রবিবার, ২০ জুলাই, ২০১৪

প্রসংগঃ ঈদের নামায ও নারী



প্রসংগঃ ঈদের নামায ও নারী

নারী পুরুষ সকলের জন্য ঈদের সালাত বাধ্যতামূলকঃ
ঈদের সালাত ফরয/ওয়াজিব এবং সুন্নাতে মুয়াক্কাদা - এই দুই রকম মত পাওয়া যায়। তবে সত্য সন্ধানী যেই সমস্ত আলেম মনে করেন যে, ঈদের সালাত পড়া প্রত্যেক মুসলমান নর ও নারীর উপর ফরয তাদের মধ্যে রয়েছেনঃ
. ইমাম আবু হানীফা
. ইমাম আহমাদ থেকে একটি ফতোয়া
. শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যা
. ইমাম শাওকানী
. সাবেক সউদী প্রধান মুফতী, শায়খ বিন বাজ
. বিগত শতাব্দীর অন্যতম আলেম এ দ্বীন, শায়খ উসাইমিন
. বিংশ শতাব্দীর অবিস্মরণীয় মুহাদ্দিস শায়খ নাসির উদ্দীন আলবানী।

তাদের দলীল হচ্ছে বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত একটি হাদীস, যেখানে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নারীদেরকে ঈদের সালাত পড়তে আদেশ করেছেন। আর আল্লাহর রাসুল  যদি তার উম্মতকে কোনো আদেশ করেন সেটা পালন করা আমাদের জন্য ফরয।

উম্মে আতিয়্যা থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আমাদেরকে (অর্থাৎ নারীদেরকে) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহাতে সালাতের জন্য ঘর থেকে বের হতে বলেছেন। এমনকি ঋতুবতী নারীদেরকেও। ঋতুবতী নারীগণ সালাতে অংশগ্রহণ করবেনা। ঈদগাহের একপাশে থাকবে এবং (খুতবার মাঝে) দুয়ায় শরীক হবে। উম্মে আতিয়্যা বলেন, আমি আরয করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমাদের প্রত্যেকের পর্দা করার মতো চাদর নাই। রাসুল (সাঃ) উত্তর দিলেন, সে তার বোনের চাদর নিয়ে হলেও ঈদের সালাতে শরীক হবে। বুখারী ৩২৪, মুসলিম ৮৯০।

এই হাদীস থেকে স্পষ্ট, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নারীদের জন্য এটা বাধ্যতামূলক করেছেন যে, অবশ্যই তারা ঈদের সালাতে উপস্থিত হবে। নারীদের জন্যই যদি এই সালাতে উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক হয়, তাহলে পুরুষের জন্যতো কোনো প্রশ্নই আসেনা।

আমাদের দেশে বিভিন্ন অযুহাতে নারীদের ঈদগাহ থেকে দূরে রাখা হয়। অথচ হাদীসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নারীদের ঈদগাহে উপস্থিত হওয়ার জন্য কতো জোর দিয়েছেন, এমনকি ঋতুবতী নারীরা সালাত না পড়লেও তাদেরকে ঈদগাহের দোয়ায় শরীক হতে আদেশ করেছেন।

আজকে মুসলমানদের ঘরের নারীরা ঈদের নামায পড়তে বাইরে যায়না, কিন্তু বেহায়াপনা করতে মার্কেট, পার্কে ঠিকই যায়। ঈদে, জুমাতে, ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থাতে নারীদের জন্য ইসলাম শেখার কোন জায়গা নাই, ক্বুরান হাদীস শেখার সুযোগ নেই, বেশিরভাগ নারীই ইসলাম সম্পর্ক অজ্ঞ হয়ে বড় হয়ে উঠে। পরবর্তীতে ঈমান ও ইলমের ব্যপারে দুর্বল এই নারীগুলো বড় হয়ে পাপাচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। নিজে বিপথগামী হয়, তার আশেপাশের পুরুষদের জন্যও ফেতনা সৃষ্টি করে বেড়ায়, যার ফলে আজকে সমাজের প্রতিটা ক্ষেত্রেই নারী জাতির ফেতনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমার মনে হয়, দ্বীনদার বোনদের এই ব্যপারে সচেতন হওয়া উচিত, প্রতিকূল অবস্থার মাঝে থেকেও, ফেতনা এড়িয়ে সঠিক ইসলাম শিক্ষা করার জন্য আত্মনিয়োগ করা উচিত। একটা মেয়ে ইসলামের আলোয় আলোকিত হওয়া মানে একটা পরিবার ইসলামের ছায়ায় প্রবেশ করা।

সচেতন মুসলিম বোনদের মধ্যে যাদের ঈদগাহে যাওয়ার সুযোগ নেই বা ভাইদের মধ্যে অনিবার্য কারণবশত যাদের জামাত মিস হবে, তাদের উচিত বাসায় জামাতে বা একা ঈদের সালাত আদায় করে নেয়া। আর এরকম ঘটনা সাহাবাদের থেকে বর্ণিত হয়েছে। দেখুন - বুখারী ১৯৫, মুসান্নাফ ইবনে আবী শায়বাহ ৫৮০২

সর্বশেষ, ঈদের সালাত দুই রাকাত ১২ টি অতিরিক্ত তাকবীরের সহিত পড়তে হয়। তাকবীর = সালাতের শুরুতে আল্লাহু আকবার বলে তাকবীরে তাহরিমার মতো দুই হাত উপরে তুলে ইশারা করা।

প্রথম রাকাতে আল্লাহু আকবর বলার পরে বুকে হাত বাধবেন (নারী ও পুরুষ উভয়ে), এর পরে সানা পড়বেন এর পরে অতিরিক্ত ৭টি তাকবীর (আল্লাহু আকবর বলে দুই হাত তুলে ইশারা করবেন এবং হাত ছেড়ে রাখবেন এইভাবে মোট ৭বার) দিবেন। এর পরে আউযুবিল্লাহ, বিসমিল্লাহ, সুরা ফাতেহা, ক্বিরাত পড়ে বাকী রাকাত পূর্ণ করবেন। দ্বিতীয় রাকাতের জন্য স্বাভাবিক সালাতের মতো দাঁড়ানোর পরে মোট ৫ টি তাকবীর দিবেন। এর পরে বিসমিল্লাহ, সুরা ফাতেহা, ক্বিরাত পড়ে দ্বিতীয় রাকাত পূর্ণ করবেন। সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করবেন।
সহীহ হাদীসের দলীল দেখুনঃ তিরমিযী ৪৪২, আবু দাউদ ১০১৯, দারা কুতনী ১৭১০, বায়হাকী ৩/২৮৬ সহ অন্যান্যরা।

কেউ যদি প্রচলিত ইমামের পেছনে অতিরিক্ত ৬ তাকবীর দিয়ে নামায পড়েন তাহলে ইমাম যেইভাবে পড়বেন সেইভাবেই পড়বেন। তাকবীরের ব্যপারে ইমামের বিরোধীতা করা যাবেনা। অতিরিক্ত তাকবীরগুলো বলা সুন্নত।

উল্লেক্ষ্য আমাদের দেশে প্রচলিত ৬ তাকবীরের বর্ণনা কোনো সহীহ হাদীসতো দূরের কথা, কোনো যয়ীফ বা দুর্বল হাদীসেও নাই।

মূলঃ
শায়খ আব্দুল হামীদ মাদানি ফাইযী

Islamqa.com