মুমিনদের একজন
আরেকজনের প্রতি আন্তরিকতা ও ভালোবাসার সম্পর্কের কথা বর্ণনা করতে গিয়ে রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“পারস্পরিক
ভালোবাসা এবং সহমর্মিতার ক্ষেত্রে মুসলমানদের উদাহরণ হচ্ছে একটি দেহের মতো। তার
একটি অঙ্গ যখন অসুস্থ হয়ে পড়ে তখন অন্য সকল অঙ্গও অসুস্থ হয়ে পড়ে।”
[মুসলিমঃ ৬৯৫৮, মুসনাদে
আহমদ]
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন,
“মুসলমানেরা
সকলে মিলে একটা দেহের মতো, যার চোখে ব্যথা হলে গোটা দেহের কষ্ট হয়,
মাথায় ব্যথা হলেও গোটা দেহটার কষ্ট হয়।”
[সহীহ মুসলিমঃ
২৫৮৬]
___________________________
সিরিয়াতে রাশিয়া
বিমান হামলা করে মুসলিমদেরকে হত্যা করছে। তারা কি চায়? তারা
নাকি সন্ত্রাসী আইসিস কে দমন করে মুসলিমদের শান্তি(!) এনে দিতে চায়। অথচ তারা
আইসিসের উপরে বোমা ফেলেনা, তারা বোমা ফেলে হাসপাতালে,
আইসিস এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার এই উভয় দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ
করছে এমন যোদ্ধাদের উপরে। বিগত কয়েক বছরে একটা জিনিস পরিষ্কার, আমেরিকা কিংবা রাশিয়া - এই দুইটি দেশের লক্ষ্য হচ্ছে আলাভী কাফের শিয়া,
বাশার আল-খবিসকে ক্ষমতায় ধরে রাখা। কারণ ইয়াহুদী অবৈধ রাষ্ট্র
ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্যে মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী এই দেশটিতে একজন
শিয়া প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় থাকা খুব জরুরী। কারণ শিয়া ইসলাম ও মুসলমানদের
জন্মশত্রু। সেইজন্যে আইসিস দমনের নামে আমেরিকা এবং রাশিয়া এই উভয় দেশের মূল লক্ষ্য
হচ্ছে বাশারের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত দলগুলোকে ধ্বংস করা। আর সেইজন্যে বাশারের পাশাপাশি
সন্ত্রাসবাদ দমন, শান্তি প্রতিষ্ঠার নামে নির্বিচারে বোমা
হামলা করে ইয়াহুদী-খ্রীস্টানরা মুসলিম হত্যা করার উৎসবে মেতে উঠেছে। আইসিস আসলে
ইসলামের দুশমন, খারেজীদের একটি দল। কাফেরদের অস্ত্র এবং
ফান্ডে চলা এই দলটির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে জিহাদকে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হিসেবে
বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরা। হে আল্লাহ তুমি তোমার শত্রু ইয়াহুদী, খ্রীস্টান, নাস্তিক, রাফেজী
শীয়া ও খারেজীদেরকে লাঞ্চিত ও পরাজিত করো, তাদেরকে তুমি
ধ্বংস করো যারা মুসলিমদের রক্তপাত করে।
___________________________
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“তোমাদের
পরে এমন একটা যুগ আসবে, যখন অজ্ঞতা ও মূর্খতার ব্যপক বিস্তার ঘটবে,
ইলম (দ্বীনি জ্ঞান) উঠিয়ে নেওয়া হবে এবং ‘হারজ’ বৃদ্ধি
পাবে।”
সাহাবীগণ জিজ্ঞেস
করলেন,
হে আল্লাহর রাসুল! হারজ কি?
তিনি বলেনঃ “হত্যা।”
সুনানে ইবনু মাজাহঃ
ফিতনা অধ্যায়; হাদিস নং-৪০৫১; হাদীসটি সহীহ শায়খ
আলবানী (রহঃ)।
___________________________
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“অচিরেই
(কাফের ও মুশরেক জাতির) লোকেরা তোমাদের (মুসলিমদেরকে) আক্রমন করার জন্যে একজন
আরেকজনকে ডাকাডাকি করবে, যেমনিভাবে খাওয়ার দস্তরখানের দিকে একজন
আরেকজনকে ডেকে থাকে।” (অর্থাৎ কাফেররা খুব
সহজেই আনন্দের সাথে দল বেঁধে মুসলিমদেরকে আক্রমন করবে।)
সাহাবারা
আশ্চার্যান্বিত হয়ে জিজ্ঞাসা করেন, “হে আল্লাহর রাসূল!
তখন কি আমাদের সংখ্যা কম হবে?”
উত্তরে রাসুল
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, “না। সেদিন
তোমাদের সংখ্যা কম হবে না, বরং তোমাদের সংখ্যা সেদিন অনেক বেশি হবে,
কিন্তু তোমরা বন্যার পানিতে ভাসমান খড়-কুটার মত মূল্য বা ওজনহীন
হবে। আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন তোমাদের
শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের প্রতি ভয়কে ছিনিয়ে নিবে। আর তোমাদের অন্তরে ‘ওয়াহান’ ঢেলে
দেবেন।”
সাহাবারা জিজ্ঞাস
করলেন,
“হে আল্লাহর রাসুল ওয়াহান জিনিসটি কি?”
উত্তরে রাসুল
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “দুনিয়ার
প্রতি অত্যধিক ভালোবাসা এবং মৃত্যুকে ঘৃণা করা।”
সুনানে আবু দাউদঃ
৪২৯৭,
মুসনাদে আহমদ; শায়খ আলবানী (রহঃ) হাদিসটিকে ‘সহীহ’ বলে
আখ্যায়িত করেন।
___________________________
রাসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেনঃ
“যখন তোমরা ‘ঈনা’ পদ্ধতিতে
কেনা-বেচা করবে (ব্যবসা নাম দিয়ে কৌশলে সুদ খাওয়ার একটা পদ্ধতি), গরুর লেজ আকড়ে থাকবে (অর্থাৎ পশু পালনে বেশি মনোযোগী হয়ে পড়বে), কৃষিকাজ নিয়েই সন্তুষ্ট থাকবে এবং জিহাদ পরিত্যাগ করবে তখন আল্লাহ তোমাদের
উপর অপমান চাপিয়ে দেবেন। যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা তোমাদের “দ্বীনে” প্রত্যাবর্তন
করবে ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের উপর থেকে সেই অপমান উঠিয়ে নেওয়া হবেনা।”
হাদীসটি সহীহ, সিলসিলাতুল
আহা’দীস আস-সহীহা’হঃ ১১।
___________________________
আজকে বাংলাদেশসহ
বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম দেশগুলোর দিকে লক্ষ্য করে দেখুন –
১. কোটি কোটি মানুষ
কবর মাযার পূজা, পীর পূজায় লিপ্ত। সূফীবাদের শিরক, বেদাত ও কুসংস্কারে ডুবে আছে গোটা সমাজের লোকেরা। এমন অনেক মুসলমান আছে
যাদের আকীদা আসলে কাফের মুশরেকদের মতোই। যেমনটা রাসুল (সাঃ) বলেছিলেন, আমার উম্মতের একটা অংশ মুশরেকদের সাথে মিশে যাবে, তারা
মূর্তি পূজা করবে।
২. দেশ চলে হয়
খ্রীস্টান আব্রাহাম লিংকনের গণতন্ত্র, নয়তো নাস্তিক কার্ল মার্ক্স,
লেলিন এর সমাজতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ সহ বিভিন্ন
ইসলামবিরোধী মানবরচিত মতবাদ, আইন ও সংবিধান দিয়ে।
৩. অধিকাংশ মানুষই
হচ্ছে বেনামাযী (বেনামাযী=কাফের)।
৪. রাস্তাঘাটে, প্রত্যেকে
মোড়ে মোড়ে সুদী ব্যংক বা এনজিওর ব্রাঞ্চ। (সুদখোর আল্লাহ ও তার রাসুলের সাথে
যুদ্ধে লিপ্ত)।
৫. রাস্তা-ঘাটে
প্রকাশ্যে খুন করছে অত্যাচারী, জালেম সম্প্রদায় কোন বিচার নেই, আইন আদালাত নেই।
৬. অধিকাংশ নামধারী
মুসলিম সমাজের নারীরা দেশি-বিদেশী নায়িকা, গায়িকাদের মতো পতিতা
শ্রেণীর নারীদের জীবনযাত্রা, চালচলন ও পোশাক আশাকের অন্ধ
অনুকরণ করে নিজেরা বেপর্দা ও অর্ধনগ্ন হয়ে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি করছে।
৭. স্কুল কলেজ, অফিস
রাস্তা-ঘাটসহ পুরো সমাজ ব্যবস্থায় জিনা ব্যভিচার, পরকীয়া,
অশ্লীলতার ব্যপকতা।
___________________________
যতদিন পর্যন্ত না
মুসলিমরা নিজেদের সংশোধন করে নিজেদের জীবনে দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করবে, ততদিন
পর্যন্ত তাদের সমস্যার সমাধান হবে না। আবার একশ্রেণীর মানুষ যেটা মনে করে, দ্বীন প্রতিষ্ঠ মানে শুধু রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামী আইন চালু করা...না,
কুরান হাদীসে শুধু খলিফা, সুলতান, প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রীকে সংশোধন করলেই সমস্যার
সমাধান হয়ে যাবে বলা হয়নি, বরং বলা হয়েছে – জাতির
পরিবর্তন, মুসলিম জাতিকে দ্বীনে ফিরে আসা।
___________________________
আয়াতটা মনোযোগ দিয়ে
একবার পড়ুন,
“নিশ্চয়ই
আল্লাহ তাআ’লা কোন জাতির অবস্থার পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ
পর্যন্ত না তারা নিজেরা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন না করে।”
সুরা রদ্দঃ ১১।
___________________________