বুধবার, ২৮ অক্টোবর, ২০১৫

আপনার দ্বীন সম্পর্কে জানুন (পর্ব-৫)

আপনার দ্বীন সম্পর্কে জানুন (পর্ব-৫)    
(এই সিরিজের ইতিঃপূর্বের পোস্টগুলো পড়ার জন্যে কমেন্টের লিংক দেখুন)
বিসমিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ। আম্মা বাআদ। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা বলেন,
আর তারাই হচ্ছে সত্যিকারের মুমিন, যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ঈমান আনার পর সন্দেহ পোষণ করে না, এবং আল্লাহর রাস্তায় তাদের জান ও মাল দ্বারা জিহাদ (যুদ্ধ বা সংগ্রাম করে)। আর তারাই হচ্ছে সত্যবাদী।
সুরা হুজুরাতঃ ১৫।
___________________________
১/ ছেলে-মেয়েদের মাঝে এংগেইজমেন্ট করে রাখা সম্পর্কে কিছু কথাঃ
এংগেইজমেন্ট একজনকে কথা দিয়ে রাখার মতো, এতে বিয়ের কিছুই হয়না। এর পরে ছেলে-মেয়ের দেখা-সাক্ষাত করা, এমনকি ফোনে কথা বলা সম্পূর্ণ নাজায়েজ। এইভাবে অল্প কিছুদিনের করা যেতে পারে, কিন্তু দেরী করা অনুচিত। কারণ, এইভাবে শীঘ্রই ছেলে-মেয়েরা দেখা সাক্ষাত করা শুরু করবে, যার ফলে অনেকে জিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হচ্ছে, স্রেফ গার্জিয়ানদের নির্বুদ্ধিতার কারণে। সুতরাং, সবকিছু ঠিক থাকলে বিয়ে পড়িয়ে দেওয়া উচিৎ। বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এংগেইজমেন্ট করে মাসের পর মাস ধরে ঝুলিয়ে রাখে একশ্রেণীর গার্জিয়ানেরা, আর ছেলে-মেয়েদের জন্যে জিনা-ব্যভিচারের দরজা উন্মুক্ত করে তাদেরকে ফিতনায় ফেলে। আর এতে আরো অনেক ফাসাদ রয়েছে, যা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই ভালো করে জানে। সুতরাং, হে গার্জিয়ান সম্প্রদায়! সাবধান!!
২/ অনেক রাসুলু্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে স্বপ্নে দেখার জন্যে আগ্রহী। এজন্যে তারা বিভিন্ন ধরণের আমল ও অনেক দুয়া করে। এ ব্যপারে হক্ক কথা হচ্ছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নিজেদের চাইতে বেশি ভালোবাসা ঈমানের দাবী, কিন্তু দলিল বিহীন বিদআতী আমল দিয়ে শয়তান মানুষকে বিভ্রান্ত করে। আবু জাহেল, আবু লাহাব রাসুল সাঃ কে সকাল-বিকাল দেখেও তাদের ভাগ্য চমকে যায়নি। সুতরাং, আজকে আমরা একবার তাঁকে দেখলেই এতে আমাদেরকে জান্নাতী বলা যাবেনা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসা মানে তাঁর সুন্নাতের উপর আমল করা, স্বপ্নে তাঁকে দেখার জন্যে পাগল হওয়া নয়। তবে কেউ অন্তরে আশা রাখতে পারে, ব্যস এতোটুকুর মাঝে সীমাবদ্ধ রাখা উচিৎ। আর রাসুলকে দেখার জন্যে দুয়া নয়, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্যে সহীহ দুরুদ পড়তে হবে। এতে তাঁর ইচ্ছা পূরণ হতে পারে এবং পরকালের জন্যেও সেটা উপকারী হবে। উল্লেখ্য, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বপ্নে দেখার জন্যে যতগুলো বিশেষ দুরুদ ও দুয়া আছে সবগুলো মানুষের বানানো এবং সেইগুলো পড়া ভিত্তিহীন বিদআত।
৩/ শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল-উসাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
পানিতে ঝাড়ফুক দিয়ে সেই পানি ব্যবহার করা দুই ধরনের হয়ে থাকে -
ক. এর দ্বারা যদি বরকত হাসিল করা উদ্দেশ্য হয়, তবে সেটা হারাম এবং এক প্রকার শিরক, এ ব্যাপারে সন্দেহ নাই।
খ. এতে যদি কেউ ক্বুরআন পড়ে ফুঁ দেয়, তবে এতে কোনো সমস্যা নেই, এটা সালফে সালেহিন করতেন এবং এটি ইন শাআল্লাহ উপকারী।
ফাতাওয়া ইবন উসাইমীনঃ ১৭/৬৪-৬৭।
৪/ মৃত্যু কামনা করা নিষিদ্ধ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের কেউ যেন দুঃখ-কষ্টের কারণে মৃত্যু কামনা না করে। যদি কিছু করতেই চায় তাহলে সে যেন এইভাবে দুয়া করে,
হে আল্লাহ্! তুমি আমাকে জীবিত রাখ, যতদিন আমার বেঁচে থাকা কল্যাণকর হয় এবং আমাকে মৃত্যু দান কর, যখন আমার জন্য মরে যাওয়া কল্যাণকর হয়। 
সহীহ বুখারীঃ ৫৬৭১, সহীহ মুসলিমঃ ২৬৮০, তিরমিযীঃ ৯৭১, নাসায়ীঃ ১৮২০, আবু দাউদঃ ৩১০৮, ইবনে মাজাহঃ ৪২৬৫, মুসনাদে আহমাদঃ ১১৫৬৮।
৫/ ইমাম আব্দুল আজিজ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
যে ব্যক্তি বলে যে, আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমান অথবা, যে আল্লাহ সবকিছুর উর্ধে এই কথাকে অস্বীকার করে, সে ব্যক্তি কাফির। কারণ, সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের কথাকে মিথ্যা বলেছে এবং আহলে সুন্নাত ওয়াল জামআতের ইজমাকে অস্বীকার করেছে।
৬/ পাপ কাজ করলে মানুষের দ্বীন ও দুনিয়া, উভয়ের ক্ষতি হয়। একজন তাবেয়ী বলেছিলেন, আমি একবার একটা পাপ কাজ করেছিলাম, এরপর থেকে ৬ মাসের বেশি সময় ধরে আমি তাহাজ্জুদ সালাত পড়তে পারেনি।
৭/ বিগত ২৬শে অক্টোবর, ২০১৫ইং তারিখে সাউদি আরাবিয়ার দক্ষিণাঞ্চল নাজরান-এ একটি মসজিদের ভিতরে মুসুল্লিদের লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হয়, এতে ৩ জন মারা যায় এবং আরো বেশ কয়েকজন আহত হয়। হামলাকারীর ডিএনএ পরীক্ষা করে তার পরিচয় বের করা হয়। ৩৫ বছর বয়ষ্ক হামলাকারী ব্যক্তিটি সিরিয়া থেকে সৌদিতে অবৈধভাবে প্রবেশ করেছিলো, যেকিনা ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক এন্ড সিরিয়া (ISIS বা IS) এর সাথে ৪ বছর ধরে কাজ করেছে। উল্লেখ্য, আইসিস এবং এমন আরো বেশকিছু সংগঠনের বিভ্রান্ত লোকেরা প্রায়ই সৌদি আরববের মতো ইসলামিক দেশে হামলা করে অনেক নিরপরাধ মুসলিমদেরকে হত্যা করে থাকে। এরা খারেজী। এদের মতো লোকদের ব্যপারে ইমাম আল-বারবাহারি রাহিমাহুল্লাহ (মৃত্যু ৩২৯ হিজরী) বলেন,
যে ব্যক্তি কোন মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সে
ক. খারেজীদের মধ্যে একজন       
খ. সে মুসলিমদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করলো
গ. সে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদীসের বিরোধীতা করলো এবং
ঘ. তার মৃত্যু যেন জাহেলী যুগের মৃত্যুর মতো।
শরাহুস সুন্নাহঃ পৃষ্ঠা ৪২।
এমন ব্যক্তিদেরকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হত্যা করতে আদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেনঃ
শেষ যামানায় একদল তরুণ বয়সী, নির্বোধ লোকের আবির্ভাব ঘটবে, যারা সবচাইতে উত্তম কথা বলবে। তারা ইসলাম থেকে এত দ্রুত গতিতে বের হয়ে যাবে যেইভাবে তীর ধনুক থেকে বের হয়ে যায়। তাদের ঈমান তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তোমরা তাদেরকে যেখানেই পাবে সেখানেই হত্যা করবে। কারণ যে তাদেরকে হত্যা করবে তার জন্য ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহর নিকট নেকী রয়েছে।

বুখারী, মুসলিম, আবূ দাউদঃ ৪৭৬৭, নাসাঈ।