প্রশ্নঃ আল্লাহ
কোথায় আছেন?
উত্তরঃ আলহা’মদুলিল্লাহ।
ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আ’লা রাসুলিল্লাহ। আম্মা বাআ’দ।
ক. আল্লাহ্ তাআ’লা বলেন,
“রহমান
(দয়াময় আল্লাহ্) আরশের উর্ধে সমুন্নত।”
সুরা ত্বোয়া হাঃ ৫।
এ কথায় কোনই সন্দেহ
নেই যে আরশ সাত আসমানের উর্ধে রয়েছে, জমিনে বা সর্বত্র নয়।
এমনিভাবে ক্বুরানুল কারীমে মোট ৭টি আয়াতে আল্লাহ তাআ’লা উল্লেখ
করেছেন যে, তিনি আরশের উপরে সমুন্নত হয়েছেন। সেই আয়াতগুলো হচ্ছে,
১. আল-আ’রাফঃ ৫৪, ২.
ইউনুসঃ ৩, ৩. আর-রা’দঃ ২, ৪.
ত্বোয়া-হাঃ ৫, ৫. আল-ফুরকানঃ ৫৯, ৬. আস-সাজদাহঃ
৪ ৭. আল-হাদীদঃ ৪।
খ. হাদীসে রাসুলে
কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“তোমরা কি
আমাকে আমানতদার মনে কর না, অথচ যিনি আসমানে আছেন আমি তাঁর কাছে আমানতদার।
আমার কাছে আসমানের খবর সকাল-সন্ধ্যায় আসে।”
সহীহ বুখারী ও সহীহ
মুসলিম।
*এই হাদীসে আসমানে
যিনি আছেন বলতে নিশ্চয় মহান আল্লাহকেই বুঝানো হয়েছে। এ ব্যপারে কোন সন্দেহ আছে কি?
গ. ইবনুল হাকাম
আস-সুলামী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমার একটি দাসী ছিল। সে
উহুদ ও জাওয়ানিয়া (এই দুইটি পাহাড়ের) দিকে আমার ছাগল চড়াত। একদিন আমি সেখানে
উপস্থিত হয়ে দেখি, একটি নেকড়ে বাঘ এসে একটি ছাগল নিয়ে গেল।
যেহেতু আমিও মানুষ, সেহেতু অন্যান্য মানুষের মত আমারও রাগ
এসে গেল। আমি তাকে (দাসী মেয়েটিকে) একটি চড় বসিয়ে দিলাম। তারপর আমি রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট আসলাম। তিনি আমার এই কাজকে
অত্যন্ত অপছন্দ করলেন। আমি বললাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি কি তাকে মুক্ত করে
দিব? তিনি বললেন, তাকে আমার কাছে নিয়ে
আসো, আমি তাকে তার কাছে নিয়ে আসলাম।
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম দাসী মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলেন,
(১) আল্লাহ কোথায়
আছেন?
সে বলল, তিনি আকাশে আছেন।
(২) রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আবার জিজ্ঞাসা করলেন, আমি
কে? সে বলল, আপনি আল্লাহর রাসুল।
তখন রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন,
তাকে মুক্ত করে দাও। কেননা সে একজন মুমিনা (ঈমানদার নারী)।
সহিহ মুসলিমঃ মসজিদ
ও স্বলাতের স্থান অধ্যায়, খন্ড ৪, হাদিস নং- ১০৯৪।
_________________________
অনেকে কুরআনের কিছু
আয়াতের অপব্যখ্যা করে বলে, আল্লাহ সব জায়গায় বিরাজমান। আর এর জন্য দলীল
দেয়ঃ আল্লাহ তোমাদের সাথেই আছেন, আল্লাহ তোমাদের গ্রীবাস্থিত
ধমনীর নিকটবর্তী, এমন কিছু আয়াত।
এখানে আল্লাহ তোমাদের
সাথে বা তোমাদের কাছে বলতে – অর্থ হচ্ছে আল্লাহর
জ্ঞান, তাঁর কুদরত ও ক্ষমতা সব জায়গায় বিরাজমান। দলীল হচ্ছে
এই আয়াতঃ
“আপনি বলুনঃ
আমার পালনকর্তাই প্রত্যেক বস্তুকে স্বীয় জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে আছেন। তোমরা কি
চিন্তা কর না?”
সুরা আল-আনআ'মঃ
৮০।
অর্থাত, আল্লাহর
জ্ঞান ও আল্লাহর ক্ষমতা সব জায়গায় বিরাজমান, কিন্তু তিনি
নিজে সবজায়গায় বিরাজমান না। তিনি আরশে আযীমে সমুন্নত।
যারা বলে আল্লাহ
সর্বত্র বিরাজমান, তাদের অনেকে নিচের এই আয়াত পেশ করে, “তোমরা
যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের সাথেই আছেন। তোমরা যা কিছু কর
আল্লাহ তা দেখেন।” [সুরা হাদীদঃ ৪]
ইয়াহ্ইয়া বিন ওছমান
(রহঃ) বলেন, “আমরা একথা বলব না, যেভাবে জাহমিয়্যাহ
সম্প্রদায়ের লোকেরা বলে যে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান,
সবকিছুর সাথে মিশে আছেন এবং আমরা জানি না যে তিনি কোথায়; বরং বলব আল্লাহ তাআ’লা স্বয়ং আরশের উপর
সমাসীন,
আর তাঁর জ্ঞান, ক্ষমতা, দেখা-শুনা
সবার সাথে। এটাই উক্ত আয়াতের অর্থ।”
ইমাম ইবনু তায়মিয়া
(রহঃ) বলেন,
“যারা ধারণা
করে আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান তাদের কথা বাতিল। বরং আল্লাহ স্বয়ং আরশের উপরে সমাসীন
এবং তাঁর জ্ঞান সর্বত্র রয়েছে।”
মাজমূ ফাতাওয়াঃ
৫/১৯১-৯৩।
উক্ত আয়াতের (সুরা
হাদীদঃ ৪) ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু কাছীর (রহঃ) তাঁর জগত বিখ্যাত ‘তাফসীর’ গ্রন্থে
বলেছেন,
“অর্থাৎ
তিনি (আল্লাহ) তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক এবং তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি তোমাদের
কার্যসমূহের সাক্ষী। তোমরা পৃথিবীতে বা সমুদ্রে, রাত্রিতে বা দিনে,
বাড়িতে বা বিজন মরুভূমিতে যেখানেই অবস্থান কর না কেন, সবকিছুই সমানভাবে তাঁর জ্ঞান এবং তাঁর শ্রবণ ও দৃষ্টির মধ্যে আছে। তিনি
তোমাদের কথা শোনেন, তোমার অবস্থান দেখেন এবং তোমাদের গোপন
কথা ও পরামর্শ জানেন।”
তাফসীর ইবনে কাসীরঃ
৭ম খন্ড,
পৃঃ ৫৬০।