প্রশ্নঃ মা
আয়িশাহ (রাঃ) আলী (রাঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন, কথাটি কি সঠিক?
উত্তরঃ আওয়ামী
লীগ, জামাতে ইসলামী এমন আরো কিছু রাজনৈতিক দলের অন্ধ অনুসারী পথভ্রষ্ট লোকেরা বলে,
মা আয়িশাহ (রাঃ) আলী (রাঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলেন সুতরাং, নারী নেতৃত্ব
জায়েজ। এছাড়া অনেক বিদাতী সূফীরা এই অভিযোগ করে মা আয়িশাহ (রাঃ) এর সমালোচনা করে,
আউযুবিল্লাহ! আয়িশাহ (রাঃ) আলী (রাঃ) এর বিরুদ্ধ যুদ্ধ করেছিলেন, এটা মা আয়িশাহ (রাঃ)
এর প্রতি মিথ্যা ও জঘন্য অপবাদ। আলী (রাঃ) ও মুয়াবিয়া (রাঃ) এর মধ্যে বিরোধ হওয়ার
ফলে যুদ্ধের মতো অবস্থা সৃষ্টি হলে আব্দুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রাঃ) যিনি মা আয়িশাহর
বোনের ছেলে ছিলেন, এবং আরো কিছু সাহাবী আয়িশাহ (রাঃ) কে বারবার অনুরোধ করে বলেন, আপনি
আমাদের সাথে চলুন, আপনাকে দেখে আপনার সম্মানের জন্যে আলী (রাঃ) মুয়াবিয়া (রাঃ) এর
সাথে সন্ধি করবেন বা তাদের বিরোধ আপোষে মীমাংসা করতে রাজি হবেন। মা আয়িশাহ (রাঃ)
ভাবলেন, আমার দ্বারা যদি মুসলমানদের দুইটি দলের মাঝে মীমাংসা হয়ে যায়, তাহলে এটাতো
অনেক ভালো কথা। এই আশায় তিনি ঘর থেক বের হন। যাই হোক, আলী (রাঃ) ও মুয়াবিয়া (রাঃ) দল
যখন মুখোমুখি হয়, তখন তারা আপোষের জন্যে রাজি হন। কিন্তু তাদের মাঝে মিল হয়ে গেলে
তৃতীয় খলিফা উসমান (রাঃ) এর হত্যাকারীরা যারা আলী (রাঃ) এর দলে তখন আত্মগোপন করেছিলো,
তাদের জন্যে সেটা খারাপ হবে, কারণ দুইটি দল মিলে গেলে আলী (রাঃ) শক্তিশালী হয়ে
যাবেন, এবং শীঘ্রই উসমান (রাঃ) এর খুনিদেরকে হত্যা করা শুরু করবেন। তাই উসমান (রাঃ)
এর খুনি মুনাফেকরা ষড়যন্ত্র করে রাতের বেলায় বের হয়ে দুইটি দলের উপরেই আক্রমন শুরু
করে। যার ফলে আলী (রাঃ) ও মুয়াবিয়া (রাঃ) এর দলের লোকেরা মনে করলো, অন্য দলের
লোকেরা বুঝি সন্ধি ভংগ করে আক্রমন করছে। মুনাফেকদের ষড়যন্ত্রে এই ভুল বোঝাবুঝির
ফলে মুসলিমদের দুইটি দল যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং এতে অনেক মুসলমান নিহত হয়। এখানে মা
আয়িশাহ (রাঃ) আলী (রাঃ) এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যান নি, তিনি মীমাংসা করতে গিয়েছিলেন।
যাইহোক, এই ঘটনায় মুনাফেকদের ষড়যন্ত্রে মুসলমানদের প্রাণ যায়, এ কারণে আলী (রাঃ)
অনেক আফসোস করেন। মা আয়িশাহ (রাঃ) ঘর থেকে বের হওয়ার কারণে অনুতপ্ত হন, পরবর্তী
জীবনে এনিয়ে তিনি অনেক আফসোস করতেন। যখনই তিনি ক্বুরানুল কারীমের এই আয়াত “তোমরা গৃহের ভেতরে অবস্থান করবে”, (সুরা আহজাবঃ ৩৩) পড়তেন, তখনই
তিনি এতো বেশি কাঁদতেন যে, চোখের পানি মুছতে মুছতে তাঁর রুমাল ভিজে যেতো। যাই হোক,
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিবিগণ খাজীদাহ,
আয়িশাহ, হাফসাহ, উম্মে সালামাহ, জয়নাব ও অন্যান্যরা, আল্লাহ তাঁদের সকলের প্রতি
সন্তুষ্ট হন, তারা প্রত্যেকেই এই উম্মতের জন্যে মায়ের মত সম্মানীত। তাঁরা রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর সংগিনী, দুনিয়াতে এবং আখিরাতে। আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে
তাদেরকে পাপ থেকে মুক্ত রাখার কথা ক্বুরানুল কারীমে উল্লেখ করেছেন। এতদ্বসত্ত্বেও
তাঁদের কারো নামে যে কটুক্তি করবে, তাঁদের সমালোচনা করবে, তাঁদের সাথে শত্রুতা
পোষণ করবে সে ব্যক্তি যিন্দীক, মুনাফেক এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম ও সমস্ত মুসলমানদের শত্রু।