প্রসংগঃ ‘লাহুয়াল
হাদীস’ এবং ‘শয়তানের ডাক’ কি?
“এই
(ক্বুরানুল কারীম) মানুষের জন্যে একটি মহা সংবাদনামা, যাতে
করে মানুষ এর দ্বারা ভীত হয়। আর যাতে তারা জেনে নেয় যে, একক
উপাস্য একমাত্র তিনিই (আল্লাহ); এবং যাতে বুদ্ধিমানরা এর
(আয়াতগুলো) নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে।” [সুরা
ইব্রাহীমঃ ৫২]
বর্তমান যুগে খুব
কম মানুষই পাওয়া যাবে, যাদের টিভি, মোবাইল,
কম্পিউটার বা মিউজিক প্লেয়ারে গান-বাজনা বাজেনা। দুঃখের বিষয় হচ্ছে
বেনামাযী, বেদ্বীন নারী-পুরুষের পাশাপাশি অনেক নামাযী
লোকেরাও এই শয়তানি ধোকায় পড়ে বোকা বনে আছেন। সবচাইতে বিপদের কথা হছে একশ্রেণীর
গাফেল বাবা-মা ২-৩ বছরের ছোট ছোট শিশুদেরকে জীবনের শুরু থেকে গান-বাজানায় আসক্ত
করে শুরুতেই তাদের অন্তরটাকে নষ্ট করে ফেলছেন। আমাদের ঈমান এতো দুর্বল হয়ে গেছে যে,
সামান্য গান-বাজনার ধোঁকা থেকে বেড়িয়ে আমরা আসতে পারছিনা...তাহলে
আমরা কি করে আশা করতে পারি যে, গান-বাজনা থেকে হাজার গুণ
কঠিন দাজ্জালের ফেতনায় ঈমান ধরে রাখতে পারবো? আল্লাহ আমাদের
হেদায়েত করুন এবং পাপাচার থেকে বেঁচে থাকতে সাহায্য করুন।
____________________________
মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
“এক শ্রেণীর
লোক আছে,
যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্যে ‘লাহুয়াল
হাদীস’ (অবান্তর/বেহুদা কথাবার্তা) সংগ্রহ করে অন্ধভাবে,
এবং আল্লাহর পথ নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে। তাদের জন্যে রয়েছে
অপমানজনক শাস্তি।” [সুরা লুকমানঃ ৬]
‘লাহুয়াল
হাদীস’ কি?
প্রখ্যাত সাহাবী আ’ব্দুল্লাহ
ইবনু মাসউ’দ রাদিআল্লাহু আ’নহু বলেন, “আল্লাহর
কসম! যিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, (এই আয়াতে উল্লেখিত) ‘লাহুয়াল
হাদীস’ (অবান্তর-কথাবার্তা) কথার অর্থ হচ্ছে গান।”
‘ইবলীসের
আওয়াজ’
আল্লাহ তাআ’লা আরো
বলেছেন,
“(হে ইবলীস!) তোর আওয়াজ দ্বারা তাদের (পথভ্রষ্ট
লোকদের) মধ্য থেকে যাকে পারিস তাকে পদস্খলিত কর।” [সুরা
ইসরাঃ ৬৩]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায়
সাহাবী আ’ব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস রাদিআল্লাহু আ’নহুমা বলেন, “যে সকল
বস্তু পাপাচারের দিকে আহবান করে, সেটাই হচ্ছে ইবলীসের আওয়াজ।”
বিখ্যাত তাবেয়ী
বিদ্বান মুজাহিদ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “ইবলীসের আওয়াজ বলতে
এখানে গান ও বাদ্য-যন্ত্রকে বুঝানো হয়েছে।”
ইমাম ইবনুল
কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “এটা বলার অপেক্ষা
রাখে না যে, যেসব বস্তু পাপাচারের দিকে মানুষকে আহবান করে, তার মধ্যে গান-বাজনা সবচাইতে সেরা। এজন্যেই গান-বাজনাকে ‘ইবলিসের
আওয়াজ’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।” [ইগাসাতুল
লাহফানঃ ১/১৯৯]
____________________________
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“আমার
উম্মতের মধ্য হতে একদল লোক এমন হবে যারা ব্যভিচার, রেশমি বস্ত্র পরিধান,
মদ পান এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি (হারাম কাজকে) হালাল মনে
করবে। এবং কিছু লোক এমন হবে যারা একটি পর্বতের নিকটে অবস্থান করবে এবং
সন্ধ্যাবেলায় তাদের মেষপালক তাদের নিকট মেষগুলো নিয়ে আসবে এবং তাদের নিকট কিছু
চাইবে, কিন্তু তারা বলবে, ‘আগামীকাল
ফেরত এসো’।. রাতের বেলায় আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন
এবং তাদের উপর পর্বত ধ্বসিয়ে দিবেন, বাকি লোকদেরকে তিনি বানর ও
শূকরে পরিণত করে দিবেন এবং শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত তারা এই অবস্থায় থাকবে”। [সহীহ
বুখারী,
খণ্ড ৭, বুক ৬৯, হাদীস
নং-৯৪]
____________________________
ইমাম মালেক
রাহিমাহুল্লাহ কে গান-বাদ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “কেবলমাত্র
ফাসিক (পাপীষ্ঠ) লোকেরাই তা করতে পারে।” [কুরতুবীঃ
১৪/৫৫]
ইমাম শাফেয়ী
রাহিমাহুল্লাহ কে বলেছেন, “যে ব্যক্তি গান-বাদ্যে লিপ্ত ব্যক্তি সে হল একজন আহম্মক
(নির্বোধ লোক) । তিনি আরো বলেছেন, সর্বপ্রকার বীণা, তন্ত্রী,
ঢাকঢোল, তবলা, সারেঙ্গী
সবই হারাম এবং এর শ্রোতা ফাসেক (পাপীষ্ঠ) । তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না।
[ইগাছাতুল লাহফানঃ ১/১৭৯; কুরতুবীঃ ১৪/৫৫]
____________________________
কার মৃত্যু কখন চলে
আসে কোন গ্যারান্টি নাই। মোবাইল, কম্পিউটার আল্লাহর নিয়ামত। এই নিয়ামতকে
শয়তানের রাস্তায় (গান-বাজনা, নাটক-সিনেমা, অশ্লীল ছবি ও ভিডিও, অবৈধ প্রেম-ভালোবাসার) পেছনে
ব্যয় করবেন না। বরং এইগুলো দিয়ে কিভাবে
আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায় সেই চেষ্টা করতে হবে। জাহান্নামের শাস্তি অতি
কঠিন। আজকে এই মুহূর্তে মোবাইল কম্পিউটার থেকে যাবতীয় গান-বাজনা, অশ্লীল ছবি-ভিডীও ডিলিট করুন। সাময়িক মজা ভোগ করে অনন্তকালের জীবনকে
ক্ষতিগ্রস্থ করার মতো বোকামি আমরা যেন না করি।
____________________________