সোমবার, ১০ আগস্ট, ২০১৫

পরীক্ষায় যারা ভালো করতে পারেন নিঃ “হতাশ হবেন না”

পরীক্ষায় যারা ভালো করতে পারেন নিঃ হতাশ হবেন না
- আনসারুস সুন্নাহ
৯-ই আগস্ট, ২০১৫ ইং।
________________________
সম্ভবত ফেইসবুকে আমার পরিচিত যেই ছেলেটা আমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে, আজ শুনলাম সেই ভাইটা এইচএসসি পরীক্ষাতে ভালো করতে পারেনি। আমি আল্লাহর কাছে দুয়া করি, আল্লাহ তাকে সম্মানিত করুন, এবং দুনিয়া এবং আখেরাতে তাকে চূড়ান্ত সফলতা দান করুন। সেই ভাই এবং এমন আরো অন্যান্য দ্বীনি ভাই ও বোনদের মাঝে যারা শিক্ষাগত জীবনে আশানুরূপ ভালো ফলাফল করেতে পারেন নি, তাদের জন্যে সান্ত্বনামূলক কিছু কথা।
________________________
দুনিয়ার জীবনে সাফল্য কিংবা ব্যর্থতা, উন্নতি বা অবনতি, এ সবকিছুই আমাদের মহা পরীক্ষার অংশ, যা আল্লাহ তাআলা আসমান এবং জমীন সৃষ্টির ৫০ হাজার বছর পূর্বেই লাওহে মাহফুজে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। হয়তো আল্লাহ আপনার জন্যে এর মাঝেই দুনিয়া বা আখেরাতের কোন না কোন কল্যান লিখে রেখেছেন। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
হয়ত তোমরা যা অপছন্দ করো, সেটা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, আর তোমরা যা পছন্দ করো, সেটা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন কিন্তু তোমরা জানোনা। [সূরা আল-বাক্বারাহঃ ২১৬]
সুতরাং, ধৈর্য ধরুন এবং কখনোই হতাশ হবেন না। আপনার ব্যর্থতার কি কারণ, আপনার কি ভুল এবং গাফিলতি ছিলো, সেটা দ্বীনি বিষয়েই হোক কিংবা দুনিয়াবী, সেটা খুঁজে বের করুন এবং সমস্যাটা বোঝার চেষ্টা করুন। সেগুলো ভবিষ্যতে যেন আর না হয়, সেইজন্য প্রাণপন চেষ্টা করুন। জীবনে সফলতা পাওয়ার জন্যে আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে দুয়া করুন, এবং তাঁর কাছে সাহায্য চান। তাক্বওয়া (আল্লাহর প্রতি ভয়) এবং তাওয়্যাক্কুল (আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস) নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলুন।
________________________
কোন ঈমানদার যদি বিপদ-আপদে পতিত হয়, তাহলে সে ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহকে স্মরণ করে এবং বিনীত হয়ে তাঁর কাছে সাহায্য চায়। ফলে তার অন্তরের মুনাফেকী, আল্লাহ বিমুখতা, অবাধ্যতা, ফাসেকী, দুনিয়ার প্রতি লোভ, পরকালের প্রতি উদাসীনতা দূর হয়, ঈবাদতের প্রতি যত্নবান হয়। এর দ্বারা ঈমানদারদের আমল সুন্দর হয়, ইহজীবনে ধৈর্য ধরার মাধ্যমে অন্তরে শান্তি লাভ করে ও পরকালের জন্য বেহিসাব প্রতিদানের যোগ্য হয়। এইজন্য হাদীসে বলা হয়েছে, বিপদ-আপদও মুমিনদের জন্য কল্যানকর!

অপরদিকে, শুধু মুখে ঈমানেরা দাবী করা লোক, যারা গৎবাঁধা নামায রোযা করে যায়, কিন্তু ঈমান যাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি, বিপদে পড়লেই তারা আল্লাহকে ভুলে যায়, আল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা শুরু করে, আর নিজের ভাগ্য নিয়ে হায়-হুতাশ করে। যার ফলে দুনিয়ার জীবনে সে চরম অসুখী থাকে, পরকালে সে নাফরমানী করার কারণে কঠিন শাস্তি পায়। এই হচ্ছে অন্তরে মুনাফেকী রেখে মুখে ঈমান দাবী করার পরিণতি। মূলত তারা যে ঈমানের মিথ্যা দাবী করে, এটা প্রকাশ করে দেওয়ার জন্যই আল্লাহ তাদেরকে এই পরীক্ষায় ফেলেছিলেন। এইভাবে পরীক্ষা করার মাধ্যমে কে সত্যিকারে আল্লাহর প্রতি ঈমানদার, ধৈর্যশীল ও অনুগত সেটা প্রমানিত হয়।

বিপদ যত বড়ই হোক, যত কষ্টের মাঝেই থাকুন না কেনো, আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও আস্থা হারাবেন না। তাকিদীরের ভালো মন্দ সবকিছুই পরীক্ষা এইগুলোর জন্য ধৈর্য ধরবেন। কারণ,

অতঃপর, নিশ্চয়ই কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি,
নিশ্চয়য়ই কষ্টের সাথেই রয়েছে স্বস্তি।
[সুরা আল-ইনশিরাহ]

একজন সালাফ (পূর্ববর্তী যুগের আলেম) বলেছেনঃ
আপনি যদি বিপদে ধৈর্য ধরেন তাহলে বিপদ হবে একবার, কিন্তু ধৈর্য না ধরলে একই বিপদ আপনার জন্য অনেক বিপদের কারণ হয়ে যাবে। এর ফলে আপনার ইহজীবনের সুখ-শান্তি নষ্ট হলো ও পরজীবনে কঠিন শাস্তির উপযুক্ত হয়ে দুই দিকের জীবনেই ক্ষতিগ্রস্থ হবেন।
[সুরা আত-তাকাসুর এর তাফসির থেকে, ইবনে কাসীর]
আর বিপদে পড়লে সবসময় আপনার থেকে যারা বেশি দুঃখ কষ্টে আছে, আপনার থেকে যারা বেশি সমস্যার মাঝে আছে, তাদের দিকে লক্ষ্য করবেন। দুনিয়ার ব্যপারে আল্লাহ যাকে বেশি দিয়েছেন, তাদের দিকে লক্ষ্য করবেন না - তাহলে আপনি আল্লাহর নাশোকরীতে লিপ্ত হবেন। 
________________________
মনে রাখবেন - দুনিয়ার সুখ-শান্তি, ভোগ-বিলাস যাকে আল্লাহ ভালোবাসেন তাকেও দেন, যাকে ভালোবাসেন না তাকেও দান করেন। কিন্তু আখেরাত আল্লাহ শুধুমাত্র তাকেই দান করবেন, যাকে তিনি ভালোবাসেন। এজন্যেই আল্লাহ তাআলা সুরা আত-তিফফিনে পরকালীন নেয়ামতের জন্যেই প্রতিযোগিতা করতে আমাদেরকে উৎসাহিত করেছেন।
উযু বিল্লাহিমিনাশ-শাইতানির রাযীম।
১৮. কখনও না, নিশ্চয় সৎলোকদের আমলনামা আছে ইল্লিয়্যীনে।
১৯. আপনি জানেন ইল্লিয়্যীন কি?
২০. এটা লিপিবদ্ধ খাতা।
২১. আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাগণ একে প্রত্যক্ষ করে।
২২. নিশ্চয় সৎলোকগণ থাকবে পরম আরামে,
২৩. সিংহাসনে বসে অবলোকন করবে।
২৪. আপনি তাদের মুখমন্ডলে স্বাচ্ছন্দ্যের সজীবতা দেখতে পাবেন।
২৫. তাদেরকে মোহর করা বিশুদ্ধ পানীয় পান করানো হবে।
২৬. তার মোহর হবে কস্তুরী। এ বিষয়ে প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা করা উচিত।
২৭. তার মিশ্রণ হবে তসনীমের পানি।
২৮. এটা একটা ঝরণা, যার পানি পান করবে নৈকট্যশীলগণ।

________________________