শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০১৪

বিক্ষোভ মিছিল/প্রটেস্ট/ডেমনস্ট্রেশান/সরকার বিরোধী সমাবেশ?



বিক্ষোভ মিছিল/প্রটেস্ট/ডেমনস্ট্রেশান/সরকার বিরোধী সমাবেশ???

প্রশ্নকর্তা শামীমঃ শায়খ আমার আরেকটা প্রশ্ন হচ্ছে বিক্ষোভ মিছিল বা প্রটেস্ট/ডেমনস্ট্রেশান নিয়ে। বর্তমান সময়ে আমাদের ওলামাদের মাঝে ইজমা বা ঐক্যমত আছে মিছিল করা ভুল। কিন্তু কিছু মানুষ IslamQA এর শায়খ সালিহ আল-মুনাজ্জিদ এর ফতোয়া কোট করে বলে, কিছু শর্তসাপেক্ষে মিছিল করা জায়েজ. অথবা ডা. জাকির নায়েকের কথা নিয়ে আসে যেখানে তিনি ফতোয়া দিয়েছেন - শান্তিপূর্ণ মিছিল করলে কোনো সমস্যা নেই. এই ব্যাপারে কি বলা হবে?

শায়খ ওয়াসী উল্লাহ আব্বাসঃ কিসের কথা বলা হচ্ছে? (শায়খ পরিষ্কার করতে চাচ্ছেন বিষয়টা), মানে কিছু মানুষ জমায়েত হবে আর সম্মিলিতভাবে সরকারের বিপক্ষে স্লোগান দিবে?

প্রশ্নকর্তাঃ হ্যা, হ্যা।

শায়খ ওয়াসী উল্লাহ আব্বাসঃ কোনো সন্দেহ নেই - এইরকম বিশ্বাস করা ভুল, এইরকম বিশ্বাস করা ভুল। এই কথা যেই বলে থাকুক না কেনো, মুনাজ্জিদ বা অন্যকেউ এটা ভুল. দেখুন যেখানে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে আছে, মানুষকে দ্বীন পালন করতে বাঁধা দেওয়া হচ্ছেনা, মানুষকে নামায, রোযা ও অন্য ফরয কাজে বাঁধা দেওয়া হচ্ছেনা, এমন অবস্থায় যখন আমাদের শক্তি-সামর্থ্য নেই (অর্থাত মুসলিমরা দুর্বল), তখন একটা কাফির সরকারের বিরুদ্ধেও বিদ্রোহ করা জায়েজ নয়। মুসলিমরা দুর্বল অবস্থায় যদি বিদ্রোহ করে বসে তাহলে আরো বেশি বিপদের সম্ভাবনা আছে, মানুষের জীবন যাবে, সম্মান নষ্ট হবে। এটাই হলো প্রকৃত বাস্তবতা। আর যারা ফতোয়া দেয় মিছিল করা, স্লোগান দেওয়া এইগুলো জায়েজ, তারা (ক্ষতির জন্য) রাস্তা খুলে দিচ্ছে। এই সবকিছু (বর্তমানে এই ধরণের বিক্ষোভ মিছিলের কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে, মুসলমানদের জীবন যাচ্ছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে) হয়েছে এই মিছিলের কারণেই। প্রথমে ইখওয়ানুল মুসলিমিন (মিশরের জামাতে ইসলামীর মতো রাজনৈতিক একটা দল) এটা শুরু করে এবং পরে (মিশরীয়) সালাফী একটা দল এতে অংশগ্রহণ করে। আর এইজন্য ইখওয়ানের যে ভাগ্য একই ভাগ্য বরণ করেছে মিশরীয় সালাফী এই দলটি, রক্তপাত ও হত্যা। একারণে আর্মি ও পুলিশ এর মাঝে আসে। এই ধরণের বিক্ষোভ, বিদ্রোহ, সরকার উচ্ছেদ এইগুলো শরীয়তের মাঝে নেই। একটা সরকার সরিয়ে আরেকটাকে আনবে, কয়েক মাস পরে সেই সরকারও একই রকম করবে, আবার তারা বিদ্রোহ করবে...আল্লাহ বলেছেনঃ   

আপনি যতই চান, অধিকাংশ লোক ঈমানদার নয়।
সুরা ইউসুফঃ ১০৩।

আল্লাহ বলছেন বেশিরভাগ মানুষ ঈমানই আনেনা, তাই আবার যখন বেশিরভাগ মানুষ একবার একটা সরকার উতখাত করে পরে নতুন একটাকে এনে আবার সেটাকেও সরাতে চাইবে। আর এইরকম কেয়ামত পর্যন্ত চলতে থাকবে। একারণে শরীয়তে এই ধরণের বিক্ষোভ মিছিল মোটেও জায়েজ না। কাফের সরকারের বিরুদ্ধ যদি ক্ষমতা থাকে তাহলে সেটাকে সরানোর জন্য চেষ্টা করবে। কিন্তু যদি ক্ষমতা না থাকে আর তারা যদি দ্বীন পালন করতে বাঁধা না দেয়, কারো দ্বীন ও ঈমান নিরাপদ থাকে, যেইরকম ছিলো বাদশাহ নাজ্জাশীর সময়ে, তখন এইরকম সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের চেষ্টা করা জায়েজ নয়।

সরকার ভুল করতেছে, কিন্তু এটার জন্য তারা এই ধরণের কাজে জড়িয়ে পড়বেনা, বিক্ষোভ মিছিল করে স্লোগান দিবেনা।

বিক্ষোভ মিছিলের পক্ষে ফতোয়া যেই দিয়ে থাকুক থাকুক না কেনো, মুনাজ্জিদ বা অন্যকেউ এটা ভুল. আর জাকির নায়েক কোনো মুফতি না, সে মুনাজ্জিদ এবং অন্যদের কথা তাকলিদ (অন্ধভাবে বিশ্বাস) করেছে এবং মানুষের মাঝে প্রচার করছে। জাকির নায়েক কোনো আলেম না।

ফতোয়া দিয়েছেনঃ শায়খ ওয়াসী উল্লাহ আব্বাস (হাফিজাহুল্লাহ)।
মসজিদুল হারাম (কাবার) ডেপুটি মুফতি।

মূল ফতোয়ার লিংক, ইংরেজী অনুবাদসহঃ (৬:২০ থেকে ৯:৩০ মিনিট)