“ভূমিকম্প
সম্পর্কে শায়খ বিন বায (রহঃ) এর নসীহত”
অনুবাদকঃ শাইখ আবদুল্লাহ আল কাফী
- গ্রাজুয়েট,
মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে যে সকল ভূমিকম্প দেখা যায়, নিঃসন্দেহে তা আল্লাহর এক
প্রকার নিদর্শন। তিনি এর মাধ্যমে বান্দাদেরকে ভয় দেখাতে চান। যেমন তিনি বলেন,
وَمَا
نُرْسِلُ بِالْآيَاتِ إِلا تَخْوِيفًا
“আমি
শুধু ভয় দেখানোর জন্য আমার নিদর্শন সমূহ প্রেরণ করে থাকি।” [সুরা বনি ইসরাঈলঃ ৫৯]
ভূমিকম্প আল্লাহর এক প্রকার বড় নিদর্শন। যা ঠেকানোর ক্ষমতা পৃথিবীতে কারো
নেই। উন্নত বিশ্বের সব ধরণের টেকনোলোজি এখানে ব্যর্থ। কিন্তু ভূমিকম্পের মাধ্যমে
মানুষের যে ক্ষয়-ক্ষতি হয়,
বিপদে পড়ে তাদের জান-মাল নষ্ট হয় তার মূল কারণ হচ্ছে শিরক ও
পাপাচার। যেমন আল্লাহ বলেন,
وَمَا أَصَابَكُمْ مِنْ مُصِيبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ
أَيْدِيكُمْ وَيَعْفُو عَنْ كَثِيرٍ
“তোমাদের
উপর যে মসিবতই এসেছে তা তোমাদের কৃতকর্মের কারণে এসেছে। আর বহু সংখ্যক অপরাধের
শাস্তি না দিয়েই আল্লাহ্ তোমাদের ক্ষমা করে দিয়ে থাকেন।” [সুরা শূরাঃ ৩০]
তিনি আরও বলেন,
مَا أَصَابَكَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللَّهِ وَمَا
أَصَابَكَ مِنْ سَيِّئَةٍ فَمِنْ نَفْسِكَ
“হে
মানুষ! যে কল্যাণই তুমি লাভ করে থাকো,
তা আল্লাহর দান এবং যে বিপদ তোমার ওপর এসে পড়ে তা তোমার নিজের
উপার্জন ও কাজের বদৌলতেই আসে।”
[সুরা নিসাঃ ৭৯]
তিনি আরও বলেন,
فَكُلًّا أَخَذْنَا بِذَنْبِهِ فَمِنْهُمْ مَنْ
أَرْسَلْنَا عَلَيْهِ حَاصِبًا وَمِنْهُمْ مَنْ أَخَذَتْهُ الصَّيْحَةُ وَمِنْهُمْ
مَنْ خَسَفْنَا بِهِ الْأَرْضَ وَمِنْهُمْ مَنْ أَغْرَقْنَا وَمَا كَانَ اللَّهُ
لِيَظْلِمَهُمْ وَلَكِنْ كَانُوا أَنْفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ
“শেষ
পর্যন্ত প্রত্যেককে আমি তার অপকর্ম ও গুনাহের জন্য পাকড়াও করি। তারপর তাদের কারোর
ওপর আমি পাথর বর্ষণকারী বাতাস প্রবাহিত করি এবং কাউকে একটি প্রচণ্ড বিস্ফোরণ আঘাত
হানে। আবার কাউকে আমি ভূমিকম্পের মাধ্যমে ভূমি ধস দিয়ে ভূগর্ভে প্রোথিত করি এবং
কাউকে (বন্যা-জলোচ্ছ্বাস-প্লাবন প্রভৃতির মাধ্যমে) পানিতে ডুবিয়ে দিই। আল্লাহ
তাদের প্রতি জুলুমকারী ছিলেন না,
কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের ওপর জুলুম করছিল।” [সুরা আনকাবূতঃ ৪০]
তাই সকলের উপর ওয়াজিব (আবশ্যক) হচ্ছে আল্লাহর কাছে তওবা করা, তাঁর দ্বীনকে আঁকড়ে ধরে তার
উপর অটল থাকা। শিরক বিদআ’ত
সহ সকল প্রকার অন্যায়-অনাচার ও পাপাচার থেকে সতর্ক থাকা। যাতে করে আল্লাহ তাদেরকে
দুনিয়া ও আখেরাতে নিরাপত্তা দান করেন। আল্লাহ বলেন,
وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُوا وَاتَّقَوْا
لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنْ كَذَّبُوا
فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
“যদি
দেশের লোকেরা ঈমান আনতো এবং তাকওয়ার নীতি অবলম্বন করতো, তাহলে আমি তাদের জন্য আকাশ
ও পৃথিবীর রবকত সমূহের দুয়ার খুলে দিতাম। কিন্তু তারা তো সত্যকে প্রত্যাখ্যান
করেছে, মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। কাজেই তারা যে অপকর্ম করে
যাচ্ছিলো তার জন্য আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি। [সুরা আরাফঃ ৯৬]
ওমার বিন খাত্তাব (রাঃ) এর যুগে একবার মদীনাতুল মুনাওয়ারায় ভূমিকম্প হয়েছিল, তখন তিনি এনিয়ে খুতবা
দিয়েছিলেন এবং মানুষকে ওয়ায-নসিহত করেছিলেন। বলছিলেন, কত
দ্রুত তোমরা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছো? পুনরায় যদি ভূমিকম্প হয়,
তবে আমি তোমাদের মাঝে থাকব না, মদীনা ছেড়ে
অন্যত্র চলে যাব।
বর্ণিত হয়েছে যে,
ওমার বিন আবদুল আযীয (রহঃ) এর যুগেও একবার ভূমিকম্প হয়েছিল, তখন তিনি বিভিন্ন শহরের আমীরদেরকে চিঠি লিখে জনগণকে দান-সাদকা করতে
উদ্বুদ্ধ করেছিলেন।
মূল উৎসঃ আরবী রচনাটি ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।