কোন আলেম, পীর বা দাওয়াতী সংগঠন কর্তৃক
‘আমীর’ নিযুক্ত করা ও তার কাছে বাইয়া’ত করার হুকুম কি?
ক. দাওয়াতী কাজে কোন সংগঠন কর্তৃক ‘আমীর’ নিযুক্ত করা যাবে?
খ. মুক্বীম অবস্থায় রাষ্ট্রীয় ক্ষমতাহীন
কোন সংগঠন এর ‘আমীর’ কাছে বাইয়া’ত করার হুকুম কি?
[এখানে আ’লিমদের মূল বক্তব্য
সংক্ষিপ্ত আকারে পেশ করা হলো। যারা এ সম্পর্কে হাদীস তার বিস্তারিত ব্যখ্যা জানতে চান
তারা ইসলামহাউজ-এ অনুবাদ করা একটা বইঃ “দল, সংগঠন, ইমারত ও
বায়‘আত সম্পর্কে বিশিষ্ট উলামায়ে কেরামের বক্তব্য দেখতে পারেন” দেখতে পারেন।]
http://islamhouse.com/bn/books/734580/
___________________________
১. সউদী আরবের সাবেক প্রধান মুফতী, ইমাম
আ’ব্দুল আ’যীয ইবনে বাজ রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “ইমারত বা নেতৃত্বের
যে কথাটি বলা হয়েছে, তা শুধুমাত্র মুসলিম সরকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; সৎকাজে যার অনুসরণ
করতে হবে, কিন্তু কোন অসৎকাজে নয়। কোনো দল কর্তৃক কাউকে ‘আমীর’ বানিয়ে তার অনুসরণ
করা মারাত্মক ভুল।”
___________________________
২. বিংশ শতাব্দীর মুহাদ্দিসদের ইমাম,
নাসির উদ্দিন আল-আলবানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “গোটা মুসলিম উম্মাহকে
পরিচালনার জন্য একক খলীফা তৈরী হওয়া পর্যন্ত মুসলিমদেরকে অপেক্ষা করতে হবে, এবং অপেক্ষার
এই সময়ে তাদের জন্য কোনক্রমেই ভিন্ন ভিন্ন দলের ভিন্ন ভিন্ন আমীর বা দলপ্রধান নির্ধারণ
ও তার হাতে বাইআ’ত করা বৈধ হবে না। কারণ এই বাইআ’ত মুসলিমদের বিভক্তি
ও দলাদলিকে আরো বৃদ্ধি করবে।”
___________________________
৩. প্রখ্যাত সাউদী আলেমে-দ্বীন ও ফকীহ,
আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “হাদীসে রাষ্ট্র প্রধানের
সাথে ঐক্যবদ্ধ হয়ে থাকতে বলা হয়েছে। নিঃসন্দেহে রাষ্ট্র প্রধানের সাথে মিলেমিশে থাকলে
গোটা জাতি একক জাতিতে পরিণত হতে পারবে। পক্ষান্তরে, জাতি যদি রাষ্ট্র প্রধানের সাথে
বিরোধ করে প্রত্যেকটি দল পৃথক পৃথক অনুসরণীয় নেতা বানিয়ে নেয়, তাহলে জাতি বিভক্ত হয়ে
যাবে। সুতরাং যারা একজনকে ‘আমীর’ বানিয়ে তার হাতে বাইআ’ত করে তার অনুসরণ করে
চলে, তাদের এই কাজটা মারাত্মক ভুল প্রমাণিত হয়। শুধু তাই নয়; বরং তাদের এই কাজ এক দিক
বিবেচনায় যেমন বিদআ’ত, তেমনি অন্যদিক বিবেচনায় তা সরকারের বিরোধিতার শামিল।
....আমি আবারও বলছি, মুক্বীম অবস্থায়
‘আমীর’ হিসাবে কারো বাইআ’ত গ্রহণ করে মুসলিম
রাষ্ট্রপ্রধানের মত তার অনুসরণ করা বিদ‘আত।”
___________________________
৪. সউদী আরবের উচ্চ উলামা পরিষদের সদস্য,
শায়খ বাকর আবু যায়েদ রাহিমাহুল্লাহ বাইআ’ত সম্পর্কে বলেন, “আহলুল হাল ওয়াল আক্বদ
কর্তৃক মনোনীত মুসলিম সরকারের বাইআ’ত ছাড়া ইসলামে দ্বিতীয়
অন্য কোনো বাইআ’ত নেই। আজ বিভিন্ন ধর্মভিত্তিক দলে যেসব বাইআ’ত দেখা যাচ্ছে, সেগুলোর
শরঈ’ কোনো ভিত্তি নেই। কুরআন ও হাদীসে এগুলির ভিত্তি থাকা তো দূরের কথা,
এমনকি কোনো সাহাবী বা তাবেঈ’র আমল থেকেও এর সপক্ষে কোনো প্রমাণ মিলে
না। সুতরাং, এগুলির সবই বিদআ’তী বায়‘আত, আর প্রত্যেকটি বিদআ’তই পথভ্রষ্টতা।
যেসব বাইআ’তের শরঈ’ কোনো ভিত্তি নেই, সেইগুলো
ভঙ্গ করলে কোনো দোষ নেই; বরং সেসব বাইআ’ত সম্পন্ন করলেই পাপ
হবে। কেননা এসব বাইআ’ত একদিকে যেমন শরঈ’ কোনো ভিত্তি নেই, অন্যদিকে
তেমনি সেগুলোর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে বিভক্তি ও দলাদলির সৃষ্টি হয় এবং তাদের
মধ্যে ফেৎনা-ফাসাদ ছড়িয়ে পড়ে। উপরন্তু, একজনকে আরেক জনের উপর ক্ষেপিয়ে তোলা হয়। অতএব,
বাইআ’ত, শপথ, চুক্তি বা অন্য যে নামই দেওয়া হোক না কেন - এসব বাইআ’ত শরী‘আতের গণ্ডির বাইরে।”
___________________________
৫. আল্লামাহ সালিহ আল-ফাওযান হা’ফিজাহুল্লাহ থেকে অনুরূপ
বক্তব্য রয়েছে, “সংগঠনের আমিরের কাছে বাইআ'ত করা বিদআ’ত।”
___________________________
৬. ইয়েমেনের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস, মুক্ববিল
ইবনে হাদী আল-ওয়াদিঈ' রাহিমাহুল্লাহকে প্রশ্ন করা হয়েছিলো, দাওয়াতের মহান উদ্দেশ্যে
মুক্বীম অবস্থায় কাউকে ‘আমীর’ বানানোর ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
উত্তরে তিনি বলেন, “মুক্বীম অবস্থায় মুসলিম
খলীফা বা তাঁর নিযুক্ত আমীর ও গভর্ণর ছাড়া অন্য কাউকে আমীর বানানো প্রমাণিত নয়। কিন্তু
বর্তমানে গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি নিয়ে খেলা শুরু হয়ে গেছে; ফলে তিন জনের একটি গ্রুপ
থাকলে তাদেরও একজন ‘আমীরুল মুমিনীন’ সেজে বসে থাকছে। নিঃসন্দেহে
এটি বিদআ’ত, যা মুসলিমদের ঐক্যকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে।”
___________________________
৭. আল্লামা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুর রহমান
আল-গুদাইয়ান রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “প্রত্যেকটি সংগঠন স্বতন্ত্রভাবে
কর্মপদ্ধতি ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করে এবং প্রত্যেকটি সংগঠনের একজন করে দলপ্রধান নিযুক্ত
হয়, আর দলপ্রধান তার কর্মীদের কাছ থেকে বায়‘আত গ্রহণ করেন। শুধু
তাই নয়, সংগঠনের কর্মীরা কেবলমাত্র নিজেদের মধ্যে আন্তরিক সম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।
এভাবে প্রত্যেকটি দল প্রতিপক্ষের সাথে শত্রুতা পোষণ করে চলে। এক্ষণে, এ দলাদলিকে আমরা
কি দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত বলব? কখনই না, এটি দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে না। কারণ,
দ্বীন একটি, হক একটি এবং আমরা একই নবীর উম্মত।”
___________________________
৮. শায়খ সালেহ ইবনে মুহাম্মাদ আল-লুহা’য়দান হা’ফিজাহুল্লাহ বলেন “সকল মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধভাবে
হাতে হাত মিলিয়ে এক দল হয়ে থাকতে হবে। কোনো মুসলিমের জন্য কোনো দল, জামাআ’ত বা সংগঠনে যোগ দেওয়া
শোভনীয় নয়। এটিই হচ্ছে আল্লাহ নির্দেশিত এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
প্রদর্শিত সরল সঠিক পথ। এ সোজা পথ ছেড়ে এখানে-সেখানে যোগ দেওয়ার অর্থই হলো নিজেকে এমন
পথে পরিচালিত করা, যার শেষ গন্তব্য ধ্বংস বৈ কিছুই নয়! সেজন্য যুব সমাজের প্রতি আমার
নসীহত হচ্ছেঃ তারা শরঈ’ জ্ঞান অর্জন করবে এবং কোনো কিছু বুঝতে সমস্যা হলে যোগ্য ও অভিজ্ঞ
উলামায়ে কেরামকে জিজ্ঞেস করবে।”
___________________________
৯. শায়খ মুহাম্মাদ আমান ইবনে আলী আল-জামী
রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “বর্তমানে বিভিন্ন সংগঠন ও দলে যোগদান সম্পর্কে বেশি বেশি প্রশ্ন
হতে দেখা যায়। অবশ্য আমাদের যুবসমাজ যখন এ সমস্ত সংগঠনগুলির পক্ষে বিপক্ষে অবস্থানের
ক্ষেত্রে গোলকধাঁধায় পড়বে, তখন তাদের এ বিষয়ে জানতে চাওয়ার অধিকার আছে। কারণ, এসব সংগঠন
ও দলাদলি নবাবিষ্কৃত এবং বিদ‘আত।
মূলতঃ বিভিন্ন জামাআ’ত নাথেকে একটিমাত্র জামাআ’ত থাকবে। সেজন্য আমাদের
সালাফে সালেহীনের সময়ে এতোসব জামাআ’ত ছিল না।”
___________________________
১০. শায়খ আহমাদ ইবনে ইয়াহ্ইয়া আন-নাজমী
রাহিমাহুল্লাহ মুক্বীম অবস্থায় আমীর মনোনয়ন করা প্রসঙ্গে বলেন, “হাদীসে যে ‘আমীর’ নিযুক্ত করার কথা বলা
হয়েছে, তা সফরের সাথে নির্দিষ্ট। মুক্বীম অবস্থায় রাষ্ট্রের মুসলিম শাসকই সবার জন্য
যথেষ্ট। অন্য কোনো আমীর নিযুক্ত করা বৈধ নয়। কারণ, সেক্ষেত্রে দ্বন্দ্ব ও ফাসাদ সৃষ্টি
হবে। অতএব, যে ব্যক্তি বলবেঃ মুসলিম শাসক ছাড়া মুক্বীম অবস্থায় অন্য কোনো আমীর নিযুক্ত
করা শরীআ’ত সম্মত, তাকে তার পক্ষে দলীল পেশ করতে হবে। আর একথা সত্য যে, সে
কস্মিনকালেও তার পক্ষের দলীল পাবে না।”
___________________________