বুধবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

আপনারা আলেমদের নামে গীবত করেন কেনো?

প্রশ্নঃ আপনারা আলেমদের নামে গীবত করেন কেনো?

উত্তরঃ দুঃখিত, আপনি যাদেরকে আলেম বলছেন তাদেরকে আমি আলেম বলে গ্রহণ করছিনা। শিরক বেদাত প্রচার করে, ক্বুরান-হাদীসের অপব্যখ্যা করে যারা মানুষকে ইসলাম থেকে বিভ্রান্ত করে, বিনিময়ে নিজের পকেট ভারী করে, জনপ্রিয়তা, ভোট বা নিজের দলের পাল্লা ভারী করতে চায়, এরা কোনদিন আলেম হতে পারেনা। এদের ব্যপারেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ

(ফিতনার যুগে) কিছু লোক এমন হবে, যারা জাহান্নামের দরজার দিকে মানুষকে দাওয়াত দিবে (অর্থাৎ তাদের দাওয়াত এমন ভ্রষ্টতাপূর্ণ হবে, যা জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে); যারা তাদের ডাকে সাড়া দিবে তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে
সহীহ বুখারীঃ হাদীস নং-৩৩৩৬, ৬৬৭৯।

এইরকম যারা শিরক বেদাত যারা প্রচার করে সাধারণ মানুষের ঈমান নষ্ট করে তাদের সমালোচনা করা জায়েজ, এটা গীবত হবেনা। পথভ্রষ্ট দ্বায়ীদের সমালোচনা করা, গীবত করা শুধু জায়েজই নয়, নেক উদ্দেশ্য নিয়ে করলে তার জন্য সওয়াব আছে। অনেকের কাছে কথাগুলো খারাপ লাগতে পারে, অন্য একজন দ্বায়ীর নামে খারাপ কথা বলছি তাদের জন্য দ্বীনের কিছু উসুল (মূলনীতি, principle) বর্ণনা করছি ওলামারা কুরান ও হাদীসের দলীল থেকে এমন কিছু ক্ষেত্র বের করেছেন যেইসব ক্ষেত্রে গীবত করা জায়েজ

এ সম্পর্কে কুরান ও হাদীসের প্রখ্যাত সংকলন রিয়াদুস সালেহীন এর গ্রন্থকার ইমাম আন-নববী (রহঃ) বলেন - 

"যেসব ক্ষেত্রে গীবত করা বৈধঃ
. অত্যাচারীর অত্যাচার প্রকাশ করার জন্য
. সমাজ থেকে অন্যায় দূর করা এবং পাপীকে সঠিকপথে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সাহায্য করার জন্য
. হাদীছের সনদ যাচাই করা ও ফতওয়া জানার জন্য
. মুসলিমদেরকে মন্দ থেকে সতর্ক করা ও তাদের মঙ্গল কামনার ক্ষেত্রে
. পাপাচার ও বিদআতে লিপ্ত হলে তা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে
. প্রসিদ্ধ নাম ধরে পরিচয় দেওয়ার ক্ষেত্রে
ইমাম আন-নববী, রিয়াদুস-সালেহীন, ২৫৬ অনুচ্ছেদ, পৃঃ ৫৭৫

আহলুল হাওয়া ও বিদআতি ব্যক্তি ও দলগুলোর প্রচার করা শিরক, বেদাত ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্যগুলোর সমালোচনা করা এবং এইগুলো থেকে মানুষকে  বর্ণনা করার গুরুত্বঃ

শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন, বিদআতি নেতাদের মতোই ক্বুরআন ও হাদীসের বিরোধীতাকারীদের ও ভুল আমলকারীদের অবস্থা (পথভ্রষ্টতা ও ভুলগুলো) মানুষের কাছে তুলে ধরা ও তাদের থেকে উম্মতকে সতর্ক করা সর্বসম্মতক্রমে ওয়াজিব।

ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহকে জিজ্ঞাস করা হয়েছিলো, এক ব্যক্তি (নফল) নামায পড়ে, রোয রাখে, ইতেকাফে বসে ইত্যাদি। এই ব্যক্তির আমলগুলো আপনার কাছে বেশি প্রিয় নাকি এটা আপনার কাছে বেশি প্রিয় যে, সে ব্যক্তি বিদআতিদের সম্পর্কে কথা বলবে ও তাদের ব্যপারে মানুষকে সতর্ক করবে? উত্তরে ইমাম আহমাদ রহিমাহুল্লাহকে বলেছিলেন, যদি সে নামায, রোযা, ইতেকাফ ইত্যাদি ইবাদত-বন্দেগী করে তবে সেটা শুধুমাত্র তার একার জন্যই কল্যানকর হবে। কিন্তু সে যদি বিদআতির বিরুদ্ধে কথা বলে তাহলে সেটা সমস্ত মুসলমানদের জন্য কল্যানকর হবে। সুতরাং, এটাই তার জন্য উত্তম।

মাজমাউল ফাতওয়াঃ ২৮/২২১।