সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

ফেতনার সময় আলেমদের ভূমিকা

ফেতনার সময় আলেমদের ভূমিকাঃ

প্রখ্যাত তাবেয়ী, ইমাম হাসান আল-বসরী রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, মুসলমানদের উপর যখন কোন ফেতনা আসে, তখন যারা সত্যিকারের আলেম তারা সবাই সেটাকে চিনতে পারে। এই ফেতনা কতটা বিপর্যয় ও ক্ষতি নিয়ে আসতে পারে এবং এই ফেতনার সময়ে নিরাপদ থাকার জন্য মুসলমানদের আসলে কি করণীয়, সেই ব্যপারে তাঁরা সঠিক দিক-নির্দেশনা দিতে পারেন। কিন্তু যারা জাহেল, কিন্তু আলেমের লেবাস পড়ে থাকে, তারা ফেতনার সময়ে সঠিক দিকনির্দেশনা না দিয়ে বরং ফেতনাটাকে আরো বাড়িয়ে তুলে। তবে হ্যা, এই জাহেল লোকগুলো যারা আলেমের অভিনয় করে, তারা এই ফেতনা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে, তবে ফেতনার দ্বারা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে।

অতি সম্প্রতি এমন ২টা ফেতনা, যার দ্বারা আহলে সুন্নাহর আলেম ও সূফীবাদী অজ্ঞ বিদাতী, ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার নাম দিয়ে ফাসাদ সৃষ্টিকারী, জিহাদ নাম দিয়ে ভাওতাবাজি করা দলগুলোর নামধারী আলেমদের আসল চেহারা উম্মতের সামনে প্রকাশিত হয়েছিলোঃ

১. মিশরে আরব বসন্তে (প্রকৃতপক্ষে আরব কুয়াশা) হোসনি মুবারককে পতনের জন্য রক্তপাত ও বিভিন্ন আরব দেশগুলোতে ব্যপক বিশৃংখলা সৃষ্টি করা। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন সরকারের পতন ও এর প্রেক্ষিতে ইসলামের নাম দিয়ে মুসলমানদের জীবন ও সম্পদ নষ্ট করার ভয়াবহ ফেতনা। ইমাম ইবনে বাজ রহঃ, ইমাম নাসিরউদ্দিন আলবানী, ইমাম ইবনে উসাইমিন, বর্তমানের জীবিত আলেমদের মাঝে শায়খ ফাউজান, শায়খ আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ, শায়খ সালেহ আল-লুহাইধান, আল্লাহ তাদের সকলকে হেফাজত করুন, সমস্ত আলেমরা বিক্ষোভ মিছিল, অবরোধ এইগুলো ইসলামে জায়েজ নয়, কাফেরদের শিখানো এই কর্মকান্ডগুলো মুসলমানদের জন্য ধ্বংস ও ক্ষতি ছাড়া কোন উপকার নিয়ে আসেনা বলে কুরান ও সুন্নাহর বক্তব্য উম্মতের সামনে স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন। এমনকি বিভিন্ন আরব দেশে আরব বসন্তের ফেতনা শুরু হওয়ার পরে শায়খ ফাওজান, শায়খ সালেহ আস-শুহাইমি সহ অন্যান্য বড় আলেমরা আরব জাতিকে সতর্ক করেছিলেন, উপদেশ দিয়েছিলেন ধ্বংসাত্মক কাজ পরিহার করে ধৈর্য ধরার জন্য। হায় আফসোস! মওদুদী, কুতুব, বান্নার দেখানো পথে পরিচালিত ইউসুফ কারযাভী সহ অন্যান্য মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতারা মুসলমানদের আবেগকে ভুল পথে পরিচালিত করে ইসলামী শরিয়াহ বিরোধী এবং মুসলমানদের জন্য ক্ষতিকর এমন একের পর এক ভুল দিক-নির্দেশনা দিয়ে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হয় অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করে। তার ফলাফল উম্মতের জন্য বয়ে নিয়ে আসে, আমরা এখন সকলেই জানি। কিছু মানুষ দেখে শিখে, কিছু মানুষ ঠকার পরে শিখে। বেদাতীরা না দেখে শিক্ষা গ্রহণ করে, না ধ্বংস হওয়ার পরে আলেমদের উপদেশ গ্রহণ করে। এইজন্য এক হাদীসে বিভ্রান্ত খারেজীদের আচরণকে রাসুল সাঃ জলাতঙ্ক রোগীর সাথে তুলনা করেছেন, যারা বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে নিজে নিজের ধ্বংসের দিকে অগ্রসর হয়।

২. হেফাজতে ইসলাম নাম দিয়ে ভ্রান্ত বিদাতী কাজ কারবার দিয়ে অপ্রস্তুত মুসলমানদেরকে পাখির মতো গুলি খেয়ে মরার জন্য রাতের অন্ধকারে বন্দুকের সামনে ঠেলে দেওয়া। নাস্তিকদের সৃষ্ট ফেতনায় ৫০-১০০ বা তার বেশি মুসলমান নিহত হয়েছে, আমি বলবো এটা আল্লাহর রহমত যে, মিশরের মতো বিপর্যয় আমাদের দেশে হয়নি।

হাদীস শাস্ত্রের আমিরুল মুমিনিন, ইমাম বুখারী রহিমাহুল্লাহ রাসুল সাঃ এর হাদিস, আমার উম্মতের একটা দল কেয়ামত পর্যন্ত হক্কের উপর বিজয়ী থাকবে এই দলের অর্থ করেছেন আহলুল ইলম অর্থাৎ যারা জ্ঞানী বা আলেম। আমাদের উচিত সত্যিকারের আলেমদেরকে চেনা, আলেমদের দিকে লক্ষ্য রাখা, এবং জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে ক্বুরান ও সুন্নাহ অনুযায়ী চলার জন্য তাদের কাছ থেকে উপকৃত হওয়া। 

বিঃদ্রঃ স্ক্রিনশটে সহীহ বুখারীর সেই হাদীসটি ও এর আলোকে ইমাম বুখারী ভাষ্য। হাদীসের কিতাবগুলোতে পরিচ্ছেদের যে নাম দেওয়া হয়, এটা সাধারণত হাদীসের আলোকে হাদীস সংগ্রাহক ইমামের বক্তব্য বা ফতোয়া উল্লেখ করা থাকে।

বিনীত,

আনসারুস সুন্নাহ।