মুসলিম সমাজে প্রচলিত
শিরক ও কুফর (পর্ব-১)
১. যাদুঃ
যাদু দ্বারা যেই
কাজগুলো খুব বেশি করা হয় তার মধ্যে রয়েছে,
ক. দুজন দুজনের
মাঝে প্রেম-ভালোবাসা সৃষ্টি করা
অনেক বোকা নারী ও
পুরুষ নিজের স্বামী অথবা স্ত্রীকে বশে রাখার জন্যে, বেশি করে ভালোবাসা
পাওয়ার জন্যে তাবীজ করে, এটা এক প্রকার যাদু। আর অনেক ফাসেক
(পাপীষ্ঠ) নারী অথবা পুরুষ মনের মানুষ বা অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা বা পরকীয়ায় লিপ্ত
নারী বা পুরুষকে পাওয়ার জন্যে তাবীজ করে থাকে।
খ. দুজন দুজনের
মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করা
অনেক সময় কোন সংসার
বা পরিবার ভাংগার জন্য স্বামী-অথবা স্ত্রীর মাঝে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করার
তাবীজ করা হয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি, অনেক বাবা-মা বা
শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে এই ঘৃণ্য কাজটা করে দুইটি জীবন নষ্ট করে থাকে।
২. জ্যোতিষী বা
ভবিষ্যত গণনাঃ
হাত দেখে, পাখি
দিয়ে লটারি করে, রাশিফল বা জন্মবার ও তারিখ গণনা করে,
বিভিন্ন তদবীর করে ভবিষ্যত জানার চেষ্টা করা, বা
কারো ভবিষ্যতের কল্যান বা অকল্যান সম্পর্কে অগ্রীম কিছু বলা - এই সবগুলো কাজ গণক,
জ্যোতিষী বা ভবিষ্যত গণনার করার অন্তর্ভুক্ত।
যাদু-টোনা করা বা
এর সাহায্য নেওয়া এবং জ্যোতিষী বা ভবিষ্যত গণনা করা এবং এইগুলো বিশ্বাস করা – এই দুইটি কাজ মানুষের ঈমান নষ্ট করে কাফের-মুর্তাদে
পরিণত করে দেয়। আর ‘যাদুকর’ এবং ‘জ্যোতিষী বা গণক’ – এই দুইশ্রেণীর
লোকই আল্লাহর সাথে শিরক করার কারণে তারা মুশরেক, এবং তারা অন্য লোকদেরকে কুফুরী
করিয়ে ঈমান নষ্ট করার কারণে তারা ‘ত্বাগুত’। একারণে দেশে ‘হুদুদ’ বা ইসলামী দন্ডবিধি চালু থাকলে শরিয়াহ অনুযায়ী যাদুকর এবং জ্যোতিষীকে হত্যা করা হবে।
দুঃখজনক হলেও
সত্যি, মুসলিম সমাজে একশ্রেণীর হুজুর-মাওলানা ‘আলেম’ নাম নিয়ে এই ধরণের কুফুরী কাজ করছে যা অনেক সরলমনা
মুসলিম জ্ঞানের অভাবে এই সমস্ত প্রতারকদের খপ্পড়ে পড়ে তাদের ঈমানকে নষ্ট করছে। জিন
দ্বারা তদবীর, মাদ্রাসার হুজুরের ঝাড়ফুঁক, পানি পড়া, বাটি চালান, ফালনামা, ইসলামী
বই-পুস্তকে অনেক কথা ও কাজ থাকে যেইগুলো আসলে ‘যাদুকর’ এবং
‘জ্যোতিষী বা গণক’ এর কাজ।
আমি এমন একটা উদাহরণ দেই। আমাদের দেশে ‘বেহেশতি
জেওর’, ‘মকসুদুল মুমিনিন’ ও ‘নিয়ামুল কুরান’ নামের এই ৩টা বই খুব বেশি পড়া হয়। বিশেষ করে মা-বোনেরা
যাদের সঠিক দ্বীন শেখার সুযোগ নেই, তারা এই সমস্ত বিদআ’তী আলেমদের
লেখা বইগুলো বেশি পড়ে থাকেন। এই ৩টি বইয়ের মাঝে অনেক তাবীজ ও আমলের কথা দেওয়া আছে।
এমনিতেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম
তাবীজকে শিরক বলেছেন। তারপরেঈ এই সমস্ত কিতাবগুলর মাঝে অনেক তাবিজ ও আমল আসলে যাদু
ও জ্যোতিষীর অন্তর্ভুক্ত এবং শিরক। ‘ভালোবাসার আমল’, বশীকরণের আমল’, ‘শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি করা আমল’, ‘জয়-পরাজয় আগেই জেনে নেওয়ার আমল’, এবং
বিভিন্ন দুর্বোধ সংখ্যা ও অক্ষর দিয়ে বানানো নকশা যা বোঝা যায়না, কোন জিনের নাম
দিয়ে বা আসহাবে কাহাফের কুকুরের নাম দিয়ে লেখা তাবীজ – এই সবগুলো
যাদুর অন্তর্ভুক্ত, যা আলেম নামের অনেক বিদাতী হুজুরেরা তাদের বই-পুস্তকে লিখে
সাধারণ মানুষদেরকে শিরক শিক্ষা দিচ্ছে। আলেম নামের এই সমস্ত জালেমরা এমনকি অনেক কুরানের পূর্বে এই ধরণের নকশার কুফুরী ঢুকিয়ে রেখেছে। আল্লাহ আমাদেরকে নিরাপদ রাখুন এবং এই সমস্ত ভন্ডদের সাথে সেই আচরণ করুন - যা তাদের জন্যে উপযুক্ত।