আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর
জীবনী থেকে নেওয়া সুন্দর একটি ঘটনাঃ
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর
“আদবা” নামে একটা উটনী (মাদী উট) ছিলো, যাকে অন্য কোন উট কখনো কোনো দৌড়
প্রতিযোগিতায় পরাজিত করতে পারেনি। একদিন এক বেদুইন একটা উটের পিঠে চড়ে আসলো, যা দৌড়
প্রতিযোগিতায় আদবাকে হারিয়ে দিলো। এই ঘটনায় সাহাবারা মনে খুব কষ্ট পেলেন। আল্লাহর রাসুল
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম যখন বুঝতে পারলেন, তাঁর উট হেরে যাওয়ায় সাহাবারা
কষ্ট পেয়েছেন, তখন তিনি বললেন, “এটাই হচ্ছে আল্লাহর রীতি, দুনিয়াতে যা
সর্বোচ্চ চূড়ায় উঠে, একসময় আল্লাহ তার পতন ঘটান।”
রিয়াদুস সালেহীনঃ ৬১৬; সহীহ বুখারীঃ ২৮৭১;
নাসায়ীঃ ৩৫৮৮; আবু দাউদঃ ৪৮০২; মুসনাদে আহমাদঃ ১১৫৯৯।
___________________________
হাদীস থেকে দুটি শিক্ষাঃ
১. আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে
ভালোবাসা ঈমানের একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তিনি সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“তোমাদের কেউ ততক্ষণ
পর্যন্ত মুমিন হতে পারবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের সন্তান, পিতা-মাতা বা
দুনিয়ার সমস্ত মানুষের থেকে আমাকে বেশী ভালোবাসবে।”
সহীহ মুসলিমঃ ৪৪।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে
ভালোবাসার একটা উপায় হলো, তাঁর সীরাহ বা জীবনীর উপরে লেখা বই পড়া বা লেকচার শোনা, তাঁকে
নিয়ে আলোচনা করা, তাঁর সুন্নাত কি তা জানতে চেষ্টা করা ও যতটুকু সম্ভব তার উপর আমল
করা। আজকে আমাদের তরুণ-তরুণীরা কেনো নায়ক-নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, কবি-লেখক বা খেলোয়ারদের
এতো ভালোবাসে? এর কারণ একটাই, চোখের সামনে সবসময় এই সমস্ত জাহান্নামের কীটদেরকে দেখতে
দেখতে, টিভি স্ক্রীনে এদের মনভোলানো কীর্তী দেখে, এদের প্রতি মুগ্ধতা একসময় অটোমেটিক
ভালোবাসায় রূপ নেয়। আফসোস, আজ আমরা “রাহমাতুলিল্লাহ আলামিন” বা সারা দুনিয়ার জন্যে
রহমত, সর্বোত্তম মানুষটিকে আমাদের তরুণ প্রজন্মের কাছে পরিচয় করিয়ে দিতে পারিনি, যার
সুযোগে দেশী-বিদেশী বেদ্বীন প্রচার মাধ্যমগুলো কাফির, ফাসিক, জিনাকারী লম্পটশ্রেণীর
নারী-পুরুষদেরকে আমাদের তরুণ প্রজন্মের আদর্শে পরিণত করেছে।
২. এই হাদীস দ্বারা আরেকটি গুরুত্তবপূর্ণ
বিষয় জানা যায়, আর তাহলো রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর
অহংকারমুক্ত হৃদয়। যদিও আদবা এর আগে কোনো প্রতিযোগিতায় হারেনি, তার পরেও রাসুল সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এর এই নিয়ে বিন্দু মাত্র গর্ব বা অহংকার ছিলোনা।
আমরা সাধারণ মানুষ হলে এইরকম জায়গায় কি করতাম? সাহাবাদের মতো আমরাও কষ্ট পেতাম বা আমাদের
“ইগোতে” লাগতো এবং নানা রকম এক্সকিউজ দেওয়ার চেষ্টা করতাম, বলতাম উটের বয়স
হয়ে গেছে ইত্যাদি…কিন্তু রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কোনোরকম
দ্বিধা না করেই তাঁর উটের পরাজয় স্বীকার করে, আমাদেরকে আল্লাহর রীতি সম্পর্কে স্মরণ
করিয়ে দিলেন। আর এই জন্য, ইমাম বুখারী (রহঃ) এই হাদীসটাকে তাঁর সহীহ গ্রন্থে “বিনয়” অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন।
বিঃ দ্রঃ রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম সীরাহ
বা জীবনীর উপরে বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও নির্ভরযোগ্য একটি বইয়ের নাম হলো, “আর রাহীখুল মাকতুম” যা লিখেছেন শফিউর রহমান
মুবারকপুরী (রহঃ) । আমাদের দেশে এই বইটি ‘তাওহীদ পাবলিকেশান’ থেকে অনুবাদ করা হয়েছে
যা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে, এছাড়াও ইন্টারনেটে ফ্রী পাওয়া যাচ্ছে, আলহা’মদুলিল্লাহ।