বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০১৫

চাশতের নামায

***চাশতের নামায, সালাতুদ-দোহার নামায ও আওয়াবীনের নামায - এই সবগুলো নামায আসলে একই নামাযের বিভিন্ন নাম।
আমাদের দেশের মানুষ মনে করে আওয়াবীনের নামায মাগরিবের নামাযের পরে পড়তে হয়, এটা ঠিক নয়। বরং, চাশতের নামাযের আরেক নাম হচ্ছে আওয়াবীনের নামায। সুতরাং, আওয়াবীনের নামায পড়তে হলে সেটা সকালেই পড়তে হবে, আর এটাই হচ্ছে চাশতের নামায। মাগরিবের নামাযের পরে যেই নামাযের কথা এসেছে তার হাদীস জয়ীফ। সুতরাং মাগিরবের নামাযের পরে আলাদা এমন কোনো নামায নেই।
চাশতের সালাতের (সালাতুল দোহা) ফজিলতঃ
অনুবাদঃ মোছতানছের বিল্লাহ | সম্পাদনাঃ আবদ্ আল-আহাদ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
বুরাইদা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) বলেছেনঃ
মানুষের শরীরে ৩৬০ টি জোড় রয়েছে। অতএব মানুষের কর্তব্য হল প্রত্যেক জোড়ের জন্য একটি করে সদাকা করা। সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ্! কার শক্তি আছে এই কাজ করার? তিনি (সাঃ) বললেন, মসজিদে কোথাও কারোর থুতু দেখলে তা ঢেকে দাও অথবা রাস্তায় কোন ক্ষতিকারক কিছু দেখলে সরিয়ে দাও। তবে এমন কিছু না পেলে, চাশতের দুই রাকাআত সালাতই এর জন্য যথেষ্ট।
আবু দাউদ; কিতাবুল আদাব, অধ্যায়ঃ ৪১, হাদীস নং:৫২২২।
উপরিউক্ত হাদীসটি মুলত চাশতের সালাত বা সালাতুদ্ দুহার অপরিসীম গুরুত্ব ও মাহাত্ম্যের কথাই তুলে ধরে। এর থেকে আরো বোঝা যায় যে,চাশতের সালাত তথা সালাতুদ্ দুহা ৩৬০ টি সাদাকার সমতুল্য।
আবু হোরাইরা (রাঃ) বলেনঃ
আমার বন্ধু [মুহাম্মাদ (সাঃ)] আমাকে তিনটি বিষয় আমল করার জন্য উপদেশ দিয়েছেন, প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা, চাশতের সালাত (সালাতুদ্ দুহা) আদায় করা এবং ঘুমাতে যাওয়ার পূর্বে বিতরের সালাত আদায় করা।
সহীহ্ আল বুখারীঃ তাহাজ্জুদ অনুচ্ছেদ, অধ্যায়ঃ ২, হাদীস নং ২৭৪ এবং সহীহ্ মুসলিমঃ কিতাবুস্ সালাত, অধ্যায়ঃ ৪, হাদীস নং ১৫৬০।
চাশতের সালাত (সালাতুদ্ দুহা) একটি উপহার স্বরূপ এবং যে এই উপহার পাওয়ার আশা করে, সে যেন এই সালাত আদায় করে। তবে এই সালাত আদায় না করলে কেউ গুনাহ্গার হবেনা।
আবু সাঈদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) ততক্ষন পর্যন্ত চাশতের সালাত পড়তে থাকতেন, যতক্ষনে আমরা ভাবতে শুরু করতাম যে তিনি (সাঃ) এই সালাত আর কখনো বাদ দেবেন না। আবার যখন এই সালাত আদায় করা বন্ধ রাখতেন, আমরা ভাবতাম হয়ত তিনি এই সালাত আর কখনই আদায় করবেন না। (তিরমিযি)
চাশতের সালাতের রাকাআতের সংখ্যা ২, ৪, ৮, ১২ পর্যন্ত পাওয়া যায়। মক্কা বিজয়ের দিন দুপুরের পূর্বে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আলী (রাঃ) এর বোন উম্মে হানী (রাঃ) এর গৃহে খুবই সংক্ষিপ্তভাবে ৮ রাকাআত পড়েছিলেন। সংক্ষিপ্তভাবে পড়লেও রুকু এবং সিজদায় তিনি পূর্ণ ধীরস্থিরতা বজায় রেখেছিলেন এবং প্রতি দুই রাকাআত অন্তর সালাম ফিরিয়ে ছিলেন।
সহীহ্ আল বুখারীঃ সালাত সংক্ষিপ্তকরন অনুচ্ছেদ, অধ্যায়ঃ ২, হাদীস নং ২০৭।
চাশতের সালাত আদায়ের উপযুক্ত সময়ঃ
দোহা শব্দের অর্থ প্রভাত সূর্যের ঔজ্জল্য, যা সূর্য স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে শুরু হয়। এই সালাত প্রথম প্রহরের পর থেকে দ্বিপ্রহরের পূর্বেই পড়া হয় বলে একে সালাতুদ দুহা বা চাশতের সালাত বলা হয়। তবে বেলা উঠার পরে প্রথম প্রহরের শুরুতে পড়লে তাকে সালাতুল ইশরাক্ক বলে। এই সালাত বাড়ীতে পড়া মুস্তাহাব। এটি সর্বদা পড়া এবং আবশ্যিক গণ্য করা ঠিক নয়। কেননা, রাসূল (সাঃ) এই সালাত কখনো পড়তেন, আবার কখনো ছেড়ে দিতেন। উল্লেখ্য যে, এই সালাত সালাতুল আউয়াবীন নামেও পরিচিত।
শায়খ ইবন বাজ্ (রহঃ) বলেছেনঃ
ইশরাক্ক সালাত শুরু থেকেই চাশতের সালাত হিসেব আদায় হয়ে আসছে।
মাজমূ ফাতাওয়াহ্ আল শাইখ ইবনে বাজঃ ১১/৪০১।
চাশতের সালাতের সময় হচ্ছে, সূর্য একটি নির্দিষ্ট উচ্চতায় উঠার পর থেকে শুরু করে যোহর সালাতের ঠিক পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত।
শাইখ ইবন ঊসাইমীন (রহঃ) এর মতেঃ
চাশতের সালাত আদায়ের সময় হল সূর্য উঠার ১৫ মিনিট পর থেকে শুরু করে যোহর সালাতের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার ১০ মিনিট পূর্ব পর্যন্ত।
আল-শারহ্ আল-মুমতিঃ ৪/১২২।
অতএব, এই পুরো সময়টাই হচ্ছে চাশতের সালাত বা সালাতুদ্ দুহা এর সময়।
সূর্যের তাপ যখন প্রখর হতে শুরু করে তখন এই সালাত আদায় করা উত্তম। কেননা,নবী কারীম (সা) বলেছেনঃ
এই সালাত (চাশতের সালাত) আদায়ের উত্তম সময় হচ্ছে তখন, যখন সূর্যের তাপ এতোটা প্রখর যে, সদ্য প্রাপ্তবয়স্ক উটও সেই তাপ অনুভব করতে পারে।
সহীহ্ মুসলিম; কিতাবুস্ সালাত, অধ্যায়ঃ ৪, হাদীস নং:১৬৩০।
শেইখ ইবন বাজ্ঃ মাজমূ ফাতাওয়াহ্, ১১/৩৯৫
বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন দিনের এক চতুর্থাংশ অর্থাৎ, দিনের চার ভাগের একভাগ পার হয় তখন এই সালাত আদায় করা উত্তম। কাজেই, চাশতের সালাত বা সালাতুদ্ দুহা আদায় করার উত্তম সময়টি হচ্ছে সূর্যোদয় এবং যোহর সালাতের মধ্যবর্তী সময়টা ।
দেখুন, আন-নওয়বী (রহঃ) এর মাজমূ ফাতাওয়াহঃ ৪/৩৬ এবং আল্ মাওসূয়াহ্ আল ফিকহীয়্যাহঃ ২৭/২২৪
*উল্লেখ্য, চাশতের নামায মোটামুটি ফজরের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার ১৫ মিনিট পর থেকে যোহরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার ১৫ মিনিট পূর্ব পর্যন্ত (প্রায় ১১.২০ পর্যন্ত). এই পুরো সময়ের যেকোনো সময়েই পড়া যাবে তবে উত্তম হবে সর্বোত্তম সময় হবে আনুমানিক ৯-১০টার দিকে।

Collected & Edited from কুরআনের আলো