বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪

জিহাদ, কিতাল ও খিলাফাহ ( পর্ব – ১ )

জিহাদ, কিতাল ও খিলাফাহ ( পর্ব ১ )

জিহাদ, কিতাল ও খিলাফা শব্দগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ শব্দ। এছাড়া আরও শতাধিক এমন শব্দ রয়েছে যার সঠিক অর্থ মুসলমানের মস্তিষ্কে স্থান না পেলে ইসলামের প্রকৃত চিত্র বিকৃত হতে বাধ্য। দ্বীনের কল্যাণ সাধনের স্থলে অকল্যাণই সাধিত হবে, তাতে সন্দেহ কারার কোন অবকাশ নেই। ঐ সব গুরুত্বপূর্ণ শব্দের সঠিক অর্থ যারা তুলে ধরবেন তাঁরা হলেন প্রকৃত যোগ্যতা সম্পন্ন নিরপেক্ষ আলেম-উলামা। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, প্রকৃত ও নিরপেক্ষ এমন আলেমের অভাব এখন প্রকট আকার ধারণ করেছে। যারা রয়েছেন তাদেরকে ফেরকাবাজ, হিজবীরা দরবারী, পাচাটা দালাল, নাস্তিক ইত্যাদি ট্যাগ লাগিয়ে উপেক্ষা করেছে। এমন অবস্থা যতদিন বিরাজ করবে, আলেমদের স্বল্পতা যতদিন অপূরণীয় থাকবে, ইসলামের দৈন্যদশা ততদিন বাড়তেই থাকবে। এমনটি মোটেও গ্রহণযোগ্য হতে পারেনা। কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে, প্রকৃত আলেমগন পরপারে যাচ্ছেন আর তাদের স্থান পূরণের জন্যে লোক তৈরি হতে পারছেনা। আগামীতে হওয়ার সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছেনা। এক দিক থেকে আলেম তৈরির কারখানা বন্ধ করার সকল চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। অপর দিক থেকে চালু গুলোর মেরুদণ্ড ভেঙ্গে চুরমার করার প্রচেষ্টা অব্যাহতভাবে চলছে। দলীয় ভাবে যেসব চলছে তা দলের খেদমতেই আত্মনিয়োগ করছে। সঠিক প্রডাকশন বের হয়ে আসার সম্ভাবনা আর দেখা যাচ্ছেনা।

কেন এমন হচ্ছে?
এর প্রতিকার কি; এসব নিয়ে ভাববার সময় মুসলমানদের আছে বলে মনে হয়না। কারণ তারা ব্যস্ত, খুবই ব্যস্ত। স্কুল-কলেজ। ব্যবসা, চাকুরী, সংসার ও সমাজ তাদেরকে অক্টোপাসের ন্যায় জড়িয়ে ফেলেছে! আসলে যতটা না ব্যস্ত তার চেয়ে বেশী তারা শয়তানের ধোঁকার শিকার!

#সে_কু_লার ও তাদের সহযোগীরা অতীত কাল থেকেই মনে করতেন ইসলাম শিক্ষার প্রতিষ্ঠান গুলো অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখেনা। হাল জামানায় আরও যোগ হয়েছে আরেকটি জোরালো অভিযোগ তাহলো, দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাকি চরমপন্থীদের জন্ম দান করে থাকে! বর্তমান মিডিয়ার বরকতে ঐ সব অভিযোগ আরেক মাত্রা অগ্রসর হয়ে পুরা ইসলামকেই চরম পন্থা (টেররিজম) এর ট্যাগ লাগিয়ে দিয়েছে। ফলে দুনিয়ার সকল শক্তি এক হয়ে উঠে পড়ে লেগেছে যাতে টেররিজম থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। পরিণতিতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ইসলাম ও মুসলমান একসাথে। এ থেকে অব্যাহতি পাওয়ার নিমিত্তে আমাদের কি কিছুই করার নেই?

জিহাদ এক মহান কাজ। ইসলামের উচ্চতম স্থানের উচ্চে এর অবস্থান। এ জিহাদ কে কি কলুষমুক্ত করার উপায় নেই? ইসলাম এক মহা যুগান্তকারী অনুপম আদর্শের নাম। এ আদর্শের ঝাণ্ডা কাঁধে বহন করা কি আমাদের দায়িত্ব নয়?

قال -النبي صلى الله عليه وسلم-: «وَذِرْوَةُ سَنَامِهِ الجِهَادُ الترمذي/ رقم 2616

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ এবং ইসলামের চূড়ার উপরে জিহাদের স্থান।
সুনানে আত-তিরমিযিঃ ২৬১৬।

এমন সুমহান কাজ কি মূর্খ, জাহেল, আবেগ বা প্রবৃত্তির অনুসারী, ক্ষমতালোভী, সুনাম তালাশকারী, ইসলামের দুশমনদের হাতিয়ার, এমন এক দল লোকের হাতে ছেড়ে দিয়ে মুসলমান নীরবে তামাশা দেখতে পারে? এ তামাশা যতই চলতে থাকবে ততই হিতে বিপরীত হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।

জিহাদঃ
وَجَاهِدُوا فِي اللَّهِ حَقَّ جِهَادِهِ ۚ هُوَ اجْتَبَاكُمْ وَمَا جَعَلَ عَلَيْكُمْ فِي الدِّينِ مِنْ حَرَجٍ- الحج/78
আল্লাহ বললেন, তোমরা আল্লাহর রাস্তায় (যা করলে তিনি সন্তুষ্ট হন) জিহাদ করো করার মত করে। (ভুলে যেওনা যে), এই দ্বীনের মধ্যে কোনই কাঠিন্য রাখা হয় নাই। এটা তোমাদের ধর্মীয়গুরু ইব্রাহীম আঃ এর দ্বীন।
সুরা হাজ্জঃ ৭৮।

সুরা মুমতাহানাতে তাঁর ধর্মের স্বরূপ তুলে ধরা হয়েছে ৪-১০নং আয়াতের মধ্যে দিয়ে। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সেই দ্বীনের অনুকরণ করতে বলা হয়েছে এই বলে যে,

ثُمَّ أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ أَنِ اتَّبِعْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا- النحل/123

অতঃপর তোমাকে ওহীর মাধ্যমে বলে দিয়েছি যে, তুমি ইব্রাহীমের দ্বীনকে একনিষ্ঠভাবে অনুসরণ করবে।
সুরা নাহলঃ ১২৩।

মিল্লাতে ইব্রাহীম এর আলোকে জিহাদের স্বরূপ কি তা আমাদের জেনে নেওয়া আবশ্যক।

আরবি ভাষার অভিধানে জিহাদের শাব্দিক অর্থ হলঃ
بذل الجهد والوسع والطاقة
- মানে সকল প্রকার শক্তি ও সামর্থ্য ব্যয় করা ও তার জন্য কষ্ট স্বীকার করার নাম হচ্ছে জিহাদ।

ইসলামের পরিভাষায় জিহাদের অর্থ হলঃ
ما يشمل الدين كله؛ وحينئذ تتسع مساحته فتشمل الحياة كلها بسائر مجالاتها ولهذا يسمى حينئذ : الجهاد الأكبر. وله معنى خاص هو القتال لإعلاء كلمة الله وهذا يشغل مساحة أصغر من الأولى ولهذا سُمِّىَ الجهاد الأصغر.
- জিহাদ তার নাম যা ইসলামের সকল প্রকার কল্যাণ সাধন করে।

এই জিহাদ দুই প্রকারঃ
. জিহাদ আকবার বা বড় জিহাদ
. জিহাদ আসগার বা ছোট জিহাদ।

জিহাদের যে একটি বিশেষ অর্থ রয়েছে তা হল, আল্লাহর তাওহীদের কালেমাকে বিজয়ী করার জন্যে সংগ্রাম করা। তবে এই জেহাদের ক্ষেত্র ও সীমা অত্যন্ত সঙ্কীর্ণ। এজন্যেই এটাকে জিহাদ আসগার বা ছোট জিহাদ বলা হয়।
ডঃ আব্দুল আজিজ আল-ক্কারীঃ
http://ar.wikipedia.org/wiki/جهاد


ডঃ আল-ক্কারী আরও বলেনঃ
فإن الجهاد بمعناه العام يشمل حياة الفرد والمجتمع كلها بجوانبها المختلفة الفكرية والاجتماعية والسياسية والاقتصادية
বিস্তারিত অর্থে জিহাদের অর্থ মানুষের জীবনের সকল দিকের উন্নয়ন সাধন করা। ব্যক্তি ও সমাজের চিন্তা-চেতনা, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধন করা। এমন অর্থ বুঝায় বলেই এটির নাম জিহাদ আকবার বা বড় জিহাদ। এই জিহাদে সন্দেহের বীজ বপনকারীদের মোকাবেলা করা হয়, #ইলম ও #সহীহ_আকীদা ও #ঈমান বিস্তারের মাধ্যমে। দুশ্চরিত্রের বীজ বপনকারীদের মোকাবেলা করা হয় সুচরিত্রের শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে। ওয়াজ, নসীহাত ও উপদেশ দানের মাধ্যমে। কোরআনহাদিস থেকে এমনটিই পরিষ্কার বুঝতে পারা যায়।

আমরা দেখি আল্লাহ যখন বললেনঃ
فَلَا تُطِعِ الْكَافِرِينَ وَجَاهِدْهُمْ بِهِ جِهَادًا كَبِيرًا- الفرقان/52
(হে নবী!) আপনি কাফেরদের কথা শুনবে না। বরং, এই কিতাবের শিক্ষা প্রচারের মাধ্যমে বড় জিহাদ করুন।
সুরা ফুরকানঃ ৫২।

ইবনু আব্বাস রাঃ বলেছেন, আল্লাহ এই আয়াতের মাধ্যমে আমাদেরকে কোরআনের শিক্ষা বিস্তার করতে বলেছেন। এ জন্যেই বুঝা যায় যে, বড় জিহাদের অর্থ হল আল-ক্বুরআনের শিক্ষা প্রচার করা।

জিহাদ নিয়ে অনেক এলোপাতারি কথাবার্তা ও বক্তব্য দেখে সত্যিই ঘাবড়ে যেতে হয়। সবচেয়ে বেশী দুঃখজনক বলে মনে হয় তখন, যখন একজন ২০-২২ বছরের যুবককে দেখি জেহাদের ব্যাখ্যা দিতে। যার জ্ঞানের পরিধি খুবই সীমিত। ভাষাগত যোগ্যতা শূন্যের কোঠায়। উসুল, তাওহীদ ও উলুহিয়াতের জ্ঞানে যে সমৃদ্ধ নয়। আরবি ভাষার অতল সাগরে যে হাবুডুবু খায় নাই। ইসলামের বড় বড় জ্ঞান তাপসদের বিদ্যাপীঠে সে পা রাখেনি। অথচ সে এবং তার মত অনেককেই জিহাদের মত স্পর্শকাতর ও সাঙ্ঘাতিক বিষয়ে অন্যদেরকে শিক্ষা দিচ্ছে।
চলবে (ইন শা আল্লাহ).......


Collected from শায়খ মুজাম্মেল আল-হাক্ক।