বিষয়বস্তুঃ- তাবলীগ
জামাত
অংশঃ- ৪র্থ
যা কিছু হয় সবই আল্লাহ
থেকে হয়।” এ কথাটি কালিমার ব্যাখ্যায় তারা ব্যবহার করে
থাকে। এটার অর্থ দাড়ায় সব কর্ম আল্লাহই করেন। এতে বান্দা দায়মুক্ত থাকে এবং
আল্লাহর উপর বান্দার সকল কর্মের দায় ভার এসে যায়। তারা এই ভাবে কালিমা তইয়্যাবাকে
ডাল স্বরুপ গ্রহণ করে তাদের বানায়টি কালিমা ব্যাখ্যায় শুনিয়ে থাকেন। তাদের কালেমা
হল লা মওজুদা ইল্লাল্লাহ, কোনো অস্তিত্ব নেই আল্লাহ ছাড়া।
অর্থাৎ সব অস্তিত্বই আল্লাহ। লা ফায়েলা ইল্লাল্লাহ, লা
ফায়েলা ইল্লাল্লাহ, কোনো কর্তা নেই আল্লাহ ছাড়া। অর্থাৎ
মানুষ কোনো কর্তা নই। লা যাহেরা ইল্লাল্লাহ, কোনো প্রকাশ নেই
আল্লাহ ছাড়া। অর্থাৎ সমস্ত রুপের প্রকাশ আল্লাহর রুপ বা অনন্ত রুপ। লা বাতেনা
ইল্লাল্লাহ, নাই কোনো গোপন আল্লাহ ছাড়া। সমস্ত গোপন সত্তাই
আল্লাহ। শুধু তবলিগ জামাতই নয় দেশের সমস্ত পীর ও মাসায়েখ গণ এই কৃত্তিম বা বানাউট
কালেমার উপর প্রতিষ্ঠিত। দেশের ফুরফুরা, চরমোনাই, আটরশি, চন্দ্রপুরী, মাইয়িজ
ভান্ডারী, শুরেশ্বরী সকলেই এই কালেমার ধারক বাহক হয়ে কুরআন
ছুন্নাহর একমাত্র কালেমা শাহাদতের মুকাবিলা করে তাগুতের পথ বেছে নিয়েছেন। অতএব,
এটা কুফরী মতবাদ তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নি¤েœ কতিপয়
তবলিগের হুজুরদের বিভ্রান্ত উক্তি তুলে ধরা হচ্ছে। যেমন: হাজী এমদাদুল্লাহ সাহেবের
কথারই পূর্ণ অনুসরণে এ ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে। হাজী সাহেবের লেখা জিয়াউল কুলুব
(উর্দু) বইয়ে তিনি লিখেছেন,
১। বিশ্ব জাহানের
যাবতীয় ক্রিয়া কান্ড আল্লাহরই ক্রিয়াকান্ড বলে ভাববে। বাহ্যতঃ যাকে কাজ করতে দেখা
যাচ্ছে তাকে শুধুমাত্র মাধ্যম বলে মনে করবে আর আল্লাহরকেই প্রকৃত কর্তা বলে ভাববে।
-(যিয়াউল কুলুব উর্দু ৩৪ পৃঃ)।
২। তাওহিদের জাতি
এই যে,
“বিশ্ব জগতের সব কিছুকে আল্লাহ বলে ধারণা করা। (যিয়াউল
কুলুব উর্দু ৩৫ পৃঃ)।
৩। সুফী তরীকার
ধ্যান ও মুরাকাবা করতে করতে মানুষ বাহ্যতঃ আল্লাহ থাকলেও অভ্যন্তরীণ ভাবে আল্লাহ
হয়ে যায়”। (যিয়াউল কুলুব উর্দু ২৭ পৃঃ) যে হাজী এমদাদুল্লাহ
সাহেবের প্রশংসা মওলানা যাকারিয়া সাহেব তবলীগ জামায়াতের প্রথম ধাপের মুরুব্বীরা এই
হাজী এমদাদুল্লাহ সাহেবকে তাদের জন্য দোজাহানের আশ্রয়স্থল বলে বিশ্বাস করেন। দেখুন
ফাযায়েল সাদাকাতের ২য় খন্ড ২২১ পৃষ্ঠায় তাকে “হে আমার দ্বোজানের
আশ্রয়স্থল” বলে সম্বোধন করা হয়েছে। ইহা স্পষ্ট শির্ক
কুরআনের সুরা জিন্ন ২২ নং আয়াতে এবং সুরা কাহাফের ২৭ নং আয়াতে “আল্লাহ
ছাড়া কোনো আশ্রয়স্থল নেই” বলে প্রমাণিত হয়। তাছাড়া একজন মুসলিম কুরআন
তিলওয়াতের আগে আল্লাহর কাছেই আশ্রয় চেয়ে পাঠ শুরু করে থাকে। ভ্রান্ত সুফীবাদে
বিশ্বাসী মওলানা যাকারিয়া কান্ধলভী সাহেবের প্রসিদ্ধ ফাযায়েলের বইগুলোর অন্ধ
অনুসরণ করে এই জামায়েতের লোকেরা তাবলীগ করেন। তার লেখা বইগুলোতে ভ্রান্ত শিরকী
আকিদার অনেক বর্ণনা রয়েছে। তন্মধ্যে মাত্র কয়েকটির উল্লেখ করলাম। যাকারিয়া সাহেবের
লোখা ৬৭টি বই রয়েছে। তিনি তাবলীগের প্রতিষ্ঠাতা মওলানা ইলিয়াস সাহেবকে সন্তুষ্ট
করার জন্য ফাযায়েল আ’মাল বইটি রচনা
করেছেন। তিনি উক্ত বইয়ের ভুমিকায় লিখেছেন, এইরুপ বুযুর্গগণের
সন্তুষ্টি হাসিলের জন্য লিখা হয়নি। দ্বীনের কোন উপকারে আসে এমন কাজে একমাত্র
আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্য না করে মানুষের সন্তুষ্টির জন্য করলে শির্ক হবে। এ
কথাটা তাবলীগ পন্থী আলিমগণ মানতেই চাননা। তারা যাকারিয়া সাহেবের উক্তিতে বৈধতা
দেয়ার জন্য নানা যুক্তি দেখিয়ে ফাতওয়া দিয়ে থাকেন। অথচ কুরআনের অনেক আয়াত ও
বিশুদ্ধ হাদীস থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, দ্বীনের সকল কাজ,
ইবাদত, দান খয়রাত ইত্যাদি একমাত্র আল্লাহকে
সন্তুষ্ট করার জন্য না করলে উহা কবুল হবে না বরং শির্ক হবে। তাবলীগের বুযুর্গানে
দ্বীন নামে অভিহিত ব্যক্তিগণ বিশ্বাস করেন যে,
১। তাদের বুযুর্গরা
মারা যাবার পরও জীবিত থাকে এবং মানুষের উপকার করে থাকে। (ফাযায়েলের সাদাকাতের ২য়
খন্ড ৩৩১ পৃষ্ঠা দারুল কিতাব প্রকাশনার ছাপা এর কাহিনী থেকে প্রমাণিত)।
২। বুযুর্গ
ব্যাক্তিরা মরার পর কথা বলে, হাসে, চোখ মেলে
চায়, জীবিত মানুষের সাতে কৌতুক করে আংঙ্গুল টেনে ধরে।
(ফাযায়েলে সাদাকাত ২য় খন্ড ৩৩১ ও ৩৩২ পৃষ্ঠার কাহিনী থেকে প্রমাণিত)।
৩। বুযুর্গ
ব্যাক্তির কবরের কাছে এসে অভাবের কথা বলে তার কাছে সাহায্যের আবেদন করা যায়। (ঐ
২/৩৯৩ ও ৩৯৪ পৃঃ)
৪। মৃত্যুর পরও
মুদ্রা ব্যাক্তি দান করতে পারে এবং উট জবেহ করতে পারে। (ঐ ২/৩৮৯ পৃঃ)।
৫। রাসূল (সা:)
মৃত্যুর পর আহমাদ রেফায়ী নামক এক বুযুর্গের জন্য কবর থেকে হাত বের করে দেন এবং ঐ
বুযুর্গ রাসূলের হাতে চুমু দেন। (ফাযাইলে হজ্জ ১৪০ পৃ:, লেখক
মাওলানা যাকারিয়া)।
৬। জান্নাতের
জিম্মাদার রেজওয়ান ফেরেশতা দুনিয়ায় এসে এক বুযুর্গকে পানি পান করিয়ে যান।
(ফাযায়েলে হজ্জ - ১৮০ পৃ:)।
৭। রশীদ আহমাদ
গংগুহী তাঁর পীরের কাছে লিখিত এক চিঠিতে আল্লাহকে সম্বোধন করে লিখেন; হে
আল্লাহ, আমাকে মাফ করুন, হযরতের হুকুমে
লিখিত হইয়াছে। মিথ্যুক আমি, কিছু নই, সব
তোমারই ছায়া, তোমারই অস্বিত্ব, আমি কি,
কিছুই নই এবং আমি যাহা রহিয়াছি উহাও তুমি। আমি ও তুমি স্বয়ং র্শিকের
ভিতরে র্শিক। (ফাযায়েলে সাদাকাত ২/২২২ পৃ:)।
৮। তাদের বুযুর্গরা
মৃত্যুর নির্দিষ্ট সময় বলতে পারেন। (ঐ ২য় খন্ড ৩৩১ পৃ:)।
৯। সালাত অবস্থায়
এক বুযুর্গের পা কেটে ফেলা হলো অথচ তিনি টেরই পাননি। (ফাযায়েলে নামায ৯৮ পৃ:)।
১০। এদের এক
বুযুর্গের মৃত্যুর পূর্বে জিবরাঈল (আ:) এসে পানি পান করান। (ঐ ২/৩৩৭ পৃ:)।
১১। স্বপ্নের মধ্যে
এসে রাসূল (সা:) এক বুযুর্গকে রুটি দেন। (ফাযায়েলে হজ্জ- ১৩৮ পৃ:)।
১২। কবর থেকে রাসূল
(সা:) উচ্চ আওয়াজে এক বুযুর্গের ছালামের উত্তর দেন। উপস্থিত শ্রোতারা সবাই শুনতে
পায়। (ফাযায়েলে হজ্জ-১৩৭ পৃ:)।
১৩। মৃত্যুর পর
রাসূল (সা:) কবর থেকে উঠে এসে মেঘের উপর চড়ে মক্কায় হাজ্জ করতে আসা মৃত্যু বরণকারী
এক মহিলার মুখে ও পেটে হাত বুলিয়ে যান। এতে ঐ মহিলার চেহারা উজ্জ্বল হয়ে যায়।
(ফাযায়েলে দরুদ ৪৬ নং কাহিনী, লেখক মাওলানা যাকারিয়া)।
১৪। এক বুযুর্গ এক
অজুতে ১২দিন পর্যন্ত সমস্ত সালাত আদায় করেছেন। (ফাযায়েলে নামাজ ৯৮-৯৯ পৃ: প্রকাশক
দারুল কিতাব)। জবাবঃ রাসূল (সা) সালাতরত অবস্থায় শিশুর কান্নার আওয়াজ শুনতেন ও কেহ
দরজার কড়া নাড়লে টের পেতেন ও দরজা খুলে দিতেন। তাহলে কি ঐ বুযুর্গ রাসূলের চেয়ে সালাতে
বেশী মনোযোগী ছিলেন? এটা কি করে সম্ভব? অথচ
রাসূলের (সা:) মৃত্যুর সময় জিবরাঈল (আ:) তাঁকে পানি পান করালেন না, তাহলে কি আল্লাহ নাবীর চেয়ে বুযুর্গকে বেশী ভালবাসেন? এটা কখনই সম্ভব নয়।
TO BE CONTINUE...........