নাজাত প্রাপ্ত দলের আকীদাহ (পর্বঃ ২)
_________________________
বিসমিল্লাহ। আলহা’মদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু
ওয়াস সালামু আ’লা রাসুলিল্লাহ। আম্মা
বাআ’দ। শায়খ হাফিয বিন আহমাদ
আল-হাকামী (রহঃ) প্রণীত “আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআ’তের আকীদাহ” এর উপরে লিখিত অসাধারণ
একটি কিতাব “নাজাত প্রাপ্ত দলের আকীদাহ”, যেখানে তিনি আকীদাহ
সংক্রান্ত ২০০টি প্রশ্নের উত্তর লিপবদ্ধ করেছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমাদের পেইজে প্রতিদিন
অন্তত ৫টা বা ১০টা করে প্রশ্নের উত্তর ধারাবাহিকভাবে পোস্ট করা হবে।
_________________________
৬) বান্দা যে আল্লাহকে ভালবাসে, তার আলামত কী?
উত্তরঃ বান্দা কর্তৃক আল্লাহকে ভালবাসার প্রমাণ
হল, সে আল্লাহর প্রিয় বস্তুকে ভালবাসবে এবং আল্লাহ
যা অপছন্দ করেন, সে তা অপছন্দ করবে। আল্লাহর আদেশ মেনে চলবে এবং তাঁর নিষেধ থেকে দূরে
থাকবে। আল্লাহর বন্ধুদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবে এবং আল্লাহর শত্রুদেরকে শত্রু মনে
করবে। এ জন্যই আল্লাহর জন্য কাউকে ভালবাসা এবং আল্লাহর জন্যই কাউকে ঘৃণা করা ঈমানের
সবচেয়ে মজবুত হাতল।
_________________________
(৭) বান্দা কিভাবে আল্লাহর প্রিয় ও সন্তুষজনক
কাজগুলো জানতে পারবে?
উত্তরঃ আল্লাহ যা পছন্দ করেন ও ভালবাসেন, তা
আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন আদেশের মাধ্যমে এবং যা অপছন্দ করেন তা জানিয়ে দিয়েছেন নিষেধের
মাধ্যমে। সুতরাং রাসুল প্রেরণ এবং আসমানী কিতাব নাযিলের মাধ্যমে
বান্দাগণ আল্লাহর পছন্দনীয় আমলসমূহ জানতে পেরেছে। এর মাধ্যমেই তাদের নিকট আল্লাহর অকাট্য
দলীল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং তাঁর পরিপূর্ণ হিকমত প্রকাশিত হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
رُسُلاً مُبَشِّرِينَ وَمُنذِرِينَ لِئَلاَ يَكُونَ لِلنَّاسِ عَلَى اللَّهِ حُجَّةٌ بَعْدَ الرُّسُلِ
‘‘সুসংবাদদাতা এবং ভীতি প্রদর্শনকারী রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি।
যাতে রাসূলগণকে প্রেরণের পরে আল্লাহর প্রতি অপবাদ আরোপ করার মত কোন সুযোগ না থাকে’’। (সূরা নিসাঃ ১৬৫)
আল্লাহ তাআ’লা আরো বলেনঃ
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمْ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ
‘‘বলুন! যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবেসে থাক তাহলে আমাকে অনুসরণ
কর। তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ হলেন
ক্ষমাকারী ও দয়ালু’’। (সূরা আল-ইমরানঃ ৩১)
_________________________
(৮) ইবাদতের শর্ত কয়টি?
উত্তরঃ ইবাদতের
শর্ত হচ্ছে তিনটি।
(ক) ‘সিদকুল আযীমাহ’ তথা ইবাদত
করার সুদৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করা। আর এটি হচ্ছে ইবাদতের অস্তিত্বের শর্ত।
(খ) নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়া।
(গ) আল্লাহ তাআলা যে শরীয়ত
(দ্বীন) অনুযায়ী ইবাদত করতে বলেছেন, ইবাদতটি
সেই শরীয়ত অনুযায়ী হওয়া। শেষ দু’টি হচ্ছে ইবাদত কবুল হওয়ার শর্ত।
_________________________
(৯) ‘সিদকুল আযীমাহ’ তথা
সুদৃঢ় ইচ্ছা বলতে কি বুঝায়?
উত্তরঃ তা হচ্ছে ইবাদত
করতে গিয়ে সম্পূর্ণরূপে অলসতা পরিহার করা এবং কথা ও কাজে পরিপূর্ণ মিল থাকা। আল্লাহ
তা’আলা বলেনঃ
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لِمَ تَقُولُونَ مَا لاَ تَفْعَلُونَ * كَبُرَ مَقْتًا عِنْدَ اللَّهِ أَنْ تَقُولُوا مَا لاَ تَفْعَلُونَ
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা কর না তা বল কেন? তোমরা যা কর না
তা বলা আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তোষ জনক’’। (সূরা আস্ সাফঃ ২-৩)
_________________________
(১০) নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়ার তাৎপর্য কী?
উত্তরঃ নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়ার অর্থ হচ্ছে বান্দা
তার প্রকাশ্য এবং অপ্রকাশ্য সকল কথা ও কাজের মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা
করবে। আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
وَمَا أُمِرُوا إلاَّ لِيَعْبُدُوا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ حُنَفَاءَ
‘‘তাদেরকে এ ছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে
একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে’’। (সূরা আল-বাইয়্যিনাহঃ ৫) আল্লাহ তা’আলা আরো বলেনঃ
وَمَا لأَحَدٍ عِنْدَهُ مِنْ نِعْمَةٍ تُجْزَى* إِلاَّ ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِ الأَعْلَى
‘‘এবং তাঁর উপর কারও এমন কোন অনুগ্রহ নেই, যার বিনিময় প্রদান
করা হচ্ছে; বরং তার মহান প্রভুর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই’’। (সূরা আল-লাইলঃ ১৯-২০)
আল্লাহ্ তাআলা বলেনঃ
إِنَّمَا نُطْعِمُكُمْ لِوَجْهِ اللَّهِ لاَ نُرِيدُ مِنْكُمْ جَزَاءً وَلاَ شُكُورًا
‘‘তারা বলেঃ আমরা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্যই তোমাদেরকে
আহার প্রদান করি। তোমাদের পক্ষ হতে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না’’। (সূরা আল-ইনসানঃ ৯)
আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
مَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الآخِرَةِ نَزِدْ لَهُ فِي حَرْثِهِ وَمَنْ كَانَ يُرِيدُ حَرْثَ الدُّنْيَا نُؤتِهِ مِنْهَا وَمَا لَهُ فِي الآخِرَةِ مِنْ نَصِيبٍ
‘‘যে কেউ পরকালের ফসল কামনা করে, আমি তার জন্য সেই ফসল বাড়িয়ে
দেই। আর যে ইহকালের ফসল কামনা করে, আমি তাকে এর কিছু দিয়ে দেই। আর পরকালে তার কোন অংশ
থাকবে না’’। (সূরা শুরাঃ ২০) এ
মর্মে আরো আয়াত রয়েছে।
_________________________