প্রশ্নঃ আনোয়ার
আল-আওলাকির লেকচার শোনা যাবে?
উত্তরঃ সম্পূর্ণ
লেখা না পড়ে কমেন্ট করা নিষিদ্ধ।
ইসলাম সম্পর্কে
জানার জন্য, কারো কাছ থেকে ইলম নেওয়ার পূর্বে (অর্থাৎ কারো বক্তব্য শোনা বা বই
পড়ার) পূর্বে দেখতে হবে সে কোন আলেমের কাছে পড়াশোনা করেছে? তার আকীদা কি আহলে
সুন্নত ওয়াল জামাতের আকীদা নাকি সে অন্ধ মাযহাবের বা কোন ভ্রান্ত মতবাদের অনুসারী,
সূফীবাদী, তাকফিরী খারেজী, মুহতাজিল্লা আকীদার লোক কিনা? সে কি সত্যিই অন্যকে
ইসলাম শেখানোর পূর্বে নিজে ইসলাম শিক্ষা করেছে, নাকি তোতা পাখির মতো মুখস্থ বলে,
যেইখান থেকে পারে কপি-পেস্ট করে ফতোয়াবাজি করছে? সমসাময়িক ওলামারা কি তাঁর প্রশংসা
করেছেন নাকি তার কাছ থেকে ইলম নেওয়ার ব্যপারে উম্মতকে সতর্ক করেছেন? আপনারা তাবেয়ী,
তাবে তাবেয়ী ও মুহাদ্দিসিনে একরামদের লেখা বইগুলো ও হাদীসের কিতাবগুলো পড়লে দেখতে
পারবেন, তারা এই রকম যাচাই-বাছাই করে কারো কাছে থেকে ইলম নেওয়ার ব্যপারে কতটা
সতর্ক ছিলেন। এর কারণ হচ্ছে, আপনি একজনের কাছ থেকে ইসলাম শিখছেন – তার মানে আপনার ইসলাম ঠিক তার মতই
হবে, সে যেইভাবে ইসলামকে আপনার সামনে তুলে ধরবে ইলমের অভাবে আপনি সেটাকেই হক্ক বলে
মনে করবেন।
যাইহোক, সাইয়েদ
কুতুবের ভক্ত আনোয়ার আল-আওলাকি তার ধর্মগুরুর মতোই তাকফিরী ছিলেন, যে মুসলিম
শাসকদেরকে কাফের/মুনাফেক ফতোয়া দিয়ে সাধারণ মানুষকে তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার
জন্য উস্কানি দিতো। অথচ মুসলিম শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা খারেজীদের প্রধান
একটা বৈশিষ্ট্য।
কয়েক বছর
পূর্বে সে সৌদি আরবসহ আরব বিশ্বের মুসলিম শাসকদেরকে পাইকারী হারে কাফের, মুনাফেক
ফতোয়া দিয়ে সেই সমস্ত মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে জিহাদের(!) ফতোয়া দিয়েছিলো এবং তার
অন্ধ ভক্তদেরকে সেই ভার্চুয়াল জিহাদে শরীক হওয়ার আহবান জানায়।
মুসলিম শাসকদের
দোষ-ত্রুটির কারণে তাদেরকে কাফের, মুর্তাদ ফতোয়া দেওয়া এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ
করা খারেজীদের ধর্ম। এই বিষয়টি এতো ধ্বংসাত্মক যে, আপনি প্রত্যেকটা আকিদার কিতাব
খুলে দেখুন – মুসলিম শাসকদের অন্যায় বা জুলুম-অত্যাচার সত্ত্বেও সৎ কাজে তাদের প্রতি অনুগত
থাকা এবং কোন মতেই বিদ্রোহ না করার জন্য বলা হয়েছে।
ইমাম আবু জা’ফর আহমাদ আত-ত্বাহাওয়ী (রহঃ), তার বিখ্যাত
আহলে “সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের আকীদার” কিতাবে উল্লেখ করেছেনঃ
“আমীর ও শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে আমরা জায়েয মনে করি না, যদিও তারা অত্যাচার
করে। আমরা তাদের অভিশাপ দিব না এবং আনুগত্য হতে হাত গুটিয়ে নিব না। তাদের আনুগত্য আল্লাহর
আনুগত্যের সাপেক্ষে ফরয, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর অবাধ্যচরণের আদেশ দেয়। আমরা তাদের
মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য দো‘আ করব।”
আকীদাহ আত-ত্বাহাবীয়া।
যাই হোক, আনোয়ার আল-আওলাকি
(USA), জসীম উদ্দিন রাহমানি (BD), আঞ্জেম চৌধুরী (UK) আবু ওয়ালিদ (UK) এইরকম বোকা শ্রেনীর
কিছু তরুণ ফতোয়াবাজ লোকেরা ক্বুরানের আয়াত বা হাদীসের মনগড়া ব্যখ্যা দিয়ে উঠতি বয়সী
কিছু কিশোর ও যুবকদের অন্তরকে তাকফিরী পয়জন দিয়ে বিষাক্ত করে রেখে গেছে।
এরা বিভিন্ন
অপব্যখ্যা দিয়ে তাদের অন্ধ ভক্তদের ব্রেইন ওয়াশ করে। তার মাঝে একটা হচ্ছে, শাসক
যদি শরিয়াহ আইন দিয়ে বিচার না করে তাহলে তারা মুর্তাদ হয়ে যাবে, তাদের বিরুদ্ধে
তখন বিদ্রোহ করা ফরযে আইন হয়ে যাবে!
এটা সম্পূর্ণ
ভ্রান্ত খারেজীদের আকীদা, যা রাসুল সাঃ এর কথার সরাসরি বিরোধীতা করে। এনিয়ে হুযাইফা বিন ইয়ামান রাঃ এর বিখ্যাত হাদীস দেখুন,
এবং সুন্নাহর সাথে খারেজীদের কথাকে মিলিয়ে দেখুন -
হুযায়ফা ইবনে ইয়ামান (রাঃ)
বলেছেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! এক সময় আমরা অকল্যাণ ও মন্দের মধ্যে (কুফরীর
মধ্যে) ডুবে ছিলাম। অতঃপর আল্লাহ আমাদেরকে কল্যাণের (ঈমানের) মধ্যে নিয়ে এসেছেন। এখন
আমরা সেই কল্যাণের মধ্যে বহাল আছি। তবে এই কল্যাণের পরে কি আবার অকল্যাণের যুগ আসবে?
তিনি বললেনঃ হ্যাঁ। আমি আবার বললাম, সেই অকল্যানের যুগের পর কি পুনরায় কল্যানের যুগ
আসবে? তিনি বললেনঃ হাঁ, আসবে। আমি পুনরায় জিজ্ঞেস করলাম, সেই কল্যানের পর কি আবার অকল্যানের
যুগ আসবে? তিনি বললেনঃ আসবে। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ তা কিভাবে? তিনি বললেনঃ “আমার পরে এমন কিছু ইমামের (শাসক) আগমন ঘটবে,
তারা আমার প্রদর্শিত পথে চলবে না এবং আমার সুন্নাত (জীবন বিধান) গ্রহন করবে না। (অর্থাৎ
তারা নিজেদের খোয়াল-খুশী মত চলার পথ আবিষ্কার করে নেবে)। অচিরেই তাদের মধ্যে এমন কিছু
লোক সমাজের নেতৃত্ব নিয়ে দাঁড়াবে যাদের মানব দেহে থাকবে শয়তানের অন্তর”।
আমি (হুজাইফা রাঃ) জিজ্ঞেস
করলাম, হে আল্লাহর রাসূল! যদি আমি সেই যুগে উপনীত হই তাহলে আমি কি করব?
তিনি (সাঃ) বললেনঃ “তুমি আমীরের নির্দেশ শোন এবং তার আনুগত্য
কর। যদিও সে তোমার পিঠে আঘাত (নির্যাতন) করে এবং তোমার ধন-সম্পদ ছিনিয়ে নেয় তবুও তার
কথা শোন এবং তার আনুগত্য কর”।
সহীহ মুসলিমঃ কিতাবুল ইমারাহ
(প্রশাসন ও নেতৃত্ব) অধ্যায়, হাদীস নং- ৪৫৫৪।
এই হাদিসে
রাসুল সাঃ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেনঃ
১. মুসলিমদের
উপর ভবিষতে কিছু শাসক আসবে যারা ক্বুরান ও সুন্নাহ অনুযায়ী চলবেনা। উল্লেখ্য
বর্তমানে বিভিন্ন মুসলিম দেশে এইরকম জালেম শাসক দেখা যাচ্ছে।
২. তাদের
কাজকর্ম এতো জঘন্য হবে যে, রাসুল সাঃ তাদেরকে “মানুষের ভেতরে শয়তানের অন্তর” বলেছেন। আমার মনে হয়না অন্য কোন ভাষায় কোন মানুষকে এর চাইতে খারাপ বলে বর্ণনা
করা যেতে পারে।
৩. সেই সময়ে
আমরা কেউ যদি পৌঁছে যাই – তাহলে আমরা যেন সেই শাসকের আনুগত্য করি, এমনকি সে যদি আমাদেরকে মারধর করে এবং
আমাদের সম্পদ ছিনিয়ে নেয়।
এখন বলতে পারেন
বিদ্রোহ না করে কেন রাসুল সাঃ আমাদেরকে শাসকরা জালেম হলেও তবুও তাদের আনুগত্য করতে
নির্দেশ দিয়েছেন? এর কারণ হচ্ছে, বিদ্রোহ করলে যেই ক্ষতি হয় তাঁর তুলনায় যুলুম
সহ্য করা অনেক কম ক্ষতিকর, যা যুগে যুগে খারেজীদের কার্যকলাপ দ্বারা বারবার
প্রমানিত হয়েছে। আপনারা বর্তমান লিবিয়া, তিউনিয়সিয়া, মিশর, সিরিয়া ইত্যাদি দেশে
বিদ্রোহের দিকে লক্ষ্য করে দেখুন – বিদ্রোহের পূর্বের শাসকদের জুলুম অত্যাচার ও পরে দেশে বিশৃংখলা ও ফেতনা-ফাসাদ
দেখলে বুঝতে পারবেন, কেনো বিদ্রোহের ব্যপারে ইসলাম এতো সতর্কতা অবলম্বন করেছে।
যাইহোক, অজ্ঞ
মুফতিরা ক্বুরান ও সুন্নাহ আয়ত্ত্ব না করে বড় বড় লেকচার দিতে গিয়ে আবেগের বশে
জালেম শাসক বা মুসলিম শাসকদের দোষ-ত্রুটি দেখে তাদেরকে কাফের ফতোয়া দেয় এবং
খারেজীদের মতো তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করতে মানুষকে উস্কানি দেয়। এদেরকে ওলামারা ‘ক্বাদিয়্যা’ বা সিটিং খারেজী বলেন, এরা নিজেরা
কোনদিন জিহাদ করেনা কিন্তু শাসকদের বিরুদ্ধে অজ্ঞ লোকদেরকে জিহাদ করার জন্য
উত্তেজিত করে। যেমনটা ফতোয়া দিয়েছিলেন তথাকথিত ‘ইমাম’(!) আনোয়ার আওলাকির মতো অন্যান্যরা।
আপনারা লক্ষ্য
করে দেখুন – অনেক দোষ-ত্রুটি সত্ত্বেও সৌদি আরবে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইসলামি শরিয়াহ চালু আছে,
আদালত পরিচালিত হচ্ছে ক্বুরান সুন্নাহ দিয়ে, রাষ্ট্রীয়ভাবে সালাত কায়েম আছে,
মানুষকে সৎ কাজে আদেশ ও নিষেধ আজ পর্যন্ত চালু আছে। এমন একটা দেশে দূরের কথা, যেই
দেশে শাসক মুসলিম কিন্তু দেশ পরিচালিত হয় মানব রচিত আইন দিয়ে – এমন শাসকের বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করা
ওলামারা হারাম বলে ফতোয়া দিয়েছেন। ইখোয়ানুল মুসলিমিনের নেতা ডা মুহাম্মদ মুরসি
ক্ষমতায় থাকার সময় ক্বুরান সুন্নাহ দিয়ে দেশ পরিচালনা করেন নি, বরং শরিয়াহ নিয়ে
বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা বলেছেন যা কুফরের পর্যায়ে পড়ে। তবুও আহলে সুন্নাহর কোন
আলেম তাকে কাফের বলেন নি, বরং মুসলিম শাসক হিসেবে তাঁর জন্য দুয়া করেছেন। অনুরূপ বর্তমান
তুরস্কের শাসক এরদোগানকেও কোন ওলামা কাফের বলেন না, যদিও তিনি ভ্রান্ত গণতন্ত্র
দিয়ে দেশ পরিচালনা করেন। কিন্তু অল্প বয়ষ্ক কিছু যুবক না আছে বিদ্যা, না বুদ্ধি,
জসীম উদ্দিন, আওলাকি এমন লোকদের কথা শুনে সমস্ত শাসকদের পাইকারি হারে কাফের ফতোয়া
দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদের ফতোয়া দিচ্ছে। যদিও তারা নিজেরা এই জিহাদ করেনা
(অবশ্য হুটহাট ২-৪টা বোমা ফাটিয়ে নিরিহ মানুষ মারা ছাড়া), কিন্তু অন্যেরা কেনো এই
জিহাদকে সমর্থন করছেনা দেখে তাদেরকে গালিগালাজ করছে।
আপনারা এমন
বক্তাদের কাছ থেকে সাবধান থাকবেন। আওলাকি, জসীম উদ্দিনের ভক্তদের দিকে লক্ষ্য করুন
– ওলামাদেরকে কাফের ফতোয়া দিয়ে
নোংরা ভাষায় গালাগালি করা হচ্ছে তাদের ধর্ম। অথচ ওলামাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা
মুনাফেকীর লক্ষণ। আর যারা তাদেরকে চেনেন তারা সকলেই জানেন, ভাষার দিক থেকে এরা
সবচাইতে জঘন্য। এইরকম স্বঘোষিত মুফতি মুহাদ্দিসদের বিভ্রান্তিকর ওয়াজ-লেকচার বাদ
দিয়ে আহলে সুন্নাহর আলেমদের থেকে ইসলাম নেবেন, যাতে করে ফেতনা থেকে নিজেকে বাচাতে
পারেন।