“সুবহা’না রাব্বিয়াল আ’লা” কথাটির
অর্থ জানেন কি?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় হজ্জের
দিন খুতবা দিয়ে সাহাবাদেরকে উদ্দেশ্যে করে বললেন, “আমি কি তোমাদেরকে (আল্লাহর কথাগুলো) পৌঁছে দিয়েছি?”
সাহাবারা সকলেই বললেন, হ্যাঁ।
তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসমানের
দিকে আংগুল উঠালেন এবং লোকদের দিকে আঙ্গুলটিকে ঘুরাতে থাকলেন আর বললেন, “হে আল্লাহ্ তুমি সাক্ষী থেকো। হে আল্লাহ্ তুমি
সাক্ষী থেকো। হে আল্লাহ্ তুমি সাক্ষী থেকো।”
এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ্ তা’আলা সকল বস্তুর উপরে অবস্থান করেন। আর এ কারণেই
আমরা সিজদাতে আমাদের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংগ মাথাটিকে মাটির সাথে ঠেকিয়ে, অর্থাৎ
নিজেকে আল্লাহর সামনে নিচু করে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বলি, “সুবহা’না রাব্বিয়াল আ’লা।”
অর্থঃ আমি আমার রব্বের পবিত্রতা ঘোষণা করছি,
যিনি ‘সর্বোচ্চ’।
আমরা নিজেদেরকে সবচাইতে নিচু করে বলি,
আল্লাহ সর্বোচ্চ। আল্লাহ
সর্বোচ্চ, যেমন তিনি সম্মান, মর্যাদার দিক থেকে তিনি সর্বোচ্চ, ঠিক তেমনি
অবস্থানগত দিক থেকেও তিনি তাঁর সকল সৃষ্টির উর্ধে।
অনুরূপভাবে আমরা আমাদের সালাতে প্রথম ও দ্বিতীয় বৈঠকে ডান হাতের আংগুলগুলো
মুষ্ঠিবদ্ধ করে শাহাদাত আংগুল দিয়ে আকাশের দিকে ইশারা করি। কেনো করছি? সালাতের রুকু,
সিজদা, বসে থাকা, সুরা ক্বিরাত পড়া, আসলে এইগুলোর কোন উদ্দেশ্যে আছে নাকি যন্ত্রের
মতো করে গেলেই হবে?
আমাদের প্রতিটি ইবাদতের উদ্দেশ্য থাকে। আমরা
যখন বৈঠকে বসি, এর দ্বারা দুই রাকাআত পড়ার পরে একটু বসে বিশ্রাম নেওয়া হয়, আর তখন আল্লাহর
প্রশংসা করি, রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি
ওয়া সাল্লাম এর জন্যে দুয়া করি (দুরুদ পড়ি) আর আমাদের ও আমাদের মতো সকল বান্দা-বান্দীদের
জন্যে আল্লাহর দয়া ও শান্তির জন্যে দুয়া করি। এ সময় আমরা প্রতিটা দুয়ার সময়ে শাহাদাত
আংগুল দিয়ে আকাশের দিকে ইশারা করে এই স্বীকৃতি দেই যে, আল্লাহ তাআ’লা এক এবং এবং তিনি সবার উর্ধে রয়েছেন। এটা আল্লাহর
‘তাওহীদ’ এবং তিনি যে সর্বোচ্চ এই সাক্ষ্য দেওয়ার একটা
অংশ। মানুষের জীবনে আল্লাহর সবচাইতে বড় অধিকার হচ্ছে তাওহীদের স্বীকৃতি দেওয়া, যার
বদলে আল্লাহ বান্দাকে জান্নাত দেবেন। একারণেই রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “এটা (অর্থাৎ তর্জনী আঙ্গুল নাড়িয়ে ইশারা করা)
শয়তানের বিরুদ্ধে লোহা অপেক্ষা কঠিন।”
[মুসনাদে আহমাদ, মিশকাতঃ ৯১৭, তাশাহুদ অনুচ্ছেদ]
বিঃদ্রঃ জাহমিয়া, মুঅতাজিলা, আশআরি এবং
মাতুরিদী আকীদাহর লোকেরা ‘আল্লাহ
সবার উর্ধে’,
এই আক্বীদাহ বিশ্বাস করেনা। এই সবগুলো দল, ক্বুরান, সুন্নাহ, সাহাবা এবং সমস্ত
ইমামদের বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে এবং তারা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহ সর্বত্র
বিরাজমান। এছাড়া তাদের আরো অনেক ভ্রান্ত আকীদাহ রয়েছে, যেকারণে তারা ‘আহলে সুন্নতের’ বাইরে ৭২টা জাহান্নামী দলের অন্তর্ভুক্ত
বলে বিবেচিত।