বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

নারীরা বাইরে বের হলে সুগন্ধি ব্যবহার করা নিষেধ কেনো?

প্রশ্নঃ নারীরা বাইরে বের হলে সুগন্ধি ব্যবহার করা নিষেধ কেনো, যেখানে পুরুষদের জন্য সেটা সুন্নত?

উত্তরঃ প্রথম কথা হলো, ইসলাম + কুরান + হাদীস = এই সবগুলোর উৎস হলো আল্লাহ সুবহানাহু তাআআলা। তিনি সবচাইতে জ্ঞানী, তিনি আগে-পরে, প্রকাশ্য-গোপন সবকিছুই জানেন। তাঁর জ্ঞান অনুযায়ী মানব জাতির জন্য যেটা সর্বোত্তম, সেই বিধান তিনি ইসলাম হিসেবে আমাদের জীবন ব্যবস্থা হিসেবে মনোনীত করেছেন। সেইজন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ) এর প্রতি বিশ্বাসী হিসেবে আমাদের কখনোই ইসলামের কোনো বিধান নিয়ে সন্দেহ করা উচিত না। হতে পারে আমি কোনো একটা জিনিস বুঝিনা, বা মানা আমার জন্য একটু কঠিন (অন্যদের জন্য সেটা নাও হতে পারে, আর আল্লাহ সবার কথাই বিবেচনা করেন) তাই বলে সেটাকে খারাপ চোখে দেখা, সেটা অপছন্দ করা বা সেটা নিয়ে প্রশ্ন তোলা এই সবগুলো ঈমান বিরোধী কাজ।

এই অবস্থায় আমাদের উচিত আল্লাহর কাছে দুয়া করা, হে আল্লাহ আমার জন্য এই কাজটা সহজ করে দাও, আমার ঈমান মজবুত করে দাও, আমিন।

একটা জিনিসের উদ্দেশ্য, কারণ বা হেকমত জানা থাকলে ভালো, সেটা করার প্রতি আরো বেশী আগ্রহ আসে। যেমন ধরুন, পুরুষের জন্য খাতনা করা। বর্তমান মেডিকেল সাইন্স থেকে আমরা জানি এটা করলে অনেক উপকার আছে। এর মাধ্যমে অনেক রোগ থেকে বাঁচা যায় যা হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের প্রায়ই ভুগতে হয়। যেমন - খাতনা বিহীন পুরুষদের প্রস্রাবজনিত ইনফেকশান বেশি হয়, তাঁদের স্ত্রীরা জরায়ুর ক্যান্সারে বেশি আক্রান্ত হয়, এইডসের জীবাণু এইচআইভি ও অন্যান্য যৌনবাহিত রোগের সংক্রমন বেশি হয় ইত্যাদি। কিন্তু এই উপকারগুলো আমরা জানি বা না জানি আমাদের নবীদের সুন্নত হিসেবে শুধুমাত্র বিশ্বাসের কারণে করে যাচ্ছি। তবে হ্যা, এখন এই কারণগুলো জেনে আমাদের অন্তরে একটু শান্তি লাগে - ইসলাম সত্যি ধর্ম এটা অন্তরে আরো দৃঢ় হয়। কিন্তু এমন অনেক বিষয় আছে, এইগুলো আসলে কেউ জানেনা এক আল্লাহ সুবাহানাহু তাআলা ছাড়া। যেমন ধরুন, গরুর গোশত খেলে ওযু ভাংগে না কিন্তু উটের গোশত খেলে ওযু ভেঙ্গে যায়।

জাবের বিন সামুরা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল, আমরা কি ছাগলের গোশত খেয়ে ওযু করব? তিনি বললেন, যদি ইচ্ছা হয় তাহলেকরতে পার (না করলেও চলবে)।
বলা হল, আমরা উটের গোশত খেয়ে কি ওযু করব?
তিনি বললেন,হ্যাঁ

এর কারণ কি, কেউ জানেনা। হয়তোবা ভবিষ্যতে জানা যাবে, হয়তোবা কেয়ামত পর্যন্ত অজানাই থেকে যাবে। কিন্তু আমরা জানি বা জানি, এটা ইসলামের বিধান হিসেবে কেয়ামত পর্যন্ত করে যাবো ইন শা আল্লাহ। কারণ আমাদের শরীয়তের উৎস হচ্ছে কুরান ও সুন্নাহ। কুরানে এইরকম বলা হয়েছে, সহীহ হাদীসে এইরকম এসেছে - ব্যস, আমাদের জন্য এতোটুকুই যথেষ্ঠ। সেটা আমাদের বুঝে আসুক বা না আসুল।

যে প্রসংগে এই কথা বলাঃ ইসলামের বিধান হলো, পুরুষেরা নারীদের জন্য উপার্জন করবে। নারীদের জন্য ফরয করা হয় নাই - ব্যবসা বাণিজ্য করে সংসার চালানোর জন্য। তাদের উপর মূল যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সেটা হলো স্বামীর সংসার দেখাশোনা করা, ছেলে মেয়েদের লালন পালন করা ও শিক্ষা দেওয়া। এইগুলো করে কেউ যদি প্রয়োজন থাকা সাপেক্ষে, হালাল-হারাম মেনে চলে ও পর্দা রক্ষা করে কাজ করেন আর তাঁর স্বামীর আপত্তি না থাকে, তাহলে তার জন্য সেটা জায়েজ, কিন্তু কোনোমতেই পুরুষের জন্য যেমন ফরয, সেইরকম কিছুনা।

যাইহোক, ইসলামের এই বিধান মানলে এখন যেমন সব নারী বাড়ীর বাইরে, যার কারণে মুসলিম পরিবারগুলোতে ভাঙ্গনের সুর, সমাজে বেপর্দা-বেহায়াপনা, অশ্লীলতা, জিনা-ব্যভিচার ও পরকীয়ার এতো ব্যপকতা, সেটা থাকতোনা। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া + বেপর্দা তাদের বের হওয়া বড় ফেতনা। এইভাবে অনেক নারী নিজেরাও বিপদগামী হচ্ছেন, অন্যদেরকে বিপদগামী হওয়ার কারণ হচ্ছেন।

আরেকটা বিষয় হলো, নারীদের থেকে পুরুষের কামনা বাসনা অনেক বেশী। একটা নারীর দ্বারা একটা পুরুষ যতবেশি ফেতনার শিকার হয়, একজন নারী ততটা হয়না একজন পুরুষকে দিয়ে। আল্লাহ নারী ও পুরুষকে সৃষ্টি করেছেন এই ফিতরাতের উপরে। একজন নারী সুগন্ধি মেখে বের হলে পুরুষেরা যত বেশি আকর্ষিত হবে, একজন পুরুষ সুগন্ধি মেখে বের হলে নারীরা ততবেশি হবেনা।

আর একটা ব্যাপার। একজন পুরুষের যখন বের হন তার কিন্তু সাধারণত নারীর সাথে সাক্ষাত হওয়ার কথা না। কারণ তিনি যাদের সাথে কাজ করবেন তাদের সবাই হবে পুরুষ। কিন্তু একজন নারী যদি বাইরে বের হন, বেশিরভাগ সম্ভাবনা তাকে পুরুষদের সাথে সাক্ষাত করার। তিনি যেই দোকানে যাবেন, ড্রাইভাব, অফিস সব জায়গাতেই কিন্তু পুরুষ।

তবে আমাদের অজ্ঞ, মূর্খ সমাজের বর্তমান প্রেক্ষাপট হয়তো ভিন্ন। কিন্তু, মুমিন মুসলমান হিসেবে আমাদের উচিত, কে কি করছে সেইদিকে লক্ষ্য না করে - আল্লাহ আমাকে কি করতে বলেছেন সেইদিকে লক্ষ্য করা। অধিকাংশ মানুষ নামাযই পড়েনা, নিজের কুপ্রবৃত্তি ও কামনা বাসনা দিয়ে চলে। এদের সাথে তাল মিলিয়ে করে চলতে গেলে, পরিণাম জাহান্নাম ছাড়া আর কিছুইনা - এইকথা কুরান ও হাদীসে অসংখ্যবার বলা হয়েছে।


সর্বশেষে, এই ব্যপারে আল্লাহই সবচাইতে ভালো জানেন!