রবিবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৫

আমিন জোরে বলা নিয়ে প্রশ্নের উত্তর

আমিন জোরে বলা নিয়ে প্রশ্নের উত্তর
- আনসারুস সুন্নাহ
__________________________ 
প্রশ্নঃ আমাদের এলাকার সবাই হানাফী মাজহাব এর অনুসারী। মসজিদে জোরে আমিন বললে আমাদের এলাকায় সবাই বিরোধীতা করে। আমি চাকুরি করিনা বিধায় এলাকায় থাকতে বাধ্য হচ্ছি। এমতাবস্থায় আমি কি করতে পারি?
- Jahangir Alam Lechu
উত্তরঃ বিসমিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। আম্মা বাআদ।
যেই নামাযগুলোতে ক্বিরাত উচ্চস্বরে পড়া হয় (যেমন মাগরিব, ইশা ও ফযরের ফরয নামাযের প্রথম দুই রাকাত), সেইগুলোতে সুরা ফাতেহার শেষে ইমাম ও মুক্তাদির সবার জন্যে আমিন জোরে বলা মোস্তাহাব। ওয়াইল ইবনে হুজর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওয়ালাদ-দ্বোয়াল্লীন পাঠ করার পর আমীন জোরে বলতেন।
সুনানে ইবনু মাজাহ, জামে তিরমিযী, সুনানে আবু দাউদ (কিতাবুস স্বলাত), হাদিস নং- ৯৩২।
কিছু কিছু হাদীসের কিতাবে আমিন আস্তে বলা নিয়ে কিছু হাদীস ও আসার পাওয়া যায়, কিন্তু হাদীসের আলেমদের গবেষণা অনুযায়ী আমিন আস্তে বলার হাদীসগুলো জাল নয়তো জয়ীফ বলে প্রমানিত হয়েছে। নিচে নামাযে আমিন জোরে বলা নিয়ে বিভিন্ন মাযাহবের অবস্থান আপনাদের সামনে পেশ করা হলো।
__________________________
১. শাফেয়ী মাযহাবঃ জেহরী নামাযে আমিন জোরে বলা মোস্তাহাব
শাফেয়ী মাযহাবের বিখ্যাত আলেম, ইমাম নববী রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, যদি নামায এমন হয়ে থাকে যে, যেই নামাযে ক্বিরাত চুপিচুপি পড়া হয়, তাহলে ক্বিরাত অনুযায়ী ইমাম ও মুক্তাদির উচিৎ সেই নামাযগুলোতে আমিন আস্তে বলা। আর যদি নামায এমন হয়ে থাকে যেখানে ক্বিরাত উচ্চস্বরে পড়া হয়, তাহলে মুসল্লিদের জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে আমিন উচ্চস্বরে বলা। এই ব্যপারে কোন মতপার্থক্য নেই। 
[আল-মাজমুঃ ৩/৩৭১]
__________________________
২. হাম্বালি মাযহাবঃ জেহরী নামাযে আমিন জোরে বলা সুন্নত
ইমাম ইবনে কুদামাহ রাহিমাহুল্লাহ তাঁর বিখ্যাত ফতোয়ার কিতাব আল-মুগনি তে উল্লেখ করেছেন, ইমাম ও মুক্তাদীদের জন্য সুন্নত হচ্ছে যখন ক্বিরাত উচ্চস্বরে পড়া হয় তখন আমিন উচ্চস্বরে বলা, এবং যখন ক্বিরাত নিচু স্বরে পড়া হয়, তখন আমিন নিচুস্বরে বলা।
[আল-মুগনীঃ ২/১৬২]
__________________________
৩. হানাফী মাযহাবের আলেমরা আমিন আস্তে বলা সম্পর্কে জাল অথবা জয়ীফ হাদিসগুলোকে সহীহ মনে করেন এবং সে অনুযায়ী তারা আমিন আস্তে বলার জন্যে ফতোয়া দেন।
__________________________
যাই হোক, সুরা ফাতেহার পরে আমিন বলা (আস্তে অথবা জোরে), একটা সুন্নত বা মুস্তাহাব কাজ, এনিয়ে বাড়াবাড়ি করা ঠিক না। মুক্তাদি আমিন জোরে বা আস্তে বলুক, উভয় দলের নামায হয়ে যাবে, কারণ আমিন জোরে বলা ফরজ বা ওয়াজিব কোন আমল নয়। হানাফী মাযহাবের অনুসারীরা যদি আমিন আস্তে বলাকে সুন্নত মনে করেন, তাহলে তারা আস্তে বলবেন। আর অন্যরা যদি আমিন জোরে বলাকে সুন্নত মনে করেন তাহলে জোরে বলবেন। হানাফীদের উচিৎ নয় অন্যদেরকে আমিন জোরে বলতে বাঁধা দেওয়া, আর অন্যদের উচিৎ নয় হানাফীদের উপর আমিন জোরে বলার ফতোয়া চাপিয়ে দেওয়া। এ ব্যপারে প্রশস্ততা আছে, সুতরাং আমাদের হৃদয়টাকে উদার করতে হবে।
__________________________
যেহেতু আমাদের দেশে বেশিরভাগ মানুষ হানাফী মাযহাবের অনুসারী, আর দ্বীনি ইলম (জ্ঞানের) চর্চা আমাদের মাঝে একেবারে নেই বললেই চলে, সেইজন্য মসজিদে আমিন জোরে বললে অনেকে ঝগড়া শুরু করেন, যা নিতান্তই অজ্ঞতা, গোঁড়ামি এবং সংকীর্ণ মানসিকতার পরিচয়। আমি আশা করি, আমাদের হানাফী আলেম ও দ্বাইয়ীরা তাদের সাধারণ অনুসারীদেকে বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি না করার জন্যে উপদেশ দেবেন, এবং তাদেরকে দ্বীনের জ্ঞান শিক্ষা দেবেন, যাতে করে তাদের মাঝে কট্টরপন্থা দূর হয়। তবে কোন এলাকার বা মসজিদের কট্টরপন্থী লোকেরা আমিন জোরে বলতে বাঁধা দিলে এবং নিয়ে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত হলে, ফিতনা সৃষ্টির আশংকা থাকলে সেইক্ষেত্রে আমিন কিছুটা নিচু স্বরে বা নীরবে বলা যেতে পারে। এতে গুনাহ হবেনা, বরং ফিতনা এড়ানোর জন্যে সুন্নাত বা মুস্তাহাব বিষয় এড়ানো জায়েজ  আছে, এটা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীস দ্বারা প্রমানিত।
আল্লাহ আমাদেরকে তার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তরিকা জানার, বুঝার ও মানার তোওফিক দান করুন এবং সিরাতাল মুস্তাকীমের উপরে মৃত্যু দান করুন, আমিন।

__________________________