মঙ্গলবার, ২১ এপ্রিল, ২০১৫

নামাযের রুকন, ওয়াজিব, সুন্নত ও নামায ভংগের কারণসমূহ


নামাযের রুকন, ওয়াজিব, সুন্নত ও নামায ভংগের কারণসমূহ
__________________________________
নামাযে রুকন হচ্ছে মোট ১৪টিঃ
১. সামর্থ্য থাকলে দাঁড়িয়ে নামায পড়া।
২. তাকবীরে তাহরীমাহ অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলে নামায শুরু করা।
৩. প্রত্যেকে রাকাতেই সুরা ফাতিহা পাঠ করা।
৪. রুকু করা।
৫. রুকু থেকে উঠে সোজা হয়ে দাঁড়ানো।
৬. (দুই হাত, দুই পা, দুই হাঁটু ও মুখমন্ডল এই) সাতটি  অঙ্গের উপর সিজদা করা।
৭. সিজদা হতে উঠা।
৮. দুই সিজদার মাঝখানে পিঠ সোজা করে বসা।
৯. শেষ বৈঠকে তাশাহ্হুদ (আত্তাহিয়্যাতু...) পড়া।
১০. তাশাহ্হুদ পড়ার সময় বসে থাকা।
১১. নামাযের এই রুকনগুলো ধীর ও স্থিরতার সাথে সম্পাদন করা।
১২. এই রুকনগুলো ধারাবাহিকভাবে একটার পর একটা আদায় করা।
১৩. (শেষ বৈঠকে) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দরুদ পাঠ করা।
১৪. ডানে ও বামে দুই দিকে সালাম প্রদান করা বা সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করা।
__________________________________
নামাযের ওয়াজিব (বা ফরয) হচ্ছে মোট ৮টিঃ
১. তাকবীরে তাহরীমার তাকবীর ছাড়া নামাযে অন্যান্য তাকবীর সমূহ (আল্লাহু আকবার) বলা।
২. سَمِعَ اللهُ لِمَنْ حَمِدَهُ (সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ) বলা। আর ইহা ইমাম ও একাকী নামায আদায় কারীর জন্য ওয়াজিব। তবে মুক্তাদী তা পাঠ করবে না। (অবশ্য একদল আলেমের মতে মুক্তাদীও তা পড়তে পারে।)
৩. ইমাম, মুক্তাদী ও একাকী নামায আদায় কারী সকলের উপর رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ (রাব্বানা ওয়া লাকাল হামদ) সকলের জন্যে বলা ওয়াজিব।
৪. রুকুতে سُبْحَانَ رَبِّيَ الْعَظِيمِ (সুব্হানা রাব্বিয়াল আজীম) বলা।
৫. সিজদায় سُبْحَانَ رَبِّيَ الْأَعْلَى (সুবহানা রাব্বিয়াল আলা) বলা।
৬. দুসিজদার মাঝে رَبِّ اغْفِرْلِي   (রাব্বিগ ফিরলী) বলা।
৭. প্রথম বৈঠকে তাহিয়্যাত (আত্তাহিয়্যাতু...) পড়া। 
৮. প্রথম বৈঠকের জন্য বসা
__________________________________
নামাযের সুন্নাত সমূহ হচ্ছেঃ
১. সানা বা প্রারম্ভিক দুআ পাঠ করা।
২. ডান হাতকে বাম হাতের উপর করে দাঁড়ানো অবস্থায় রুকুর পূর্বে ও পরে বুকের উপর রাখা।
৩. দুই হাতের আঙ্গুল মিলিত ও দণ্ডয়মান অবস্থায় অবস্থায় কাধঁ অথবা দুই কানের লতি পর্যন্ত তুলে ইশারা করা, তাকবীরাতুল ইহরামের সময়, রুকু করার সময়, রুকুহতে উঠার সময় ও প্রথম বৈঠক হতে তৃতীয় রাকাআতের জন্যে দাঁড়ানের সময়।
৪. রুকু ও সিজাদার তাসবীহ সমূহের একের অধিকবার পাঠ করা।
৫. দুই সিজদার মাঝে মাগফিরাত বা ক্ষমার জন্য দুআ একবারের অধিক পাঠ করা।
৬. রুকুতে মাথাকে পিঠের বরাবর বা সমান্তরাল রাখা।
৭. সিজদারত অবস্থায় দুই হাতকে পার্শদ্বয় হতে, পেটকে উরুদ্বয় হতে ও উরুদ্বয়কে পায়ের নলীদ্বয় হতে দূরে রাখা।
৮. (নারী ও পুরুষের উভয়ের জন্য) সিজদার সময় জমিন হতে দুই হাতকে উঁচু করে রাখা।
৯. প্রথম বৈঠকে ও দুই সিজাদার মাঝখানে ডান পা খাড়া রেখে বাম পা বিছিয়ে তার উপর বসা। (প্রথম বৈঠকে পুরুষদের মতো করে বসা, নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য সুন্নাহ)। 
১০. তিন ও চার রাকআত বিশিষ্ট নামাযের শেষ বৈঠকে তাওয়াররুক করা। তাওয়াররুকের নিয়ম হল, বাম পা কে ডান পায়ের নলীর নিচে রাখা, অতঃপর ডান পায়ের পাতা খাড়া রেখে নিতম্বের উপর বসা। (দ্বিতীয় বৈঠকে নারীদের মতো করে বসা, নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য সুন্নাহ)।
১১. প্রথম ও দ্বিতীয় বৈঠকে তাশাহুদের বসার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত শাহাদত আঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করা ও দুআর সময় নড়ানো।
১২. প্রথম বৈঠকে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার পরিবারের উপর এবং ইব্রাহীম ও ইব্রাহীম আলাইহিস সলাতু ওয়াস সালামের  পরিবারের উপর সলাত ও বরকত বর্ষণ করা।  অর্থাৎ, ২টি বৈঠকের নামাযের প্রথম বৈঠকে দুরুদে ইবরাহীম পাঠ করা সুন্নাহ।
১৩. শেষ বৈঠকে দুআ মাসুরা পড়া।
১৪. ফজরের নামাযে, জুমুআর নামাযে, দুই ঈদের নামাযে, বৃষ্টি প্রার্থনার নামাযে এবং মাগরিব ও এশার নামাযের প্রথম দুই রাকআত ফরয নামাযে উচ্চ স্বরে সুরা-ক্বিরাত পাঠ করা।
১৫. যুহর, আসর ও মাগরিবের তৃতীয় রাকআতে এবং এশার সলাতের শেষ দুই রাকআতে চুপিস্বরে সুরা-ক্বিরাত পাঠ করা।
১৬. সূরা ফাতিহা পড়ার পর ক্বুরআনের অন্য স্থান থেকে (সুরা বা আয়াত) পাঠ করা।
নামাযের যে সুন্নাতগুলো আমরা উল্লেখ করেছি, তা ছাড়াও হাদীসে বর্ণিত অন্যান্য সুন্নাতগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখা উচিত। যেমন- ইমাম, মুক্তাদী ও একা একা সলাত আদায়কারীর রুকু হতে উঠে রব্বানা ওয়া লাকাল হামদু এর অতিরিক্ত দুয়া পাঠ করা, এটি সুন্নাত। আরও তার (নামাযের সুন্নাতের) অন্তর্ভূক্ত হচ্ছে, রুকুর সময় দুই হাতের অঙ্গুলগুলো ছাড়ানো বা আলাদা অবস্থায় রেখে দুই হাঁটুকে মজবুতভাবে আকড়ে ধরা। আরো হচ্ছে, সিজদার সময় অঙ্গুলগুলো মিলিত রাখা, নাক মাটিতে লাগিয়ে রাখা. . .ইত্যাদি।
__________________________________
যে সকল কারণে নামায নষ্ট হয়, সেগুলো হচ্ছে মোট ৮টিঃ
১. নামাযে মাসলাহাতের (কল্যাণ মূলক) বহির্ভূত এমন বিষয়ে স্বরণ ও জানা থাকা অবস্থায় ইচ্ছাকৃতভাবে কথা বলা। তবে মনের ভুলে অথবা কোন মূর্খ ব্যাক্তি না জেনে কথা বলে ফেললে, তার নামায বাতিল হবে না।
২.  নামাযে উচ্চস্বরে হাসা। তবে সামান্য মুচকি হাসা যা দেখে কেউ বুঝতে ন আপারে তবে তার কারনে নামায ভাংবেনা।
৩. নামাযের ভেতরে কোন কিছু খাওয়া।
৪. নামাযের ভেতরে কোন কিছু পান করা।
৫. নামায চলাকালীন সময় আওরাহ বা লজ্জাস্থান প্রকাশিত হওয়া।
৬. সলাতে ধারাবাহিকভাবে অনেক বেশী বেহুদা বা অনর্থক কাজ করা। (আর অধিক কাজের পরিমাণ নির্ণয় করার মানদণ্ড হল, কেউ তার দিকে তাকালে মনে হবে যেন, সে নামাযের মাঝে নয়)।
৭.  ক্বিবলার দিক থেকে ডান বা বাম দিকে অনেক বেশি সরে যাওয়া।
৮. নামাযের ভেতরে সালাম ফেরানোর পূর্বে যেকোণ সময়ে অযু ভেঙ্গে যাওয়া।
মূল উৎসঃ সারা বিশ্বের মুসলিমদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় পাঠ সমূহ
লেখকঃ ইমাম আব্দুল আজিজ বিন আব্দুল্লাহ বিন বায (রহঃ)।
***এডমিন (আনসারুস সুন্নাহ) কর্তৃক কিছুটা সম্পাদিত।

__________________________________