ম হচ্ছে, প্রথমে ইমাম রুকু সিজদা করবে এর পরে আল্লাহু আকবর বলে তাকবীর দিবে। ইমাম এর তাকবীর শেষ হলে বা ইমাম রুকু সিজদাতে গেলে, এর পরে মুক্তাদীরা আল্লাহু আকবার বলে রুকু বা সিজদাতে যাবে। কোন ব্যক্তি ইমামের পূর্বেই রুকু বা সিজদাতে গেলে তার নামায বাতিল হয়ে যাবে। আর ইমাম এর আল্লাহু আকবর বলার সাথে সাথে তার সাথে রুকু সেজদাহ করবেন না। ইমাম রুকুতে যাবেন, এরপর মুক্তাদী রুকুতে যাবে, সিজদার জন্যে ইমাম এর কপাল মাটিতে স্পর্শ করাবেন এরপর মুক্তাদি সিজদাতে যাবেন। ইমাম ডানে ও বামে দুইদিকেই সালাম ফেরানো শেষ করবেন, এরপরে মুক্তাদী সালাম ফেরাবেন। এই হচ্ছে সুন্নতী তরীকা, যদিও আমাদের দেশের প্রায় ৯৫% মানুষ ইমামের সাথে সাথেই সবকিছু করে, এটা ঠিক নয়।
৪/ অনুরূপভাবে কেউ ২-১ রাকাত পরে জামাতে যোগ দিলে, ইমাম ডানে ও বামে দুইদিকেই সালাম ফেরাবেন, এরপরে মুক্তাদী তার ছুটে যাওয়া রাকাতের জন্যে দাঁড়াবেন। বেশিরভাগ মানুষ মনে করে ইমাম ডান দিকে সালাম ফেরালেই দাঁড়িয়ে যাবেন, এটা ভুল।
৫/ আপনার মেয়েকে নারী-পুরুষ মিস্কড স্কুল-কলেজে পাঠাবেন না। চেষ্টা করুন ছেলে-মেয়েদেরকে দ্বীনি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে পড়ানোর জন্যে, যাতে করে আগামী দিনে তারা আল্লাহর আদর্শ বান্দা/বান্দী হয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রুদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে। আর তারা যেনো দুনিয়াপূজারী লোকদের ছেলে মেয়েদেরকে বন্ধ/বান্ধবী হিসেবে না নেয়। একজন মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের অনুসারী হয়ে থাকে। 
৬/ হারাম পন্থা অবলম্বন করলে ঈমান দুর্বল হয়ে পড়ে, পাপের জাল, হতাশা ও মানসিক পেরেশানি চতুর্দিক থেকে চেপে ধরে। তাক্বদীরকে মেনে নিয়ে আল্লাহর নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করুন, আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন, হালাল কাজের জন্যে মুজাহাদা করুন। আশা করা যায়, আপনি সফল হবেন ইন শা আল্লাহ। 
৭/ পাপী লোক ও তাদের কাজের দিকে লক্ষ্য করবেন না, কিয়ামতের দিন কিভাবে নিজের ঘাড় থেকে জাহান্নাম কে সড়ানো যায় সেইদিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখুন। অধিকাংশ মানুষ দ্বীন থেকে দূরে আছে, তাদের দিকে লক্ষ্য করলে বা তাদের অনুসরণ করা নিজেকে ধ্বংস করার শামিল।
৮/ আইসিস বা এদের মতো দলগুলো খারেজী, এ ব্যপারে সমস্ত আরব দেশীয় আলেমরা একমত। আল্লাহ এদেরকে যত দ্রুত ধ্বংস করবেন মুসলিমরা একটা কঠিন রোগ থেকে মুক্তি পেলো। আইসিস, তাদের খারেজী মিত্ররা এবং ইরানী শীয়ারা আজ পর্যন্ত এমেরিকা বা ইহুদীদের অবৈধ রাষ্ট্রে কোন আক্রমন করছেনা, কিন্তু মক্কা মদীনার দখল করার জন্যে সৌদিয়া আরবের মতো শান্তিপূর্ণ দেশে বোমা হামলা চালিয়ে নিরপরাধ মুসলিমদেরকে হত্যা করছে। আমেরিকা ও রাশিয়ার মাঝে শত্রুতা থাকলেও, ইসলামের সাথে দুশমনির ব্যপারে তারা এক দল। রাশিয়ার সিরিয়া আক্রমনের উদ্দেশ্য তাদের মিত্র রাফেজী শিয়া ইরানীদেরকে খুশি করা, বিনিময়ে সস্তায় তেল সরবরাহের নিশ্চয়তা। আর এমেরিকা সিরিয়ার ব্যপারে চুপ থেকে বা লোক দেখানো ২-১টা হুংকার ছেড়ে আসলে ইরানীদেরকেই মৌন সম্মতি দিয়ে যাচ্ছে। কারণ ইহুদীদের নিরাপত্তার জন্যে সিরিয়াতে বাশারের মতো ইসলামের কট্টর দুশমনের বড় প্রয়োজন।
৯/ স্ত্রীকে ডিশ-টিভি চ্যানেল দেখতে দেবেন না, বেপর্দা চলাফেরা ও পুরুষদের সাথে মিশতে দেবেন না, যদিওবা তারা আত্মীয় বা বন্ধু হোক। অনেকে দ্বীনদার ভাইয়ের স্ত্রী প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গেছে, সুতরাং খারাপ মহিলা থেকে সাবধান, বা নারীরা যেই মাধ্যমে খারাপ হয় সেইগুলো থেকে সাবধান।
১০/ অনেকে দেশে স্ত্রী রেখে বিদেশে খারাপ মেয়েদের সাথে থাকে, বেনামাযী, বেদ্বীন কিংবা নেশাখোর। এমন স্বামী সংশোধন না হলে তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। গার্জিয়ানদের জন্যে মোটেও উচিৎ নয়, একটা বদমায়েশ লোকের কাছে নিজেদের কলিজার টুকরা মেয়েকে তুলে দিয়ে অপেক্ষা করবে, ধীরে ধীরে মেয়েটার জীবন শেষ হয়ে যাওয়ার জন্যে।  
১১/ পর্যটন, শপিং কিংবা আনন্দ-ফূর্তির উদ্দেশ্যে ইন্ডিয়া, শ্রীলংকা ইত্যাদি কাফের মুশরিকদের দেশগুলোতে ভ্রমণ করা জায়েজ নয়। এমন হারাম কাজের পেছনে যারা অর্থ নষ্ট করে তারা অপচয়কারী, আর অপচয়কারীদেরকে আল্লাহ তাআলা শয়তানের ভাই বলেছেন, সুরা বনী ইসরাঈল। আল্লাহ যাদেরকে টাকা দিয়েছেন তাদের উচিৎ অর্থ দিয়ে হজ্জ-উমরা করা, জিহাদ ও দাওয়াতী কাজে অর্থ ব্যয় করা, দরিদ্র মুসলিম ভাই ও বোনদেরকে সাহায্য করা।
১২/ ক্বুরান ও হাদীসের দুয়া দিয়ে ঝাড়ফুঁক করা শিক্ষা করুন এবং মাসনুন পাঠের জন্যে ক্বুরানের সুরা ও আয়াতগুলো মুখস্থ করুন। এটা ক্বুরানের উপর আমল করার একটা দিক। 
১৩/ প্রতিটা মিনিট, প্রতিটা ঘন্টা খেয়াল রাখুন আল্লাহর ইবাদতের জন্যে সময় ব্যয় করার জন্যে। আর কিছু করতে না পারেন, অন্তত আস্তাগফিরুল্লাহ, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী সুবহানাল্লাহিল আযীম, লা হাউলা ওয়ালা ক্বুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ, সহীহ যেকোন দুরুদ এমন যেকোন ফযীলতপূর্ণ দুয়া ও যিকরগুলো করে সময়গুলো কাজে লাগিয়ে পরকালে ধনী হওয়ার জন্যে।
১৪/ রাস্তায় বেপর্দা এবং চরিত্রহীন নারী ও পুরুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে এই অযুহাতে দৃষ্টি ও কর্ণকে প্রবৃত্তির গোলামে পরিণত করবেন না। নামায রোযা করে সওয়াব কামাই করে চোখের জিনা, কানের জিনা, অন্তরের জিনার পাপের কাফফারা দিতে দিতেই সব যেনো শেষ না হয়ে যায়।
১৫/ পীর, ফকির, মাযার, ফাজায়েলে আমল, নিয়ামুল কুরান, মওদুদী, সাইয়েদ কুতুব বা এমন বিভ্রান্ত বক্তা ও লিখকদের কোন বই পড়বেন না, বা তাদের কথা শুনবেন না। এদের ভক্তদের ব্যপারেও সাবধান থাকবেন, তাদেরকে উপদেশ দিবেন, না শুনলে বিদাতী দল বা ব্যক্তির অনুসরণকারীদেরকে বর্জন করবেন। তাদের প্রতারণাপূর্ণ যুক্তি-তর্ক শুনে বা তাদের সাথে তর্কে লিপ্ত হয়ে সময় নষ্ট করবেন না।
১৬/ সামর্থ্যবানদের জন্যে জীবনে হজ্জ একবার করা ফরয, এরপরে আরো হজ্জ করলে সেটা নফল বলে বিবেচিত হবে। উল্লেখ্য নফল হজ্জে অর্থ ব্যয় করা থেকে জিহাদের জন্যে অর্থ ব্যয় করা বেশি সওয়াব। তবে কেউ একাধিকবার হজ্জ করলে তাকে সমালোচনা করা যাবেনা, বৈধ উপার্জনে অর্জিত সম্পদ আল্লাহর দান। কেউ যদি সীমা লংঘন না করে হালাল পথে খরচ করে, এব্যপারে তার এখতিয়ার রয়েছে।
১৭/ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বা কোন অলি-আওলিয়া, পীর ফকিরের মা্যার বা কবরের উদ্দেশ্যে সফর করা সম্পূর্ণ হারাম। কোন মাযার বা কবরে কিছু প্রার্থনা করলে, এমনকি একটা টাকা চাইলেও সেটা শিরক হবে।
___________________________
সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ একটি হাদীস উল্লেখ করে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি।
হাশরের ময়দানে ৫টি প্রশ্নঃ
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
কিয়ামতের দিন (হাশরের ময়দানে) বান্দা তার স্থানেই দাঁড়িয়ে থাকবে, যে পর্যন্ত না তাকে জিজ্ঞেস করা হবেঃ
১. তার জীবনকাল কিভাবে কাটিয়েছে,
২. তার জ্ঞান কি কাজে লাগিয়েছে,
৩. তার সম্পদ কোথা থেকে অর্জন করেছে,
৪. তার সম্পদ কোথায় খরচ করেছে এবং
৫. তার শরীর কিভাবে পুরানো করেছে?
[ইমাম তিরমিযীঃ ২৪১৭, হাদীসটি হাসান ও সহীহ]

___________________________