শনিবার, ১৭ অক্টোবর, ২০১৫

মুহাররাম মাসের নফল রোযার বিবরণ


মুহাররাম মাসের নফল রোযার বিবরণ
- তোমরা তোমাদের পালনকর্তার অভিমূখী হও এবং তাঁর আজ্ঞাবহ হও
______________________________
বিসমিল্লাহ।
আলহামদুলিল্লাহ।
ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসুলিল্লাহ।
আম্মা বাআদ।
ইসলামী শরিয়ত অনুসৃত নিয়ম অনুযায়ী, রাত প্রথমে আসে এবং দিন পরে আসে। সেই হিসাব অনুযায়ী, আজ মাগরিবের পর থেকে মংগল বার শুরু হলো আর তারিখ হছেঃ ২৪-শে জিলহাজ্জ। চদ্র বৎসর অনুযায়ী, জিলহজ্জ হচ্ছে সর্বশেষ বা ১২-তম মাস। সুতরাং, এই মাস শেষ হলে হিজরী নতুন বছর ১৪৩৮ সাল শুরু হবে। আমাদের দেশে আগামী সোম বা মংগল বার থেকে মুহাররাম মাস শুরু হতে পারে। উল্লেখ্য, ১-লা মুহাররামে হিজরী নববর্ষ, ১-লা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ অথবা ১-লা জানুয়ারীতে Happy New Year পালন করা অমুসলিমদের সংস্কৃতির অনুকরণ, যা থেকে বিরত থাকা প্রতিটি ঈমানদান, মুসলিমের জন্যে অবশ্য কর্তব্য।
.
মুহাররাম মাসের যেকোন দিনের নফল রোযার সওয়াব অন্য মাসের তুলনায় বেশি। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ফরয নামাযের পর (নফল নামাযের মাঝে) তাহাজ্জুদ নামাযের মর্যাদা সবচাইতে বেশি। আর রমযানের ফরয রোযার পর মুহাররাম মাসের (যেকোন দিনের নফল) রোযার ফযিলত সবচাইতে বেশি। সহীহ মুসলিমঃ ১১৬৩, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনে খুজাইমা, হাদীসটির সনদ সহীহ।
তবে মুহাররামের আশুরা অর্থাৎ ১০-তারিখে রোযা রাখার সওয়াব সবচাইতে বেশি। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আশুরার দিন রোযা রাখা এক বছর রোযা রাখার সমান সওয়াব। ইবনে হিব্বানঃ ৩৬৩১, হাদীসটির সনদ সহীহ।
আশুরার দিনে রোযা রাখার আরো ফযীলত হচ্ছে, এই একটি রোযার বিনিময়ে বিগত এক বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি আশা করি যে, আশুরার দিনের রোযা বিগত এক বছরের গুনাহ-খাতা সমূহকে মোচন করে দেবে। সহীহ মুসলিমঃ ১১৬২, মুসনাদে আহমাদঃ ৫/২৯৭, আবু দাউদঃ ২৪২৫।
আশুরার দিনকে সম্মান করে ইয়াহুদীরাও রোযা রাখে, কারণ মানব জাতির ইতিহাসে এই দিনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোর একটি হচ্ছে, আল্লাহ তায়ালা এইদিনে ফেরাউন ও তার বাহিনীকে নীল নদের পানিতে ডুবিয়ে তাদের অত্যাচার থেকে মুসা আলাইহিস সালাম-এর জাতি বনী ইসরাঈলের লোকদেরকে মুক্তি দিয়েছিলেন। সেইজন্যে ইয়াহুদীদের বিপরীত করার জন্যে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ১০ তারিখের পূর্বে ৯ তারিখেও রোযা রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। সহীহ মুসলিমঃ ১১৩৪।
কিন্তু পরবর্তী বছর ৯ তারিখে রোযা রাখার পূর্বেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন, তাই তাঁর সেই ইচ্ছাটা পূরণ হয়নি। সেইজন্যে ইমাম আব্দুল আজীজ বিন বাজ রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, মুহাররাম মাসের ৯ ও ১০ তারিখ, এই দুইদিন রোযা রাখা সুন্নত। আর কেবলমাত্র ১০ তারিখ একদিন রোযা রাখা মাকরুহ, কারণ, তাতে ইয়াহুদীদের সাথে সাদৃশ্যতা অবলম্বন করা হয় এবং সেটা আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেই আশা পোষণ করেছিলেন তার বিপরীত। ইবনে বাজ, ফাতওয়া ইসলামিয়াঃ ২/১৭০।
৯, ১০ তারিখের পরিবর্তে ১০ ও ১১ এই দুইদিন রোযা রাখা যাবে বলে যেই হাদীসগুলো রয়েছে সেই দুইটি হাদীস সহীহ নয়। যাদুল মায়াদঃ ২/৭৬ এর হাশিয়া দ্রষ্টব্য। সুতরাং সবচাইতে উত্তম হচ্ছে, মুহাররামের ৯ এবং ১০ তারিখেও রোযা রাখা। কেউ চাইলে অতিরিক্ত ১১ তারিখে বা এই মাসের অন্য যেকোন দিনে, বিশেষ করে যেকোন সোমবার বা বৃহস্পতিবারে রোযা রাখতে পারে। এই মাসের যেকোন নফল রোযা আল্লাহর কাছে অধিক পছন্দনীয়।
উল্লেখ্য, ৯, ১০ এর পূর্বে বা পরে কেউ আরো নফল রোযা রাখতে চাইলে, কারো অতীতের ফরয কাযা রোযা বাকি থাকলে কাযা রোযার নিয়ত একই সাথে করবেন। আর ফরয বা কাযার জন্যে রাত্রে ঘুমানোর পূর্বে বা সাহরীর সময় থেকে ফযর হওয়ার পূর্বেই নিয়ত করতে হবে। ফজর হওয়ার পরে নিয়ত করলে সেই রোযা নফল হিসেবে গণ্য হবে, ফরয কাজা হিসেবে হবে না।
.
কারবালাতে হুসাইন (রাঃ) নির্মভাবে শহীদ হয়েছিলেন, এটা আমাদের জন্যে অত্যন্ত বেদনাদায়ক একটা ঘটনা। কিন্তু এর সাথে আশুরার রোযার কোন সম্পর্ক নাই। আশুরা উপলক্ষে শোক প্রকাশ করা, মূর্তিসহ তাজিয়া মিছিল বের করা, শিন্নি, হালুয়া-রুটি বিতরণ করা, হায় হুসেন! হায় হুসেন! মাতম করা, কাওয়ালী বা গজল গাওয়া - এমন আরো অনেক শিরক ও বিদাতী কাজে লিপ্ত কপট জাতি শিয়ারা। সৌদি আরবের মতো আমাদের দেশেও এইরকম ইসলাম বিরোধী কাজ ও বিষাদ সিন্ধুর মতো মিথ্যা কাহিনীর বই-পুস্তক নিষিদ্ধ করা উচিত।
.

***বারবার নিষেধ করার পরেও একশ্রেণীর লোকেরা কমেন্টে কেউ প্রশ্ন করলে যা ইচ্ছা তাই উত্তর দিয়ে আমাদেরকে বিরক্ত করে। আমরা উত্তর দেই বা না দেই, আপনারা কেউ কোন উত্তর দিতে যাবেন না, এমনকি সঠিক জানা থাকলেও না। আমাদের পোস্টে উত্তর দেওয়ার জন্যে আপনাদের কাউকে দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। আমাদের পেইজের কারো প্রশ্নের উত্তরে কেউ কিছু বললে আপনারা তাদেরকে নিষেধ করবেন।