নারী শিক্ষার আসর (পর্ব-১)
- আনসারুস সুন্নাহ
__________________________
একবার মহিলা সাহাবীরা এসে নবী সাল্লাল্লাহু
আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম কে বললেন, পুরুষ সাহাবীরা সবসময় আপনার
সাথে থাকে, সেইজন্যে তারা বেশি বেশি দ্বীন শিখতে পারছে,
(কিন্তু আমরা সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছি)। সুতরাং, আপনি আমাদের জন্য একটা বিশেষ দিন নির্ধারণ করে দিন, যেদিন
শুধুমাত্র আমাদের নারীদেরকে আলাদা করে শিক্ষা দিবেন। প্রিয়নবী বললেন, আচ্ছা ঠিক আছে তোমরা অমুক দিন অমুকের ঘরে সবাই একত্রতি হবে। সুতরাং,
নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের জন্যে আলাদা একটা
দিন নির্ধারণ করে দিলেন,
যেইদিন শুধু নারীরা আসবে এবং তিনি তাদেরকে সেইদিন দ্বীনের বিভিন্ন
বিষয় শিক্ষা দিতেন।
সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১০১; সহীহ মুসলিমঃ ৪৫; ফাতহুল বারীঃ ১/১৯৫।
বর্তমান যুগের অধিকাংশ নারী ও পুরুষেরা, বিশেষ করে সেকুলার শিক্ষা
ব্যবস্থার কলেজ ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া তরুণ-তরুণীরা দ্বীন শেখার ব্যপারে মারাত্মক
রকমের পিছিয়ে আছে। দ্বীন শিক্ষার ব্যপারে তাদের ত্রুটি এতো প্রকট যে, সর্বগ্রাসী এই ফিতনার যুগে তাদের কতজন ‘ঈমান ইসলাম’ ধরে রাখতে পারছেন, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন। আর যারাও ইসলাম চর্চা করছেন, তাদের
অনেকেই তাওহীদ-শিরক, সুন্নত-বিদআত, ফরজ-ওয়াজিবের
মতো অত্যাবশ্যকীয় জ্ঞান থেকে বঞ্চিত। যাই হোক, প্রথমোক্ত
হাদীসের আলোকে আজকে এই পোস্টে শুধুমাত্র নারী সংক্রান্ত কিছু মাসয়ালা-মাসয়েল তুলে
ধরা হোলো।
__________________________
১. একজন পুরুষের যেমন নিজের পছন্দ অনুযায়ী
জীবন সংগীনি বেছে নেওয়ার অধিকার আছে,
ঠিক তেমনি একজন নারীর অধিকার রয়েছে পছন্দ অনুযায়ী নিজের জীবন সংগী
বেছে নেওয়ার। সেইজন্যে পিতা-মাতা জন্যে এটা জরুরী যে, কন্যাকে
বিয়ে দেওয়ার পূর্বে পাত্রের ব্যপারে কন্য রাজী আছে কিনা সেটা অবশ্যই জিজ্ঞেস করে
জেনে নেওয়া। এবং পাত্রীর অমতে তাকে জোর করে বিয়ে না দেওয়া।
এ ব্যপারে আধুনিক যুগের প্রখ্যাত মুফাসসির ও
আলেমে দ্বীন, ইমাম
আব্দুর রহমান নাসির ইবন আস-সা’দী
রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
“মেয়ের বাবা-মা কোন ছেলেকে বিয়ে করার জন্যে
মেয়ের প্রতি জোর করতে পারবে না,
এমনকি যদিওবা তারা (ঐ মেয়ের বাবা-মা) ছেলের দ্বীনদ্বারীর ব্যপারে
সন্তুষ্ট হয়ে থাকুন।”
আল-মাজমু’য়াহ আস-সা’দীয়াহঃ ৭/৩৪৯।
তবে, নারীদের জন্যে কখনোই উচিৎ
হবেনা এই হুকুমকে নিজের গোপন প্রেমিকের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্যে ঢাল হিসেবে ব্যবহার
করা। অনেক সময় নারীরা অযোগ্য, ফালতু ছেলের সাথে অবৈধ প্রেমের
সম্পর্কে জড়িয়ে তার সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্যে গার্জিয়ানের সাথে পীড়াপীড়ি শুরু করে।
এই সমস্ত নারীদের আল্লাহকে ভয় করা উচিৎ, এবং পিতা-মাতাকে
সম্মান করা উচিৎ। পিতা-মাতাকে কষ্ট দিয়ে কে কবে সুখী হতে পেরেছে?
__________________________
২. জেনেই হোক বা না জেনে, অনেক নারীকে অত্যাচারী,
বেদ্বীন কিংবা লম্পট লোকদের সাথে বিয়ে দেওয়া হয়। বিয়ের পরে এমন
বদমাশ লোকদের কুৎসিত চেহারা প্রকাশ হওয়ার পরেও অনেক বাবা-মা মেয়েকে মুখ বুজে
স্বামীর অত্যাচার-নির্যাতন, লাম্পট্য সহ্য করতে বলে, এবং সামাজিক মান-মর্যাদার কথা চিন্তা করে স্বামী থেকে তালাক নিতে বা আলাদা
হতে বাঁধা দেয়। এইভাবে অনেক নারী স্বামীর হাতে নির্মমভাবে খুন হয়, ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, বা সহ্যের সীমা
অতিক্রম করলে আত্মহত্যা করে বসে কিংবা একসময় নিজেই খারাপ পথে পা বাড়ায়। এমন
বাবা-মায়ের আল্লাহকে ভয় করা উচিৎ এবং সমাজের বোকা লোকদের মান-সম্মানের থেকে নিজের
কন্যাকে বেশি ভালোবাসা উচিৎ। ইসলামে তালাক্ব নেওয়া বা খুলা করাকে উৎসাহিত করা হয়নি,
কিন্তু মনে রাখা উচিৎ প্রয়োজনে জায়েজ। বাবা-মায়ের উচিৎ স্ত্রীর হক্ক
আদায় করেনা এমন অত্যাচারী, লম্পট, বদমাশ
লোকদের হাত থেকে কন্যাকে রক্ষা করা এবং ভালো দ্বীনদার ছেলের সাথে বিয়ের ব্যবস্থা
করা।
__________________________
৩. নারীদের জীবনে বড় একটা দুঃখ হচ্ছে
প্রাণপ্রিয় সন্তানের মৃত্যু,
সেটা সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার পূর্বে হোক, কিংবা
পরে। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বড় একটা পরীক্ষা। এজন্যে আজকে আমি প্রথমে যেই
হাদীসটা উল্লেখ করেছিলাম, নবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম নারীদের জন্যে আলাদা একটা
দিন নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন,
সেইদিন তিনি তাদের যা যা বলেছিলেন, তার মধ্যে
একথাও ছিল যে, “তোমাদের
মধ্যে যে স্ত্রীলোক তিনটি সন্তান পূর্বেই পাঠাবে (অর্থাৎ, যাদের জীবিত অবস্থায় তাদের
তিনটি সন্তান মারা যাবে), সেই সন্তানগুলো (কেয়ামতের দিন) তার
জন্য জাহান্নামে যাওয়ার জন্যে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। তখন জনৈক স্ত্রীলোক বলল, আর কারো যদি দুটি সন্তান মারা যায়? নবীজী বললেন,
দুটি দুটি সন্তান মারা গেলেও।”
সুতরাং, মা-বোনদের কারো সন্তান মারা
গেলে ধৈর্য ধরতে হবে এবং এর বিনিময়ে আল্লাহ তাআ’লার কাছে সওয়াবের আশা রাখতে হবে।
__________________________
***আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লেখার ইচ্ছা
ছিলো, পোস্ট
দীর্ঘ হয়ে যাওয়ার কারণে আজকের মতো এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ আমাদের সকলকে সফলতা দান
করুন, আমিন।