রবিবার, ৬ জুলাই, ২০১৪

প্রশ্ন হারুত ও মারুত কে? তারা জান্নাতে যাবে নাকি জাহান্নামে যাবে?



প্রশ্ন হারুত ও মারুত কে? তারা জান্নাতে যাবে নাকি জাহান্নামে যাবে?

পোস্টের ছবি পরিচিতিঃ অনেক হুজুর বা যারা ঝাড়ফুক করে তাদের মাঝে কিছু আসলে যাদুকর যারা জিন দিয়ে যাদু করে, তাদের কিছু লক্ষণ ছবিতে দেওয়া আছে)

উত্তরঃ হারুত ও মারুত হচ্ছেন ২ জন ফেরেশতা, যারা আল্লাহর নির্দেশক্রমে ইরাকের বাবেল শহরে আসেন - সেখানকার মানুষদের জন্য পরীক্ষা হিসেবে। তারা মানুষকে ‘জাদু’ শিক্ষা দিতো আর শিক্ষা দেওয়ার সময় মানুষকে বলে দিতোঃ “আমরা তোমাদের জন্য ফেতনা বা পরীক্ষা” - তাই এই শিক্ষা কাজে লাগিয়োনা কারণ – এটা (জাদু করা) হচ্ছে ‘কুফুরী’ কাজ। কিন্তু তাদের কথা না শুনে যারা যাদু শেখার জন্য জোর করতো, শুধুমাত্র তাদেরকেই তারা জাদু শিক্ষা দিতো। এভাবেই তাদেরকে আল্লাহ পরীক্ষা করেন, যাদুকরেরা দুনিয়ার সামান্য স্বার্থের জন্য যাদু শিখে কাফের হয়ে যায়। 

উল্লেখ্য, যদিও হারুত ও মারুত মানুষকে জাদু শিক্ষা দিতো কিন্তু মনে রাখতে হবে - তারা হচ্ছেন ফেরেশতা ও আল্লাহর সম্মানিত বান্দা। তারা আল্লাহর অবাধ্যতা করেননি, বরং আল্লাহই তাদেরকে পাঠিয়েছিলেন – মানুষকে পরীক্ষা করার জন্য। এই তাফসীর করেছেন ইমাম আল-হাসান আল-বাসরী যা আবি হাতিমে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া, কাতাদাহ, ইবনে সুদ্দী তারাও এই মতটাকেই গ্রহণ করেছেন – কারণ আয়াতের স্পষ্ট অর্থ সেটাই মিন করে যা সাহাবাদের কাছ থেকে বর্ণিত হয়েছে। 

ব্যখ্যাঃ আমাদের জীবনের সবটাই আসলে পরীক্ষা। যেমন আল্লাহ তাআ’লা বলেনঃ

“যিনি (আল্লাহ) সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে করে তোমাদেরকে পরীক্ষা করেন, কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ? তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাময়।”
সুরা আল-মুলকঃ ২। 

আল্লাহ একেকজনকে একেকভাবে পরীক্ষা করেন। যেমন কাউকে সম্পদ দিয়ে, কাউকে সম্পদ না দিয়ে, কাউক সন্তান দিয়ে কাউকে না দিয়ে।
“তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি তো কেবল পরীক্ষাস্বরূপ।”
সুরা তাগাবুনঃ ১৫। 

অনুরূপভাবে, আল্লাহ বাবেল শহরের মানুষদেরকে জাদু দিয়ে পরীক্ষা করেন, এই জাদু শিক্ষা দিতো হারুত ও মারুত নামের ২ ফেরেশতা, আল্লাহর আদেশক্রমেই। অনেকে মনে করে বা কিছু তাফসীরে লেখা আছে, হারুত মারুত আল্লাহর অবাধ্যতা করেছিলো। এই কাহিনী আসলে এসেছে কিছু ইসরায়েলী কাহিনী থেকে যেইগুলোর কোন দলীল নেই। ফেরেশতারা অবাধ্যতা বা পাপ করেছেন – এই ধারণা ভুল কারন ফেরেশতারা কোনদিন আল্লাহর অবাধ্যতা করেন না, তাদেরকে সেইভাবে সৃষ্টিই করা হয়নি। 

ফেরেশতারা সবসময় আল্লাহর অনুগতঃ
“তারা আগে বেড়ে কথা বলতে পারে না এবং তারা তাঁর আদেশেই কাজ করে।”
সুরা আল-আম্বিয়াঃ ২৭।

“তারা আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।”
সুরা আত-তাহরীমঃ ৬। 

সুতরাং, হারুত মারুত আল্লাহর কোন অবাধ্যতা করেন নি, বরং তারা আল্লাহর হুকুম মেনেই বাবেল শহরে আসেন তাদের জন্য পরীক্ষা হিসেবে। আরা ফেরেশতারা আল্লাহর অনুগত ও সম্মানিত বান্দা, তারা আল্লাহর ইবাদত করেন তার আদেশ পালন করেন। যেহেতু তাদের কোন পরীক্ষা নেই যেমন জিন ও মানুষের আছে, তাই মানুষ ও জিনের মতো ফেরেশতারা জান্নাত বা জাহান্নামে যাবেন না। 

সর্বশেষ, হারুত ও মারুতকে নিয়ে ক্বুরানুল কারীমের আয়াতে কারীমাটিঃ

“তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই (হারুত ও মারুত) একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না। অতঃপর তারা তাদের কাছ থেকে এমন জাদু শিখত, যদ্দ্বারা স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটে। তারা আল্লাহর আদেশ ছাড়া তদ্দ্বারা কারও অনিষ্ট করতে পারত না। যা তাদের ক্ষতি করে এবং উপকার না করে, তারা তাই শিখে। তারা ভালরূপে জানে যে, যে কেউ জাদু অবলম্বন করে, তার জন্য পরকালে কোন অংশ নেই। যার বিনিময়ে তারা আত্নবিক্রয় করেছে, তা খুবই মন্দ যদি তারা জানত।”
সুরা আল-বাক্বারাহঃ ১০২।