শনিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০১৫

আপনার দ্বীন সম্পর্কে জানুন (পর্ব-৪)

আপনার দ্বীন সম্পর্কে জানুন (পর্ব-৪)
- আনসারুস সুন্নাহ
_________________________
বিসমিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। আম্মা বাআদ।
ক্বুরানুল কারীমে আল্লাহ তাআলার সবকিছুর ব্যপারে হিসাব নেওয়ার জন্যে সবচাইতে কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন যেই আয়াতেঃ
অতঃপর কেউ অণু পরিমাণ নেক কাজ করলে, তার প্রতিদান সে পাবে। এবং কেউ অণু পরিমাণ খারাপ কাজ করলে, তার প্রতিদানও সে পাবে।
সুরা যিলযালঃ ৭-৮।
ক্বুরানুল কারীমে আল্লাহ তাআলা রহমতের জন্যে সবচাইতে বেশি প্রশস্ততার যেই আয়াত নাযিল করেছেন,
(হে নবী!) আপনি বলুন, হে আমার বান্দাগণ! তোমরা যারা নিজেদের উপর অনেক বেশি যুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল এবং পরম দয়ালু।
সুরা যুমারঃ ৫৩।
_________________________
১/ আশুরার দিনে পরিবারের জন্যে ভালো খাবারের ব্যবস্থা করলে সারা বছর আল্লাহ রিজকে বরকত দিবেন এটা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নামে মিথ্যারোপ, এই কথার সহীহ কোন দলিল নেই। জাল ও জয়ীফ হাদীস দিয়ে ওয়াজ করে একশ্রেণীর ইমাম, বক্তা ও হুজুরেরা আমাদের দেশের মানুষদেরকে শিরক ও বিদাত শিক্ষা দিয়ে তাদেরকে বিভ্রান্ত করে।
২/ তাহাজ্জুদের জন্য রাতের শেষ তৃতীয়াংশ কিভাবে হিসাব করব একটু জানাবেন প্লিজ?
উত্তরঃ মাগরিব থেকে ফজর ওয়াক্ত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়কে ৩ দ্বারা ভাগ করে শেষের অংশটা। ধরুন মাগরিব ৬টায় শুরু আর ফজর শুরু ৫টায়। তাহলে, ৬টা থেকে ৫টা= ১১ ঘন্টা। ১১ ঘন্টাকে ৩ দিন দ্বারা ভাগ করলে প্রায় ৩ ঘন্টা ৪০ মিনিট। সুতরাং, ৩.৪০*২=৭ ঘন্টা ২০ মিনিট, এই সময়কে মাগরিবের সাথে জোগ করে ৬+৭.২০= প্রায় ১টা ২০ মিনিট থেকে ফজর হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত সময়টা হচ্ছে রাতের শেষ তৃতীয়াংশ। এই সময়টা দুয়া কবুলের সময়।  
৩/ কিছু বোনেরা প্রশ্ন করেছেন, মুহাররাম এর আশুরা উপলক্ষ্যে 9 & 10 karo prob takle ki 10 & 11 ei 2din roja rakhle hobe?10 & 11 te rakhle ki pap hobe? jante parle onek upokrito hobo!
উত্তরঃ সহীহ হাদীসে এসেছে 9 & 10 রোজার কথা, 10 & 11 ei 2din roja রাখার হাদিস দুইটি সহীহ নয়। তবে কারো বিশেষে কোন সমস্যা থাকলে ১০ তারিখ আশুরার রোজা রেখে এর পরদিন এক দিন অতিরিক্ত আরেকটা রাখতে পারে। কিন্তু সমস্যা না থাকলে ৯+১০ রাখার চেষ্টা করা উচিৎ।
৪/ স্বামীর নাম নেওয়া জায়েজ, এটা মোটেও বেয়াদবী নয়।
৫/ পিরিয়ডের কারণে যেই বোনেরা আশুরার রোজা মিস করেছেন এবং একারণে দুঃখবোধ করছেন তাদের জন্যে বলছি, আশুরার রোজা রাখতে না পারলে কোন সমস্যা নাই, এইগুলো নফল সুন্নত রোজা। সুতরাং যেই সমস্ত বোনেরা পিরিয়ডের কারণে আশুরার রোজা মিস করবেন, প্রথম কথা হচ্ছে আশুরার পূর্বে আপনি যদি নিয়ত করে থাকেন যে, রোজা রাখবেন কিন্তু পিরিয়ডের কারণে রাখতে পারেন নি, তারা ভালো নিয়ত করার কারণে একগুণ সওয়াব এমনিতেই পেয়ে যাবেন ইন শা আল্লাহ। দ্বিতীয়ত, এই মাসের যেকোন রোজার ফজীলত অনেক বেশি। সুতরাং আপনারা চাইলে আইয়ামে বীজের বা ১৩, ১৩ ও ১৫ তারিখের রোজা রাখতে পারেন। একটানা তিনটা রাখতে কষ্ট হলে বাকি দিনগুলোর বিশেষ করে সোমবার ও বৃহস্পতিবার মিলিয়ে ৩টা রোজা রাখতে পারেন। ৩টা রাখতে কষ্ট হলে ২টা, ২টা কষ্ট হলে যেকোন সোম বা বৃহস্পতিবারে ১টা রোজা রাখবেন। সুতরাং মন খারাপ করার কিছু নেই, আল্লাহ যাকে যেইভাবে রেখেছেন সে সেইভাবে আমল করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্যে চেষ্টা করবেন ইন শা আল্লাহ। 
৬/ প্রশ্নঃ আচ্ছা যদি এমন কোনো কিছুর জন্য যেমন রোগ মুক্তি, ব্যবসায় লাভ, ভালো চাকরির জন্য, বিয়ে সাদির জন্য, সন্তান লাভ........ এমন উদ্দেশ্যের জন্য কি রোজা রাখা যাবে? এবং মাদ্রাসায় ছাত্র, গরিব মিসকিনদের আল্লাহর উদ্দেশে পশু জবেহ করে তাদের খাওয়ানো যাবে?
উত্তরঃ হ্যা, এমন প্রয়োজনে বা বিপদ থেকে মুক্তির জন্যে নফল/সুন্নত রোজা রেখে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দুয়া করতে হবে, কারণ রোজাদারের দুয়া আল্লাহ কবুল করেন। মাদ্রাসায় ছাত্র, গরিব মিসকিনদের আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু জবেহ করে তাদের খাওয়ানো যাবে এবং এই নেক আমল করে এর উসীলা দিয়ে দুয়া করতে হবে, হে আল্লাহ তোমার সন্তুষ্টির জন্যে অমুক কাজ করেছি। সুতরাং তুমি এটা কবুল করো এবং একে উসীলা করে আমার এই দুয়া কবুল করো। মোট কথা, নফল রোজা বা দান সাদাকাকে উসিলা বানিয়ে দুয়া কবুলের জন্যে আল্লাহর কাছে দুয়া করতে হবে।
৭/ প্রশ্নঃ মাগ্রিবের  ২০/৩০ মিনিট আগে যদি পি ফ্ল শুরু হয় , রোজা কি নষ্ট হবে ? শুরুর সাথেই সাথেই কি খেতেই হবে ? একবারে ইফতারের সময় কি খাওয়া যায় না?
উত্তরঃ মাগরিবের ২০/৩০ মিনিট আগেও যদি পিরিয়ড শুরু হয়তাহলে রোজা ভেংগে যাবে। ফরজ রোজা হলে পরে কাজা করতে হবে। আপনার ইচ্ছা হলে দিনের যখনই পিরিয়ড শুরু হবে সাথেই সাথেই খাওয়া দাওয়া করতে পারেন। একবারে ইফতারের সময় খাওয়া যায় তবে তার কোন প্রয়োজন নেই, কারণ এর পরে খাওয়া না খাওয়া আপনার জন্যে দুটোই সমান।
৮/ অনেক নারী ঋতুর সামান্য রক্ত দেখে বুঝতে পারেন না কি করবেন। বা পিরিয়ডের খুব সামান্য রক্ত দেখা গেলে বা বিচ্ছিন্নভাবে ২-১ দিন রক্তপাত হলে কি করতে হবে
উত্তরঃ মাসের নির্দিষ্ট যেই দিনগুলোতে পিরিয়ড হওয়ার কথা সেই দিনগুলোতে হলে বা তার ২-১ দিন আগে পরেও যদি কারো রক্তপাত হয়, সেটাকে পিরিয়ড ধরতে হবে এবং সালাত সাওম, ও সহবাস বাদ দিতে হবে, যদিওবা একদিন হয়ে ২ দিন বন্ধ হয়ে পরে আবার নিয়মিত হয় ৩-৪ দিন। যখন রক্তপাত হবে তখন সেটাকে ঋতু বলে গণ্য করতে হবে। এমনকি সুস্থ নারীর কোন রোগ ছাড়া এমনিতেই মাসের ১০-১৫ দিনে ২-১ দিন অনিয়মিত রক্তপাত হয়, তবুও সেটাকে ঋতু গণ্য করে নামাজ রোজা বাদ দিতে হবে। আর কারো যদি 'ইস্তিয়াজা' অসুস্থতা বা কোন রোগের কারণে পবিত্র থাকার দিনগুলোতেও রক্তপাত হয়, তাহলে সেটা অসুস্থতা। তখন সালাত সাওম, স্বামীর সাথে মেলামেশা করতে পারবে।
৯/ প্রশ্নঃ প্রথম ২/১ দিন  যতক্ষণ না রেগুলার রক্তপাত হচ্ছে ততখন কি নামাজ পরা যাবে?
উত্তরঃ যদি রক্তপাত হয় তাহলে নামাজ রোজা করা যাবেনা, যদিও সেটা কিছুটা কম হোক। কিন্তু যদি হলুদ বা সাদা তরল পদার্থ নির্গত হয়, তাহলে সেটা পিরিয়ড নয়। তখন নামাজ রোজা করতে হবে।
১০/ নারীদের ঋতু সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরগুলো আপনার আল্লামাহ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসায়মিন রাহিমাহুল্লাহ এর ফতোয়া আরকানুল ইসলাম বইয় দেখুন। সেখান থেকে দুইটি ফতোয়াঃ
(১৭৩) নির্গত স্রাবের ব্যাপারে নারী যদি সন্দিহান হয় যে, এটা কি হায়েযের রক্ত না কি ইসে-হাযার রক্ত না কি অন্য কিছুর রক্ত? এবং সে পার্থক্যও করতে পারে না। তবে সে উহা কি গণ্য করবে?
আসল কথা হচ্ছে, নারীর গর্ভ থেকে নির্গত রক্ত হায়েযেরই হয়ে থাকে। কিন্তু যখন প্রমাণিত হয়ে যাবে যে, তা ইসে-হাযার স্রাব তখন ইসে-হাযা হিসেবে গণ্য করবে। অন্যথায় ইসে-হাযা কিনা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত নির্গত রক্ত হায়েয বা ঋতু হিসেবেই গণ্য করবে।
(১৭৬) জনৈক নারী মাসিক থেকে পবিত্র হওয়ার পর গোসল করে নামায শুরু করেছে। এভাবে নয় দিন অতিবাহিত হওয়ার পর আবার স্রাব দেখা গেছে। তিন দিন স্রাব প্রবাহমান ছিল। তখন নামায পড়েনি। তারপর পবিত্র হলে গোসল করে এগার দিন নামায আদায় করেছে। তারপর আবার তার স্বাভাবিক মাসিক শুরু হয়েছে। সে কি ঐ তিন দিনের নামায কাযা আদায় করবে? নাকি তা হায়েযের দিন হিসেবে গণ্য করবে?

নারীর গর্ভ থেকে যখনই রক্ত প্রবাহিত হবে তখনই তা ঋতু বা হায়েয হিসেবে গণ্য হবে। চাই সেই ঋতুর সময় পূর্বের ঋতুর সময়ের চাইতে দীর্ঘ হোক বা কম হোক। ঋতু থেকে পবিত্র হওয়ার পাঁচ দিন বা ছয় দিন বা দশ দিন পর পুনরায় স্রাব দেখা গেছে, তবে সে পবিত্র হওয়ার অপেক্ষা করবে এবং নামায পড়বে না। কেননা এটা ঋতু। সর্বাবস্থায় এরূপই করবে। পবিত্র হওয়ার পর আবার যদি ঋতু দেখা যায়, তবে অবশ্যই নামায-রোযা থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু স্রাব যদি চলমান থাকে- সামান্য সময় ব্যতীত কখনই বন্ধ না হয়, তবে তা ইসে-হাযা বা অসুস্থতা বলে গণ্য হবে। তখন তার নির্দিষ্ট দিন সমূহ শুধু ছালাত-ছিয়াম থেকে বিরত থাকবে।