বুধবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৫

পুরুষের তুলনায় “নারীর অধিকার”?

পুরুষের তুলনায় নারীর অধিকার?
১. সমান
২. কম
৩. বেশি
৪. কোনটাই না
_________________________
ইসলামের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষের হুকুম আহকামের কিছু নমুনাঃ
১. একজন পুরুষ নাভীর নিচে থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢাকা অবস্থায় রাস্তা দিয়ে হাটতে পারে, একজন নারীর সেই অধিকার নেই। অবশ্য কোন মুসলিম নারী কোনদিন এই অধিকার চাইবে না। [এর দ্বারা আমি পুরুষদেরকে এই কাজটা করতে উৎসাহিত করছি তা না, প্রত্যেকটা সমাজে কিছু প্রচলন থাকে, ইসলাম বিরোধী না হলে সেই ব্যপারে সমাজের মানুষের বিরোধীতা করা ঠিক নয়। তবে মুসলিম হিসেবে আমরা আমাদের শরিয়াহ সম্পর্কে জানবো, এবং তার প্রতি আন্তরিক বিশ্বাস রাখবো]
২. মায়ের (একজন নারীর) আদেশ মানতে ছেলে (একজন পুরুষ) বাধ্য, মায়ের পায়ের নিচে ছেলের জান্নাত।
৩. স্বামীর (একজন পুরুষের) কথা মানতে স্ত্রী (একজন নারী) বাধ্য, স্বামীর অবাধ্য হয়ে জান্নাতে যাওয়া যাবেনা।
৪. স্ত্রীর ভরণ-পোষণের খরচ দেওয়া স্বামীর জন্যে ফরয, স্বামীর ভরণ-পোষণের খরচ দেওয়া স্ত্রীর জন্যে ফরয নয়।
৫. জিহাদ পুরুষদের জন্যে ফরযে কিফায়া, কখনো সেটা ফরজে আইন। নারীদের জন্যে জিহাদ করা ফরজ নয়। তাদের জন্যে হজ্জই হচ্ছে তাদের জিহাদ। 
৬. পুরুষরা একাকী সফর করতে পারে, মাহরাম পুরুষ ছাড়া কোন নারী একাকী সফর করতে পারেনা।
৭. নারীরা স্বর্ণের অলংকার পড়তে পারে, পুরুষদের জন্যে যেকোন ধরণের অলংকার পড়া হারাম।
৮. নারীরা রেশমি বা সিল্কের কাপড় পড়তে পারে, পুরুষদের সেই অধিকার নেই।
৯. ঈদের দিনে নারীরা ধফ সহকারে ছোট বালিকাদের গান শুনতে পারে, পুরুষদের সেই অধিকার নেই।
১০. বিয়ের সময় নারীদের পুরুষদের কাছ থেকে মাহরানা নেওয়ার অধিকার আছে, কিন্তু পুরুষদের যৌতুক নেওয়ার কোন অধিকার নেই, হারাম।
১১ বিয়ের পরে নারীরা পুরুষদের কাছে থাকার জন্যে উপযুক্ত বাসস্থান দাবী করতে পারে, পুরুষদের সেই অধিকার নেই।
১২. পুরুষেরা বাড়ির বাইরে গেলে সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারে, তাদের জন্যে এটা সুন্নত। নারীরা বাইরে বের হলে তাদের এই অধিকার নেই যে, তারা সুগন্ধি ব্যবহার করবে। তাদের জন্যে এটা কবীরাহ গুনাহ।
১৩. পুরুষেরা মাথা না ঢেকে সালাত পড়তে পারে, নারীদের মাথা না ঢেকে সালাত কবুল হবেনা।
১৪. একজন নারীর অধিকার আছে মসজিদে না গিয়ে বাসায় একা একা সালাত পড়ে নেওয়ার জন্যে, মসজিদে যাওয়া তাদের জন্যে ফরজ ওয়াজিব নয়। কিন্তু উপযুক্ত কারণ ছাড়া একজন পুরুষের অধিকার নেই মসজিদে না গিয়ে বাসায় একা একা সালাত পড়ে নেওয়ার।
......এমন লিখলে আরো অনেক লিখা যাবে।
_________________________
পুরুষের তুলনায় নারীর অধিকার কম না বেশি, এটা ফেমিনিস্ট এবং ওরিয়েন্টালিস্ট নামক কিছু কাফের, যিন্দিক ও মুনাফেক শ্রেণীর মানুষদের প্রশ্ন, যা দিয়ে তারা আল্লাহর আইন সম্পর্কে সাধারণ মুসলিমদেরকে বিভ্রান্ত করতে চায়। একজন মুসলিম এই বিশ্বাস রাখবে যে, আল্লাহ হচ্ছেন সর্বজ্ঞানী এবং সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক। আল্লাহ নারী ও পুরুষের ন্যয্য অধিকার দিয়েছেন, সেটা কখনো কারো জন্যে বেশি, কারো জন্যে কম। সমান অধিকার মানেই যে ন্যায় বিচার, এটা একেবারেই ভুল ধারণা। একজন প্রতিবন্ধীকে যদি সমান সুযোগ দিয়ে একজন সুস্থ মানুষের সাথে দৌড প্রতিযোগিতায় নামানো হয়, অথবা ক্লাস ফাইভের একটা ছাত্রকে যদি সমান সুযোগ-সুবিধা দিয়ে ক্লাস নাইনের একজন ছাত্রের সাথে বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ানো হয়, এটা কোনদিন ন্যায় বিচার হতে পারেনা। আল্লাহ নারী ও পুরুষ উভয়কে সৃষ্টি করেছেন। তারা উভয়ে আল্লাহর বান্দা ও বান্দী, এই দৃষ্টিকোণ থেকে তারা সমান। তবে আল্লাহ তাআলার মহা পরিকল্পনা ও হিকমত অনুযায়ী তাদের মাঝে কিছু শারীরিক ও মানসিক পার্থক্য দিয়ে সৃষ্টি দিয়েছেন, যাতে করে তারা পরস্পর মিলে-মিশে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে পারে এবং একজন আরেকজনের উপযুক্ত সংগী/সংগিনী হতে পারে। আর এই শারীরিক ও মানসিক দিকগত পার্থক্যের জন্যে তাদের মাঝে কিছু হুকুম-আহকামগত পার্থক্য দিয়েছেন, তা উভয়ের কল্যাণের জন্যে। এখন কোনটার কি কল্যান, কেনো, কী কারণে, সেটা জানা থাকুক বা না থাকুক, একজন ঈমানদার হলে বিনা আপত্তিতে অন্তর থেকে সেইগুলোকে মেনে নেওয়ার নামই হচ্ছে ঈমান, সেটা আমার ভালো লাগুক বা না লাগুক। আমার স্বল্প বুদ্ধিতে সেটা যৌক্তিক মনে হোক, বা না হোক তবুও তার প্রতি বিশ্বাস রেখে সেটা পালন করতে হবে।
আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন,
(যারা ঈমানদার) তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম। 
সুরা বাক্বারাহঃ ২৮৫।
আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের দেওয়া কোন বিধান অন্তর থেকে মেনে নিয়ে তার প্রতি আত্মসমর্পণ করা না পর্যন্ত কেউ মুমিনই হতে পারবেনা!
অতএব, (হে নবী!) আপনার রব্বের কসম! লোকেরা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তাদের মধ্যে সৃষ্ট কোন বিবাদের ব্যাপারে আপনাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর, আপনার দেওয়া মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা না রাখে এবং তা সন্তুষ্টচিত্তে সেটা কবুল করে নেবে। [সুরা নিসাঃ ৬৫]
_________________________
এতো গেলো একজনকে মুসলিমকে আমরা কি বলবো, কিন্তু কোন কাফেরকে এনিয়ে আমরা কি যুক্তি দেখাতে পারি?
স্কুল-কলেজ, ইউনিভার্সিটিতে, দেশে কিংবা বিদেশে, কাফির হোক কিংবা মুসলিম, যেখানেই দৌড় প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হোক না কেনো, সেখানে নারী এবং পুরুষদেরকে আলাদা প্রতিযোগীতা করানো হয়। কিন্তু স্কুল কলেজের পরীক্ষাগুলোতে ঠিকই নারী এবং পুরুষকে একই সাথে ফার্স্ট, সেকেন্ড, থার্ড প্রতিযোগিতা করানো হয়। নারী ও পুরুষের মাঝে এই পার্থক্য মানুষের সৃষ্টি। মানুষের সামান্য জ্ঞান দিয়ে এই পার্থক্য করা হয়েছে, আর সেটা সকল মানুষে মেনে নিয়েছে। কিন্তু যেই আল্লাহ সমস্ত মানুষ, আসমান ও জমীন সব কিছুকে নিখুঁতভাবে সৃষ্টি করেছেন, যিনি সর্বজ্ঞানী, তিনি তাঁর জ্ঞান অনুযায়ী নারী ও পুরুষের মাঝে আলাদা কোন আইন দিলে সেটা মানুষের মানতে এতো আপত্তি?
এই উদাহরণ দ্বারা প্রমানিত হয় যে, কাফেররা আল্লাহকে উপযুক্ত সম্মান দেয়না, এমনকি মানুষের সমানও দাম দেয়না (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)। এজন্যে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
তারা আল্লাহকে যথার্থ মর্যাদা দেয় নি। [সুরা যুমারঃ ৬৭]
_________________________
সুতরাং ৪. কোনটাই না এটাই সঠিক। ক্বুরান ও হাদীসের দৃষ্টিকোণ থেকে বলতে হবে, আল্লাহ তাআলা নারী ও পুরুষকে যারা যার ন্যায়সংগত অধিকার দিয়েছেন।
ওয়াল্লাহু আলীমু বিস-সোওয়াব।

- আনসারুস সুন্নাহ