সংবাদ মাধ্যম বা
মিডিয়াঃ “ইসলামের শত্রুদের হাতে শক্তিশালী একটি অস্ত্র”
- আনসারুস সুন্নাহ
__________________________
ইরান ভিত্তিক
রাফেজী শিয়াদের ইংরেজী টিভি চ্যানেল ‘প্রেসটিভি’ (PressTV) বিগত ২৪-শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ তারিখে একটা সংবাদ
প্রচার করেঃ
“Prince Salman
convoy triggered Hajj stampede.”
অর্থঃ সৌদি যুবরাজ
সালমানের গাড়িবহর হজ্জের দুর্ঘটনার জন্যে দায়ী।
এই মিথ্যা সংবাদটি
আজ পর্যন্ত প্রতারক শিয়ারা তাদের ওয়েব সাইটে বুক ফুলিয়ে প্রচার করছে। নিউজের লিংক –
http://www.presstv.ir/Detail/2015/09/24/430582/Saudi-stampede-hajj-prince-Salman
প্রেসটিভি তাদের
রিপোর্টের উৎস হিসেবে ‘আল-দিয়ার’ নামক
একটি আরবী সংবাদপত্রের নাম উল্লেখ করেছে। আল-দিয়ার হচ্ছে বর্তমানে শীয়াদের দখলে
থাকা লেবানন থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিক পত্রিকা, যারা ইসলামের
প্রকাশ্য দুশমন, সিরিয়ার আলাভী-শীয়া প্রেসিডেন্ট বাশার আল-‘খবিসের’ কট্টর
সমর্থক। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ‘সৌদি যুবরাজের গাড়ি
বহরের কারণে হজ্জের দুর্ঘটনা ঘটেছে’ - এই
সংবাদ আসলে ইসলামের দুশমন রাফেজী ও আলাভী শীয়াদের প্রচারিত একটি মিথ্যা
প্রোপাগান্ডা ছাড়া আর কিছুইনা, যার প্রমান ইন শা’ আল্লাহ
নিচে আমি আপনাদেরকে দেবো।
__________________________
রাফেজী শিয়া এবং
আলাভী শিয়ারা তাদের আবির্ভাবের পর থেকে আজ পর্যন্ত লক্ষ লক্ষ মুসলিমদেরকে হত্যা
করেছে,
এবং এখন পর্যন্ত তারা মধ্যপ্রাচ্যে হাজার হাজার মুসলিমদেরকে
নির্দয়ভাবে হত্যা করে যাচ্ছে। এই শিয়াদের মূল লক্ষ্য হচ্ছে মক্কা ও মদীনা দখল করে ‘লাব্বাইক
আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ এর পরিবর্তে ‘লাব্বাইক
ইয়া হুসাইন লাব্বাইক’ তালবিয়া ধ্বনি চালু করা। আল্লাহ এই সমস্ত
মুশরেকদের অনিষ্ট থেকে মুসলিমদেরকে নিরাপদ রাখুন।
যাই হোক, ইসলামের
শত্রুরা যাতে মিথ্যা সংবাদ দিয়ে মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করতে না পারে, সেই জন্য আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা কোন ‘ফাসেক’ (পাপাচারী)
মুসলিম ব্যক্তিও যদিও কোন সংবাদ দেয়, সেটা যাচাই-বাছাই করে
দেখতে আদেশ করেছেন। আল্লাহ সুবহা’নাহু তাআ’লা বলেন,
“হে
মুমিনগণ! যদি কোন ‘ফাসেক’ (পাপাচারী) ব্যক্তি
তোমাদের কাছে কোন সংবাদ নিসে আসে, তবে তোমরা সেটা পরীক্ষা
করে দেখবে, যাতে অজ্ঞতাবশতঃ তোমরা কোন জাতির ক্ষতিসাধন
করতে উদ্ধত না হও এবং পরে নিজেদের কৃতকর্মের জন্যে অনুতপ্ত না হও।” [সুরা
হুজুরাতঃ ৬]
ক্বুরানুল কারীমের
এই আয়াত অনুযায়ী আপনি যদি কোন মুত্তাক্বী (আল্লাহভীরু) মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে, কোন
নাস্তিক, কাফের, মুশরেক, ইয়াহুদী, খ্রীস্টান, মাজুসী
(অগ্নিপূজারী) তো পরের কথা, এমনকি একজন ‘ফাসিক্ব’ (পাপী
মুসলিম) ব্যক্তিও যদি আপনাকে কোন সংবাদ দেয়, সেটা
যাচাই-বাছাই না করে বিশ্বাস করা ‘হারাম’ বা
নিষিদ্ধ। অথচ, এমন লক্ষ-লক্ষ, কোটি-কোটি
মুসলিম আছে যারা শিয়াদের দ্বারা পরিকল্পিতভাবে প্রচারিত এই মিথ্যা সংবাদের উপর
ভিত্তি করে যুবরাজ সালমান ও সৌদি সরকারকে অন্যায়ভাবে দোষারোপ ও গালি দিচ্ছেন,
আল্লাহু মুস্তায়ান।
যাই হোক এবার
আপনাদের সামনে আমি শিয়াদের মিথ্যা প্রোপাগান্ডার ‘হাকীকাত’ তুলে
ধরছি বি ইজনিল্লাহি তাআ’লা।
__________________________
প্রথম কথা হচ্ছে, যুবরাজ
মুহাম্মাদ বিন সালমান বিন আব্দুল আজিজের যেই গাড়ি বহরের ভিডিও দেখানো হয়েছে
প্রেসটিভিতে, যার কারণে হজ্জের দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে মিথ্যুকরা
দাবী করেছে সেটা আসলে এই বছরের কোন ভিডিও নয়, সেটা ২০১২
সালের একটা ভিডিও দেখিয়ে শীয়ারা লোকদেরকে বোকা বানিয়েছে। অনুরূপভাবে তারা আরেকটি
ভিডিও দেখিয়ে দাবী করেছে, হাজীদেরকে সরিয়ে দিয়ে সৌদি বাদশাহ
একা কাবাঘর তাওয়াফ করছেন। আসলে সেই ভিডিও বাদশাহর তাওয়াফ করার কোন ভিডিও নয়,
বরং তখন হাজীদেরকে সরিয়ে দিয়ে কাবার গিলাফ পরিবর্তন করার ভিডিও।
এইভাবে শিয়ারা মিথ্যা কথা বলে সৌদি বিদ্বেষী প্রচারণার অপচেষ্টা করেছে।
__________________________
কিন্তু মূল প্রশ্ন
হচ্ছে,
হজ্জের দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুর কারণ কি? এই
প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন ‘পীসটিভি বাংলার’ বক্তা
আহমাদ উল্লাহ, যিনি নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং যার
বক্তব্য বাংলাদেশের একটি দৈনিক পত্রিকাতে প্রকাশিতও হয়েছে।
__________________________
(২) ঘটনাস্থল
অর্থাৎ ২০৪নং সড়কে কৃষ্ণবর্ণের দীর্ঘদেহী আফ্রিকান ও এরাবিয়ান হাজীদের সংখ্যা অনেক
বেশি ছিল। আর হজ্জ বা উমরায় আসা যেকোন লোকই জেনে থাকবেন নাইজেরিয়ান, কেনিয়ান
ও অন্যান্য দেশী কৃষ্ণাঙ্গ হাজীরা সাধারণত অনেক বেশি হুড়োহুড়ি করে চলতে অভ্যস্ত।
দুর্ঘটনাস্থলে তাদের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হওয়াটাও ভিড়ের ভয়াবহতা বৃদ্ধির অন্যতম
কারণ। আর মৃতদের মধ্যে তাদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়া থেকেও বুঝা যায় যে এই পথে
তাদের সংখ্যা অনেক বেশি ছিল।
(৩) এই পথে ইরানী
হাজীদের গ্রুপগুলোর আধিক্যও চোখে পড়ার মতো ছিল। আমার ধারণা, পুরো
পথে প্রায় শতকরা ৩০ জনই ছিলেন ইরানী হাজী! ইরানী হাজীদের একটি চরিত্র হলো, তারা কখনোই গ্রুপ বিহিন চলাফেরা করেন না। কোন ইরানীকে বিশেষ করে হজ্জ বা
উমরার কোন কাজ সম্ভবত কেউ একা করতে দেখেন নি। তাদের প্রতিটি গ্রুপকে ঘিরে থাকে
শক্তিশালী কিছু লোক। যারা অন্যদেরকে ঠেলাঠেলি করে হলেও নিজেদের গ্রুপকে বিচ্ছিন্ন
হতে দেয় না। ফলে স্বাভাবিক পথ চলা অনেক সময় রুদ্ধ হয়ে যায়। মিনা ট্রাজেডির ঘটনাস্থ
২০৪নং রোডেও তাদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি এবং যথারীতি গ্রুপ আকারে। এটিও অতিরিক্ত
ভিড় সৃষ্টির অন্যতম কারণ। তাছাড়া বেশ কিছু লোক ভয়াবহ এই ভিড়ের বিপরীত দিক থেকে
আসতে থাকে। যাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোক ছিল ইরানী শিয়া। তারা কোনরূপ নিয়ম-নীতির
তোয়াক্কা না করেই কংকর নিক্ষেপ শেষে ২০৪নং সড়ক দিয়ে বিপরীত দিক থেকে প্রবেশ করতে
থাকে। আল আরাবিয়া চ্যনেল একজন ইরানী কর্মকর্তার স্বীকারোক্তির বরাতে বিষয়টি
নিশ্চিত করেছে। এ প্রসঙ্গে প্রমাণ স্বরূপ তারা দৃর্ঘটনার সময়কার একটি ভিডিও ক্লিপও
প্রচার করেছে। একারণে অনেকের ধারণা, ইয়েমেনের ক্ষমতাদখলকারী
হুথী শিয়াদের বিরোদ্ধে সৌদি আরবের যুদ্ধের কারণে শিয়াগোষ্ঠি সৌদি সরকারকে বিপদে
ফেলার জন্যও ইচ্ছাকৃতভাবে এমন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে। মিশরের সাবেক
স্বাস্থমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও বর্তমানে সৌদিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ডাক্তার
আবদুল হামীদ ফাউজী মক্কা, মিনা আজিজিয়া ও জেদ্দার বিভিন্ন
হাসপাতলে দুর্ঘটনার স্বীকার মৃত ও চিকিৎসাধীন লোকদের উপর পরীক্ষা চালিয়ে নিশ্চিত
করেছেন যে, ঘটনাস্থলে বিষাক্ত গ্যাস প্রয়োগ করা হয়েছে। যার
কারণে আশ্চর্যজনক ভাবে বেশিরভাগ আহত লোকেরই মস্তিষ্ক অনেকটা বিকল হয়ে আছে! এই
তথ্যটি তিনি সৌদি বাদশার নিকটও পৌঁছে দিয়েছেন। সংবাদ বহুল প্রচারিত স্থানীয় অনলাইন
নিউজ পোর্টাল ‘আজেল’ এর।
মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে
মাথা গজিয়ে ওঠা ‘শিয়া ফেতনা’ ভয়াবহ
রূপ ধারণ করেছে। আর শিয়াদের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও উস্কানী দেওয়ার মাধ্যমে পশ্চিমা
ইয়াহুদী-খ্রীস্টান শক্তি ইসলামী শক্তিকে দুর্বল করে রাখতে চায়। সৌদি বাদশাহ সালমান
শুরু থেকেই শিয়াদের বিষয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। সঙ্গত কারণেই সৌদি নেতৃত্ব নতুন
এক চ্যলেঞ্জের মুখোমুখি। ভিতরে-বাহিরে বর্তমান নেতৃত্বকে কঠিন প্রতিপক্ষের
মোকাবিলা করতে হচ্ছে। এ সকল কারণে এমন সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দেওয়া যায় না যে,
খুবই সূক্ষ কোন পরিকল্পনার আলোকে একটি প্রতিকূল অবস্থা তৈরি করা
হচ্ছে। শোনা যাচ্ছে, বিষয়টি নিয়ে ইরান জাতিসংঘে তোলপাড়
সৃষ্টি করবে।
(৪) প্রচণ্ড ভিড় ও
চাপাচাপির মধ্যে আমরা চলতে থাকি। এরই মাঝে কিছু দুর্বল লোক পেছনের চাপ সামলাতে না
পেরে পড়ে যেতে লাগলেন। আর ভয়াবহ এই ভিড়ে দু’একজন পড়ে যাওয়ার
সাথে সাথেই তাদের আশপাশের লোকেরাও হুমড়ি খেয়ে তাদের উপরে পড়ে সেখানে পতিত মানুষের
স্তুপ সৃষ্টি হয়ে যেতো লাগলো। কারণ, পেছনের মহাসড়ক থেকে আসা
মানুষের স্রোতের চাপে কেউ পড়ে গেলেই পিছনের লোকেরা শরিরের ভারসাম্য ধরে রাখতে না
পেরে তারাও মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে লাগলেন পতিতি লোকদের উপর। পড়ে যাওয়া মানুষের কারণে
যখন আর সামনে এগুনো যাচ্ছিল না তখন আশপাশের মানুষ সর্বশক্তি দিয়েও দাঁড়িয়ে থাকতে
পারে নি। পেছনের চাপে তারাও একের পর এক পড়ে যেতে লাগলেন। এভাবে একজন পড়ে গেলে
মুহুর্তের মধ্যে তার উপর আরো বহু লোক পড়ে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হতে লাগলো। এদিকে
এমত পরিস্থিতে আশপাশের সকল তাবুর গেটগুলো ছিল বন্ধ। আমরা বহু চিৎকার করে গেট খুলে
পথের বৃদ্ধ ও নারীদের অন্তত ভেতরে প্রবেশের সুযোগ দিতে বললেও সম্ভবত হুড়োহুড়ি
সৃষ্টি হয়ে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরির ভয়ে তারা গেট খোলেনি কেউ। অপরদিকে কর্তব্যরত
নিরাপত্তা ও স্বাস্থকর্মিরা এখানে হতাহতের খবর পেয়ে উদ্ধারের জন্য বিপরীত দিক থেকে
একটি এ্যম্বুলেন্স প্রবেশ করানোর ব্যর্থ চেষ্টা শুরু করলেন। যার ফলে সামনের
লোকগুলোর বের হওয়ার পথও অনেকটা রুদ্ধ হয়ে গেলো। একদিকে সমুদ্রের স্রোত ছোট একটি
খালে প্রবাহিত করা হয়েছে, অপর দিকে খালের মুখেও এ্যম্বুলেন্স
প্রবেশের ফলে স্রোত বের হওয়ার সরু পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে। আর তখনই কয়েক মিনিটের
মধ্যে পেছন থেকে আসা মানুষের স্রোত থমকে যাওয়া লোকগুলোর উপর একের পর এক আছড়ে পড়তে
থাকে এবং অল্প সময়ের মধ্যেই রচিত হয়ে গেলো ইতিহাসের বিষাদময় ট্রাজেডিক উপাখ্যান।
যারা আশপাশের তাবুর গ্রীল বেয়ে উপরে উঠতে সক্ষম হয়েছেন তারাই কেবল বেঁচে ছিলেন।
__________________________
আপনারা স্বচক্ষে
দেখুনঃ
কিভাবে শিয়ারা
নিরাপত্তা বেষ্টনী ভংগ করে ভয়াবহ বিপর্যয় সৃষ্টি করে প্রায় ১৫০০ মুসলিম হত্যার
ঘটনার সূত্রপাত করেছিলো -
https://www.youtube.com/watch?v=gfzJ20fSFEQ
__________________________
সুতরাং প্রিয়
দ্বীনি ভাই ও বোনেরা টিভি ইন্টারনেটে কোন খবর পেলেই সেটা অন্ধের মতো বিশ্বাস করবেন
না। মনে রাখবেন ‘মিডিয়া’ সেটা দেশি প্রথম আলো,
ইন্ডিপেন্ডেন্ট, এটিএন বা চ্যানেল আই হোক,
কিংবা বিদেশী বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স হোক না কেনো, এদের নিয়ন্ত্রন ইসলামের
বন্ধুদের হাতে নয়, বরং ইসলামের শত্রুদের হাতে। এই মিডিয়া
দিয়ে সত্যবাদীকে মিথ্যাবাদী এবং মিথ্যাবাদীকেই সত্যবাদী বানানো হচ্ছে। মিডিয়ার
কারসাজি দিয়ে দিনকে রাতে এবং রাতকে দিন বানানো যায়। সেইজন্য আপনারা দ্বীন শিক্ষা
করুন, ক্বুরান ও সুন্নাহ শিক্ষা করুন, যাতে
করে আপনি কে সত্যবাদী কে মিথ্যাবাদী, কোনটা হক্ক আর কোনটা
বাতিল সেটা ধরতে পারেন। সর্বশেষ, দুয়া রইলো আল্লাহ তাআ’লা এই
বছরের সকল হাজীদের হজ্জ কবুল করে নিন, যারা হজ্বে দুর্ঘটনাজনিত
কারনে মারা গেছেন আল্লাহ তাদের প্রত্যেক কে জান্নাতুল ফিরদাউস দান করুক এবং
পাশাপাশি যারা যারা এই হজ্জের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছেন তাদের যেন আল্লাহ জাজায়ে
খায়ের দান করেন (আমিন)।
__________________________
[সমাপ্ত]